ড্রাগন ফল (Dragon Fruit) একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে বাংলাদেশে এই ফলের তেমন একটা পরিচিতি ছিল না, বাজারে গেলে শোনা যেত, এটি থাইল্যান্ড থেকে এসেছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয় এবং আমাদের দেশে চাষ করা ড্রাগনই সারা দেশের মানুষ খেতে পারছে।
দেখতে ও খেতে ভিন্নধর্মী হওয়ায় অনেকের কাছেই এটি খুব প্রিয় ফল। তবে গবেষণা বলছে শুধু স্বাদ নয় বরং এর অনেক গুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
আজকে আলোচনা করবো ড্রাগন ফলের অসাধারণ পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং এটি কীভাবে খেতে হয় তা নিয়ে। এছাড়াও এই ফল খেলে কোনো সমস্যা হতে পারে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ড্রাগন ফল কি?
ড্রাগন ফলই সেই গাছে হয় যার ফুল কেবল রাতে ফোটে। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম হলো হাইলোসেরিয়াস ক্যাকটাস (Hylocereus cactus), যা হনোলুলু রানী (Honolulu queen) নামেও পরিচিত।
ড্রাগন ফলের এই ক্যাকটাস গাছটি দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয়। তবে এটি এখন সারা বিশ্বেই চাষ হচ্ছে।
সবচেয়ে কমন জাত হলো উজ্জ্বল লাল ত্বক সাথে সবুজ পাতা যা আঁশযুক্ত। এই ফলের নাম ড্রাগন হওয়ার পেছনের কারণ হলো ফলটি দেখতে অনেকটা কাল্পনিক জীব ড্রাগনের মত।
২ টি জাত বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে খুব কমন।
১. ভেতরে সাদা এবং কালো বীজ
২. ভেতরে লাল এবং কালো বীজ
আরো একটি জাত আছে যাকে হলুদ ড্রাগন ফল বলা হয়। এর চামড়া হলুদ, ভেতরে সাদা এবং কালো বীজ। এটি বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। তবে হয়তোবা এটিও চাষ শুরু হবে খুব শীঘ্রই।
এর স্বাদ অনেকটা বিদেশী ফল কিউই (Kiwi) এবং নাশপাতির মিশ্রণে হালকা মিষ্টি।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ড্রাগন ফলের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এর প্রধান কারণ হল এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সাথে যথেষ্ট পরিমাণে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী।
১. পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ
ড্রাগন ফলে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। (Spritzler, 2023)
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে চলুন জেনে নেই-
ক্যালরি | ৬০ |
প্রোটিন | ১.২ গ্রাম |
ফ্যাট | নেই |
কার্বোহাইড্রেট | ১৩ গ্রাম |
ফাইবার | ৩ গ্রাম |
ভিটামিন সি | দৈনিক চাহিদার ৩% |
আয়রন | দৈনিক চাহিদার ৪% |
ম্যাগনেসিয়াম | দৈনিক চাহিদার ১০% |
২. দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে
ড্রাগন ফলে থাকা প্রধান কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলোঃ
বিটালাইনস (Betalains): এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাল ড্রাগন ফলে পাওয়া যায়। ফলের ভেতরের গভীর লাল দানাদার অংশে থাকে বিটালাইনস যা রক্তে ক্ষতিকর (LDL– Low-density lipoprotein) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হাইড্রোক্সিসিনামেটস (Hydroxycinnamates): গবেষণায় দেখা যায়, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids): অত্যন্ত উপকারী এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল নামক ক্ষতিকর অণু থেকে রক্ষা করে। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং অল্প বয়সেই বার্ধক্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যেমনঃ বেটালাইনস, হাইড্রোক্সিসিনামেটস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস।
৩. প্রচুর ফাইবার আছে
আমরা জানি ফাইবার জাতীয় খাবার হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখে। ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে প্রিবায়োটিক (Prebiotics) ফাইবার যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে বিপাকীয স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ড্রাগন ফল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ, লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। তবে ড্রাগন ফলের এমন উপকারিতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া মানে সহজে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ইত্যাদি আক্রমণ করতে পারে না এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। (Meixner, 2018)
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
একেবারে প্রথমবার খাওয়ার সময় একটু চিন্তা করতে হয়, ফলটি কিভাবে কাটে, কিভাবে খায়! আসলে কিন্তু ফলটি খাওয়া খুবই সহজ।
-
খাওয়ার যোগ্য বা পাকা একটি ফল নিন
-
ছুরি কিংবা বটি দিয়ে ফলটি সোজা অর্ধেক করে কেটে নিন
-
এবার একটি চামচ দিয়ে ফলের চামড়া থেকে ফলের নরম অংশ উঠিয়ে খেতে পারেন বা পাকা কাটা আমের মত খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে পারেন।
ড্রাগন ফল পরিবেশন করতে হলে-
- ছোট ছোট টুকরো করে বাটিতে কিংবা প্লেটে চামচ সহ পরিবেশন করুন
- যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা সকালের নাস্তা হিসেবে ছোট ছোট টুকরোর উপরে টক দই এবং বাদাম দিয়ে খেতে পারেন।
- এটি ফ্রুট কিংবা ভেজিটেবল সালাদে মিশিয়েও খেতে পারেন
ড্রাগন ফল কাটা বা পরিবেশন করা খুব সহজ। শুধু এই ফলটি কিংবা অন্য কোন ফলের সাথে মিশিয়ে এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর প্রভাব
এই ফলটি সাধারণত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই ফল খেলে এলার্জিক রিয়াকশন হতে পারে। যাদের ক্ষেত্রে এই ফল খেলে সমস্যা হয় তাদের জন্য খাওয়া যাবে না।
এছাড়াও লাল ধরনের ড্রাগন ফল খেলে প্রস্রাব ও পায়খানার বর্ণ পরিবর্তন (লাল বা পিংক কালার) হতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক এবং এর জন্য চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। (Watson, 2022)
ড্রাগন ফল কম-ক্যালোরিযুক্ত একটি ফল যাতে অন্যান্য অনেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলের তুলনায় কম চিনি এবং কম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এখন পর্যন্ত গবেষণায় এর বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া গেছে, তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে ড্রাগন ফল অনন্য এবং খুব সুস্বাদু।
References
Meixner, M. (2018, May 23). 7 Great Reasons to Add Dragon Fruit to Your Diet. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/dragon-fruit-benefits#TOC_TITLE_HDR_6
Spritzler, F. (2023, February 28). What Is Dragon Fruit and Does It Have Health Benefits? Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/dragon-fruit#nutrition
Watson, S. (2022, August 02). Dragon Fruit. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/food-recipes/benefits-dragon-fruit
Last Updated on April 8, 2023
Leave A Comment