চিড়া (ইংরেজিতে Poha বা Beaten rice বলা হয়) হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় একটি খাবার। ধান থেকে চিড়া তৈরি করা হয় যা আমাদের দেশে খুব সহজলভ্য একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। চিড়া খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে।

এই অনুচ্ছেদে চিড়ার পুষ্টিগুণ, চিড়া স্বাস্থ্যের জন্য কি কি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিড়া খাওয়া কতটা নিরাপদ ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

চিড়া খাওয়ার উপকারিতা 

শুকনো চিড়ার বেশিরভাগ অংশ হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। ১০০ গ্রাম চিড়া থেকে প্রায় ৭৬.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। এছাড়াও ৬.৭ গ্রাম ফাইবার, ৬.৬৭ গ্রাম প্রোটিন, ৬৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১.২ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। শুকনো চিড়ায় কোনো ফ্যাট বা চর্বি নেই বললেই চলে। তবে তেল দিয়ে চিড়া ভাজা হলে ফ্যাট যোগ হয়। 

সহজপাচ্য খাবার এবং দ্রুত ক্যালরি সরবরাহ করে 

চিড়া খুব সহজপাচ্য একটি খাবার। অর্থাৎ চিড়া সহজে হজম হয়। যাদের হজম ক্ষমতা কম তাদের জন্য চিড়া খাওয়া বেশ উপকারী হবে।‌

চিড়া খাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে হজম হয়ে শরীরে ক্যালরি সরবরাহ করে। ১০০ গ্রাম চিড়া থেকে প্রায় ৩৩৩ ক্যালরি পাওয়া যায়। (Barode, 2023)

ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য উপকারী

পেটের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে পথ্য হিসেবে চিড়া খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য চিড়া খাওয়া উপকারী হবে।

ডায়রিয়ার পর চিড়া খাওয়ার উত্তম নিয়ম হলো পর্যাপ্ত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া।‌‌ শুকনো চিড়া খাওয়া হলে তা শরীর থেকে পানি শোষণ করে। তাই পর্যাপ্ত পানিতে ভিজিয়ে চিড়া খেতে হবে অথবা চিড়া খাওয়ার পর প্রচুর পানি পান করতে হবে।

গ্লুটেন মুক্ত (Gluten free)

gluten free

গম থেকে উৎপন্ন খাবারে গ্লুটেন থাকে। যারা সিলিয়াক ডিজিজে (পরিপাকতন্ত্রের রোগ) আক্রান্ত তারা গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে পেটের সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও গম থেকে উৎপন্ন খাবার খেলে যাদের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য গ্লুটেন-ফ্রি খাবার খেতে হবে। 

চিড়া হলো গ্লুটেন মুক্ত একটি খাবার যা সিলিয়াক ডিজিজ আক্রান্ত ব্যক্তি খেতে পারবেন। ধান থেকে উৎপন্ন সকল খাবার (ভাত, চিড়া, মুড়ি, ধানের গুঁড়ার পিঠা ইত্যাদি) প্রাকৃতিকভাবেই গ্লুটেন মুক্ত থাকে।

আয়রন সমৃদ্ধ

চিড়া আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাবার যা শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আয়রন রক্ত কণিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয়।

পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়। শরীরে আয়রনের ঘাটতির ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। রক্তস্বল্পতার রোগীদের জন্য চিড়া খাওয়া উপকারী হবে।‌

স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস

শুকনো চিড়া তেল ছাড়া ভেজে স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া উপকারী হবে। স্ন্যাকস হিসেবে ফাস্টফুড, চিপস ও কোমল পানীয়ের পরিবর্তে শুকনো চিড়া খাওয়া উত্তম।

শুকনো চিড়া খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া যায় না। তাই ক্যালরি‌ গ্রহণের পরিমাণ খুব বেশি হবে না। তবে তেলে ভাজা চিড়া খেলে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেশি হবে।‌ কারণ তেল প্রচুর ক্যালরি সম্পন্ন খাবার।

দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

দই চিড়া আমাদের দেশের খুব জনপ্রিয় একটি রেসিপি। চিড়ার সাথে দই যোগ করা হলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যায়।

দই হলো প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ খাবার যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।‌ 

আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দই চিড়া খাওয়া বেশ উপকারী হবে।

সাধারণত দই খুব মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। মিষ্টি জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই দই চিড়া খাওয়ার জন্য মিষ্টি দইয়ের পরিবর্তে টক দই বা ইয়োগার্ট (Yoghurt) খাওয়া উচিত।

খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

সকালের খাবার হিসেবে চিড়া খাওয়া উপকারী হবে। চিড়ার সাথে দই, কলা বা অন্যান্য ফল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।‌ এটি একাধারে স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রচুর ক্যালরি সরবরাহ করবে। যার ফলে দিনে শরীরে প্রচুর এনার্জি থাকবে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া সহজ হবে।

চিড়া বনাম ভাত

ধান থেকে প্রধানত চাল বা ভাত (কার্বোহাইড্রেট) তৈরি হয় যা আমাদের প্রধান খাদ্য। ধান থেকে আরো তৈরি হয় চিড়া ও মুড়ি যা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার।

১০০ গ্রাম সাদা ভাতে ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। পক্ষান্তরে ১০০ গ্রাম চিড়ায় ৭৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। ওজন বিবেচনায় ভাতের তুলনায় চিড়ায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকার কারণ হলো চাল থেকে ভাত তৈরির সময় প্রচুর পানি শোষণ হয়। পক্ষান্তরে চিড়া শুকনো প্রকৃতির একটি খাবার। 

ভাত খাওয়া হোক বা চিড়া দুই ক্ষেত্রেই প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা হবে। কারণ ওজন বিবেচনায় যতটুকু ভাত খাওয়া হয় ততটুকু চিড়া খাওয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ একবেলার খাবার হিসেবে ২৫০ গ্রাম ভাত খাওয়া সম্ভব হলেও ২৫০ গ্রাম শুকনো চিড়া খাওয়া সম্ভব হবে না। চিড়া বড়জোর ১০০ গ্রাম খাওয়া যাবে। 

ডায়াবেটিসের রোগীদের খাবার হিসেবে চিড়া 

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দ্বারা কত দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাবে তা‌‌ নির্দেশ করা হয়। যে খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত কম তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তত ভালো। কারণ রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যাবে না।

ভাত ও চিড়ার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একই। অর্থাৎ এগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার যা দ্রুত রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।‌ (Miller, 1992)

তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভাত, চিড়া, মুড়ি ও‌ চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি পিঠা পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।‌ ভাতের পরিবর্তে চিড়া, মুড়ি বা চালের পিঠা খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

শেষ কথা

চিড়া সহজলভ্য একটি খাবার যা সহজেই হজম হয় এবং প্রচুর ক্যালরি সরবরাহ করে। চিড়া খাওয়া পেটের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও আইবিএস রোগীদের জন্য চিড়া খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও চিড়া খাওয়া শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। 

কার্বোহাইড্রেট বিবেচনায় ভাত ও চিড়া একই রকম খাবার। তবে স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে ভাতের পরিবর্তে মাঝেমধ্যে চিড়া খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ফাস্টফুডের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে চিড়া (টক দই বা ফলমূল সহযোগে) খাওয়া উপকারী হবে। 

Bibliography

Barode, D. S. (2023, August 29). Poha: Uses, Benefits, Side Effects By Dr. Smita Barode. Retrieved from PharmEasy: https://pharmeasy.in/blog/ayurveda-uses-benefits-side-effects-of-poha/ 

Miller, J. B. (1992, December). Rice: a high or low glycemic index food? Retrieved from https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/1442654/

Last Updated on January 7, 2024