গাজর খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে কেন জানেন? কারণ, গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ (Vitamin A) রয়েছে যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ভিটামিন। চোখ ছাড়াও ভিটামিন এ শরীরের জন্য আর কি কি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে সেই বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার এর তালিকা।‌

ভিটামিন এ এর কাজ কি?

ভিটামিন এ চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যার দুটি প্রকরণ রয়েছে। যথাঃ

  • রেটিনল (Retinol): প্রাণীজ আমিষ জাতীয় খাবার থেকে যে ভিটামিন এ পাওয়া যায় তা হলো রেটিনল।
  • বিটা ক্যারোটিন (Beta-carotene): উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন এ হলো বিটা ক্যারোটিন।

বিটা ক্যারোটিন কে ভিটামিন এ এর প্রধান উৎস বলা যেতে পারে।‌ কারণ, বিটা ক্যারোটিন থেকে শরীরের মধ্যে রেটিনল উৎপন্ন হতে পারে। অর্থাৎ, একজন মানুষ যদি প্রাণীজ আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ নাও করেন (নিরামিষাশী) তবুও তার ক্ষেত্রে ভিটামিন এ এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভিটামিন এ এর প্রধান কাজ হলো চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করা। এছাড়াও‌ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি, কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম, প্রজনন ক্ষমতা ভালো রাখতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন এ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। (Kubala, 2022)

ভিটামিন এ এর উপকারিতা

ভিটামিন এ ‌শরীরের জন্য বিভিন্ন ভাবে উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। যেমনঃ

  • বিটা ক্যারোটিনের এন্টি অক্সিডেন্ট গুণাবলী হার্টের রোগ, ফুসফুস ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়
  • বয়সজনিত চোখের রোগ প্রতিরোধে (age-related macular degeneration) সাহায্য করে
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় আর মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
  • সর্বোপরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে

ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য দৈনিক ৯০০ মাইক্রোগ্রাম (900 mcg) এবং একজন নারীর জন্য দৈনিক ৭০০ মাইক্রোগ্রাম (700 mcg) ভিটামিন এ প্রয়োজন হয়ে থাকে। শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন এ এর অভাব হলে যে সমস্ত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তা হলোঃ (Harvard T.H. Chan School of Public Health, n.d.)

  • শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব জনিত সবচেয়ে কমন সমস্যা হলো রাতকানা রোগ (Night blindness) যা সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা দেখা যায় এবং ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
  • ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় এবং ব্রণ হয়

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার

শরীরে যেন ভিটামিন এ এর অভাব না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায় এমন খাবার গুলো হলোঃ

প্রাণীজ উৎস: ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, পনির, গরুর কলিজা, মুরগির কলিজা, স্যালমন ফিস, কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি

উদ্ভিজ্জ উৎস: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, টমেটো, লাল মরিচ, পালংশাক, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, ব্রকলি সহ প্রায় সব ধরনের রঙ্গিন ও সবুজ শাকসবজি থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।

ফলমূল: আম, পাকা পেঁপে, তরমুজ, পেয়ারা, আঙ্গুর, জাম্বুরা ইত্যাদি।

ভিটামিন খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয় কিন্তু শরীরের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তাই সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়াও,‌ বিশেষ করে শিশুদের জন্য ভিটামিন এ এর অভাব প্রতিরোধে সরকারী ভাবে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় যা কখনো অবহেলা করা যাবে না।

 

References

Harvard T.H. Chan School of Public Health. (n.d.). Vitamin A. Retrieved from The Nutrition Source: https://www.hsph.harvard.edu/nutritionsource/vitamin-a/
Kubala, J. (2022, 4 6). Vitamin A: Benefits, Deficiency, Toxicity, and More. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/vitamin-a

Last Updated on April 12, 2023