ফাইবার কি?

ফাইবার (Fiber) বা আঁশ হলো একটি বিশেষ ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরে শোষণ হয় না। এই খাদ্য উপাদানটি থেকে কোনো ক্যালরি বা শক্তি পাওয়া যায় না তবে শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে।‌ যেমনঃ শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

মহিলাদের জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় সর্বনিম্ন ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ৩৮ গ্রাম ফাইবার থাকা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই অনুচ্ছেদে ফাইবার সমৃদ্ধ ১৪ টি খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা আপনার দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। 

ফাইবার জাতীয় খাবার তালিকা

উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রায় সবগুলো খাবারের মধ্যেই কমবেশি ফাইবার রয়েছে। তবে পানীয়, তেল ও প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার গুলো থেকে ফাইবার পাওয়া যায় না। যেমনঃ মাছ, মাংস, মুরগি, ডিম, দুধ, কোকাকোলা ইত্যাদি। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এমন ১৪ টি খাবার হলোঃ (Gunnars, 2020)

আপেল

আপেল একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল যা খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আপেলের প্রায় ৮০ শতাংশ হলো পানি এবং এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। একটি মাঝারি আকৃতির আপেল থেকে ৪.৪ গ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলের মধ্যে ২.৪ গ্রাম) ফাইবার পাওয়া যায়। আপেল খোসা সহ খাওয়া উচিত, কারণ খোসাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে। যারা কম পরিমাণ সুগার এবং বেশি পরিমাণ ফাইবার পেতে চান তাদের জন্য লাল আপেলের তুলনায় সবুজ আপেল খাওয়া বেশি উপকারী হবে।

নাশপতি

আপেলের মতোই উপকারী একটি ফল হলো নাশপাতি (Pears) যার ৮৩ শতাংশ হলো পানি এবং প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে ৩.১ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়।‌ সেই সাথে নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ই, কে সহ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, কপার ইত্যাদি রয়েছে। আপেলের তুলনায় নাশপাতিতে কম পরিমাণে সুগার রয়েছে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে। 

স্ট্রবেরি

লাল টুকটুকে দেখতে স্ট্রবেরি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল যার প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে ২ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায় এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। ফল হিসেবে সরাসরি স্ট্রবেরি খাওয়া যায় আবার অন্য কোনো রেসিপির সাথে যোগ করে স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ানো যায়। 

অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডো প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল যার মধ্যে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডো থেকে ৬.৭ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাট সহ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, সি, ই, কে ইত্যাদি।‌ অ্যাভোকাডো শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনতে পারে বলে দিন দিন বিদেশি এই ফলটি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

কলা

সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। পাকা কলা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনিভাবে পুষ্টিগুণে ভরপুর। একটি পাকা কলাতে ৩ গ্রাম ফাইবার রয়েছে  এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, সি সহ ক্যালরি পাওয়া‌ যায়। পাকা কলার মতো কাঁচা কলা (Green banana) ভর্তা বানিয়ে বা রান্না করে খাওয়া যায় যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সহ ভিটামিন ও বিভিন্ন মিনারেলস রয়েছে।

গাজর

সালাদ ও সবজি হিসেবে গাজর খাওয়া হয় যার প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে ২.৮ গ্রাম ফাইবার। গাজরের মধ্যে আরো রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, কে সহ পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। রান্না করার চেয়ে কাঁচা অবস্থায় গাজর খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। গাজর খাওয়ার একটি বিশেষ উপকারিতা হলো এটি চোখ ভালো রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ব্রকলি

ব্রকলি ফুলকপির মতো দেখতে তবে সবুজ বর্ণের এবং ফুলকপির চেয়ে স্বাদ ও পুষ্টির দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলি থেকে ২.৬ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি, কে সহ পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। সাধারণত শাকসবজি থেকে খুব সামান্য পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় যার ব্যতিক্রম হলো ব্রকলি অর্থাৎ ব্রকলিতে অন্যান্য সবজির তুলনায় বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। ব্রকলির মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির নানাবিধ উপকারিতা এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে। 

শিম

প্রতি ১০০ গ্রাম শিম থেকে ২.৭ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। শীতকালীন এই সবজিটি ভর্তা বানিয়ে অথবা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায় যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। তবে যাদের শিম খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা যায় এবং যাদের কিডনিতে কোনো সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য শিম খাওয়া যাবে না।

ছোলা

ছোলা শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনে বিশেষ করে এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে ৭.৬ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য রাতে কয়েকটি ছোলা একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালিপেটে খাওয়ার মাধ্যমে বেশ উপকার পাওয়া যায়।   

ওটস (Oats) 

বর্তমানে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ওটস এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কারণ এটি কম ক্যালরি সম্পন্ন একটি খাবার অথচ এতে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে এতে রয়েছে বিটা-গ্লুকান (beta glucan) যা রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ওটস থেকে ১০.১ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। ওটস এর সাথে দুধ, দই অথবা কলা মিশিয়ে সকালের নাস্তা হিসেবে দারুন একটি রেসিপি হতে পারে। 

পপকর্ণ

স্ন্যাকস হিসেবে পপকর্ণ খাওয়া প্রায় সবার কাছেই পছন্দের মনে হবে। এটি খেতে বেশ মজাদার এবং সেই সাথে প্রতি ১০০ গ্রাম পপকর্ণ থেকে ১৪.৪ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। তবে এতে অনেক ক্যালরি রয়েছে আর তাই যারা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে পপকর্ণ এর পরিবর্তে মিষ্টি কুমড়ার বিচি রোদে শুকিয়ে ভাজার পরে খেতে পারেন। এতে খুব সামান্য পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে, তবে অনেক ফাইবার পাওয়া যাবে। 

কুমড়োর বিচির ১০ টি উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

কাজুবাদাম 

পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খেতে বেশ সুস্বাদু একটি খাবার হলো কাজুবাদাম যার প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে ৩.৩ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। সেই সাথে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, ভিটামিন, মিনারেল এবং শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাট সহ এন্টি অক্সিডেন্ট। কাজুবাদামের মতো কাঠবাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর যার প্রতি ১০০ গ্রামের মধ্যে ১৩.৩ গ্রাম হলো ফাইবার। যেকোনো বাদাম থেকেই কম-বেশি ফাইবার এবং বাদামের অন্যান্য পুষ্টিগুণ গুলো পাওয়া যায়। আর তাই প্রতিদিন কয়েকটি বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। 

মিষ্টি আলু

সাধারণ আলুর তুলনায় মিষ্টি আলুতে বেশি পরিমাণে ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলু থেকে ২.৫ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও মিষ্টি আলু থেকে ভিটামিন বি, বিটা ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। 

ডার্ক চকোলেট

ডার্ক চকোলেট হলো ৭০ থেকে ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণে কোকোয়া (cocoa) সমৃদ্ধ যার প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে ১০.৯ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত সুগার যোগ করা হয়নি এমন ডার্ক চকোলেট খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে এটি উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার আর তাই যাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে তাদের জন্য ডার্ক চকোলেট পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। 

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে যেন তা দৈনিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি করতে হবে। কারণ ফাইবার শরীর থেকে পানি শোষণ করে নরম মল তৈরি করে। এছাড়াও যাদের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খুব কম পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের জন্য হঠাৎ করে ফাইবার গ্রহণের মাত্রা বাড়ানো যাবে না বরং ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। 

References

Gunnars, K. (2020, October 22). 22 High Fiber Foods You Should Eat. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/22-high-fiber-foods

 

Last Updated on April 15, 2023