ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্ন্যাকস গ্রহণ করতে হয়। কারণ দীর্ঘসময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে রক্তে সুগারের মাত্রা একদম কমে যেতে পারে। আবার খাদ্যতালিকায় এমন কোনো স্ন্যাকস রাখা যাবে না যেগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা খুব বেশি বাড়িয়ে দেয়। 

ডায়াবেটিস রোগীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্যের একটি বড় অংশ হলো বিস্কুট যা বাজারে অহরহ কিনতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের বিস্কুটের কথা বলছি যা বিভিন্ন কোম্পানির রয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হলো এই বিস্কুট ততটা স্বাস্থ্যকর ও উপকারী নয় যতটা মনে করে খাওয়া হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকারী হবে এমন ১৫টি স্ন্যাকস সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

১। শক্ত-সিদ্ধ ডিম

সব বয়সের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হলো ডিম। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া উপকারী হবে। কারণ এতে খুব সামান্য পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না। এছাড়াও ডিম থেকে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য দরকারী উপাদান।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উত্তম হবে শক্ত-সিদ্ধ (Hard boiled) ডিম খাওয়া। কম সিদ্ধের (Soft boiled) তুলনায় শক্ত-সিদ্ধ ডিমে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। (Réhault-Godbert, 2019) 

ডিম খেলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দিনে একটি ডিম কুসুম সহ খেতে হবে। তবে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন রোগীদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ডিমের কুসুম খাওয়া উচিত হবে না। 

২। টক দই

cereal

টক দই বা ইয়োগার্ট হলো প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ খাবার যা সবার জন্যই উপকারী। প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের ভেতর বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় আর এই ব্যাকটেরিয়াগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। (Elliott, 2023) 

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক বাটি টক দই বা ইয়োগার্ট রাখা যেতে পারে। টক দই এর স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য কিছু ফলমূল যোগ করা যাবে। তবে মিষ্টি দই খাওয়া যাবে না।

৩। বাদাম

স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের তালিকায় বাদাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। বিভিন্ন ধরনের বাদাম (চীনাবাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ও কাজুবাদাম) রয়েছে। 

প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, ফাইবার, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হবে।    

৪। সূর্যমুখী বীজ 

সূর্যমুখী বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী রয়েছে। সূর্যমুখী বীজ একটি দারুন স্ন্যাকস হিসেবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।  

সূর্যমুখী বীজের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। সস্তায় বা ফ্রিতে রান্না ঘরের ফেলনা জিনিস থেকে এমন একটি খাবার পেতে পারেন যা হলো কুমড়ার বিচি। এই বিচি তেল ছাড়াই শুকনো অবস্থায় ভেজে খেতে পারেন যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী হবে। 

৫। অ্যাভোকাডো

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে অ্যাভোকাডো খাওয়া উপকারী হবে। এতে রয়েছে ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

অ্যাভোকাডো প্রচুর ক্যালরি সম্পন্ন ফল এবং দাম একটু বেশি হওয়ায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরী নয়। তবে মাঝেমধ্যে খেতে পারলে ভালো।    

৬। আপেল

আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। এছাড়াও আপেল প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যা শরীরের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখে। 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিনের স্ন্যাকসের তালিকায় একটি আপেল রাখা যেতে পারে। লাল বর্ণের আপেলের তুলনায় সবুজ আপেলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকে। তাই সবুজ আপেল খেতে হবে।

৭। ভাজা ছোলা  

ভাজা ছোলা খুব সহজলভ্য একটি খাবার যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য দারুন স্ন্যাকস হতে পারে।‌ এতে কম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তবে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভালো মানের প্রোটিন রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

৮। ওটস (Oats) 

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হলো ওটস যা দীর্ঘসময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ওটস খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। 

ওটসের সাথে কলা ও দুধ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে একটির বেশি কলা নয় এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি থাকলে তাদের জন্য লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি দুধ খেতে হবে।

৯। খেজুর 

dates

খেজুর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ একটি খাবার হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নয়, বরং দিনে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ টি খেজুর খেতে হবে।  

খেজুরে শুধু কার্বোহাইড্রেট নয়, বরং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, এন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখবে।  

খেজুরের অনেকগুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যকার তুলনামূলক কম মিষ্টিযুক্ত খেজুর খেতে হবে। 

১০। চীয়া বীজ

শরীরের ওজন কমানোর জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে চীয়া বীজ। কারণ এটি প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। চীয়া বীজ খাওয়া হলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

একটি ছোট বাটিতে সামান্য পানি বা দুধ নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ চীয়া বীজ মেশাতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে দিলে মিশ্রণটি ঘন হবে।‌ কিছু ফলমূল (স্ট্রবেরি) যোগ করে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যাবে। 

১১। চিড়া ও মুড়ি

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর একটি স্ন্যাকস হতে পারে চিড়া বা মুড়ি। প্রায় সবার ঘরেই চিড়া ও মুড়ি থাকে। 

কলা ও দুধ মিশিয়ে চিড়া বা মুড়ি খেতে পারেন অথবা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও তেল দিয়ে মেখে খেতে পারেন। তবে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। আর অবশ্যই চিনি, মধু বা গুড় মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। 

১২। মৌসুমী ফলমূল

আমাদের দেশে মৌসুমী ফলমূল পাওয়া যায় যা প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এগুলোতে থাকা ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার ও এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।

মৌসুমী ফলের বেশিরভাগই মিষ্টিজাতীয় অর্থাৎ রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আম, কাঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, সফেদা ইত্যাদি। তাই বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মৌসুমী ফলের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হলে চলবে না। 

স্ন্যাকস হিসেবে মৌসুমী ফলমূল খাওয়া যাবে। তবে সেটা অবশ্যই পরিমিত মাত্রায়। বিশেষ করে মিষ্টিজাতীয় ফলমূল খুব কম পরিমাণে খেতে হবে। যেমনঃ কাঁঠালের ৩ থেকে ৪ কোষ বা ১টি পাকা আম, ১ ফালি তরমুজ ইত্যাদি। জাম, বেল, পেঁপে, আমড়া, লটকন ও পেয়ারা বেশি খেলে সমস্যা নেই।  

১৩। শাকসবজি

শাকসবজি হলো সবচেয়ে কম ক্যালরি এবং সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে এক বাটি সবজি খেতে পারেন অথবা টমেটো, শশা, কাঁচা পেঁপে, গাজর ইত্যাদি সালাদ হিসেবে খেতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে।

১৪। স্যুপ 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্ন্যাকস হিসেবে স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্ষুধা দূর হবে এবং প্রোটিন সরবরাহ করবে। তবে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই। বাড়িতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে চিকেন স্যুপ বানানোর চেষ্টা করুন।   

১৫। গ্রীন টি

যেকোনো ধরনের স্ন্যাকসের সাথে পানীয় জাতীয় কিছু না খেলে যেন তৃপ্তি হয় না। পানীয় হিসেবে চা বা কফি খেতে পারেন। সবচেয়ে উপকারী হবে গ্রীন টি পান করা। তবে অবশ্যই সেটা চিনি ছাড়া হতে হবে। 

গ্রীন টি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।  

References

Elliott, B. (2023, January 30). The 21 Best Snack Ideas If You Have Diabetes. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/best-snacks-for-diabetes

Réhault-Godbert, S. (2019, March 22). The Golden Egg: Nutritional Value, Bioactivities, and Emerging Benefits for Human Health. Retrieved from PubMed Central: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6470839/

Last Updated on January 3, 2024