ক্যালামাইন লোশন (Calamine lotion) হল এমন ওষুধ, যা হালকা চুলকানির (mild itching) জন্য ব্যবহার করা হয়। এই লোশন ছাড়পোকার কামড়, চিকেনপক্স, বিষাক্ত উদ্ভিদ এবং আরও অনেক কিছু দ্বারা সৃষ্ট চুলকানি, ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।

বেশিরভাগ মানুষের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না, তবে যদি কোনও ধরণের ত্বকের জ্বালা হয় তবে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা বন্ধ করা উচিত। একটা সময় ত্বকের যত্নে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা হতো। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে, মলিনতা বা বলিরেখা দূর করতে নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল ক্যালামাইন লোশন।

ক্যালামাইন লোশন ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ (OTC – Over The Counter), যা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ক্রয় করা যায়।

Table of Contents

ক্যালামাইন লোশন কি?

ক্যালামাইন, যা ক্যালামাইন লোশন নামেও পরিচিত, এটি একটি ওষুধ যা হালকা চুলকানির (mild itching) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ক্যালামাইন খনিজ থেকে তৈরি। এটি রোদে পোড়া, পোকামাকড়ের কামড়, পোড়া দাগে, শুষ্ক ত্বকে এবং অন্যান্য হালকা বা কম প্রদাহের জন্য ত্বকে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্রিম বা লোশন হিসাবে ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।

ক্যালামাইন লোশন কি জন্য ব্যবহৃত হয়?

ছাড়পোকার কামড়

পোকামাকড়ের কামড় এবং দংশনে ক্যালামাইন লোশন বেশ কার্যকর। ছাড়পোকার লক্ষণগুলি নির্মুল না হওয়া বা ছাড়পোকার কামড় চলে না যাওয়া পর্যন্ত দিনে কয়েকবার লোশনটি প্রয়োগ করতে হবে।

চিকেনপক্স

চিকেনপক্সের উপসর্গগুলি উপশম করতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।

দাদ

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পাশাপাশি, দাদের জন্য ক্যালামাইন লোশন বেশ কার্যকর। এই অবস্থার উপসর্গ থেকে কিছুটা উপশম পেতে সরাসরি ত্বকে লোশন প্রয়োগ করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

সাঁতারের চুলকানি (Swimmer’s itch)

সাঁতারের চুলকানির মতো ফুসকুড়িগুলির জন্য ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যায়। যদি নির্দিষ্ট পরজীবীযুক্ত পানিতে প্রতিদিন সাঁতার কাটা হয় তাহলে দেহে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

হিট র‍্যাশ (Heat rash)

হিট র‌্যাশের জন্যও ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যায়। এই ফুসকুড়ি ত্বকের নিচে আটকে পড়া ঘাম থেকে হয়। সাধারণত ঢাকা অংশে এগুলো বেশি হয়।

স্ক্যাবিস (Scabies)

স্ক্যাবিসের চুলকানি কমানোর জন্য, ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করা যায়। এটি স্ক্যাবিসের উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করে তবে এটি জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারেনা।

চিগার কামড় (Chigger bite)

চিগার এক ধরনের মাইট বা জীবাণু। যা মানুষের ত্বকে জন্মায়। তাদের কামড়ের কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি হতে পারে। চুলকানি উপশম করতে ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করা হয়।

পোড়া দাগে (Minor burn)

ক্যালামাইন ছোটখাটো পোড়া (minor burn) দাগ নির্মুলে বেশ কার্যকর।

ত্বকের যত্নে ক্যালামাইন লোশনের ভুমিকা

পোকামাকড়ের কামড় বা পোড়া দাগ নির্মুলের মতোই ত্বকের যত্নে ক্যালামাইন লোশনের ভুমিকা অপরিসীম।

ব্রণ

ব্রণের দাগ দূর করার জন্য ক্যালামাইন লোশন বেশ কার্যকর। এটি স্পট ট্রিটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্যালামাইনে রয়েছে জ়িঙ্ক অক্সাইড যা ব্রণের মহৌষধ। লালচে ব্রণের উপর ক্যালামাইন লোশন লাগিয়ে রাখলে ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যাবে, সংক্রমণও হবে না।

ত্বক আর্দ্র রাখতে

পুষ্টি আর প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা একইসঙ্গে ত্বককে জোগান দিতে হলে ক্যালামাইন লোশনের ভুমিকা অপরিসীম। ক্যালামাইনের গ্লিসারিন ত্বক আর্দ্র রাখে। মুখ শুকনো লাগলে অল্প ক্যালামাইন লোশন সারা মুখে লাগিয়ে নিলে, সাথে সাথে উজ্জ্বলতা আর আর্দ্রতা দুটোই পাওয়া যায়।

তেলতেলে ত্বকের যত্নে

মুখ খুব তেলতেলে হয়ে গেলে নাক, কপাল আর চিবুকে অল্প ক্যালামাইন লোশন মেখে নিলেই সহজেই মুক্তি মিলবে তেলাভাবের হাত থেকে। মুখ ধুয়ে ময়শ্চারাইজ়ার লাগানোর পর অল্প ক্যালামাইন লোশন মেখে নিলে, তেলতেলে ভাব থাকবে না, ত্বক থাকবে তরতাজা।

রোদের হাত থেকে সুরক্ষা (Sun tan)

সানস্ক্রিন লোশনের জনপ্রিয়তা যখন ছিল না, সেই সময়ও ত্বককে রোদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে ক্যালামাইন। মুখে মেখে নিলেই রোদের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবে ত্বক। এমনকী রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বককেও শীতল করে সুস্থ করে তুলতে পারে ক্যালামাইন।

ত্বকের প্রদাহ কমাতে

পোকার কামড় বা অ্যালার্জির কারণে ত্বক লাল হয়ে ফুলে গেলে বা চুলকালে ক্যালামাইন লোশন লাগালে উপকার পাওয়া যায়। ত্বকে জ্বালাভাব কমাতেও ক্যালামাইন দারুণ কাজ করে। জ্বালাভাব, চুলকুনি, লালচেভাব কমিয়ে নিমেষে ত্বক শীতল করতে পারে ক্যালামাইন।

মেকআপ বেস হিসেবে

যখন প্রাইমার, বিবি ক্রিম, ফাউন্ডেশনের মতো শব্দগুলো অপরিচিত ছিল, সে সময় মেয়েদের সাজগোজের প্রধান উপকরণ ছিল ক্যালামাইন। বিশেষ করে মেকআপ বেস হিসেবে ক্যালামাইন খুবই কাজের। পরিমাণমতো ক্যালামাইন সারা মুখে মেখে তা ত্বকে শুষে যেতে দিয়ে তারপর বাকি মেকআপ করে নিলে চমৎকার ফল পাওয়া যাবে।

ক্যালামাইন লোশন কীভাবে কাজ করে?

ক্যালামাইন লোশন হল জিঙ্ক অক্সাইড এবং ৫% আয়রন (ফেরিক) অক্সাইডের সংমিশ্রণ। জিঙ্ক অক্সাইড ত্বক রক্ষাকারী এবং প্রশান্তিদায়ক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং ফেরিক অক্সাইড ক্যালামাইন লোশনকে তার বিখ্যাত গোলাপী রঙ দেয়।

এছাড়াও ক্যালামাইন লোশনে সাধারণত কিছু নিষ্ক্রিয় উপাদান থাকে, যেমন:

  • বিশুদ্ধ পানি
  • গ্লিসারিন
  • ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড [Ca(OH)2]
  • বেন্টোনাইট ম্যাগমা

ক্যালামাইন একটি জেনেরিক ওষুধ হিসাবে পাওয়া যায়। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ইচিং এর উপাদান রয়েছে। এগুলো হলো:

  • বিটামিথাসন (Betamethasone)
  • হাইড্রোকোর্টিসোন (Hydrocortisone)
  • প্রেডনিসোলোন (prednisolone) (Frothingham, 2019)
  • ক্যালামাইন লোশনের ডোজ
  • দৈনিক ৩-৪ বার আক্রান্ত স্থানে ৩-৫ দিনের জন্য লাগাবেন।

ক্যালামাইন লোশনের ব্যবহারবিধি

  • প্রথমে আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ব্যবহার করার আগে বোতলটি ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
  • একটি তুলোর বলে লোশন ভিজিয়ে আর্দ্র করতে হবে।
  • তুলোর বল দিয়ে আক্রান্ত ত্বকের জায়গায় লোশন লাগিয়ে, ত্বকে লোশন শুকাতে দিতে হবে ।
  • প্রয়োজন হিসাবে প্রায়ই একই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। (Miller, 2021)

ক্যালামাইন লোশন কোথায় ব্যবহার করা যাবে?

ক্যালামাইন লোশন শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য।

ক্যালামাইন লোশন যেসব জায়গায় ব্যবহার করা উচিত নয়

  • খাওয়া বা গিলে ফেলা যাবে না
  • চোখের উপর ব্যবহার করা যাবে না
  • শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে ব্যবহার করা যাবে না , যেমন- নাক, মুখ, পায়ু অঞ্চল বা
  • যৌনাঙ্গের ভিতরে ব্যবহার করা যাবে না।

ক্যালামাইন লোশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারনত ক্যালামাইন লোশনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম। তবে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন- ত্বকের জ্বালা অনুভব, মুখ ও গলা ফুলে যাওয়া, শরীরে এলার্জি দেখা দেয়া। যদি এ ধরণের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে এটি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশনের ব্যবহার

গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন নিরাপদ। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উত্তম।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

ক্যালামাইন লোশন যদিও ওটিসি ড্রাগ, যা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যায়। তবে কোনো ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত মাত্রা বা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করা উচিত নয় যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। কোন কোন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে সেগুলো হলো –

  • যদি লক্ষণগুলো ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
  • লক্ষণগুলি যদি বারবার দেখা দেয়।
  • ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারের ফলে যদি কোনো এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমন – মুখ, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া।
  • কেউ যদি লোশন গিলে ফেলে।

তাহলে অবশ্যই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 References

Frothingham S. (2019, 12 oct). Uses for Calamine Lotion and How to Apply. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/calamine-lotion-uses#ingredients

Miller K. (2021, 10 july). When and How to Use Calamine Lotion for Itchy Skin, According to Dermatologists. Retrieved from Prevention: https://www.prevention.com/health/a36330219/calamine-lotion-uses/

Last Updated on March 13, 2023

Was this article helpful?
YesNo