ক্যালামাইন লোশন ওভার দ্যা কাউন্টার (OTC– over the counter) মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এটি ব্যবহার করার জন্য ডাক্তারের নির্দেশনা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। তবে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। তাই এই অনুচ্ছেদে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারের নিয়ম এবং এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ক্যালামাইন লোশন (Calamine lotion) হলো এক ধরনের ওষুধ যা হালকা চুলকানির (Mild itching) জন্য ত্বকে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। দাদ, চুলকানি, বিভিন্ন পোকামাকড়ের কামড়, ত্বকের শুষ্কতা এমনকি চিকেনপক্স দূর করা সহ নানা সমস্যার সহজ সমাধান হিসেবে এই লোশন বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
Table of Contents
- ক্যালামিন বা ক্যালামাইন লোশন কি? (Calamine Lotion Bangla)
- Calamine lotion এর কাজ কি?
- ক্যালামিন লোশন এর ব্যবহার (Calamine lotion uses in bengali)
- ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারের নিয়ম (How to apply calamine lotion)
- ত্বকের যত্নে ক্যালামাইন লোশনের ব্যাবহার
- ক্যালামাইন লোশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Calamine lotion side effects)
- কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
- FAQs About Calamine Lotion
- চুলকানির লোশন এর নাম কি?
- ক্যালামাইন লোশন কোথায় পাওয়া যায়?
- ক্যালামাইন লোশন এর মূল্য কত? (Calamine lotion price in Bangladesh)
- ক্যালামাইন লোশন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
- এই লোশন গোসলের পরে নাকি আগে ব্যবহার করতে হয়?
- ক্যালামিন লোশন কি ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন দেওয়া যাবে?
- গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
- ক্যালামাইন লোশন কোথায় ব্যবহার করা উচিত নয়?
ক্যালামিন বা ক্যালামাইন লোশন কি? (Calamine Lotion Bangla)
ক্যালামিন বা ক্যালামাইন, যা ক্যালামাইন লোশন নামেও পরিচিত, এটি একটি ওষুধ যা হালকা চুলকানির (mild itching) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ক্যালামাইন খনিজ থেকে তৈরি। এই ওষুধ ত্বকের প্রদাহ যেমন রোদে পোড়া, পোকামাকড়ের কামড়, পোড়া দাগ, ত্বকের শুষ্কতা ইত্যাদি থেকে মুক্তির জন্য লোশন হিসেবে ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।
Calamine lotion এর কাজ কি?
Calamine lotion ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি, ইনসেক্ট বাইট, সানবার্ন ও এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া উপশম করতে ব্যবহার করা হয়। এতে জিঙ্ক অক্সাইড এবং ৫% আয়রন (ফেরিক) অক্সাইড থাকে। জিঙ্ক অক্সাইড ত্বক ঠান্ডা করে এবং প্রদাহ কমায়। আর ফেরিক অক্সাইড এর জন্য ক্যালামাইন লোশনকে গোলাপী রঙ এর দেখায়।
এটি বিশেষভাবে চিকেনপক্স, পোকামাকড়ের কামড় ও র্যাশ কমাতে কার্যকর। এটি ত্বকের আরও অনেক বিভিন্ন সমস্যায় কিভাবে কাজ করে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
জিঙ্ক অক্সাইড এবং ফেরিক অক্সাইড ছাড়াও ক্যালামাইন লোশনে কিছু নিষ্ক্রিয় উপাদান থাকে। যেমন-
- বিশুদ্ধ পানি
- গ্লিসারিন
- ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড
- বেন্টোনাইট ম্যাগমা ইত্যাদি
ক্যালামিন লোশন এর ব্যবহার (Calamine lotion uses in bengali)
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যবহার নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ (cleveland clinic, 2022)
ছাড়পোকার কামড়
ছাড়পোকার কামড় বেশ যন্ত্রণাদায়ক। এর কামড় ত্বকে চুলকানি, লালচে দাগ ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকের এই প্রদাহ থেকে দ্রুত আরাম পেতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছাড়পোকার কামড়ে ক্যালামিন লোশন
চুলকানি কমায়: ক্যালামাইন লোশন ত্বক শীতল করে এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
জ্বালাপোড়া উপশম করে: এতে থাকা জিঙ্ক অক্সাইড প্রদাহ হ্রাস করে এবং ত্বককে আরাম দেয়।
প্রতিরোধমূলক কাজ করে: কামড়ের ফলে ইনফেকশন হতে পারে, ক্যালামাইন লোশন তা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
ছাড়পোকা কামড়ের প্রদাহ পুরোপুরি নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত দিনে কয়েকবার ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও যেকোন পোকামাকড়ের কামড়ে ক্যালামাইন লোশন বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
চিকেনপক্স (Calamine lotion for chickenpox)
চিকেনপক্সের ফলে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও জ্বালাপোড়া হয়, যা খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। এ সময় ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।
চিকেনপক্সে ক্যালামাইন লোশন
চুলকানি কমায় – এতে থাকা উপাদান ত্বক ঠান্ডা করে এবং চুলকানি কমায়।
জ্বালাপোড়া কমায় – ফুসকুড়ির কারণে হওয়া ত্বকের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুরক্ষা দেয় – ত্বক শুকিয়ে গেলে চুলকানোর প্রবণতা বাড়ে, ক্যালামাইন লোশন ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ক্ষত তৈরির ঝুঁকি কমায়। সেই সাথে এতে ত্বকের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
দাদ (Ringworm)
দাদ হলো ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ, যা সাধারণত গোলাকার, লালচে ও চুলকানিযুক্ত দাগ সৃষ্টি করে। এটি সংক্রামক এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন – হাত, পা, মাথার ত্বক, ঘাড় ও কুঁচকি।
দাদ এ ক্যালামাইন লোশন এর উপকারিতা
Calamine lotion for itching– দাদ আক্রান্ত স্থানে অতিরিক্ত চুলকানি হয়। এসময় ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারে সাময়িকভাবে আরাম পাওয়া যায়। ত্বক ঠান্ডা রাখে – দাদ আক্রান্ত স্থানে অতিরিক্ত চুলকানির পর প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া কিংবা প্রদাহ হয়। ফলে ক্যালামিন লোশনে থাকা জিঙ্ক অক্সাইড প্রদাহ কমিয়ে ত্বককে আরাম দেয়।
সতর্কতা:
ক্যালামাইন লোশন দাদ নিরাময় করতে পারে না, এটি শুধু সাময়িক আরাম দেয়।
দাদের জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।
সাঁতারের চুলকানি (Calamine lotion for allergy)
সাঁতারের চুলকানি বা Swimmer’s Itch (Cercarial Dermatitis) হলো ত্বকের একটি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত নোংরা বা দূষিত পানিতে সাঁতার কাটার পর হয়ে থাকে। এতে ত্বকে ছোট ছোট লালচে দানা, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে।
এক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন আক্রান্ত স্থানের ত্বকে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে বেশ উপকার পাওয়া যায়।এই লোশন আক্রান্ত স্থানে হালকা আবরণ তৈরি করে, যা চুলকানি, ত্বকের লাল হয়ে যাওয়া ও অস্বস্তি কমায়।
হিট র্যাশ বা ঘামাচিতে ক্যালামাইন লোশন এর ব্যবহার
হিট র্যাশ (Heat rash) বা ঘামাচি সাধারণত অতিরিক্ত গরমে ও ঘামের কারণে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে হয়। এটি লালচে ফুসকুড়ি, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।এই ফুসকুড়ি ত্বকের নিচে আটকে পড়া ঘাম থেকে হয় এবং সাধারণত শরীরের ঢেকে থাকা অংশে বেশি হয়।
হিট র্যাশের জন্যও ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যায়। এটি চুলকানি ও ত্বকের জ্বালা কমিয়ে আরাম দেয়। সেই সাথে এই লোশন ঘামাচির সমস্যায় ত্বক শুষ্ক রেখে ত্বকের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, যা ঘামাচি দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
স্ক্যাবিসে (Scabies) ক্যালামাইন লোশন
স্ক্যাবিস হলো একটি সংক্রামক চর্মরোগ, যা এক ধরনের পরজীবী সংক্রমণের ফলে হয়। স্ক্যাবিস সাধারণত আঙ্গুলের ফাঁকে, কবজিতে, কনুইয়ে, কোমরে ও বগলে বেশি হয় এবং সহজেই একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।
ক্যালামাইন লোশন স্ক্যাবিস নিরাময় করতে পারে না, তবে এটি চুলকানি ও অস্বস্তি সাময়িকভাবে কমিয়ে আরাম দিতে পারে। বিশেষ করে এটি ঘুমের সময় আরাম দেয় কারণ স্ক্যাবিসের চুলকানি রাতের বেলায় বাড়তে পারে। ফলে ক্যালামাইন লোশন ত্বকে আরাম দেয় এবং চুলকানির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত কমায়।
চিগার কামড় (Chigger Bite)
চিগার (Chigger) হলো একটি লার্ভা পর্যায়ের পরজীবী, যা মানুষের ত্বকে লেগে তীব্র চুলকানি, লালচে দানা ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ঘাসযুক্ত এলাকা, বাগান ও ঝোপঝাড়ে বেশি পাওয়া যায়।
ক্যালামাইন লোশন জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমিয়ে ত্বকের আরাম দেয়। এছাড়াও এটি ত্বক শুষ্ক ও সুরক্ষিত রাখে। এটি ত্বকে একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা চিগারের লালাগ্রন্থির প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
পোড়া দাগ
শরীরের কোনো স্থানে সামান্য পুড়ে গেলে অথবা অতিরিক্ত সূর্যের তাপের ফলে ত্বকে সৃষ্ট পোড়া দাগ দূর করতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে।
ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারের নিয়ম (How to apply calamine lotion)
ক্যালামাইন লোশন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া, অ্যালার্জি ও ফুসকুড়ি দূর করতে সহায়ক। এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
১. সাধারণ ব্যবহারের নিয়ম
- প্রথমে আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। (MILLER, 2021)
- তারপর ত্বক পরিষ্কার টিস্যু কিংবা কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন।
- ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার আগে বোতল ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
- তুলা বা হাতের সাহায্যে লোশন আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন।
- লোশন স্বাভাবিকভাবে ত্বকেই শুকাতে দিন, ধোয়ার প্রয়োজন নেই।
- দিনে ২-৩ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২. পোকামাকড়ের কামড় (Insect Bite)
- আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে নিন।
- চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে আক্রান্ত স্থানে সরাসরি লাগান।
- চুলকানো থেকে বিরত থাকুন, যাতে সংক্রমণ না হয়।
৩. চিকেনপক্স (Chickenpox)
চিকেনপক্সের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মেই ক্যালামিন লোশন প্রয়োগ করবেন। তবে,
- এক্ষেত্রে আক্রান্ত ত্বক সাবান ছাড়াই নরম কাপড় বা কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- ফুসকুড়ির কারণে চুলকানি হলে হালকা করে লোশন লাগান।
৪. দাদ (Ringworm)
- আক্রান্ত স্থান কুসুম গরম পানি ও অ্যান্টিফাঙ্গাল সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- দাদ একটি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, যা ক্যালামাইন লোশন সারাতে পারে না। এতে
- অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধই প্রধান চিকিৎসা।
- তবে চুলকানি কমাতে সহায়ক, সঠিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধের পাশাপাশি ব্যবহার করুন।
৫. ঘামাচি (Heat rash) ও সাঁতারের চুলকানি (Swimmer’s Itch)
- সাঁতারের পর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হলে পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে নিলে আরাম পাওয়া যায়।
- এরপরও চুলকানি কিংবা প্রদাহ হলে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যায়।
- ঘামাচি ও সাঁতারের চুলকানিতে ত্বক পরিষ্কার করে সাধারণ লোশন লাগানোর নিয়মেই হাতে নিয়ে ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করা যায়।
ত্বকের যত্নে ক্যালামাইন লোশনের ব্যাবহার
ক্যালামাইন লোশন শুধু চুলকানি বা জ্বালাপোড়া কমানোর জন্যই নয়, এটি ত্বকের নিয়মিত যত্নেও কার্যকর। এর মূল উপাদান জিঙ্ক অক্সাইড ও ফেরিক অক্সাইড, যা ত্বককে ঠান্ডা রাখে, অয়েল কন্ট্রোল করে এবং নানান ত্বকের সমস্যার সমাধান করে।
১. অতিরিক্ত তেলতেলে ত্বক কমাতে
- এটি অয়েল-ফ্রি ফিনিশ দেয়, ফলে তৈলাক্ত ত্বক শুষ্ক ও ফ্রেশ থাকে।
- মুখে হালকা করে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন, অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব কমবে।
২. ব্রণ ও অ্যাকনের জন্য
- ক্যালামাইন লোশন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হওয়ায় ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
- সেই সাথে ব্রণের ফলে ত্বকে দাগ সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে থাকে।
- রাতে ঘুমানোর আগে ব্রণের ওপর সরাসরি লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন।
৩. রোদে পোড়া দাগ ও সানবার্ন কমাতে
- রোদে পোড়া ত্বকে ক্যালামাইন লাগালে জ্বালাপোড়া ও লালচে ভাব কমে।
- রোদে বের হওয়ার আগে ও পরে এটি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
তবে সানস্ক্রিনের পরিবর্তে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যাবে না।
৪. মেকআপ বেস হিসেবে
- ক্যালামাইন লোশন মেকআপের আগে প্রাইমার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা মেকআপ দীর্ঘক্ষণ স্থির রাখতে সাহায্য করে।
- এটি ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে মেকআপ গলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।
এছাড়াও ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক রাখা, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ত্বকের সুরক্ষা যেমন ত্বক শুষ্ক রেখে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যালামিন লোশন বেশ উপকারী।
ক্যালামাইন লোশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Calamine lotion side effects)
ক্যালামাইন লোশন সাধারণত নিরাপদ ও ত্বকের জন্য সহনশীল, তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত শুষ্কতা ও খসখসে ত্বক: ক্যালামাইন লোশন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়, ফলে শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
দীর্ঘসময় ব্যবহারে ত্বক খসখসে ও টানটান লাগতে পারে।
এলার্জি হতে পারে: সংবেদনশীল ত্বকে লালচে দাগ, ফোলাভাব বা চুলকানি হতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যবহারে র্যাশ বা ব্রণের সমস্যা: এটি সাধারণত ব্রণ কমাতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণ বাড়তে পারে।
বিশেষ করে সংবেদনশীল বা ব্রণপ্রবণ ত্বকে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
দীর্ঘদিন ব্যবহারে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যাওয়া:ক্যালামাইন একটি অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringent), যা ত্বক শুষ্ক করে ও তেলতেলে ভাব কমায়।তবে নিয়মিত বা অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চোখ ও নাকের সংস্পর্শে সমস্যা:যদি ক্যালামাইন লোশন চোখ, নাক বা মুখের ভেতরে চলে যায়, তবে চুলকানি, জ্বালা বা অস্বস্তি হতে পারে।এমন হলে তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে লোশন ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
ক্যালামাইন লোশন একটি ওটিসি ড্রাগ যা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যায়। তবে কোনো ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় বা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমনঃ
- যদি লক্ষণগুলো ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
- লক্ষণগুলি যদি বারবার দেখা দেয়
- ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার ফলে যদি অ্যালার্জিক রিয়াকশন দেখা দেয়
- লোশন গিলে ফেলা অথবা চোখের ভেতরে যাওয়া।
FAQs About Calamine Lotion
চুলকানির লোশন এর নাম কি?
চুলকানি দূর করার লোশনগুলোর মধ্যে ক্যালামাইন লোশন বেশ জনপ্রিয় এবং অন্যতম, যা ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া প্রশমিত করতে সাহায্য করে। চিকেনপক্স, ঘামাচি, পোকার কামড়, দাদ, রোদে পোড়া, নোংরা পানিতে সাঁতারের জন্য হওয়া চুলকানি ইত্যাদিতে ক্যালামিন লোশন বেশ উপকারী।
ক্যালামাইন লোশন কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে ক্যালামাইন লোশন স্থানীয় ফার্মেসি, সুপারশপ, অনলাইন মেডিকেল স্টোর এবং হাসপাতালের ওষুধের দোকানে সহজেই পাওয়া যায়। এটি একটি OTC-Over The Counter মেডিসিন যা আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কিনতে পারবেন।
ক্যালামাইন লোশন এর মূল্য কত? (Calamine lotion price in Bangladesh)
বাংলাদেশে ক্যালামাইন লোশনের মূল্য ব্র্যান্ড, প্রস্তুতকারক এবং বিক্রয়স্থানের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, স্থানীয় ফার্মেসি বা অনলাইন স্টোরে ১০০ মিলিলিটার বোতলের দাম প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট মূল্যের জন্য নিকটস্থ ফার্মেসি বা অনলাইন স্টোরে যোগাযোগ করার পরামর্শ রইল।
ক্যালামাইন লোশন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
ক্যালামাইন লোশন শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক অংশে ব্যবহার করবেন এবং অবশ্যই প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন। কোন ক্ষেত্রে কিভাবে ব্যবহার করা উচিত তার সঠিক নিয়ম উপড়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই লোশন গোসলের পরে নাকি আগে ব্যবহার করতে হয়?
এই লোশনটি ব্যবহারের পূর্বে আক্রান্ত স্থান ভালো করে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। যদি ত্বকের কোন এক স্থানে পোকার কামড় হয় তবেতো গোসল করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি ঘামাচি, নোংরা পানিতে সাঁতার এর কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে পুরো শরীরে চুলকানি হয় তাহলে গোসল করে পুরো শরীর পরিষ্কার করে, শরীর শুকিয়ে নিয়ে তারপর এই লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যালামিন লোশন কি ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন দেওয়া যাবে?
দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ত্বকে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার জন্য শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। আর দুই বছরের অধিক বয়সী বাচ্চাদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ ৪ বারের বেশি ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা উচিত নয়।
গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন বাহ্যিকভাবে ত্বকে ব্যবহার করার ফলে সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।তবে গবেষকরা একদম সুনিশ্চিত ভাবে কিছু বলেনি। আর তাই গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম।
তবে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে মায়ের বুকে ব্যাবহার করলে তা যেন সন্তানের মুখে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ক্যালামাইন লোশন কোথায় ব্যবহার করা উচিত নয়?
- ক্যালামাইন লোশন খাওয়া যাবে না।
- চোখের উপর সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে যেন চোখের ভেতরে ঢুকে না যায়।
- নাক, মুখ, পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গের ভেতরে ব্যবহার করা যাবে না।
- কাটা জায়গায় ক্যালামিন লোশন ব্যবহার করা যাবেনা।
References
cleveland clinic. (2022, June 06). Calamine Lotion. Retrieved from cleveland clinic: https://my.clevelandclinic.org/health/drugs/23338-calamine-lotion
MILLER, K. (2021, July 10). When and How to Use Calamine Lotion for Itchy Skin, According to Dermatologists. Retrieved from Prevention: https://www.prevention.com/health/a36330219/calamine-lotion-uses/
Last Updated on February 21, 2025
Leave A Comment