ব্রণ একটি কমন স্বাস্থ্য সমস্যা যা যেকোনো বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে ব্রণ হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রণের জন্য তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। বরং কতিপয় ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে ব্রণ দূর করা সম্ভব হয়।

এই অনুচ্ছেদে ব্রণ দূর করার ১৪টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রণের জন্য কখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে তা জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

ব্রণ কি?

ব্রণ হলো ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ। ত্বকের হেয়ার ফলিকলে সেবাসিয়াস নামক ক্ষুদ্র গ্রন্থি থাকে যা থেকে সেবাম নিঃসৃত হয়। সেবাম ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে।

অতিরিক্ত পরিমাণ সেবাম নিঃসরণ বা হেয়ার ফলিকলের প্রদাহ জনিত কারণে ত্বকের উপরিভাগে ছোট ফোলাভাব হলে তাকে ব্রণ বলা‌ হয়।

ব্রণের ফলে ব্যথা অনুভব হয়, লাল হয়ে যায় এবং পুঁজ বের হতে পারে। এছাড়াও ব্রণের ফলে ত্বকে দাগ পড়ে যেতে পারে। 

কি কারণে ব্রণ হয়?

ব্রণের সবচেয়ে কমন কারণ হলো শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হওয়া। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও আরো যেসব কারণে ব্রণ হয় তা হলোঃ  

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস 
  • ত্বকের সঠিক যত্ন না নেওয়া 
  • স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব 
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস  
  • ব্রণ হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস বা জিনগত প্রভাব 
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ   
  • পলিসিস্টি ওভারী সিনড্রোম নামক মহিলাদের রোগ  
  • ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ 
  • জন্মনিরোধক পিল সেবন করা 

ব্রণের ১৪টি ঘরোয়া প্রতিকার 

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Huizen, 2023) 

১। ব্রণ হাত লাগানো যাবে না 

ব্রণে ব্যথা বা অস্বস্তিবোধ হলেও নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না। এতে ব্রণের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ময়লা নখ দিয়ে ব্রণ খোঁচানো হলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

ব্রণ থেকে পুঁজ বা সাদা পদার্থ বের হলে পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। মুখ ধোয়ার সময় ত্বক আলতোভাবে ঘসতে হবে। ত্বকে নখ দিয়ে আঁচড়ানো যাবে না। সবসময় নখ ছোট রাখতে হবে।

২। ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন

ত্বক পরিষ্কারের জন্য পানি দিয়ে ঘন ঘন মুখ ধোয়া যেতে পারে। তবে বার বার ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না। দিনে সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়।  

মুখ ধোয়ার জন্য কখনোই সাবান ব্যবহার করা যাবে না। কারণ সাবানের pH মান ৮ থেকে ৯ হয়ে থাকে। অর্থাৎ সাবান ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত যা মুখের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। উল্লেখ্য, ফেসওয়াশ ক্ষারীয় নয়। 

৩। অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার নয়  

make ups

অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই মেকআপ ব্যবহার যতটা সম্ভব কমাতে হবে। এছাড়াও মেকআপ ব্যবহারের পর দিনশেষে সেগুলো রিমুভ করতে হবে। 

প্রসাধনী ‘Oil-free’ বা ‘Non-comedogenic’ লেখা দেখে কিনতে হবে যা ত্বকের হেয়ার ফলিকল বন্ধ করে দেয় না। উল্লেখ্য, ত্বকের হেয়ার ফলিকল বন্ধ হয়ে গেলে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

৪। সানস্ক্রিন ব্যবহার 

অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। 

তীব্র রোদে যাওয়া যাবে না। একান্তই বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। 

৫। পর্যাপ্ত পানি পান করা 

ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

পর্যাপ্ত পানি, শরবত, ডাবের পানি, রসালো ফলমূল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রণ সেরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

৬। সঠিক খাদ্যাভ্যাস     

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমনঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার, চিপস, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড ইত্যাদি যতটা সম্ভব বর্জনের চেষ্টা করতে হবে।  

যেসব খাবার ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয় তা হলো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, মাছ, ইয়োগার্ট, টক দই ইত্যাদি। এগুলো খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। 

৭। ধুমপান ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে

ধুমপান ও মদ্যপানের সাথে ব্রণ হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা জরুরী।

৮। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে 

অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত ইয়োগা ও মেডিটেশন চর্চা করতে পারেন যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।‌

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন টিপস জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

৯। গ্রিন টি পান করা

গ্রিন টি প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পানীয় যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস ব্রণ দ্রুত সেরে যাওয়া এবং ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিতে পারে। 

ব্ল্যাক টি ও কফির তুলনায় গ্রিন টি কম ক্যাফেইন সমৃদ্ধ। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ফ্লেভার বৃদ্ধির জন্য গ্রিন টিতে লেবু, লবঙ্গ, আদা ও পুদিনা যোগ করতে পারেন। 

গ্রিন টি পানের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।  

১০। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। 

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়। 

১১। এলোভেরা 

aloevera

ত্বকে বাহ্যিকভাবে এলোভেরা ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ দূর করে এবং ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে। 

এলোভেরার পাতা থেকে থকথকে জেলি সংগ্রহ করে ত্বকে লাগাতে হবে। লাগানোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দৈনিক ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।  

১২। মধু 

ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে মধু ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে। কটনের সাহায্যে ব্রণের স্থানে সামান্য মধু লাগিয়ে রাখুন।

১৩। নারিকেল তেল

নারিকেল তেলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে। নারিকেল তেল সহজলভ্য এবং চুল ও ত্বকের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ব্রণের স্থানে সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল লাগালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই পিউর বা খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। 

১৪। টি ট্রি অয়েল (Tea tree oil) 

টি ট্রি অয়েল বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলে ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে। (Klein, 2023) 

টি ট্রি অয়েল নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা পানির সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।   

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে? 

যেসব ক্ষেত্রে ব্রণের জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের (ডার্মাটোলজিস্ট) শরণাপন্ন হতে হবে তা হলোঃ 

  • ব্রণের‌ ফলে ত্বকে গভীর ক্ষত হলে 
  • ঘন ঘন ব্রণ হওয়ার প্রবণতা 
  • ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে ব্রণ নিরাময় না হলে  
  • ব্রণ হওয়ার সাথে অন্য কোনো রোগের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে হলে। 

ব্রণের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও মুখে সেবনের ওষুধ করা সহ ক্ষেত্রেবিশেষে ইনজেকশন ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। মেয়েদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোমের কারণে ব্রণ হলে চিকিৎসার জন্য গাইনী ডাক্তার বা হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

Bibliography

Huizen, J. (2023, January 12). 15 home remedies for acne. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/322455

Klein, E. (2023, February 14). How to Get Rid of Acne: 14 Home Remedies for Pimples. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/13-acne-remedies

Last Updated on January 7, 2024