হাঁপানি বা অ্যাজমা হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। অ্যাজমা রোগের ক্ষেত্রে ফুসফুসের সুক্ষ্ম বায়ু নালীতে প্রদাহ, মিউকাস জমা হওয়া বা বায়ু নালী সরু হয়ে যাওয়ার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাঁপানি রোগের অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়, বুকে ব্যথা হয় এবং রাতের বেলায় শুকনো কাশি হয়ে থাকে।

হাঁপানি রোগীদের জন্য ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট রয়েছে যা সেবনের ফলে লক্ষণ নিরাময় হয়ে থাকে। তবে হাঁপানি একদম ভালো হয়ে যায় না। এই অনুচ্ছেদে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের ৮টি সেরা সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগের ওষুধ  

যেসব ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট হাঁপানি রোগীদের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Lee, 2022)  

১। ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine) 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এলার্জি জনিত কারণে হাঁপানির লক্ষণ বেড়ে যেতে দেখা যায়। এলার্জি নিয়ন্ত্রণের জন্য এন্টি-হিস্টামিন গোত্রের ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine) সেবন করা উপকারী হবে যা বাজারে নিম্নলিখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়।  

  • Alanin®
  • Axodin®
  • Axofen®
  • Dinafex®
  • Fenadin®
  • Fenofex®
  • Fexo®
  • Fexofast® 

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য Fexofenadine ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে একবার সেবন করতে হয়।

ফেক্সোফেনাডিন একটি ওটিসি (OTC- over the counter) মেডিসিন যা ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়াই সেবন করা যেতে পারে। তবে একটানা দীর্ঘদিন ধরে সেবন করার জন্য এবং বাচ্চাদের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলার প্রয়োজন পড়ে। 

২। মন্টোলুকাস্ট (Montelukast) 

অ্যাজমা নিরাময়ের জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধটি হলো মন্টোলুকাস্ট (Montelukast) যা নিম্নলিখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়। 

  • Aeron®
  • Airflow®
  • Airway®
  • Arocast®
  • Arovent®
  • M-Kast®
  • M-Lucas®
  • Monas®
  • Monocast®
  • Montair®
  • Montela®
  • Montex®
  • Montilab®

এটি একটি প্রেসক্রিপশন মেডিসিন যা চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত দিনে ১ বার ১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট সেবন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

মন্টোলুকাস্ট সেবনের ফলে জটিল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে ঘুম ঘুম ভাব হয়। তাই রাতের বেলায় ওষুধ সেবন করা উত্তম। তাছাড়া হাঁপানির লক্ষণ সাধারণত রাতেই বেশি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

৩। ইনহেলার (Inhaler)  

Inhaler For Asthma Patient

অ্যাজমা রোগীদের জন্য সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা হলো ইনহেলার ব্যবহার করা যা জরুরী ভিত্তিতে অ্যাজমার লক্ষণ নিরাময়ে সাহায্য করে। ইনহেলারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে যার মধ্যকার একটি কমন ওষুধ হলো সলবিউটামল (Salbutamol) যা নিচে উল্লেখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়।  

  • Asmalin®
  • Azmasol®
  • Brodil®
  • Proventa®
  • Pulmocare®
  • Salburen®
  • Salmolin®
  • Salomax®
  • Saltide®
  • Sultolin®
  • Ventil® 

ইনহেলার জাতীয় ওষুধ গ্রহণের ব্যাপারে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। অ্যাজমা রোগীদের জন্য চিকিৎসক কতৃক নির্দেশিত ইনহেলার সবসময় হাতের কাছে রাখতে হবে যেন লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথেই ইনহেলার ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ইনহেলার ব্যবহার করার পূর্বে কয়েকবার ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। 

৪। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড  

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইমিউনোগ্লোবিন ই (IgE) কমানোর মাধ্যমে অ্যাজমার লক্ষণ নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অ্যাজমা রোগীদের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করা উপকারী হবে। 

প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবারের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যার মধ্যে মাছ হলো অন্যতম। প্রায় সব ধরনের মাছ থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তবে সামুদ্রিক মাছে সবচেয়ে বেশি রয়েছে। ডিম, দুধ, বাদাম, তিসি, সয়াবিন, কালোজিরা, শিমের বিচি, চিয়া সীড, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি থেকেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। 

খাবার ছাড়াও বাজারে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়। যেসব নামে পাওয়া যায় তা হলোঃ  

  • MaxOmega®
  • Neomega®
  • Omesoft®
  • Trumega® 

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যাপসুল প্রতিদিন ১টি করে খেতে হবে। গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট সেবনের ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

৫। ভিটামিন ডি (Vitamin D) 

অ্যাজমার লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানোর জন্য দৈনিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট (সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন) রোদ পোহাতে হবে। সূর্যের তাপ সরাসরি ত্বকে লাগলে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। রোদ পোহানোর সময় শরীর যতটা সম্ভব অনাবৃত রাখতে হব। এছাড়াও ত্বকে কোনো ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে না। 

ভিটামিন ডি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ইনজেকশন ফর্মে নিম্নলিখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়।  

  • Aristo D3®
  • D-Balance®
  • D-Best®
  • D-Cap®
  • D-gain®
  • D-Revive®
  • D-Rise®
  • D-Star®
  • Delight®
  • Dosical®
  • Radivit-D®
  • Vital-D® 

ভিটামিন ডি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সপ্তাহে ১টি করে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

৬। কালোজিরা (Nigella Sativa) 

Nigella Sativa

কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nigella Sativa যার প্রদাহ নাশক গুণাবলী অ্যাজমার লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। (Orenstein, 2016) 

কালোজিরা সরাসরি খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও বাজারে কালোজিরা সাপ্লিমেন্ট কিনতে পাওয়া যায়। 

  • Aliksir®
  • D-Sefa®
  • HollySeed®
  • Nilagel®

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সকালে ও রাতে ১টি করে ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। আর ছোটদের জন্য দিনে একবার ১টি ক্যাপসুল সেবন করলেই যথেষ্ট হবে। গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করতে হবে। 

৭। স্পিরুলিনা (Spirulina) 

অ্যাজমার চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে স্পিরুলিনা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশে যেসব নামে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায় তা হলোঃ  

  • Acme’s Spirulina®
  • Arulina®
  • Brogel®
  • Immuna®
  • Lina®
  • Natlina®
  • Navit®
  • Nutrilina®
  • Nutriva® 
  • Pirulin®
  • Protinavit®
  • Spirucap®
  • Vital protein®
  • Vitalina® 

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪টি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য স্পিরুলিনা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। 

৮। এন্টি-অক্সিডেন্ট (Antioxidant) 

এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অ্যাজমার লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রায় সবধরনের ফলমূল ও শাকসবজি থেকে এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে।  

ভিটামিন এ, সি, ই ইত্যাদি এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন খাবার থেকে এই ভিটামিনগুলো পাওয়া যায়। 

  • গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, টমেটো, পাকা আম, পাকা পেঁপে, তরমুজ, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, ছোট মাছ ইত্যাদি থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। 
  • অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেল, বাদাম, অ্যাভোকাডো, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, পালং শাক ও ডিম হলো ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার। 
  • ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, আমলকী, বরই, পেঁপে,‌ আনারস, জাম, টমেটো, পুদিনাপাতা, লেটুসপাতা ইত্যাদি।

এছাড়াও সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন এ, সি, ই ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায় যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উত্তম। 

ভিটামিন এ

  • A-Forte®
  • Lifil-A®
  • Ovit-A®
  • Ratinol Forte®
  • Vis-A® 

ভিটামিন সি

  • Ascobex®
  • Ascorin®
  • C-Rich®
  • Ceevit®
  • Nutrivit-C® 

ভিটামিন ই

  • Alfa-E®
  • Biovit-E®
  • E-Cap®
  • E-Gel®
  • Inovit-E® 

অ্যাজমা রোগীদের জন্য শুধু সাপ্লিমেন্টের উপর ভরসা করলে চলবে না। সঠিক চিকিৎসার জন্য বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। 

References

Lee, D. S. (2022, June 14). Are There Any Supplements That Can Help Asthma? Retrieved from Health Match: https://healthmatch.io/asthma/asthma-supplements

Orenstein, B. W. (2016, September 02). 8 Dietary Supplements That May Help Your Asthma. Retrieved from Everyday Health: https://www.everydayhealth.com/hs/adult-asthma/dietary-supplements/

Last Updated on November 11, 2023