আমাদের দেশে প্রচলিত এক রোগ হচ্ছে খিচুনি (seizure) বা মৃগী রোগ (epilepsy)। এটি একটি স্নায়ুবিক রোগ। জেনেটিক সমস্যার কারণে এ রোগ হয়। বাচ্চা বা বয়স্ক যেকোন বয়সে হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে এ রোগের জন্য অনেক চিকিৎসা বের হয়েছে। অনেক ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষ এখন সুস্থ আছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে। বাংলাদেশেও এর চিকিৎসা রয়েছে।
গাবাপেনটিন কি?
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) এক ধরনের ওষুধ যা সাধারণত খিচুনি (seizure) বা মৃগী (epilepsy) রোগে ব্যবহ্ত হয়।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) হচ্ছে জেনেরিক (Generic) বা সাধারণ নাম যা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নির্বাচিত বানিজ্যিক নামে (Trade name) বাজারজাতকরণ করে থাকে। যেমন:
- GABA®
- EPIPEN®
- GABASTAR®
- GABATIN®
- GABAPEN®, ইত্যাদি।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিসের জন্য অনুমোদিত?
- খিচুনি
- মৃগী রোগ
- স্নায়ুবিক প্রদাহ (Neuropathic pain)
- ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথী
- রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রম (restless leg syndrome)
- ফাইব্রমাইলজিয়া (Fibromyalgia)
- পোস্টমেনোপোজাল (Postmenopausal hot flashes syndrome)
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) ডোজ বা মাত্রার নিদের্শনাবলী?
বয়স্কদের ক্ষেত্রেঃ
১২ বছর বা অধিক বয়সের ক্ষেত্রে : প্রাথমিক অবস্থায় ৩০০মি.গ্রা; দৈনিক ৩বার এবং ধীরে ধীরে এর ডোজ বাড়ানো হয়।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে:
৩-১২বছরের ক্ষেত্রে :(১০-১৫) মি. গ্রা/কেজি/দৈনিক
৫-১২ বছরের ক্ষেত্রে :(২৫-৩৫) মি. গ্রা/কেজি/দৈনিক
তবে গাবাপেনটিন ওটিসি (OTC-Over the Counter) ক্যাটাগরির ওষুধ নয় তাই এটি ডাক্তারের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যবহার করা যায় না।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কী কী ডোজ ফর্মে পাওয়া যায়?
সাধারণত গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) বাজারের ট্যাবলেট (Tablets), ক্যাপসুল (Capsule) ওরাল সলিউশন (Oral solution) হিসেবে পাওয়া যায়।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিভাবে গ্রহণ করা উচিত?
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) অ্যান্টি এপিলেপটিক (Adjunct anti epileptic drug) গ্রুপের ওষুধ। এটি খাবারের আগে বা পরে খাওয়া যায়।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) এর সাথে যেসব ওষুধ একত্রে নেওয়া ঠিক নয়
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিছু কিছু ঔষুধের সাথে খাওয়া ঠিক নয়। এতে ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এ ওষুধগুলো হলো:
- ব্যাথা নাশক ওষুধ: যেমন- মরফিন (Morphine) একত্রে খেলে ক্লান্তি ভাব, মাথা ঘুরানো সমস্যা দেখা দেয়।
- এন্টি ডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ (Antidepressant drug): Amitriptyline বা ফ্লুক্সোটিন (Fluoxetine)
- মানসিক ঔষুধ (Antipsychotic drug): সিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia) বা বাইপলার সমস্যা (bipolar disorder) রোগের ঔষুধের সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়।
- ম্যালেরিয়া: মেফলোকুইন (Mefloquine)
হারবাল ঔষুধ - ট্রামাডল (Tramadol): এটি সেফ ড্রাগ কিন্তু গাবাপেনটিন এর সাথে খেলে শরীর দুর্বলতা, মাথা ঘুরানো ভাব দেখা যায়
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি?
- অসম ক্রিয়া (Ataxia)
- তন্দ্রাচ্ছন্নভাব (Drowsiness)
- মাথাব্যথা
- অবসাদ (Fatigue)
- মাথা ঘুরানো (Dizziness)
- ওজন বাড়া (weight gain)
- পেশি ব্যাথা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম
- ক্ষুধা মন্দা (Anorexia)
- ট্রেমর (tremor)
- রাইনিটিস (rhinitis)
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিডনি রোগীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ?
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কিডনি রোগীদের গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন মায়োটক্সিসিটি (Myotoxicity), রেবডোমায়োলাইসিস (Rabdomyolisis), রেনাল ফেইলর (renal failure), ইত্যাদি।
এমনকি অপ্রয়োজনে/ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতীত গাবাপেনটিন সেবনে যাদের আগে কিডনি ভালো ছিল তাদেরও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) ব্যবহারে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) নিয়ম করে খেতে হবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খেতে হবে। হঠাৎ করে এ ওষুধ ছেড়ে দেওয়া যাবে ন। এটি বন্ধ করতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমিয়ে এনে বন্ধ করতে হবে।
গর্ভবতী মা, স্তন্যদানকালে এবং কিডনি রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। (Rocha, S.)
গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কি নেওয়া যাবে?
গর্ভবতী মায়েদের এ ওষুধ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ঔষধে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। যদি গর্ভবতী মায়ের এই ওষুধ প্রয়োজন হয় তবে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কম মাত্রায় ব্যবহার করতে পারবে।
দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) ব্যবহার করা কি যাবে?
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হয়।এটি নবজাতক শিশুর দুধপানে প্রভাব ফেলে। তাই মায়ের এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) শুরুর আগে ডাক্তারকে কি কি বিষয় অবহিত করতে হবে?
- কিডনি বা লিভারে কোনো সমস্যা থাকলে
- ফুস্ফুসে কিংবা শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা থাকলে
- ডায়াবেটিস রোগী হলে
- বিষন্নতা, মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার আশ্রয়ের চিন্তা থাকলে
- গর্ভবতী মা বা দুগ্ধদানকারী মা হলে অবশ্যই ডাক্তারকে অবহিত করতে হবে।
Reference
Rocha, S. (2019). Differential effects of anti epileptic drugs on human bone cells. Retrieved from National Library of Medicine: https://www.ninds.nih.gov/health-information/clinical-trials/maternal-outcomes-and-neurodevelopmental-effects-antiepileptic-drugs-monead
Last Updated on March 4, 2023
Leave A Comment