সুন্দর সতেজ ত্বক কে না চায়। কিন্তু সারাদিনের ব্যাস্ত নগরজীবনের কঠিন ব্যাস্ততার ফাকে ত্বকের একটু যত্ন নেয়ার সময় বের করাই যেন দায় অনেক মানুষের জন্য। তার উপর আছে তাপমাত্রার উঠতি অবস্থা আর ভয়ংকর গরম। নিত্যদিনের এতোসব প্রতিকুলতার মাঝে আমাদের ত্বকে দেখা দেয় নানান সমস্যা। ত্বক হারায় স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, লোমকূপ বড় হয়ে ময়লা জমাট বাধে ত্বকের অভ্যন্তরে, আঘাত হানে ব্রন, একনি। বয়সের ছাপও পড়তে শুরু করে ত্বকে, বয়স বাড়ার আগেই। 

প্রতিদিনের ব্যস্ততার কারনে যারা সময়ের সহজলভ্যতার অভাবে ত্বকের নানান সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য একটি ঝটপট সমাধান হতে পারে খুব সহজ ছোট্ট একটি জিনিস। আর সেটা হচ্ছে আইস কিউব বা বরফের টুকরো। আজকে জেনে নিবো ত্বকের যত্নে এই আইস কিউবেরই কয়েকটি কার্যকরী ও আশ্চর্যজনক উপকারিতা।  

ত্বকের যত্নে আইস কিউবের উপকারিতা

পানি পান করার কত যে উপকারিতা, তা তো আমরা প্রায় সবাই জানি। মানব শরীরের আভ্যন্তরীণ উপকারের সাথে বাহ্যিকভাবেও কিন্তু উপকারে আসতে পারে পানি ও পানির কঠিন রূপ- বরফ বা আইস কিউব। 

১. একনি বা ব্রন দ্রুত সাড়ায় ও প্রতিরোধ করে 

বরফ বা আইস কিউবের এন্টি ইনফ্লেমেটরি ক্ষমতা যে কোন ধরনের প্রদাহকে কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে একনি বা ব্রনে আইস কিউব ম্যাসাজ করার মাধ্যমে দ্রুত এগুলোর প্রদাহ কমিয়ে ও সাড়িয়ে তোলা যায়। এছাড়াও বাইরের গরম পরিবেশ থেকে ঘরে ফেরার পর পরিষ্কার ত্বকে আইস কিউব ম্যাসাজ করলে ত্বকের কোষ ভেতর থেকে শীতল হয়, গরমে বড় হয়ে যাওয়া লোমকূপ সংকুচিত হয়। ফলে লোমকূপে ময়লা ও সেবাম আটকে নতুন একনি বা ব্রনের আক্রমনের আশঙ্কাও কমে যায়। 

২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়

ত্বকের কোষের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়াতে আইস কিউবের কোনো তুলনাই নেই। ত্বকে আইস কিউব ম্যাসাজ করার মাধ্যমে ত্বকের কোষের অভ্যন্তরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো যেতে পারে। এতে ত্বকে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের বন্টনও বাড়ে। ফলাফল, উজ্জ্বল, মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর ত্বক। 

৩. চোখের ফোলাভাব দূর করে

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, চোখের নিচের অংশে অতিরিক্ত পানি জমা ইত্যাদি নানান কারনে চোখের নিচে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে। যা ব্যাঘাত ঘটায় চেহারা ও চোখের স্বাভাবিক সৌন্দর্যে। তবে চোখের নিচের এই ফোলাভাব দূর করতে আইস কিউব খুবই কার্যকরী। চোখের আশেপাশের যায়গায় আইস কিউব দিয়ে বৃত্তাকারভাবে ম্যাসাজ করে চোখের ফোলা ভাব কমানো যায় খুব দ্রুত। 

৪. ডার্ক সার্কেল দূর করে

চোখের আশেপাশে ডার্ক সার্কেল দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী, ঝটপট ও সহজ সমাধান হচ্ছে আইস কিউব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী সুফল পাওয়া যায় যদি গোলাপ জ্বল ও শসার রস মিশিয়ে বানানো যায় আইস কিউব। তবে একবার ম্যাসাজ করলেই কিন্তু একদিনেই দূর হয়ে যাবে না আপনার ডার্ক সার্কেল। পুরোপুরি ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে বেশ কয়েকদিন টানা এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। 

৫. বয়সের ছাপ ও বলিরেখা প্রতিরোধ করে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে চামড়ায় ভাঁজ, বলিরেখা বা রিঙ্কেল দেখা দিতে শুরু করে। তবে এগুলোর উপস্থিতি কেউই নিজের ত্বকে দেখতে চান না। বাড়ন্ত বয়স তো আর কমানো সম্ভব না। তবে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে চাইলে কমিয়ে দেয়া যেতে পারে অনেকটাই। আর এর সমাধানও রয়েছে আইস কিউবে। নিয়মিত মুখে আইস কিউব ম্যাসাজ করলে ত্বকের কুঁচকে যাওয়া চামড়া ও বলিরেখা অনেকটাই কমে আসে। এতে চামড়া টানটান হওয়ার পাশাপাশি নতুন করে ভাঁজ বা রিঙ্কেলস হওয়ার পরিমাণও কমে যায়।

৬. ত্বক এক্সফোলিয়েট করে

ত্বক ও ত্বকের লোমকূপ ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য এক্সফোলিয়েট করা খুবই উপকারী। আর এই এক্সফোলিয়েশনের জন্য বেশিরভাগ সময়ই আমরা বেছে নেই ক্যামিকাল যুক্ত বিভিন্ন পণ্য। যেগুলো সবসময় সব ধরণের ত্বকে মানানসই হয় না। এমনকি লম্বা সময় ব্যবহারে ক্ষতিও করে ত্বকের। এই ক্ষেত্রেও কাজে আসতে পারে ঘরে বানানো আইস কিউব। দুধ দিয়ে তৈরি আইস কিউব ত্বকে ম্যাসাজ করার মাধ্যমে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে এক্সফোলিয়েট হয়, পরিষ্কার হয় ত্বকে আঁটকে থাকা মৃত চামড়া ও ময়লা। এতে করে পরিষ্কার ত্বকে ফিরে আসে প্রাকৃতিক লাবণ্য।

দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড মূলত ত্বকে প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটরের কাজ করে।

৭. ত্বকের জ্বালা-পোড়া ও প্রদাহ কমায়

অতিরিক্ত গরমে বাইরে থাকলে কিংবা রোদের সংস্পর্শে অনেকটা সময় কাটালে ত্বকে সানবার্ন বা ত্বক রোদে পোড়ার পাশাপাশি দেখা দেয় প্রদাহ, জ্বালাপোড়া, র‍্যাশ ও লালচে ভাব। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে ফেরার পর ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে, ত্বকে আইস কিউব ম্যাসাজ করলে এধরণের অসস্তি ভাব কমে আসে। এছাড়াও ব্যাথাযুক্ত ব্রন বা একনি, এলার্জির জ্বালাপোড়া ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আইস কিউব ম্যাসাজ ত্বকের জন্য প্রচণ্ড আরামদায়ক। 

কখনো কখনো ত্বকের কোন একটিভ ব্রন বা একনিতে প্রচণ্ড ব্যাথা হতে পারে। সেই ব্যাথাযুক্ত ব্রনের উপর একটি আইস কিউব কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে সেই অসস্থিকর ব্যাথার প্রভাব কমানো যেতে পারে।

৮. স্কিন কেয়ারের পণ্য ব্যবহারের আগে আইস কিউব

ত্বকের পরিপূর্ণ যত্ন নিতে দিনের বিভিন্ন সময় নানা ধরণের স্কিন কেয়ারের পণ্য ব্যবহার করা হয়। যেমন, সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, এসেন্স ইত্যাদি। এই পণ্যগুলি ত্বকে ব্যবহারের আগে যদি কিছুক্ষন আইস কিউব ত্বকে ম্যাসাজ করে নেয়া যায়, তাহলে এগুলো ত্বকের অভ্যন্তরে আরো ভালো করে শোষণ হতে পারে। এতে কয়েক গুণ বেড়ে যায় ত্বককে ভালো রাখার এদের কার্যকরী ক্ষমতাও। 

মেকআপ করার পূর্বে ত্বকে কয়েক মিনিট বরফ বা আইস কিউব ম্যাসাজ করে নিলে, মেকআপ ত্বকে মসৃণভাবে বসে। ত্বককে দ্রুত তৈলাক্ত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে এবং মেকআপকে করে দীর্ঘস্থায়ী।

আশা করি, স্কিন কেয়ারে আইস কিউবের আশ্চর্যজনক উপকারিতা গুলো জানার পর আপনাদের জন্যও ত্বকের যত্ন নেয়া আরও সহজ হয়ে যাবে।

 

Bibliography

Toshi N. (2023, April 5) 8 Beauty Benefits of Using Ice Cubes On The Skin, Retrieved from Pharmeasy: https://pharmeasy.in/blog/8-beauty-benefits-of-using-ice-cubes-on-the-skin/

Last Updated on November 1, 2023