প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে। চুলের জন্য যেসব তেল উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে তার মধ্যে একটি হলো অলিভ অয়েল। ত্বক ও চুলের যত্নে অলিভ অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। 

এই অনুচ্ছেদে চুলের জন্য অলিভ অয়েল কি কি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও সুস্থ ও মজবুত চুলের জন্য অলিভ অয়েল কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেই সম্পর্কে জানতে অনুচ্ছেদটি একদম শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

চুল বৃদ্ধির জন্য অলিভ অয়েল এর উপকারিতা 

সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে চুলের দৈর্ঘ্য প্রতিদিন ০.৩৫ মিলিমিটার (প্রতি মাসে ১ সেন্টিমিটার) বৃদ্ধি পায়। চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। সেই সাথে বাহ্যিকভাবে মাথার ত্বক ও চুলে তেল ব্যবহার করা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, চুলের বৃদ্ধিতে অলিভ অয়েল উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। (Puri, 2022)

চুলের বৃদ্ধি ছাড়াও অলিভ অয়েল ব্যবহার করা মাথার ত্বক ও চুলের জন্য আরো যেসব উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। 

চুল পড়া কমায় 

শরীরের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন মাথা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টি চুল পড়ে যেতে পারে। প্রতিনিয়ত নতুন চুল গজায় বলে মাথায় চুলের ঘাটতি হয় না।‌ তবে যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে মাথায় টাক দেখা দেয়। 

অলিভ অয়েল ব্যবহার অতিরিক্ত চুল পড়া কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করার জন্য মাথার ত্বকে অলিভ অয়েল ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। 

চুলের রুক্ষতা দূর করে

Smooth Hair

শুষ্ক আবহাওয়া, ধুলাবালি, তীব্র রোদ, ঘন ঘন শ্যাম্পু‌ ব্যবহার করা, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানো, চুলে হিট দেওয়া, রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে চুল কালার করা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে চুলের ড্যামেজ হয় এবং চুল রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে যেতে পারে। 

অলিভ অয়েলের ময়েশ্চারাইজিং ইফেক্ট চুলের রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের আগা ফেটে যাওয়া প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।‌ 

খুশকি দূর করে 

খুশকি খুব কমন একটি সমস্যা যা চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও খুশকির ফলে মাথায় চুলকানি অনুভব হয় যা খুব বিরক্তিকর একটি ব্যাপার।  

অলিভ অয়েল ব্যবহার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে ভূমিকা পালন করে।‌ অলিভ অয়েল ব্যবহার মাথার ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাস সংক্রমণ প্রতিহত করে। (Lambert, 2023) 

চর্মরোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে 

মাথার ত্বকে একজিমা ও সোরিয়াসিস সহ বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ হতে দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। চর্মরোগের লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। 

সুস্থ ও মজবুত চুলের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করার উপায় 

চুলের যত্নে অলিভ অয়েল মাথার ত্বক ও চুলে সরাসরি ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার আপনি চাইলে অলিভ অয়েলের সাথে নারিকেল তেল বা ক্যাস্টর অয়েল যোগ করতে পারেন যা চুলের জন্য আরো বেশি উপকারিতা বয়ে আনবে। 

অলিভ অয়েল রাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বেশি তেলতেলে ভাব পছন্দ না হলে গোসলের আগে মাথায় তেল ব্যবহার করা উচিত। 

খুশকি দূর করার জন্য অলিভ অয়েলের সাথে সামান্য পরিমাণ লেবুর রস যোগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

এছাড়াও চুলের যত্নে অলিভ অয়েলের সাথে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে। 

অলিভ অয়েল ও ডিম 

স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও মজবুত চুলের জন্য অলিভ অয়েল ও ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।  

ব্যবহারের নিয়মঃ পরিমাণমতো অলিভ অয়েলের সাথে ১/২ টি ডিমের সাদা অংশ মেশাতে হবে। এবার মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে ঘসে লাগান। ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।‌ 

অলিভ অয়েল ও মধু 

Olive Oil And Honey

চুলের রুক্ষতা দূর করা এবং চুলের আগা ফেটে যাওয়া সমস্যা নিরাময়ের জন্য অলিভ অয়েলের সাথে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও অলিভ অয়েল ও মধুর মিশ্রণের সাথে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ হয় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

ব্যবহারের নিয়মঃ সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও মধু (দারুচিনি গুঁড়ো সহজে পাওয়া গেলে যোগ করতে পারেন) একসাথে মেশাতে হবে। মাথার ত্বক ও চুলে মিশ্রণটি লাগান এবং ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। 

নিমপাতা, তুলসী, অলিভ অয়েল

একমুঠো নিমপাতা ও তুলসীপাতা সংগ্রহ করে ধুয়ে নিন। এবার সেগুলো পিষে পেস্ট বানিয়ে অলিভ অয়েলের (পরিমাণমতো) সাথে মেশান। মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে ঘসে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলুন। 

এই মিশ্রণটি মাথায় ব্যবহারের ফলে খুশকি দূর হয়, চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়।  

পাকা কলা ও অলিভ অয়েল 

একটি পাকা কলা খোসা ছাড়িয়ে পিষে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার পরিমাণমতো অলিভ অয়েলের সাথে কলার পেস্ট মিশিয়ে নিন। অতঃপর মাথার ত্বক ও চুলে মিশ্রণটি লাগান। ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। 

পাকা কলা ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে চুলের রুক্ষতা দূর হয় এবং চুল মজবুত হয়। 

যেকোনো একটি হেয়ার প্যাক বেছে নিতে হবে। একইসাথে একাধিক হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যাবে না। সপ্তাহে এক দিন যেকোনো একটি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে হবে। তবে চুলের ঘনত্ব বেশি হলে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।

শেষ কথা 

মাথার ত্বক ও চুল ভালো রাখতে অলিভ অয়েল উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। যেকোনো ধরনের চুলের জন্য অলিভ অয়েল উপযোগী হবে। তাই চুলের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন। 

অলিভ অয়েল তুলনামূলক ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। তাই অলিভ অয়েলের সাথে নারিকেল তেল (সহজলভ্য) মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সবসময় ভালো ব্র্যান্ড দেখে পিউর তেল কেনার চেষ্টা করতে হবে। 

চুলের যত্নে নারকেল তেলের উপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন। 

Bibliography

Lambert, B. (2023, 07 09). How to Use Olive Oil for Shiny Hair and a Healthy Scalp. Retrieved from byrdie: https://www.byrdie.com/olive-oil-hair-4843341

Puri, C. (2022, 09 29). Top 7 benefits of olive oil for hair growth and ways to use it. Retrieved from PINKVILLA: https://www.pinkvilla.com/beauty/top-7-benefits-of-olive-oil-for-hair-growth-and-ways-to-use-it-1192834

Last Updated on November 5, 2023