চুল নারী পুরুষের সৌন্দর্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে।‌ আর চুল পড়া (Hair falling) হলো খুব কমন একটি সমস্যা যার ফলে সৌন্দর্যহানি ঘটে থাকে। তাই চুলের যত্নের ব্যাপারে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষজন সবসময় সচেষ্ট থাকেন। চুল পড়া রোধ করা সহ চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে তেলের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। 

ক্যাস্টর অয়েল (Castor oil) এমনই একটি তেল যা চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে কি কি উপকারিতা আশা করা যায়, ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং সতর্কতা সমূহ নিয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল কতটা কার্যকরী? 

ক্যাস্টর বীজ (Ricinus communis) থেকে ক্যাস্টর অয়েল তৈরি করা হয় যা দেখতে স্বচ্ছ সাদা বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। রূপচর্চা ও ঔষুধি গুণাগুণের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যাপক সমাদৃত। চুলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে যেসব উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে তা হলোঃ (Parmar, 2022)  

চুল পড়া রোধে ক্যাস্টর অয়েল 

প্রতিদিন একজন মানুষের মাথা থেকে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টি পর্যন্ত চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে মাথার চুল পড়ে গেলে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। 

ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার ফলে মাথার অতিরিক্ত চুল পড়া কমে যায়। এই তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ নাশক গুণাবলী চুল পড়া রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েল 

ক্যাস্টর অয়েল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে লাগানোর ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। তবে যাদের মাথায় টাক পড়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে টাক অংশে নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা খুব কম। বরং যাদের এমনিতেই খুব চুল পড়ে যায় তাদের বেলায় ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে নতুন চুল গজাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। 

চুল ও মাথার ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক রাখে 

ক্যাস্টর অয়েলে প্রচুর পরিমাণ Ricinoleic acid রয়েছে যা একধরনের এশেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড। এটি চুল ও মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড যা মাথার ত্বক ও চুলের সঠিক আদ্রর্তা বজায় রাখতে সাহায্য করে‌। 

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে  

image4 1

ক্যাস্টর অয়েল হলো প্রাকৃতিক কন্ডিশনার যা চুলকে নরম ও গোছানো রাখতে সাহায্য করে। এতে ওলিক ও লিনোলিক এসিড রয়েছে যা চুলের ড্যামেজ ও রুক্ষতা দূর করে থাকে এবং সেই সাথে চুলকে করে ঝলমলে ও উজ্জ্বল। 

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে

মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাস সংক্রমণ হওয়ার প্রধান কারণ শীতকাল ও বর্ষাকালীন আবহাওয়া এবং মাথা নিয়মিত পরিষ্কার না করা‌। ক্যাস্টর অয়েল মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের সংক্রমণ প্রতিকার ও প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও মাথার ত্বকে একজিমা হলে তা নিরাময়ের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। 

খুশকি (Dandruffs) দূর করে 

মাথায় খুশকি হওয়া খুব কমন একটি সমস্যা যার ফলে মাথায় চুলকানি হয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ে যেতে থাকে। খুশকি সমস্যা দূর করার জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যাস্টর অয়েলের অ্যান্টিফাংগাল ও প্রদাহ নাশক গুণাবলী মাথার ত্বকের খুশকি দূর করে। 

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ  

ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই কথা প্রায় সবারই জানা। ক্যাস্টর অয়েল প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হয়ে থাকে যার ফলে এটি চুলের পুষ্টি জোগানো ও বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আইব্রুর (Eyebrows) যত্নে ক্যাস্টর অয়েল 

image3 2

আইব্রু চোখের সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইব্রুতে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার ফলে চুলের পরিমাণ বাড়াতে এবং চুল সুন্দর করতে সাহায্য করে।

আইব্রুতে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন তা চোখের ভেতরে প্রবেশ না করে। কটনের সাহায্যে আইব্রুতে সামান্য পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল লাগাতে হবে।

চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম 

ক্যাস্টর অয়েল খুব আঠালো ধরনের হয়ে থাকে। আর তাই এই তেল মাথায় সরাসরি ব্যবহার না করে বরং অন্য কোনো তেলের (নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল) সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত। 

ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের সঠিক কোনো নির্দেশনা নেই। তবে এক্সপার্টদের মতামত হলো সপ্তাহে ১ বারের বেশি মাথায় ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়াও মাথার চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার পরবর্তী ২ ঘন্টার মধ্যে মাথা ধুয়ে ফেলা‌ উত্তম। অন্যথায় চুলে জট পাকিয়ে যেতে পারে। (Wong, 2022) 

ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের পর মাথার চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য অন্তত ২ বার শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই তেল খুব আঠালো যা চুলে আটকে থাকে। 

কাপড়ে ক্যাস্টর অয়েল লাগলে স্থায়ী দাগ হয়ে যেতে পারে। আর তাই মাথায় ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের পূর্বে পুরাতন পোশাক পরিধান করা এবং ঘাড়ের উপর তোয়ালে বিছিয়ে নেওয়া বিচক্ষণতার পরিচয় হবে। 

মাথায় নতুন চুল গজানোর জন্য ক্যাস্টর অয়েল একটু গরম করে মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। 

ক্যাস্টর অয়েলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

মাথার চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের ফলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘসময় ধরে মাথায় তেল দিয়ে রাখলে চুলে জট পাকিয়ে যেতে পারে। 

অনেক বেশি পরিমাণে ক্যাস্টর অয়েল খেয়ে ফেললে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে এই তেল বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য মাথার চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার‌ করা নিরাপদ এবং এতে গর্ভস্থ বাচ্চার কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের ফলে যথাযথ ফল পাওয়া না গেলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে। কারণ অনেক সময় বিভিন্ন রোগের প্রভাবে চুলের সমস্যা হয়ে থাকে যার জন্য যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে।

References

Parmar, R. (2022, December 14). 5 Amazing Benefits Of Castor Oil For Hair. Retrieved from PharmEasy: https://pharmeasy.in/blog/5-amazing-benefits-of-castor-oil-for-hair/
Wong, C. (2022, October 07). Castor Oil for Hair Growth. Retrieved from very well health: https://www.verywellhealth.com/using-castor-oil-for-hair-growth-4172190

Last Updated on June 6, 2023