স্বাস্থ্যোজ্জ্বল মজবুত চুল সবারই কাম্য। সৌন্দর্য প্রকাশের অন্যতম মাপকাঠি চুল। চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য মানুষের বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, জেনেটিক্স (Genetics), পরিবেশগত কারণ (Environmental exposure), মেডিকেশন (medication) এবং খাবারের উপর নির্ভর করে। এই সকল কারনের মধ্যে আমরা শুধুমাত্র খাবারকেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি। ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান আমাদের চুলের বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। (Raman R. 2022)

কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে অনেকেরই চুল ঝড়ে যেতে থাকে বা চুল স্বাস্থ্যহীন রুক্ষ হয়ে পড়ে। অকালে চুল ঝড়ে যাওয়ার জন্য অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের সাথে সাথে পুষ্টির ঘাটতিও অন্যতম কারন।

চুল ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারনসমূহ

hair 2

১। খাদ্যাভাস

ভিটামিন বি-১২ এবং ডি, বায়োটিন, রাইবোফ্লাভিন, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি চুল পড়ার সাথে জড়িত। এজন্য চুল পরা রোধে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অনেক জরুরি।

২। স্ট্রেস

স্ট্রেস এবং চুল পড়ার মধ্যে যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। তাই, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন

৩। হেয়ার স্টাইলিং

আমরা আমাদের চুল সাজাবার জন্য হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার কত কিছুই না ব্যবহার করে থাকি।

এগুলোর অত্যাধিক ব্যবহারে চুলের কিউটিকল ভেঙ্গে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে। অনেকে চুলের ডাইয়িং করেন যা চুলের ক্ষতির অন্যতম কারন। এছাড়াও চুল ক্ষতিগ্রস্থ হবার আরো অনেক কারন আছে । (Cherney K.  2022)

প্রাকৃতিক খাবারেই চুলের সকল সমস্যা সমাধান

ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে, আবার স্বাস্থ্যহীন রুক্ষ চুলের স্বাস্থ্যও ফিরিয়ে আনতে পারে। প্রকৃতিকভাবে চুল পড়ার সমস্যা রোধ করতে, নতুন করে চুল গজাতে বা স্বাস্থ্যোজ্জল মজবুত চুল পেতে অবশ্যই আপনাকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃ্দ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাই সঠিক পরিমানে পুষ্টিযুক্ত খাবার খেতে পারলে এই অকালে চুল ঝড়ে যাওয়ার সমস্যা বা স্বাস্থ্যহীন বা রুক্ষ চুলের সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এমন কি নতুন করে চুল গজানো ও সম্ভব। 

১। ডিম

চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হচ্ছে চুলের ফলিকল বেশিরভাগ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা যায় প্রোটিনের অভাবে চুল ঝরতে থাকে । এবং কেরাটিন নামক চুলের প্রোটিন তৈরির জন্য বায়োটিন অপরিহার্য। চুল, ত্বক এবং নখের বৃদ্ধির জন্যও বায়োটিন অপরিহার্য। আর এই ডিম হচ্ছে প্রোটিন এবং বায়োটিনের একটি ভালো উৎস। ডিমে রয়েছে জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য চুল-স্বাস্থ্যকরি পুষ্টি। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ডিম রাখা যেতেই পারে । (Raman R. 2022)

ডিম প্রোটিন ও বায়োটিনের এক দুর্দান্ত উৎস। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন এ, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম।

২। পালং শাক

চুলের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন “এ” আর আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পালং শাকে রয়েছে ফোলেট, আয়রন এবং ভিটামিন “এ” এবং “সি” এর মতো উপকারী পুষ্টিকর উপাদান, এগুলো সবই চুলের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। (Raman R. 2022)

পালং শাক ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “সি” তে ভরপূর।

৩। মাংস

মাংস প্রোটিনের একটি বড় উৎস, যা স্বাস্থ্যকর, মজবুত চুলের জন্য অপরিহার্য। লাল মাংসে (red meat) রয়েছে এক ধরনের বিশেষ আয়রন যা আমাদের দেহে সহজেই শোষিত হয়। এটি লোহিত রক্তকণিকাকে শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। আর মাংসের প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুলের ফলিকলগুলিকে মেরামত ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। (Raman R. 2022)

মাংস প্রোটিনের একটি বড় উৎস।

৪। মাছ:

মাছ হচ্ছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। তাছাড়া এতে আছে প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি-৩ এবং ভিটামিন বি। এইসব পুষ্টি উপাদানগুলো স্বাস্থ্যকর ও মজবুত চুলের জন্য সহায়ক। 

মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (omega-3 fatty acid), ভিটামিন ডি-৩, ভিটামিন বি।

৫। বাদাম:

বাদামে রয়েছে ভিটামিন “বি”, জিঙ্ক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এই সবগুলা উপাদানই চুল পরা রোধই করবে না, সেই সাথে চুল বৃদ্ধিতে, স্বাস্থ্যোজ্জল মজবুত চুলের জন্যও অত্যন্ত দরকারি।

বাদাম হচ্ছে ভিটামিন “বি”, জিঙ্ক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস।

 আরও পড়ুনঃ  চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে রসুনের ব্যবহার  

৬। শীমের বিচি

শীমের বিচি উদ্ভিজ প্রোটিনের একটি বড় উৎস, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তাছাড়া এটি জিঙ্কের একটি ভাল উৎস যা চুলের বৃদ্ধিতে এবং মেরামত করতে সহায়তা করে। এতে আরও রয়েছে আয়রন, বায়োটিন এবং ফোলেট যা চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি সরবরাহ করে । (Raman R. 2022)

প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক এবং বায়োটিনের উৎস শীমের বিচি।

৭। সিডস (Seeds):

সিডস হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম ক্যালোরি সম্পন্ন পুষ্টিকর খাদ্য। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম। যেমন সূর্যমুখী বীজ ভিটামিন ই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারে, সেই সাথে ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে। বাদামের মতো, এই বীজ ভিটামিন “ই” এবং অন্যান্য পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এই বীজ  চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।

ভিটামিন “ই” এর এক বড় উৎস হল সিডস।

৮। মিষ্টি আলু:

মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিনের একটি বড় উৎস। বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন “এ”-তে রূপান্তরিত হয়, যা চুলের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন “এ” সিবামের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে, যা চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জল রাখতে সাহায্য করে । (Stephanie S.G. 2021)

মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিনে ভরপূর। 

৯। সয়াবিন:

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে স্পার্মিডিন মানুষের চুলের বৃদ্ধিতে সহয়তা করে । সয়াবিনে প্রচুর পরিমানে স্পার্মিডিন আছে। স্পার্মিডিন চুলের লাইফ সাইকেলকে দীর্ঘায়িত করে। (Raman R. 2022)

সয়াবিন স্পার্মিডিনের উৎস, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহয়তা করে।

১০। ঝিনুক:

ঝিনুক জিঙ্কের অন্যতম সেরা উৎস। জিঙ্ক একটি খনিজ  উপাদান, যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে। স্বাস্থ্যোজ্জল মজবুত চুলের জন্য এবং চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ঝিনুক খেতে পারেন। (Raman R. 2022)

ঝিনুক জিঙ্কের সেরা উৎস।

আমরা যাই খাই না কেন, সবই আমাদের স্বাস্থকে অনেক প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিকভাবে নতুন চুল গজাতে চাইলে কিংবা স্বাস্থ্যোজ্জল মজবুত চুল পেতে চাইলে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার সঠিক পরিমানে খেতে হবে।

 Reference:

Raman, R. (2022, May 18). The 13 Best Foods for Hair Growth. Retrieved from: https://www.healthline.com/nutrition/foods-for-hair-growth 

Cherney K .(Aug 31, 2022).How to Stop Hair Breakage. Retrieved from: https://www.healthline.com/health/hair-breakage

tephanie S. G. (February 10, 2021) Top 10 Foods for Healthy Hair.Retrieved from:

https://www.webmd.com/beauty/ss/slideshow-foods-healthy-hair

Last Updated on November 21, 2023