মানুষের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ জুড়ে চুলের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে নারীরা চুলের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়ে থাকেন। সুন্দর ও ঝলমলে চুলের জন্য গ্রীষ্মকালীন সময়ে চুলের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অন্যথায় গ্রীষ্মকালীন রোদ, গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।  

গ্রীষ্মকালীন সময়ে কিভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে সেই বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।‌ এছাড়াও গরমে চুলের যত্নে কয়েকটি হেয়ার মাস্ক সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।  

কীভাবে গরমে চুলের যত্ন নেবেন? 

গ্রীষ্মকালীন সময়ে দিনের বেলায় বাইরে তীব্র রোদ থাকে। সূর্যরশ্মি‌ বা রোদের তাপ চুলের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই বাইরে বের হলে রোদের তাপ থেকে চুলের সুরক্ষার জন্য ছাতা ব্যবহার করতে হবে।  

ছাতা ব্যবহার করতে না চাইলে সেক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য মাথায় ক্যাপ বা টুপি পড়তে হবে এবং মেয়েদের জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করে (ক্যাপ বা টুপি পড়তে পারেন) চুল ঢেকে রাখতে হবে।  

এছাড়াও হেয়ার সানস্ক্রিন (রোদের তাপ থেকে চুলের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়) ব্যবহার করা যেতে পারে। 

চুল শুকানো 

ঘামের ফলে চুল ভিজে গেলে ঘরে ফিরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও গোসলের পর চুল ভেজা রাখা যাবে না। কারণ ভেজা চুল রাখলে গরম ও আদ্রতায় চুল ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। 

চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে বরং ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো উচিত। কারণ হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে চুল শুকানো হলে চুল রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে যেতে পারে।    

শ্যাম্পু ব্যবহার 

Usage Of Shampoo

ঘাম ও ধুলাবালির প্রভাবে প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়। পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে চুল পরিষ্কারের জন্য প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২/৩ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। (Tamatam, 2021)  

তেল ব্যবহার করতে হবে 

নিয়মিত তেল ব্যবহার মাথার ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। সবচেয়ে সহজলভ্য হলো নারিকেল তেল যা চুলের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।‌ এছাড়াও নারিকেল তেল চুলকে রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। 

নারিকেল তেলের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। রাতের বেলায় তেল ব্যবহার করতে পারেন‌। তবে চুলে তেলতেলে ভাব ভালো না লাগলে গোসলের আগে তেল ব্যবহার করতে হবে। 

চুল ছেঁটে ফেলুন 

চুল সহজেই ম্যানাজ করার সুবিধার্থে রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুলের আগা ছেঁটে ফেলতে পারেন। তবে চুলের আগা খানিকটা ছেঁটে ফেলার ফলে চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে টেনশন করতে হবে না। কারণ গ্রীষ্মকালীন সময়ে চুলের বৃদ্ধি তুলনামূলক দ্রুত হয়ে থাকে।  

ছেলেদের জন্য বড় চুল গুছিয়ে রাখার জন্য হেডব্যান্ড এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। ‌এতে চুল রোদ থেকে সুরক্ষিত ও গোছানো থাকবে এবং ঘাম কম হবে।  

পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে

গ্রীষ্মকালীন সময়ে ত্বক ও চুল ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই গ্রীষ্মকালে তুলনামূলক বেশি পানি পান করতে হয়।   

খাবার স্যালাইন, শরবত, ডাবের পানি,‌ শশা, পাকা পেঁপে, তরমুজ সহ সকল রসালো ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া‌ উচিত যা শরীরে পানি সরবরাহ করতে পারে। 

সুইমিং করার ক্ষেত্রে চুলের যত্ন 

গ্রীষ্মকালের গরমে সাঁতার কাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। 

  • সুইমিংপুলের পানিতে ক্লোরিন মেশানো থাকে যা চুলকে ভঙ্গুর (দুর্বল) ও রুক্ষ করে দেয়। তাই সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার পর মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু এবং সেই সাথে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। 
  • সাঁতারের পূর্বে চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। –
  • এছাড়াও মাথায় সুইমিং ক্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।  

চুল কালার করা উচিত নয় 

গ্রীষ্মকালীন সময়ে চুল কালার করা উচিত নয়। কারণ চুল কালার করার জন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা সূর্যের তাপে চুলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠে।  

একান্তই চুল কালার করতে চাইলে মেহেদী পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিরাপদ এবং চুলের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। 

গরমে চুলের যত্নে কয়েকটি হেয়ার মাস্ক 

গ্রীষ্মকালীন সময়ে নিচে বর্ণিত হেয়ার মাস্ক (ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি) ব্যবহার করতে পারেন যা চুল ভালো রাখতে সাহায্য করবে। 

১. এলোভেরা 

Aloe Vera

গ্রীষ্মকালীন সময়ে চুলের যত্নে এলোভেরা সবচেয়ে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু এলোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা এর সাথে একটু নারকেল তেল মেশানো যেতে পারে। খুশকি দূর করার জন্য এলোভেরার সাথে লেবুর রস যোগ করতে হবে।  

ব্যবহারের নিয়মঃ এলোভেরা পাতা থেকে থকথকে জেলি সংগ্রহ করে (নারিকেল তেল অথবা লেবুর রস মেশাতে পারেন) মাথার ত্বক ও চুলে লাগান এবং ৩০ মিনিট রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলুন। 

২. মেথি, নারিকেল তেল ও মেহেদী 

প্রাকৃতিক এই তিনটি উপাদান চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা রাখে।  

ব্যবহারের নিয়মঃ মেহেদী পাতা বেঁটে পেস্টের মতো বানাতে হবে। অতঃপর এক চামচ মেথির গুঁড়া ও পরিমাণমতো তেলের সাথে মেহেদী মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলুন। 

৩. মধু ও পাকা কলা

মধু ও কলার মিশ্রণে তৈরি হেয়ার মাস্ক মাথার ত্বকের রুক্ষতা দূর করে। এছাড়াও চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। (Topno, 2022)   

ব্যবহারের নিয়মঃ পাকা কলা ও মধু মিশিয়ে পেস্টের মতো বানাতে হবে। মাথার ত্বক ও চুলে লাগানোর ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। 

৪. ইয়োগার্ট, মধু ও ডিম 

ইয়োগার্ট, মধু ও ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলের ড্যামেজ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে, চুল শাইনি করে এবং অতিরিক্ত চুল পড়া প্রতিরোধ করে।  

ব্যবহারের নিয়মঃ ডিমের সাদা অংশের সাথে পরিমাণমতো মধু ও ইয়োগার্ট মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। ২০ মিনিট রাখার পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

অতিরিক্ত খুশকি, মাথার ত্বকে র‌্যাশ হওয়া,‌ চুলকানি, অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের (ডার্মাটোলজিস্ট) শরণাপন্ন হতে হবে।

খুশকি দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।  

Bibliography

Tamatam, S. (2021, November 10). Summer Hair Care: 11 Tips To Protect Your Hair From The Sun. Retrieved from SKINKRAFT: https://skinkraft.com/blogs/articles/summer-hair-care

Topno, A. M. (2022, 06 07). Easy Homemade Hair Masks For Summer. Retrieved from Herzindagi: https://www.herzindagi.com/beauty/homemade-hair-masks-for-summer-article-200662

Last Updated on November 4, 2023