রাতে ঘুমের সময় নাক ডাকা (Snoring) খুব বাজে একটি অভ্যাস যার ফলে পাশে থাকা ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শ্বাস-প্রশ্বাস কার্যক্রম চলাচলের পথের কোনো স্থানে বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হলে নাক ডাকা সমস্যা হয়ে থাকে।
নাক ডাকা কখনো কখনো স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে যা একটি রোগ। এই রোগে ঘুমের মধ্যে সাময়িকভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এই অনুচ্ছেদে নাক ডাকা বন্ধ করার সহজ উপায় এবং ব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও নাক ডাকার জন্য কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে সেই ব্যাপারে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
নাক ডাকা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি নাক ডাকা বন্ধের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো। (Cirino, 2022)
একপাশে কাত হয়ে ঘুমানো
একটি বিষয় হয়তো লক্ষ করে থাকবেন যে, যারা ঘুমের সময় নাক ডাকে তাদের ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমানোর সময় জিহ্বা শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ুতে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে নাক ডাকা সমস্যা হয়ে থাকে।
নাক না ডাকার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে চিৎ হয়ে না শুয়ে বরং একপাশে কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা।
উঁচু বালিশ ব্যবহার করা
স্বাভাবিকের চেয়ে একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করে ঘুমানোর ফলে নাক ডাকা সমস্যা কম হয়। এর কারণ হলো মাথা একটু উঁচুতে রেখে ঘুমালে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের পথে বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে বালিশ খুব বেশি উঁচু হওয়া যাবে না। কারণ এতে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের ঘাটতির সাথে নাক ডাকা সমস্যা হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। তাই রাতে যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেজন্য প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ঘুমানোর আগে চা ও কফি পান করা যাবে না। ঘরের আলো, তাপমাত্রা ও বিছানা আরামদায়ক হতে হবে।
ধুমপান বর্জন করতে হবে
ধুমপানের অভ্যাস নাক ডাকা সমস্যা সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকি রয়েছে। নাক ডাকা সমস্যা দূর করা এবং ফুসফুস ভালো রাখতে চাইলে অবশ্যই ধুমপানের অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
মদ্যপান করা যাবে না
রাতে মদ্যপান করা নাক ডাকা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সমস্যা দূর করতে রাতের বেলায় বিশেষ করে ঘুমানোর ৩ ঘন্টা আগে থেকে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
যেহেতু মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে লিভার) ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তাই শুধু রাতের জন্য নয়, বরং যেকোনো সময়ের জন্যই মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবে না
যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে এবং রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয় তাদের জন্য নাক ডাকা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি দেখা যায়। তাই নাক ডাকা সমস্যা দূর করার জন্য ঘুমের ওষুধ সেবন না করে বরং রাতে যেন ভালো ঘুম হয় সেজন্য বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ
যাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদের ক্ষেত্রে নাক ডাকা সহ স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। তাই এই সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হলে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করা
এলার্জি জনিত কারণে (বিশেষত এলার্জিক রাইনাইটিস) নাক ডাকা সমস্যা দেখা যেতে পারে। এলার্জি নিয়ন্ত্রণের জন্য এলার্জিক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ বেগুন, পুঁইশাক, যব, ভুট্টা, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম ইত্যাদি।
এছাড়াও বাইরে গেলে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঘরের পরিবেশ যেন নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লেপ, তোশক, কম্বল ও বালিশ মাঝে মধ্যে রোদে শুকাতে হবে।
নাক ডাকা বন্ধ করার ব্যায়াম
যেসব ব্যায়াম নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে তা হলোঃ (Suni, 2023)
- Tongue slide: উপরের পাটির দাঁতে জিহ্বার আগা ঠেকিয়ে তালুর সামনে থেকে পেছন দিকে স্লাইড করে নিতে হবে।
- Tongue stretch: জিহ্বা মুখের ভেতর থেকে বের করে জিহ্বা দিয়ে থুতনি ছোঁয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- Tongue push-up: জিহ্বা তালুতে ঠেকিয়ে তালু উপরের দিকে ঠেলে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
- Tongue push down: নিচের পাটির দাঁতে জিহ্বা ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে পেছনের দিকে নিতে হবে।
- Cheek hook: মুখের মধ্যে একটি আঙুল দিয়ে একদিকে গাল টেনে ধরা।
- Face exercise: যতটা সম্ভব বড় করে হা করা এবং পরে ধীরে ধীরে মুখ বন্ধ করতে হবে।
- Throat exercise: জোরে জোরে শব্দ করে পড়া অথবা গান গাওয়া।
এই ব্যায়াম গুলোকে থেরাপিও বলা যেতে পারে। নিজে নিজে চেষ্টা করে না পারলে চিকিৎসক অথবা ফিজিওথেরাপিস্ট এর সহায়তা নিতে হবে।
যোগব্যায়াম (Yoga) করা নাক ডাকা সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে?
নাক ডাকা শুধুমাত্র পাশে শুয়ে থাকা ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় তাই নয়, বরং এটি অনেক সময় বিভিন্ন জটিল রোগের ইঙ্গিত বহন করে থাকে। যেসব ক্ষেত্রে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত তা হলোঃ
- খুব জোরে জোরে নাক ডাকা
- ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে নাক ডাকার কোন পরিবর্তন না হওয়া
- ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
- সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা
- দিনের বেলায় অনেক ঘুম পাওয়া
- বিষণ্নতা ও খিটখিটে মেজাজ
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
- উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি
শিশুদের ক্ষেত্রে নাক ডাকা
বড়দের মতো শিশুদের ক্ষেত্রেও নাক ডাকা সমস্যা দেখা যেতে পারে যার কারণ হিসেবে টনসিল বা এডিনয়েড গ্ল্যান্ড বেড়ে যাওয়া, নাকের হাড় বাঁকা অথবা পলিপাস ইত্যাদি সমস্যা থাকে।
শিশুদের ক্ষেত্রে নাক ডাকার সমস্যার সমাধানের জন্য যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
References
Cirino, E. (2022, January 18). 15 Remedies That May Stop Snoring. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/snoring-remedies
Suni, E. (2023, May 04). Mouth And Throat Exercises to Help Stop Snoring and Improve OSA. Retrieved from sleep foundation: https://www.sleepfoundation.org/snoring/mouth-exercises-to-stop-snoring
Last Updated on June 3, 2023
Leave A Comment