পানির পরে চা (Tea) হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক পান করা পানীয়। চা পান করার মাধ্যমে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই অনুচ্ছেদে চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে চা তৈরির সঠিক প্রক্রিয়া, কিভাবে চা খেলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া সম্ভব এবং কাদের জন্য চা খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে তা জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
চা খাওয়ার উপকারিতা
চা এর মূল উপাদান হলো ক্যাফেইন ও এন্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়াও খুব সামান্য পরিমাণে ফ্লুরাইড, এমিনো এসিড, মিনারেলস ও ভিটামিন রয়েছে কিন্তু চায়ে কোনো ক্যালরি নেই। তবে চায়ের রয়েছে নিজস্ব গন্ধ (Flavor) ও স্বাদ। নিয়মিত চা পান করলে যে সমস্ত উপকার হতে পারে তা হলোঃ (Felman, 2019)
১। চায়ে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি রেডিক্যালস জমতে দেয় না এবং কোষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করে। সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
২। চায়ে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক বিশেষ একধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত চা পান করেন এমন মানুষদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।
৩। পলিফেনল এর উপস্থিতি শরীরে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও ত্বক, ফুসফুস, থাইরয়েড, প্রস্টেট গ্রন্থি ও মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪। চায়ের এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৫। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। ক্লান্তি ও বিষন্নতা দূর করে এনে দেয় সতেজ অনুভূতি এবং কাজের প্রতি বাড়িয়ে দেয় মনোযোগ। এছাড়াও পারকিনসনস নামক স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
৬। হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৭। গলাব্যথা, হালকা কাশি, ঠান্ডা জ্বর সহ বিভিন্ন রোগের উপশমে সাহায্য করে।
চা বানানো এবং খাওয়ার নিয়ম
পানি ফুটানো হয়ে গেলে তাতে চা পাতা অথবা টি ব্যাগ দিয়ে খানিক্ষণ রেখে চা বানাতে হবে। চা পাতা পানিতে দেওয়ার পর তাপ দেওয়া যাবে না। কারণ, এতে চায়ের গুণাগুণ কমতে থাকে এবং চা কালো বর্ণের হয়ে যায়। চায়ে চিনি না মেশানো উত্তম কারণ চিনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। তবে চিনির পরিবর্তে সামান্য পরিমাণে মধু ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে। চায়ের সাথে আদা, লেবু, দারুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি যোগ করা যেতে পারে এবং তাতে চায়ের স্বাদ, ফ্লেভার ও গুণাগুণ বেড়ে যাবে।
সকালে খালিপেটে চা খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে করে ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাওয়া, এসিডিটি, বুকজ্বালা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। আবার খাবার খাওয়ার পরেও চা খাওয়া যাবে না। নূন্যতম ৩০ মিনিট পর খেতে হবে। যাদের ঘুমের সমস্যা হয় তাদের জন্য রাতের বেলায় চা না খাওয়া উত্তম।
রং চা বনাম দুধ চা
দুধ চা এর তুলনায় রং চা এর উপকারিতা অনেক বেশি। তবে কারো কারো কাছে দুধ চা খেতে বেশি মজা লাগে কিন্তু জেনে রাখা ভালো যে, চায়ে দুধ মেশানো হলে তাতে চায়ের গুণাগুণ অনেক কমে যায়। বিশেষ করে দুধে থাকা প্রোটিন উপাদান চায়ের এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। এছাড়াও দুধের মধ্যে থাকে সুগার বিশেষ করে কনডেন্সড মিল্ক এর মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে সুগার থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চায়ে দুধ, চিনি, কনডেন্সড মিল্ক ইত্যাদির কোনোটিই মেশানো যাবে না।
বেশি চা খেলে কি হয়?
চায়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে চা পান করতে হবে। দৈনিক ৩ থেকে ৪ কাপ চা খাওয়া যেতে পারে তবে এর বেশি খাওয়া উচিত নয়। অনেক বেশি পরিমাণে চা খেলে নানাবিধ অসুবিধা হতে পারে। যেমনঃ
- পেটে ব্যথা
- ডায়রিয়া
- ক্ষুধামন্দা
- অনিদ্রা রোগ
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া
চা খেলে শরীরে আয়রন শোষণ ব্যাহত হয় আর তাই যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য আয়রন ট্যাবলেট অথবা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার নূন্যতম ১ ঘন্টা পর পর্যন্ত চা খাওয়া যাবে না। এছাড়াও কতিপয় এন্টি বায়োটিক সহ কিছু কিছু রোগের ঔষধ সেবনের সময় চা খেলে তা ঔষধের কার্যকারীতা কমিয়ে দেয়। আর তাই ঔষধ চলাকালীন সময়ে কি কি খাবার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেই ব্যাপারে চিকিৎসকের কাছে থেকে সঠিক ভাবে জেনে নিন।
গর্ভাবস্থায় চা খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় চা খাওয়া যাবে তবে পরিমাণে কম খেতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে বমি বমি ভাব, অস্থিরতা, মন খারাপ, ভালো না লাগা ইত্যাদি দূর করতে একটু আদা ও লেবু সহযোগে রং চা খাওয়া বেশ উপকারী হবে। তবে অতিরিক্ত চা খেলে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, রক্তস্বল্পতা সহ গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
References
Felman, A. (2019, October 21). What are the health benefits of black tea? Retrieved from medical newstoday: https://www.medicalnewstoday.com/articles/292160
Last Updated on April 12, 2023
Leave A Comment