মাথাব্যথা (Headache) খুব কমন একটি সমস্যা যার বিভিন্ন কারণ ও ধরন রয়েছে। ঘুমের সমস্যা, শরীরে পানির ঘাটতি, পুষ্টির অভাব, মদ্যপান, অতিরিক্ত মানসিক চাপ সহ বিভিন্ন রোগের (মাইগ্রেন, মস্তিষ্কে টিউমার ও ইনফেকশন) কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণ প্রকৃতির মাথাব্যথা দূর করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে জটিল কোনো রোগের কারণে মাথাব্যথা হলে সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।  

এই অনুচ্ছেদে মাথাব্যথা দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও মাথাব্যথার জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সেই সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

মাথাব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা  

মাথাব্যথা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিরাপদ ও কার্যকরী। তবে একেকজনের ক্ষেত্রে একেকটি পদ্ধতি ভালো কাজে দেয়। নিচে মাথাব্যথার ১৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো। (Kubala, 2023)

১। পানি পান করা  

Drinking Sufficient Water

শরীরে পানির ঘাটতি হলে মাথাব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে কম পানি পান করার অভ্যাস, অতিরিক্ত গরম অথবা ডায়রিয়ার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। মাথাব্যথা দূর করা সহ শরীরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি (২ থেকে ৩ লিটার)  পান করতে হবে। এছাড়াও বেশি বেশি ফলমূল ও শাকসবজি (প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে) খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।  

২। বিশ্রাম ও ইয়োগা (Yoga)  

শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের ফলে মাথাব্যথা হলে বিশ্রাম করতে হবে। বিশেষ করে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইয়োগা বা মেডিটেশনের অভ্যাস করতে হবে। 

কাজের ফাঁকে সময় পেলে একটু বিশ্রাম করা অথবা হালকা ঘুমিয়ে নেওয়া (Nap) মাথাব্যথা দূর করা সহ পরবর্তীতে কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।  

৩। পর্যাপ্ত ঘুমানো 

রাতে ভালো ঘুম না হলে দিনে মাথাব্যথা হয়। রাতে যেন ভালো ঘুম হয় সেজন্য সন্ধ্যার পর চাকফি পান করা যাবে না এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।  

আবার অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এর চেয়ে খুব বেশি বা কম‌ ঘুম যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।  

৪। সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া 

কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ শরীরে খাবারের ঘাটতি হওয়ার সাথে মাথাব্যথার যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া জরুরী। কারণ শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় যার একটি লক্ষণ হলো মাথাব্যথা হওয়া। 

৫। চা অথবা কফি পান করা 

মাথাব্যথা কমাতে চা অথবা কফি পান করা উপকারী হতে পারে। স্বাদ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য চায়ের সাথে লেবু ও আদা যোগ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা যাবে না।‌ কারণ এতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা হয় তাদের জন্য সন্ধ্যার পরে চা ও কফি পান করা যাবে না।  

৬। মদ্যপানের অভ্যাস বর্জন করতে হবে 

যাদের মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাই মাথাব্যথা দূর করতে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও কোমল পানীয় বর্জন করা ভালো।  

৭। সুগন্ধি এড়িয়ে চলা 

তীব্র গন্ধযুক্ত প্রসাধনী অথবা টয়লেট্রিজ পণ্য ব্যবহারের ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই তীব্র গন্ধযুক্ত পারফিউম,‌ শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট‌‌ ইত্যাদি ব্যবহার করা‌ যাবে না। 

সিগারেটের গন্ধ থেকেও অনেকের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা হতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিজে ধুমপান বন্ধ করুন এবং যারা ধূমপান করেন তাদের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।  

৮। ঠান্ডা সেঁক দেওয়া  

মাথাব্যথা কমাতে কপাল, মাথায় বা ঘাড়ে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া উপকারী হতে পারে। সেঁক দেওয়ার জন্য একটি কাপড়ের মধ্যে বরফ পেঁচিয়ে নিতে হবে। (McIntosh, 2022) 

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ঠান্ডার পরিবর্তে গরম সেঁক দিলে আরাম লাগে। আপনার ক্ষেত্রে গরম সেঁক ভালো লাগলে একটি কাপড় চুলা বা ইস্ত্রির সাহায্যে হালকা গরম করে সেঁক দিতে পারেন।   

৯। মাথায় তেল ব্যবহার করা 

মাথাব্যথা কমাতে মাথায় তেল ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে। কোনো বিশেষ ধরনের তেল ব্যবহার করা জরুরী নয়, বরং আপনি নিয়মিত যে তেল ব্যবহার করেন তা নিজে‌ নিজে অথবা অন্য কারো সাহায্যে মাথায় সুন্দরভাবে ঘসে লাগানোর মাধ্যমে আরাম পাওয়া যাবে। 

১০। তীব্র আলো এড়িয়ে চলা 

তীব্র আলোতে থাকা এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ সহ মাথাব্যথা হতে পারে। তাই তীব্র আলো নয়, বরং চোখের জন্য সহনীয় আলোর ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। আর একটানা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ না করে বরং মাঝেমধ্যে চোখের বিশ্রাম করতে হবে।   

ল্যাপটপ ও মোবাইলের স্ক্রিনের আলো থেকে চোখের সুরক্ষার জন্য ব্লু কাট লেন্স (Blue cut lens) ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে।

১১। ব্যায়াম করা 

শরীরের সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা হলে মাথাব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। 

মাথাব্যথা যখন হয় তখন ব্যায়াম করা যাবে না। বরং মাথাব্যথা হলে তখন বিশ্রাম করতে ‌হবে। মাথাব্যথা যেন না হয় সেজন্য প্রতিরোধ হিসেবে প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করতে হবে।  

১২। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার 

প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে এমন খাবার খাওয়া মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাদাম, কুমড়ার বিচি, অ্যাভোকাডো, ডার্ক চকোলেট, কলা, ইয়োগার্ট ইত্যাদি হলো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। এগুলো স্ন্যাকস হিসেবে যেকোনো সময়ে খাওয়া যেতে পারে যা একাধারে স্বাস্থ্যকর এবং মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। 

১৩। ভিটামিন বি 

ভিটামিন বি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদান রাখে। মাথাব্যথা দূর করতে ভিটামিন বি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি হলো ভিটামিন বি এর উৎস। এছাড়াও প্রয়োজন সাপেক্ষে ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।  

১৪। প্যারাসিটামল 

Paracetamol For Headache

প্যারাসিটামল (Paracetamol) সহজলভ্য একটি ওষুধ যা প্রায় সবার ঘরেই থাকে। এটি ওটিসি (OTC– Over the counter) মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়াই সেবন করা যাবে। 

মাথাব্যথা হলে হাতের নাগালে থাকা ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলে তা মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। এর চেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য ক্যাফেইন সমৃদ্ধ প্যারাসিটামল খেতে পারেন যা নিম্নলিখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়।  

  • Ace Plus®
  • Aceta-X®
  • ATP Extra®
  • Fast Plus®
  • Napa Extra®  
  • Renova Plus® 

১৫। মাথাব্যথার অন্যান্য ওষুধ  

প্যারাসিটামল ছাড়াও মাথাব্যথা কমানোর জন্য ওটিসি মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত আরো যেসব ওষুধ উপকারী হতে পারে তা হলো Ibuprofen অথবা Antihistamine গ্রুপের ওষুধ যা নিচে উল্লেখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়। 

Ibuprofen: 

  • Advel® 
  • Alflam®  
  • Beflam®
  • Deprofen® 
  • Intaflam® 
  • Indoflam® 
  • Profen® 

Antihistamine: 

  • Acitrin®
  • Alatrol®
  • Atrizin®
  • Cetizin®
  • Cetrin®
  • Lorat®
  • Loratin®
  • Oradin®
  • Fexo®
  • Fexofast® 

মাথাব্যথা দূর করার জন্য প্যারাসিটামল, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ প্যারাসিটামল, Ibuprofen অথবা Antihistamine যেকোনো একটি ওষুধ খেতে হবে। একসাথে সবগুলো ওষুধ খাওয়া যাবে না।

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে? 

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

  • হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা 
  • ঘন‌ঘন মাথাব্যথা হওয়া 
  • দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা 
  • ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে মাথাব্যথা নিরাময় না হওয়া 
  • মাথাব্যথার সাথে বমি বমি ভাব 
  • আলো ও শব্দে মাথাব্যথা বৃদ্ধি হয়। 
Bibliography

Kubala, J. (2023, 03 08). 18 Remedies to Get Rid of Headaches Naturally. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/headache-remedies

McIntosh, J. (2022, 01 05). Why do I have a headache? Causes, types, and remedies. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/73936#home_remedies

Last Updated on October 31, 2023