বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার নীল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি যাকে মেডিকেলের ভাষায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) বলা হয়। ২০১৭ সালের ইন্ডিয়ান এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া। (Pietrangelo, 2021)

এই অনুচ্ছেদে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে যা আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোগীর জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে বিশ্বের অন্যতম ডায়াবেটিস এসোসিয়েশ্ন- আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন (American Diabetes Association) প্রদত্ত নির্দেশনা সমূহ জানতে সহায়তা করবে। এছাড়াও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের কারণ (Causes) ও লক্ষণ সহ এ রোগ সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আপনার জন্য জানা অত্যাবশ্যকীয় সেই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস কী?

টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো এমন এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তের মধ্যে ‌থাকা শর্করা বা গ্লুকোজ (Glucose) বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন প্রাকৃতিক ভাবে শরীরের মধ্যে উৎপাদন হয় না। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অগ্ন্যাশয় (Pancreas) নামক অঙ্গ থেকে নিয়মিত ইনসুলিন (Insulin) নিঃসরণ হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন না হওয়ার দরুন রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যাওয়া সহ নানাবিধ সমস্যা বা লক্ষণ ‌দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, টাইপ-২ ডায়াবেটিস নামে ডায়াবেটিসের আরেকটি প্রকরণ রয়েছে যা তুলনামূলক বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যায় তবে তা ইনসুলিনের অভাবে নয়, বরং সে ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে ইনসুলিনের প্রতি অসংবেদনশীলতা (Insulin resistance) তৈরি হয়ে থাকে। দুই ধরনের ডায়াবেটিসের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস কেন হয়?

টাইপ-১ ডায়াবেটিস কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর এখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয় যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার (Immune system) ত্রুটির দরুন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ (Beta cell) ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এই সমস্যার উদ্রেক হয়। কারণ মূলত বিটা কোষ থেকেই ইনসুলিন উৎপাদন হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ সমূহ (Risk factors) নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • বংশগত, বিশেষ করে মা বাবার ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে তবে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখা যায় ১৪ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ।
  • এছাড়াও জীনগত (Genetics) প্রভাবে হতে পারে যা একমাত্র চিকিৎসক গণ নির্ধারণ করতে পারেন।

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ?

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা যায়। যেমন:

  • ক্ষুধা ও তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হতে পারে
  • ক্লান্তি ও অবসাদ (tiredness & fatigue)
  • খিটখিটে মেজাজ ও একটুতেই মন খারাপ হওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা (Blurred vision)
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি

এছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে।‌ আর তা হলো ‌যে‌ সমস্ত শিশুরা সচরাচর রাতের বেলায় বিছানায় প্রস্রাব করে না তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বিছানায় প্রস্রাব করতে দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ এটি অনেক সময় টাইপ-১ ডায়াবেটিসের দরুন হতে পারে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের কি ধরনের ইমারজেন্সী হতে পারে?

টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে যে ধরনের ইমার্জেন্সি হতে পারে তা হলো: (Villines, 2019)

  • Hypoglycemia: হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলো রক্তে সুগার লেভেল একেবারেই কমে যাওয়া যা টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হারে হয়ে থাকে, এ পরিস্থিতিই সাধারণত ব্লাড সুগার নীল হয়ে যাওয়া নামে পরিচিত।‌ এই ব্যাপারে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  • Hyperglycemia: রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়াকে মেডিকেলের ভাষায় Hyperglycemia বলা হয়। নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ না খাওয়া অথবা ইনসুলিন না নেওয়ার দরুন এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার দরুন অত্যধিক পরিমাণে মুখ শুকিয়ে যাওয়া (very dry mouth) সহ শ্বাসকষ্ট হয়ে ইমারজেন্সী পরিস্থিতি হতে পারে।
  • Diabetic ketoacidosis (DKA): ইনসুলিনের অভাবে শরীরের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটলে তখন চর্বি ভেঙ্গে শক্তি উৎপন্ন হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় রক্তে কিটোন জমা হতে থাকে যা একসময়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, বমি বমিভাব সহ মুখে গন্ধ হওয়া এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। আর এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
  • ইনফেকশন: টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সামান্য কোনো আঘাত অথবা কেটে যাওয়ার দরুন মারাত্বক প্রকৃতির ইনফেকশন হতে দেখা যায়। আর তখন জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের কি ধরনের ইমারজেন্সী হতে পারে

টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার নীল হয়ে গেলে ইমারজেন্সি কি ওষুধের ব্যবস্থা করা উচিত?

টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার কমে গেলে বা একদম নীল হয়ে গেলে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তা জানার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। যেমন: কেনো ব্লাড সুগার কমে যায়? কাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে? আপনি কখন বুঝতে পারবেন যে আপনার ব্লাড সুগার কমে গেছে? সুগার লেভেল কত হলে তা কম হিসেবে বিবেচিত হবে?

ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার কারণ সমূহ

  • অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা
  • প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ইনসুলিন গ্রহণ করা
  • অপর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা
  • দিনের কোনো এক বেলায় খাবার গ্রহণ না করা (skipping a meal)
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যায়াম করা
  • মদ্যপান করা ইত্যাদি

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রবণতা:

  • যারা নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করেন না
  • ইনফেকশন, কিডনি রোগ অথবা লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি
  • পাহাড় বেয়ে উঠা বা ভ্রমণকারী ব্যক্তি

এছাড়াও মাসিক (Menstrual period) চলাকালীন সময়ে মহিলাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে। (Pietrangelo, 2021)

ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণ সমূহ 

প্রাথমিক অবস্থায় (Early symptoms) নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ দেখা যায়। (Nall, 2021) যেমন:

  • ঘাম হওয়া
  • ক্ষুধা বোধ
  • মাথাঘোরা ও ঝিমুনি (Dizziness)
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি
  • চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা
  • হাঁটতে অসুবিধা হওয়া
  • চেহারা ও ত্বক ফ্যাকাশে মনে হয়
  • শরীরে কাঁপুনি হওয়া ইত্যাদি

পরবর্তী বা ইমারজেন্সী পর্যায়ের (severe hypoglycemia) লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়:

  • খিঁচুনি (seizure)
  • বিভ্রান্তি (Confusion)
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি (loss of consciousness)

সুগার লেভেল: 

টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা ৭০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (70-180 mg/dl) স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয় । তবে এই মাত্রা ৭০ (70 mg/dl) এর নিচে ‌নেমে গেলে তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। (Pietrangelo, 2021)

সাধারণত বাসা বাড়িতে যে মেশিনের (glucometer) সাহায্যে সুগার মাপা হয় তাতে মিলিগ্রামের (mg) পরিবর্তে মিলিমোল (Millimole) হিসেবে নাম্বার দেখানো হয়ে থাকে। সেই হিসেবে স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৪ থেকে ১০ (4-10 millimole/dl) এবং ৪ এর নিচে হলে তা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে ধরা হবে।

উল্লেখ্য সুগার লেভেল একদম কমে যদি ৫৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (3 mmol/dl) বা তার কম হয়ে যায় তখন তা মারাত্বক প্রকৃতির হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ এই পর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অথবা না হওয়ার উপর নির্ভর করে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভিন্নতর হয়ে থাকে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।

রোগী অজ্ঞান অবস্থায় না থাকলে কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?

প্রাথমিক পর্যায়ের হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে অর্থাৎ যখন সুগার লেভেল কমে যায় কিন্তু রোগী এখনও সজ্ঞানে আছে সেই পর্যায়ে রোগীকে বাড়িতে রেখেই নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:

প্রথমেই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি ব্লাড সুগার ৫১-৭০ (3-4 mmol/dl) এর মধ্যে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন এর নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীকে গ্লুকোজ সরবরাহ করতে হবে। (Nall, 2021)

আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন এর নির্দেশনা হলো রোগীকে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে গ্লুকোজের উৎস হিসেবে গ্লুকোজ ট্যাবলেট (Glucose tablet), মধু (Honey), চিনি, মিষ্টি, ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষাতে যদি সুগার লেভেল ৫০ (<2.80 mmol/dl) এর কম থাকে তাহলে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে।

১৫ মিনিট পরে আবার ব্লাড সুগার লেভেল পরীক্ষা করতে হবে। যদি পূর্বের ন্যায় থাকে অর্থাৎ কোনো পরিবর্তন না হয় তবে পুনরায় পূর্বের‌ মাত্রায় গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। এরপরেও কোনো পরিবর্তন না হলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

উল্লেখ্য গ্লুকোজের উৎস হিসেবে গ্লুকোজ ট্যাবলেট খাওয়ানো সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে। কারণ এক্ষেত্রে গ্লুকোজের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট ভাবে জানা সম্ভব হয়। কিন্তু কোন খাবারের মধ্যে কতটুকু গ্লুকোজ আছে তা সহজেই জানা যায় না। আর তাছাড়া গ্লুকোজ ট্যাবলেট সবচেয়ে দ্রুত কার্যকরী হয়। প্রায় প্রত্যেক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে গ্লুকোজ ট্যাবলেট তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে যা ফার্মেসি থেকে সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। কাজেই, গ্লুকোজ লেভেল কমে যাওয়ার সমস্যা কারো থাকলে আগে থেকেই গ্লুকোজ ট্যাবলেট কিনে হাতের কাছে রাখা উচিত।

 

সুগার নীল হয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?

সুগার নীল‌ হয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে রোগীর মুখে গ্লুকোজ সেবন করানো সম্ভব হয় না।‌ এ অবস্থায় দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন:

  • Glucagon emergency kit: এতে রয়েছে এক শিশি গ্লুকাগন (Glucagon powder) এবং এক সিরিঞ্জ তরল যাতে গ্লুকাগন ভালোভাবে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে। অতঃপর এই দ্রবন বাহু অথবা ঊরুতে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করাতে হবে। (Grey, 2019)
  • Glucagon nasal powder: ইহা একধরনের পাউডার যা নাকের ছিদ্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

উল্লেখ্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসায় নিজেরা চেষ্টা না করে বরং একজন প্রাথমিক চিকিৎসককে বাড়িতে ডেকে এনে তার মাধ্যমে চিকিৎসা করানো উত্তম। অথবা রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ অথবা ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এবং কয়েকদিন পরে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুনরায় ওষুধ বা ইনসুলিন চালু করতে হবে।

glucagon emergency kit

টাইপ 1 ডায়াবেটিস সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার

টাইপ-১ ডায়াবেটিস একটি জীবন ব্যাপী রোগ অর্থাৎ এই রোগ একদম সারানো যায় না। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবন অথবা ইনসুলিন গ্রহণ এবং সেই সাথে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব হয়। অন্যথায় টাইপ-১ ডায়াবেটিস যেমন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হতে পারে তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস পুরুষত্বহীনতা সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে পারে। আর তাই টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানা এবং মেনে চলা উচিত। (Orenstein, 2014) যেমন:

  • নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে হবে এবং নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে
  • সরল শর্করা (refined carbs) কম খেতে হবে। শাকসবজি ও চর্বি কম রয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • কখনোই কোনো বেলার খাবার গ্রহণ করা থেকে ‌বিরত থাকা‌ যাবে না। একটানা ৪-৫ ঘন্টার বেশি সময় না খেয়ে থাকা‌ উচিত নয়
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তবে তা দৈনিক ১ ঘন্টার বেশি নয়
  • ত্বকের যত্ন নিতে হবে বিশেষত পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সামান্য ইনফেকশন হলেও তা ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করে
  • দাঁত,‌‌ মাড়ি ও‌ চোখের ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। প্রয়োজনে দাঁত ও চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ অথবা ইনসুলিন গ্রহণ করা জরুরি। তবে অবশ্যই ওষুধ ও ইনসুলিন সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় তা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার‌ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ব্যাপারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‌হলো ডায়াবেটিস, সুগার লেভেল ও হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা। মনে রাখবেন সুস্থতার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা।

 

 

 

References

Grey, H. (2019, October 1). Emergency Treatments for Hypoglycemia: What Works and What Doesn’t. Retrieved from Healthline: healthline.com/health/severe-hypoglycemia/emergency-treatments#hypoglycemia-symptoms

Nall, R. (2021, August 2). Hypoglycemia Symptoms. Retrieved from Healthline: healthline.com/health/hypoglycemia

Orenstein, B. W. (2014, May 7). 9 Ways to Prevent Type 1 Diabetes Complications. Retrieved from Everyday Health: everydayhealth.com/hs/managing-type-1-diabetes/prevent-type-1-complications-pictures/

Pietrangelo, A. (2021, March 24). Type 1 Diabetes Hypoglycemia: Causes, Symptoms, and More. Retrieved from Healthline: healthline.com/health/type-1-diabetes/type-1-diabetes-hypoglycemia-causes-symptoms-and-more

Villines, Z. (2019, March 28). What to do in diabetic emergencies. Retrieved from Medical News Today: medicalnewstoday.com/articles/317436#severe-hypoglycemia

 

Last Updated on April 12, 2023