ডিম (Eggs) খুব সহজলভ্য ও মজাদার একটি খাবার। ডিম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। তবে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অনেক তথ্য জানেন না। ডিম সম্পর্কিত খুব কমন একটি প্রশ্ন হলো একটি ডিম থেকে কতটুকু প্রোটিন বা আমিষ পাওয়া যাবে?
ডিমের সাইজ (ছোট ও বড়), মুরগির ডিম বনাম হাঁসের ডিম, সিদ্ধ অথবা কাঁচা ডিম, ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম ইত্যাদি ভেদে প্রোটিনের পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে। ডিমের প্রোটিন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় এবং ডিম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ প্রোটিনের অন্যান্য উৎস সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
একটি ডিমে কি পরিমাণ প্রোটিন থাকে?
ডিমের প্রায় ৭৬ শতাংশ হলো পানি, ১২.৬ শতাংশ প্রোটিন, ৯.৫ শতাংশ ফ্যাট, ০.৭ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট এবং বাকি অংশে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান (ভিটামিন, মিনারেল, ও এন্টি-অক্সিডেন্ট) থাকে। ডিমে কোনো ফাইবার বা আঁশ থাকে না। (Réhault-Godbert, 2019)
ডিমের সাইজ (ছোট ও বড়) অনুযায়ী প্রোটিনের পরিমাণ
সাধারণত ১টি ডিমের ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। ১২.৬ শতাংশ প্রোটিন হিসেবে ছোট সাইজের ১টি ডিম (৫০ গ্রাম) থেকে ৬.৩ গ্রাম প্রোটিন এবং বড় ডিম (৭০ গ্রাম) থেকে ৮.৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
বাজারে কিনতে পাওয়া এভারেজ সাইজের একটি ডিমে ৭ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
ডিমের সাদা অংশ বনাম কুসুম অনুযায়ী প্রোটিনের পরিমাণ
ডিমের সাদা অংশ হলো ৫৮ শতাংশ, কুসুম ৩১ শতাংশ এবং খোসা ১১ শতাংশ। খোসা বাদ দিয়ে হিসাব করলে ডিমের সাদা অংশ হলো ৬৫ শতাংশ এবং কুসুম ৩৫ শতাংশ।
ডিমের সাদা অংশের ৮৭.৭২ শতাংশ হলো পানি, ১০.৮২ শতাংশ প্রোটিন এবং খুব অল্প পরিমাণ ফ্যাট (০.১৯ শতাংশ) থাকে। পক্ষান্তরে কুসুমের ৫৫ শতাংশ হলো পানি, ১৫.৫ শতাংশ প্রোটিন এবং ২৬.৭১ শতাংশ হলো ফ্যাট। অর্থাৎ কুসুমে প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে।
ডিমের সাদা অংশের পরিমাণ কুসুমের তুলনায় বেশি বলে সাদা অংশে প্রোটিনের পরিমাণ কিছুটা বেশি রয়েছে। ১টি মাঝারি সাইজের ডিমের সাদা অংশ থেকে ৪ গ্রাম এবং কুসুম থেকে ৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
হাসের ডিম বনাম মুরগির ডিম অনুযায়ী প্রোটিনের পরিমাণ
হাসের ডিম ও মুরগির ডিমের প্রোটিনের অনুপাতের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায় না। তবে হাসের ডিমের সাইজ বা আকার মুরগির ডিমের তুলনায় বড় বলে হাসের ডিম থেকে কিছুটা বেশি পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও মুরগির ডিমের তুলনায় হাসের ডিমে ফ্যাট, ক্যালরি ও অন্যান্য উপাদান কিছুটা বেশি থাকে।
হাস ও মুরগির ডিমের মতো প্রায় একই অনুপাতে কোয়েলের ডিম থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে কোয়েলের ডিমের আকার হাস ও মুরগির ডিমের তুলনায় বেশ ছোট হয়ে থাকে।
কাঁচা ডিমে কি বেশি প্রোটিন থাকে?
ডিম সাধারণত কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় না। তবে কেউ যদি মনে করেন কাঁচা ডিম খেলে বেশি প্রোটিন পাওয়া যাবে তবে তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
কাঁচা হোক কিংবা সিদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই ডিমে সমান অনুপাতে প্রোটিন থাকে। বরং ডিম কাঁচা অবস্থায় না খেয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া হলে ডিমের প্রোটিন শরীরে শোষণ হওয়ার সম্ভাবনা (Digestibility) অনেক বেড়ে যায়।
কাঁচা ডিম খাওয়া হলে এতে থাকা অণুজীব (সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া) শরীরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস বর্জন করা জরুরী।
কাঁচা ডিমে তুলনামূলক বেশি প্রোটিন থাকে না। বরং কাঁচা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ডিমের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রোটিন ছাড়াও ডিম থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Bjarnadottir, 2023)
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ডিম তুলনামূলক কম ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি খাবার। একটি ডিম থেকে মাত্র ৭০ ক্যালরি পাওয়া যায়। ডিম খাওয়ার ফলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে যা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমানোর জন্য ডিম ভেজে না খেয়ে বরং সিদ্ধ করতে হবে। কারণ ডিম ভাজার ফলে ক্যালরি বেড়ে যায় (তেলের ক্যালরি যোগ হয়) যা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
ভিটামিন, কোলাইন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ
ডিম থেকে ভিটামিন সি ব্যতীত বাকি সকল ভিটামিন কম-বেশি পাওয়া যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন মিনারেলস রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি।
ডিমে কোলাইন রয়েছে যা মস্তিষ্ক সহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী
ডিমের এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ডিমে থাকা এলবুমিন নখ, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
প্রোটিনের ভালো উৎস কোনগুলো?
নিঃসন্দেহে প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হলো ডিম। ডিম ছাড়াও আরো যেসব খাবার থেকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় হলোঃ
- গরুর মাংস
- মুরগির মাংস
- বিভিন্ন ধরনের মাছ
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- ডাল, মটরশুটি ও বাদাম
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে চর্বিযুক্ত মাংস ও মুরগির চামড়া খাওয়া যাবে না।
ডিম ও হার্টের রোগের সম্পর্ক
১৯৬৮ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সপ্তাহে তিনটির কম ডিম (কুসুম সহ) খাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কারণ সেই সময়ে মনে করা হতো, সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম খাওয়া হলে তা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে যার ফলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ডিম নিয়ে করা অনেকগুলো গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ডিম খাওয়ার অভ্যাস কোলেস্টেরল তথা হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় না। (Réhault-Godbert, 2019) সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিদিন কুসুম সহ ১টি ডিম খাওয়া একদম নিরাপদ হিসেবে গণ্য হবে।
তবে যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি অথবা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের জন্য প্রতিদিন কুসুম সহ ডিম খাওয়া যাবে কিনা এই ব্যাপারে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
কারো ক্ষেত্রে ডিম খেলে যদি এলার্জির লক্ষণ (ত্বকে র্যাশ হওয়া, চুলকানি ও শ্বাসকষ্ট) দেখা যায় তবে তাদের জন্য ডিম খাওয়া যাবে না। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের (৫ বছরের কম বয়সী) ক্ষেত্রে এমনটি হতে দেখা যায়।
References
Bjarnadottir, A. (2023, February 06). How Much Protein in an Egg? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/protein-in-egg
Réhault-Godbert, S. (2019, 03 22). The Golden Egg: Nutritional Value, Bioactivities, and Emerging Benefits for Human Health. Retrieved from PubMed Central: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6470839/
Last Updated on December 31, 2023
Leave A Comment