নার্ভের রোগ বলতে নিউরোপ্যাথিক পেইন বা নার্ভে ব্যথা বোঝানো হয়ে থাকে। নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অথবা নার্ভের কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতার ফলে যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তাকে নিউরোপ্যাথিক পেইন বলা হয়। নিউরোপ্যাথিক পেইনের লক্ষণগুলো হলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে সুচ ফুটানো ব্যথা, ঝিনঝিন অনুভব, হাত ও পায়ের অবশ ভাব, ত্বকের সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি।

কতিপয় ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা নিউরোপ্যাথিক পেইন নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যা এই অনুচ্ছেদের আলোচনার মুল বিষয়বস্তু। নার্ভের রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানার জন্য অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

নার্ভের রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা 

যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি নার্ভের রোগ নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে তা নিচে আলোচনা করা হলো। (Yashar, n.d.) 

১। ঠান্ডা বা গরম সেঁক 

নার্ভের ব্যথা নিরাময়ের সবচেয়ে সহজ একটি উপায় হলো ব্যথার স্থানে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া। গরম সেঁক আক্রান্ত স্থানে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এবং ঠান্ডা সেঁক ফোলাভাব ও প্রদাহ দূর করার মাধ্যমে নার্ভের ব্যথা নিরাময় করে। 

একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম পদ্ধতি ভালো কাজে দেয়। অর্থাৎ কারো জন্য ঠান্ডা সেঁক এবং কারো জন্য গরম সেঁক উপকারী হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা ও গরম সেঁক দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আপনার ক্ষেত্রে যেমনটি ভালো লাগে তেমন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।  

গরম সেঁক দেওয়ার জন্য ইস্ত্রি বা হিটারের সাহায্যে একটি কাপড় গরম করে নিতে হবে। খুব বেশি গরম না করে বরং উষ্ণ প্রকৃতির গরম সেঁক দেওয়া উচিত। বাজারে হট ওয়াটার ব্যাগ কিনতে পাওয়া যায় যার মধ্যে গরম পানি তুলে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ঠান্ডা সেঁক দেওয়ার জন্য একটি কাপড়ের মধ্যে বরফ পেঁচিয়ে আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে চেপে ধরে থাকতে হবে। 

২। ভিটামিন 

Vitamin Sources

শরীরে ভিটামিনের (বিশেষ করে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ইত্যাদি) ঘাটতির সাথে নার্ভে ব্যথা হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। তাই নার্ভের ব্যথা নিরাময়ের জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার অথবা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে। (Select Health, n.d.) 

মাছ, মাংস, আলু সহ সবধরনের সবজি ও ফলমূল থেকে ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায়। বিশেষ করে কলা, পেঁপে, গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬ রয়েছে।

ভিটামিন বি১২ এর প্রধান উৎস হলো আমিষ জাতীয় খাবার। যেমনঃ গরুর মাংস, কলিজা, মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ইয়োগার্ট ইত্যাদি।

সূর্য রশ্মি সরাসরি ত্বকে লাগলে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। তাই মাঝেমধ্যে রোদ পোহাতে হবে। এছাড়াও মাছ, দুধ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কমলার রস ইত্যাদি থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। 

ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ইনজেকশন ফর্মে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় যা গ্রহণ করার জন্য একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

আপেল সিডার ভিনেগার 

আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া এসিটিক এসিডের জলীয় দ্রবণ যার মধ্যে ৯৪ শতাংশ হলো পানি এবং মাত্র ৫ শতাংশ এসিটিক এসিড থাকে। এছাড়াও সামান্য পরিমাণে মিনারেলস (যেমনঃ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম) রয়েছে। 

আপেল সিডার ভিনেগারের প্রদাহ নাশক গুণাবলী নার্ভের ব্যথা নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নার্ভের ব্যথা কমাতে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ থেকে ৩ টেবিল-চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে। স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য সামান্য পরিমাণে মধু যোগ করতে পারেন। 

আপেল সিডার ভিনেগার এসিডের দ্রবণ যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে। তাই সরাসরি না খেয়ে বরং পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে এবং খাওয়ার পর কুলি করতে হবে। এছাড়াও যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য Diuretics গ্রুপের ওষুধ খাচ্ছেন তাদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যাবে না।  

আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন। 

৪। ইপসম সল্ট (Epsom salt) 

ইপসম সল্ট হলো একধরনের লবণ যার রাসায়নিক সংকেত হলো MgSO বা ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। এই লবণে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

নার্ভের ব্যথা কমানোর জন্য কুসুম গরম পানিতে ইপসম সল্ট মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ঢালতে হবে অথবা লবণ মেশানো পানি দিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়। 

বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইন শপে ইপসম সল্ট কিনতে পাওয়া যায়।

৫। হলুদ ও আদা  

Curcumin

হলুদে থাকা কারকিউমিনের (Curcumin) প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে যা নার্ভের ব্যথা নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রান্নার কাজে হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করা ছাড়াও প্রতিদিন সকালে ১ থেকে ২ চা চামচ পরিমাণ হলুদের গুঁড়া কুসুম গরম পানিতে গুলিয়ে খাওয়া নার্ভের ব্যথা দূর করার ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। চাইলে কুসুম গরম দুধের সাথেও হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। 

কাদের জন্য হলুদের গুঁড়া খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত সেই সম্পর্কে জানার জন্য এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।  

হলুদের মতো আদা খাওয়া নার্ভের ব্যথা কমাতে উপকারী হতে পারে। কারণ আদাতে Gingerol নামক এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যার প্রদাহ নাশক গুণাবলী নার্ভের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রান্নার কাজে আদা ব্যবহার করা ছাড়াও সামান্য পরিমাণ আদা সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও গরম পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়ে আদা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। 

৩ টি টিপস 

  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। বিশেষ করে ইয়োগা (Yoga) খুব উপকারী ভূমিকা পালন করে। 
  • চায়ে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা নার্ভের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গ্রিন টিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।  
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা জরুরী। 

গ্রিন টি পান করার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

নানাবিধ কারণে নিউরোপ্যাথিক পেইন বা নার্ভে ব্যথা হতে পারে। যেমনঃ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি, আঘাত, সার্জারি, ক্যান্সার, কেমোথেরাপি, কারপাল টানেল সিনড্রোম, মদ্যপানের ক্ষতিকর প্রভাব, পারকিনসন ডিজিজ, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি। নিউরোপ্যাথিক পেইনের প্রকৃত কারণ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার জন্য একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

Bibliography

Select Health. (n.d.). Select Health. Retrieved from https://www.selecthealthtc.com/natural-remedies-for-neuropathy-pain/

Yashar, D. (n.d.). TOP HOME REMEDIES FOR NERVE PAIN. Retrieved from DR YASHAR: https://dryashar.com/blog/top-home-remedies-nerve-pain/

Last Updated on October 31, 2023