প্রতিটি মেয়েকেই নিরবে পিরিয়ডের ব্যথা সহ্য করতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা বেশ কম হলেও অনেকের ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। ব্যক্তিভেদে ব্যথার তীব্রতার পার্থক্য কেন হয় সেই সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানা না‌ গেলেও পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কয়েকটি সহজ উপায় আবিষ্কার হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ ও ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ

একজন প্রজননক্ষম নারীর ওভারি থেকে প্রতিমাসে একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট তথা ভ্রূণ সৃষ্টি লক্ষ্যে। আর ভ্রূণকে ধারণ করার জন্য জরায়ুর আভ্যন্তরীণ প্রাচীর (Endometrium) পুরু হতে থাকে। ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণু মিলিত না হলে জরায়ুর পুরু প্রাচীর জরায়ু পেশির ক্রমাগত সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে ভেঙে পড়তে থাকে যাকে পিরিয়ড বা মাসিক বলা হয়। জরায়ুর প্রাচীর ভেঙে পড়ার এই প্রক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময় তলপেটে কিছুটা ব্যথার সৃষ্টি হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যথার তীব্রতা খুব বেশি হলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলা হয়। যেসব বিষয়কে ডিসমেনোরিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলোঃ (Cleveland Clinic, 2020)

প্রাচীর পুরু হওয়ার ব্যাপারটি জরায়ুর বাইরে যেমনঃ ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালীতে ঘটলে
জরায়ুতে ফাইব্রয়েড (Fibroids)
ইনফেকশন (PID- Pelvic inflammatory disease)
জরায়ুতে টিউমার বা পলিপ
ধুমপানের অভ্যাস ও শরীরের অতিরিক্ত ওজনের প্রভাবে পিরিয়ডের ব্যথা বেশি হয়। এছাড়াও যাদের খুব কম বয়সে (১১ বছর) পিরিয়ড শুরু হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতা খুব বেশি হয়ে থাকে। তবে সন্তান জন্মদানের পর থেকে প্রায় সব নারীদের ক্ষেত্রেই পিরিয়ডের ব্যথা অনেক কমে যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই যেসব ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে তা হলোঃ

  • Ibuprofen 400 mg (সহজলভ্য এবং সবচেয়ে ভালো কার্যকরী)
  • Mefenamic acid 500 mg
  • Paracetamol 500 mg
  • যেকোনো একটি ওষুধ দিনে তিনবার (সর্বনিম্ন ৬ ঘন্টা ব্যবধানে) ভরাপেটে সেবন করতে হবে। এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

ঔষধ সেবনের ‌পাশাপাশি অথবা ঔষধ ছাড়াই শুধু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটাই কমানো যায়। যেমনঃ (Kennedy, 2021)

১। একটি প্লাস্টিকের বোতলে গরম পানি ভরে সেটিকে নরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে তলপেটে সেক দিতে হবে। বাজারে হট ওয়াটার ব্যাগ কিনতে পাওয়া যায় যেটি ব্যবহার করে খুব সুন্দর ভাবে সেক দেওয়া যাবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি খুব বেশি গরম না হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেক দেওয়া যাবে না।

২। পিরিয়ড শুরুর প্রথম দুইদিন ব্যথা কিছুটা বেশি থাকে আর তাই এই সময়ে যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকতে হবে। তলপেটে বালিশ চেপে পা ভাজ করে একদম গোল হয়ে শুয়ে থাকলে (যেভাবে মায়ের পেটের মধ্যে বাচ্চা থাকে) ব্যথা কমে যাবে। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।

৩। পেটে হালকা ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এছাড়াও হাঁটাহাঁটি, হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা বা মেডিটেশন করার ফলে উপকার হবে।

৪। আদা সহযোগে রং চা খেলে ব্যথার উপশম হবে। তবে চায়ের সাথে চিনি যোগ‌ করতে নিরুৎসাহিত করা হয় কারণ চিনি‌ এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর তাছাড়া পিরিয়ডের সময় শর্করা জাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

৫। অধিক চর্বিযুক্ত খাবার, পটেটো চিপস, ফ্রায়েড চিকেন, পেস্ট্রি ইত্যাদি না খেয়ে বরং ফলমূল, শাকসবজি ও বাদাম খেলে উপকার পাওয়া যাবে। সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে পানির পরিবর্তে কোমল পানীয় পান করলে হিতে বিপরীত হবে কারণ কোমল পানীয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে।

তলপেটে ব্যথা ছাড়াও ডিসমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, খাওয়ার প্রতি অনীহা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।‌ সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের পর পিরিয়ডের ব্যথা তেমন একটা থাকে না। তবে কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা গেলে অথবা প্রতিমাসে ডিসমেনোরিয়া হলে এবং লক্ষণ ক্রমাগত খারাপ হতে থাকলে সেক্ষেত্রে একজন গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

References

Cleveland Clinic. (2020, November 20). Dysmenorrhea. Retrieved from Cleveland Clinic: https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/4148-dysmenorrhea

Kennedy, M. (2021, July 24). 15 science-backed ways to relieve period cramps. Retrieved from INSIDER: https://www.insider.com/guides/health/reproductive-health/what-helps-with-period-cramps

Last Updated on April 13, 2023