বীর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শুক্রাণু (Sperm) যা একজন পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। বীর্যের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুস্থ সবল শুক্রাণুর অভাব কেন হয়, কাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা‌ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য কি কি করণীয় রয়েছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। 

বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা কত?

একজন সুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতিবার বীর্যপাতে ১.৫ থেকে ৫ মিলিলিটার বীর্য নির্গত হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে প্রতি ১ মিলিলিটার বীর্যের মধ্যে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিয়ন পর্যন্ত শুক্রাণু থাকতে পারে। সর্বনিম্ন ১৫ মিলিয়নের কম শুক্রাণু থাকলে তাকে অলিগোস্পার্মিয়া (Oligospermia) বলা হয় যা অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সুস্থ সবল একটি শুক্রাণুই যথেষ্ট। তবে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য শুক্রাণুকে জরায়ুর ভেতরে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিতে হয়। এই সময় অনেক গুলো শুক্রাণু মারা যায় এবং শেষ পর্যন্ত একটি মাত্র শুক্রাণু ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে গর্ভধারণের সূচনা ঘটায়। আর তাই ১ টি নয়, বরং সর্বনিম্ন ১৫ মিলিয়ন শুক্রাণু প্রতি মিলিলিটারে অথবা ৩৯ মিলিয়ন প্রতিবার বীর্যপাতে না থাকলে সেক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা অনেক কমে যায় বলে মনে করা হয়। শুধুমাত্র সংখ্যা নয়, বরং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য শুক্রাণুর আরো ২ টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরী। (Mayoclinic, 2022)

Movement: যেহেতু শুক্রাণু জরায়ুর ভেতরে অনেক পথ পাড়ি দেয় আর তাই চলাচলের সক্ষমতা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ বা তার বেশি সংখ্যক শুক্রাণুর চলাচলের সক্ষমতা থাকতে হবে। 

Morphology: সুস্থ স্বাভাবিক শুক্রাণুর মাথার অংশ ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে এবং জরায়ুতে চলাচলের জন্য সাহায্যকারী লম্বা লেজ থাকে। বীর্যের মধ্যে যত কম সংখ্যক শুক্রাণুর গঠন স্বাভাবিক থাকে, সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা সেই হারে কমে যায়। 

শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ

শুক্রাণু উৎপাদনের সাথে শরীরের অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কিত বিশেষ করে হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্ল্যান্ড ও অন্ডকোষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। যে সব কারণে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে তা হলোঃ (Allarakha, 2022)

  • হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে যথাযথ হরমোন নিঃসরণ না হওয়া
  • অন্ডকোষের গঠনগত ত্রুটি যেমনঃ খুব ছোট, ভেরিকোসিল, টিউমার 
  • টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি 
  • অন্ডকোষের ইনফেকশন 
  • জিনগত ত্রুটি (Klinefelter’s syndrome) 
  • কতিপয় ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমনঃ কেমোথেরাপি, এন্টি ফাংগাল, এন্টি বায়োটিক ইত্যাদি। 

শুক্রাণু উৎপাদনের সাথে বয়সের যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত ৫০ বছরের পর থেকে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে শুরু করে। এছাড়াও আরো যাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে তা হলোঃ 

  • ধুমপান ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
  • যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন ও বিষন্নতার রোগী 
  • দীর্ঘসময় বসে কাজ করতে হয় এমন পেশার মানুষ 
  • ইতিপূর্বে অন্ডকোষে সার্জারি করা হয়েছে এমন ব্যক্তি 
  • যারা খুব টাইট আন্ডারগার্মেন্টস দীর্ঘসময় ধরে পড়ে থাকেন 

শুক্রাণু বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় 

বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ, চলাচলের সক্ষমতা ও গঠন সম্পর্কে জানার উপায় হলো সিমেন এনালাইসিস (Semen Analysis) পরীক্ষা করা। এছাড়াও যৌন সঙ্গমের ইচ্ছা কমে যাওয়া, ঠিকমতো লিঙ্গ উত্থান না হওয়া, যৌন শক্তি খুব কম, শরীরে লোম কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে শুক্রাণু কমে গেছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। বীর্যে শুক্রাণু কম থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় কতিপয় প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে।‌ যেমনঃ

  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
  • নিয়মিত কিছুক্ষণ সময় ব্যায়াম করা 
  • মানসিক চাপ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন 
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস বর্জন করতে হবে
  • ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ সময় রোদ পোহাতে হবে
  • যৌন সঙ্গমের সময় থুথু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, থুথু শুক্রাণুর জন্য ক্ষতিকর
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে (প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা) ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে ইত্যাদি 

বীর্যে শুক্রাণু বৃদ্ধির খাবার 

পুরুষের যৌন হরমোন বৃদ্ধি সহ শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান বাড়াতে খাবারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ট্র্যান্স ফ্যাট যতটা সম্ভব বর্জন করতে হবে। সেই সাথে নিম্নলিখিত খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমনঃ

  • লাইকোপেন (Lycopene) শুক্রাণুর সংখ্যা ও চলাচলের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। টমেটো, তরমুজ, গাজর, পেপে,‌ আম ইত্যাদিতে অনেক বেশি পরিমাণে লাইকোপেন রয়েছে 
  • সব ধরনের বাদাম বিশেষ করে আখরোট (Walnuts) অনেক বেশি উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে
  • মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা শুক্রাণুর চলাচলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • ভিটামিন সি,‌ ডি ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার 
  • প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি 

বীর্যে শুক্রাণু বৃদ্ধির ঔষধ  

বীর্যে শুক্রাণু পরিমাণ খুব কম থাকলে সেক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ ঔষধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে। তবে ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই জাতীয় ঔষধ গুলো পরিমিত মাত্রায় নিজে থেকে খাওয়া যেতে পারে যা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।

References

Allarakha, S. (2022, December 02). What Foods Can Increase Your Sperm Count? Retrieved from MedicineNet: https://www.medicinenet.com/what_foods_can_increase_your_sperm_count/article.htm
Mayoclinic. (2022, May 13). Healthy sperm: Improving your fertility. Retrieved from Mayoclinic:
https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/getting-pregnant/in-depth/fertility/art-20047584

Last Updated on April 13, 2023

Was this article helpful?
YesNo