প্রচণ্ড গরমে ডাবের পানি পানে রয়েছে হৃদয় জুড়ানো তৃপ্তি। শুধু সুস্বাদুই নয়, ডাবের পানি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি পানীয়। বিশেষ করে হার্ট ও কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডাবের পানি বেশ সহজলভ্য এবং জনপ্রিয়।
ডাবের পানি প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান এবং মিনারেলস (Minerals) রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। অনেকরই এই উপাদানগুলোর সঠিক পরিমাণের চেয়ে ঘাটতি রয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডাবের পানির ৭ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
Table of Contents
ডাবের পানির ৭ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. বিভিন্ন পুষ্টির উৎস
নারকেল গাছ গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে জন্মায়। বৈজ্ঞানিকভাবে নারকেল Cocos nucifera নামে পরিচিত এবং উদ্ভিদগতভাবে এটি ফল হিসাবে বিবেচিত হয়।
পাকা ডাব বা পরিপক্ক নারকেলের পানি ততটা জনপ্রিয় নয় যতটা ডাবের পানি হয়। ডাবের ভেতরে থাকা পানি ফলকে পুষ্ট করতে বা নারকেলে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে। নারকেল পরিপক্ক হতে প্রায় ১০-১২ মাস সময় লাগে। ডাব থেকে নারকেল হয়ে গেলে এতে কিছু পানি অবশিষ্ট থাকে এবং বেশিরভাগ নারকেলের সাদা শক্ত শাঁসে পরিণত হয়।
একটা ডাব পরিপক্ক হতে ৬-৭ মাস সময় লাগে অর্থাৎ তখনই পুষ্টিসম্পন্ন পানি পাওয়া যায়। যদিও নারকেলেও কিছুটা পানি থাকে তবে ডাবের পানিটাই বেশি উপকারী হয়। একটি পরিপক্ক ডাবে প্রায় ১/২ থেকে ১ কাপ পানি পাওয়া যায়।
ডাবের পানিতে ৯৪% পানি এবং খুব কম পরিমাণে চর্বি থাকে।
এক কাপ বা ২৪০ মিলি ডাবের পানিতে রয়েছে- (DiGiacinto, 2023)
- ক্যালরিঃ ৬০
- কার্বোহাইড্রেট: ১৫ গ্রাম
- চিনি: ৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: দৈনিক চাহিদার ৪%
- ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক চাহিদার ৪%
- ফসফরাস: দৈনিক চাহিদার ২%
- পটাসিয়াম: দৈনিক চাহিদার ১৫%
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য
বিপাকের সময় কোষে ফ্রি র্যাডিক্যাল (Free radicals) অণু উৎপন্ন হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের (রক্তচাপ, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ইনসুলিনের মাত্রা) পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আপনার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
প্রাণীদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডাবের পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে যেন সেগুলো আর শরীরের জন্য ক্ষতিকর না থাকে।
ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাণীদের উপর করা গবেষণায় উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে এখনো মানুষের উপর গবেষণা করা হয়নি।
৩. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। এছাড়াও এটি হিমোগ্লোবিন A1C এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা দীর্ঘমেয়াদী ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ডাবের পানি ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও প্রিডায়াবেটিস (Prediabetes) রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
মনে রাখা জরুরী যে, ডাবের পানিতে খুব অল্প পরিমাণে এবং ডাবের ও নারকেলে শাঁসে বেশ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর তাই আপনি যদি ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তবে ডাবের ও নারকেলে শাঁস আপনার রেগুলার খাবার তালিকায় যোগ করার জন্য একজন ডাক্তার অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
৪. কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে
কিডনিতে যেন পাথর না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। যদিও খাবার পানি পান করা এক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে তবে ডাবের পানি আরো ভাল হতে পারে।
ক্যালসিয়াম, অক্সালেট ও অন্যান্য যৌগ একত্রিত হয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডাবের পানি কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে থাকে। তবে কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধে ডাবের পানির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মানুষের উপর আরো গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।
৫. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডাবের পানি পান করা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। আর তাই হার্টের রোগের (উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি) ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত ডাবের পানি পান করা যেতে পারে।
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ডাবের পানি পান করা উপকারী হবে।
৬. দীর্ঘায়িত ব্যায়ামের পরে উপকারী
ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় এবং সেই সাথে ইলেকট্রোলাইটের (Electrolytes) ঘাটতি হয়। অনেকেই ব্যায়াম করার পরে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস করে থাকেন। বাজারে কিনতে পাওয়া এসব ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস এর পরিবর্তে ডাবের পানি পান করা বেশি উপকারী হবে।
ডাবের পানি প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন এবং সেই সাথে এতে কিছুটা শর্করা রয়েছে যা দ্রুত শরীরে শক্তি জোগাবে। এছাড়াও ব্যায়ামের আগে ডাবের পানি পান করলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত ব্যায়াম করার এনার্জি থাকবে আর দীর্ঘমেয়াদী ব্যায়ামের পরে ডাবের পানি পান করলে দ্রুত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
৭. হাইড্রেশনের সুস্বাদু উৎস
শরীরে পানি স্বল্পতা পূরণের জন্য শরবত, ফলের জুস, গ্লুকোজ মেশানো পানি সহ বাজারে পাওয়া বিভিন্ন পানীয় আমরা পান করে থাকি। তবে সবচেয়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলো ডাবের পানি যা সবার জন্য উপকারী হবে।
বিশেষ করে ডায়রিয়া, বমি, কলেরা ইত্যাদি হলে খাবার স্যালাইনের পরিবর্তে ডাবের পানি পান করা যেতে পারে।
আবার যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রেও ডাবের পানি পান করা যাবে। কারণ এতে খুব কম ক্যালরি রয়েছে যা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।
কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ডাবের পানি পান করা যাবে না। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে। এছাড়াও যেকোনো ধরনের সার্জারির পরে ডাবের পানি পথ্য ভেবে পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কারণ, সার্জারির পরে কখনো কখনো তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। (WebMD, n.d.)
References
DiGiacinto, J. (2023, February 14). 7 Science-Based Health Benefits of Coconut Water. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/coconut-water-benefits
WebMD. (n.d.). Coconut Water – Uses, Side Effects, and More. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/vitamins/ai/ingredientmono-1261/coconut-water#:~:text=High%20levels%20of%20potassium%20in,blood%20levels%20get%20too%20high
Last Updated on December 18, 2023
Leave A Comment