কলেরা রোগের লক্ষণঃ এই গরমে কলেরা থেকে বাঁচার উপায়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ – ৪০ লাখ মানুষ কলেরা (Cholera) রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন যার মধ্যকার ২১০০০ – ১৪৩০০০ জন মৃত্যু বরণ করেন। (World Health Organization, 2022) আশার কথা হলো এই যে, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কলেরা রোগের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি যেমন একদমই কমিয়ে আনা সম্ভব তেমনি ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই কলেরা প্রতিরোধ করা যায়।

এই অনুচ্ছেদে কলেরা কি ধরনের রোগ, কেন হয়, কলেরা রোগের লক্ষণ, জটিলতা কমাতে করণীয় বিষয়াবলী সহ চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও কলেরা প্রতিরোধের উপায় সমূহ এবং কলেরা সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

কলেরা কেন হয়?

কলেরা একটি পানিবাহিত সংক্রামক রোগ। ভিব্রিও কলেরি (Vibrio cholerae) নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে কলেরা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া কলেরা আক্রান্ত রোগীর মল (Stools) থেকে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তিদের দেহে সংক্রমণের সুযোগ পায়। সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে দায়ী মনে করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • দূষিত পানি পান করা
  • মাছি দ্বারা খাবার দূষিত হওয়া
  • মানুষের বর্জ্য মিশ্রিত পানি দ্বারা শাক-সবজি চাষাবাদ এবং সেই শাক-সবজি না ধুয়ে সরাসরি খাবার হিসেবে গ্রহণ করা
  • কাঁচা অথবা কম সিদ্ধ করা খাবার গ্রহণ করা ইত্যাদি

উপরে উল্লেখিত উপায়ে কলেরা রোগের জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশের পর অন্ত্রে আক্রমণ ঘটিয়ে একধরনের টক্সিন (Toxin) নির্গত করে। যার ফলে অন্ত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং সেই সাথে মিনারেলস বা খনিজ উপাদান নিঃসৃত হতে থাকে যা কলেরা রোগের প্রধান লক্ষণ তথা ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে।

কলেরা রোগের বাহক কে?

একজন কলেরা আক্রান্ত রোগীর শরীরে লক্ষণ প্রকাশের পরবর্তী সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত মল থেকে এই জীবাণু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে মহামারী আকারে সংক্রমণ ঘটায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কলেরা আক্রান্ত হওয়ার পরেও তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে এক্ষেত্রেও মলের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে যা রোগী ও পরিবারের লোকজনের অজ্ঞাতসারেই সবাইকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে। যা হোক, কলেরা রোগটি ছড়িয়ে পড়ার একদম সুস্পষ্ট কয়েকটি মাধ্যম হলোঃ

✓ পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির মল নানাবিধ উপায়ে খাবার ও পানিকে দূষিত করতে পারে। পরবর্তীতে সেই দূষিত খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করার ফলে একজন সুস্থ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।

✓ কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তি মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত না ধুয়ে কোনো খাবার খেলে অথবা কারো সাথে করমর্দন করার (হাত মেলালে) মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

✓ এছাড়াও মাছির মাধ্যমে কলেরার জীবাণু ছড়াতে পারে। কারণ মাছি মলমূত্র সহ যেখানে সেখানে বসে যার ফলে এর পায়ে/গায়ে কলেরার জীবাণু লেগে যায় যা পরবর্তীতে কোনো খাবারের উপর মাছি বসার দরুন সেই খাবার দূষিত হয়।

কলেরা রোগের লক্ষণ

কলেরা রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার কয়েক ঘণ্টা থেকে পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তবে সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। কলেরা রোগের প্রধান লক্ষণ হলো চাল ধোয়া পানির মত পাতলা পায়খানা যা মাছের আঁশটের মতো দুর্গন্ধযুক্ত, সেই সাথে প্রচন্ড বমি (Vomiting), পানিশূন্যতা (Dehydration) এবং প্রচন্ড তৃষ্ণা বোধ। এছাড়াও আরো যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়- (Davis, 2022)

  • দ্রুত হৃদস্পন্দন
  • চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা হারানো
  • পেশী সংকোচন
  • মুখ, গলা, নাক ও চোখের পাতার ভেতরের পানি/ঝিল্লি শুকিয়ে যাওয়া
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • পেটে ব্যথা (Cramping pain)
  • প্রস্রাব নিঃসরণ কমে যায়
  • প্রচন্ড অস্বস্তি অথবা অস্থিরতা
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি

এছাড়াও যদি দ্রুত রোগীকে চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে খিঁচুনি, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, একদম নিস্তেজ ভাব এমনকি রোগী শক (shock) এ চলে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, কলেরা এবং সাধারণ ডায়রিয়ার মধ্যে অনেকেই পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন না। বিষয়টা কিছুটা জটিল প্রকৃতিরও বটে যা শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক ভালো ভাবে বুঝতে পারেন। তবে এই দুইয়ের মধ্যে মোটাদাগে কিছু পার্থক্য হলোঃ

✓ ডায়রিয়া পেটের যে কোনো ধরনের সমস্যার দরুন সৃষ্ট একটি লক্ষণ মাত্র আর কলেরা হলো নিজেই রোগ যার একটি লক্ষণ হলো ডায়রিয়া।

✓ ডায়রিয়া বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ইত্যাদির সংক্রমণে হতে পারে তবে কলেরা শুধুমাত্র ‘ভিব্রিও কলেরি’ নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়।

✓ ডায়রিয়ার তুলনায় কলেরার তীব্রতা ও জটিলতা অনেক বেশি হয়ে থাকে।

✓ ডায়রিয়া সাধারণত মহামারী আকারে দেখা যায় না। পক্ষান্তরে কলেরা যে এলাকায় শুরু হয় সেখানে মহামারী আকারে প্রায় সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে।‌

মজার বিষয় হলো, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ডায়রিয়া হোক অথবা কলেরা যেটাতেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন না কেন আপনার জন্য পার্থক্য নির্ণয় করাটা জরুরি বিষয় নয়। বরং প্রাথমিক প্রতিকারের জন্য প্রায় একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে যে বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কলেরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কলেরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কলেরা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে করণীয় বিষয়াবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রোগীকে বার বার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে যা (ORS- oral rehydration solution) নামে অভিহিত করা হয়। কলেরা হলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। আর তাই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে খাবার স্যালাইন গুলিয়ে ঘন ঘন খেতে হবে এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমনঃ ডাবের পানি, শরবত, জুস, স্যুপ, ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি ইত্যাদি। স্যালাইন এবং পানি সমৃদ্ধ এসব খাবার গ্রহণের ফলে শরীরে পানি ও খনিজের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হবে না।

এছাড়াও এই সময়ে রোগীর পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম কিছুটা কমে যায়। যার জন্য কতিপয় শক্ত অথবা গুরুপাক খাবার পরিহার করা উচিত। যেমনঃ অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিমাত্রায় আঁশযুক্ত খাবার যেমন- শক্ত ভাত ও রুটি, প্যাকেটজাত খাবার, কড়া টকজাতীয় ফল, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি।

শিশুদের ক্ষেত্রেও কলেরার প্রাথমিক পর্যায়ে বারবার খাবার স্যালাইন এবং তরল জাতীয় খবার দিতে হবে। এছাড়াও যে সমস্ত শিশু বুকের দুধ পান করে তাদের জন্য স্যালাইনের পাশাপাশি ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ কলেরার ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে জিংক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

কলেরা রোগের প্রতিকার

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কলেরার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা যথেষ্ট হতে পারে।‌ তবে যদি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরেও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয় এবং ক্রমাগত ডায়রিয়া ও বমির ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা সৃষ্টি হতে থাকে সেক্ষেত্রে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে নেওয়ার পর সর্বপ্রথম যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তা হলো শিরার মাধ্যমে স্যালাইন সরবরাহ করা। এছাড়াও গুরুতর ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে স্যালাইনের পাশাপাশি কিছু Anitibiotic medicine আছে। যেমনঃ

  • Azithromycin
  • Tetracycline
  • Erythromycin
  • Furazolidone
  • Doxycycline
  • Ciprofloxacin etc.

এন্টি বায়োটিক ওষুধ অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে হবে। বিশেষত শিশুদের জন্য এন্টি বায়োটিক ব্যবহারের পূর্বে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, যত্রতত্র এন্টি বায়োটিক ব্যবহারের ফলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষত অন্যান্য এন্টি বায়োটিক গুলোতে রেজিস্ট্যান্সি না‌ থাকলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ciprofloxacin ব্যবহার করা উচিত নয়।‌

কলেরা স্যালাইন

কলেরার প্রথম ও প্রধান ওষুধ স্যালাইন‌ যার মূল উপাদান হলো পানি এবং মিনারেলস। স্যালাইন মুখে খাওয়া অথবা শিরায় দেওয়া দুই ভাবেই সরবরাহ করা যেতে পারে। সাধারণত বমি থাকলে তখন মুখে স্যালাইন খাওয়ানো তেমন একটা ফলপ্রসূ হতে পারে না।‌ কারণ বমির ফলে স্যালাইন বের হয়ে যায়। আর এমন অবস্থায় শিরায় স্যালাইন দেওয়া কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও তীব্র পানিস্বল্পতা দূরীকরণে শিরায় স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যা হোক, খাবার স্যালাইনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি নির্দেশনা হলোঃ

✓ হাতের কাছে স্যালাইন না থাকলে ঘরে থাকা একমুঠো গুড় অথবা চিনি ও এক চিমটি লবণ বিশুদ্ধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করতে পারেন।

✓ প্যাকেটজাত স্যালাইন অবশ্যই নির্দেশিত মাত্রার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে কম পানিতে গুলিয়ে খাওয়া যাবে না। কারণ তাতে মিনারেলস এর মোরালিটি (Molarity) বেড়ে যায় যা উপকারের পরিবর্তে শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

আর শিরায় স্যালাইন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হলো প্রথম ৩০ মিনিট শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩০ মিলি (30 mL) অর্থাৎ ৫০ কেজি ওজনের একজন মানুষের জন্য ১৫০০ মিলি স্যালাইন দিতে হবে। সেই সাথে পরবর্তী ২.৫ ঘন্টার জন্য প্রতি কেজি ওজনের হিসেবে ৭০ মিলি প্রযোজ্য। আর ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা অর্ধেক হবে। (Davis, 2022) তবে সর্বোপরি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বিবেচনায় যে মাত্রায় স্যালাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই গ্রহণযোগ্য এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত।

কলেরা হাসপাতাল (মহাখালী, ঢাকা)

আমাদের দেশে কলেরার সর্বোত্তম চিকিৎসার জন্য রয়েছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল যা কলেরা হাসপাতাল নামেও পরিচিত যার অবস্থান ঢাকার মহাখালীতে। তবে ঢাকার বাইরের মানুষদের জন্য কলেরায় আক্রান্ত হলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ যেকোনো হাসপাতালে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ বাইরের জেলা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে যতক্ষণ সময় লাগবে ততক্ষণে রোগী পানি স্বল্পতায় মারা যেতে পারে। কলেরার জন্য প্রধান যে চিকিৎসার দরকার পড়ে তা হলো স্যালাইন সরবরাহ করা যা আপনার নিকটস্থ যেকোনো হাসপাতালে ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।

কলেরায় কি কি জটিলতা হতে পারে?

মৃদু থেকে মাঝারি প্রকৃতির কলেরায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব বেশি জটিলতার সৃষ্টি হয় না যদি শরীরে পানি স্বল্পতা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তবে তীব্র প্রকৃতির কলেরার ক্ষেত্রে যেখানে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন অথবা শিরার মাধ্যমে স্যালাইন সরবরাহের ব্যবস্থা করা না হয় সেক্ষেত্রে কতিপয় জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • শরীরে শর্করার পরিমাণ একদম কমে যায় যা ক্যালরি তথা শক্তির মূল উৎস। এমতাবস্থায় শরীরে খুব দুর্বলতা বোধ হয়।
  • রক্তে পটাশিয়াম সহ সবধরনের Electrolytes এর পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যায় যার ফলে হার্ট ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে।
  • শরীরে পানির খুব ঘাটতি হয় এবং কিডনির ছাঁকন কার্যক্রম ভালো ভাবে হতে পারে না। যার ফলে কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।
  • রোগী শক (Shock) এ চলে যায় আর অনেক ক্ষেত্রে শক থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

কিডনি ফেইলিউর হলে করণীয় কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

কলেরা প্রতিরোধের উপায় কি?

কলেরা প্রতিরোধের উপায়

কলেরা প্রতিরোধের উপায়

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আগেকার দিনের তুলনায় এখন কলেরার সংক্রমণ খুব কম হয়ে থাকে। তবুও গ্রীষ্মের শুরুতে আমাদের দেশে বিশেষত ঢাকা জেলায় প্রতিবছরই কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে আমরা সবাই চেষ্টা করলে নিম্নে উল্লেখিত কয়েকটি উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে কলেরা রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। যেমনঃ

  • খাবার পানি অবশ্যই ভালোভাবে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে যেনো তাতে মাছি বসতে না পারে।
  • মল ত্যাগের পর অবশ্যই সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে।
  • এছাড়াও প্রতিবার খাবার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • কাঁচা ফলমূল ও শাক-সবজি খেতে চাইলে অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  • গ্রামের মানুষদের জন্য খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
  • নদীর পানি ব্যবহার না করে বরং বাড়িতে টিউবওয়েল স্থাপন করতে হবে।

মনে রাখবেন, কলেরার সংক্রমণ খুব বেশি গুরুতর নয় তবে অবহেলায় এই রোগের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর তাই কলেরা রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করুন অথবা প্রয়োজন সাপেক্ষে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কলেরা প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

 

কলেরা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর 

১। কলেরা রোগের জীবাণুর নাম কি? 

কলেরা রোগের জীবাণুর নাম হলো ভিব্রিও কলেরি (Vibrio Cholerae) যা একধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ার অনেক গুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যকার কেবলমাত্র groups O1 এবং O139 কলেরা রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

২। কলেরা রোগের জীবাণু কে আবিষ্কার করেন?

সর্বপ্রথম ১৮৫৪ সালে ডা. জন স্নো কলেরাকে একটি পানিবাহিত রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আর ১৮৮৩ সালে ‘রবার্ট কক (Robert Koch)’ কলেরা রোগের জীবাণু ভিব্রিও কলেরি আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য সর্বপ্রথম কলেরা মহামারীর শুরু হয়েছিলো ভারতবর্ষে ১৮১৭ সালে আর সর্বশেষ (সপ্তম তম) মহামারী শুরু হয়েছিলো ১৯৬১ সালে ইন্দোনেশিয়ায়।

৩। কোন অঞ্চলে কলেরা মহামারী আকারে ছড়াতে পারে?

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে কলেরা রোগের প্রকোপ বেশি। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকাতে কলেরা মহামারী আকারে ছড়াতে পারে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারে না। অর্থাৎ পরিষ্কার পানির অভাব এবং স্যানিটেশনের ঘাটতি দেখা দেয় যা কলেরা মহামারী সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ গুলো হলোঃ

  • নিরাপদ খাবার পানির অভাব। বিশেষত ঢাকা নগরীতে ওয়াসার মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয় যার ফলে কোনো একজায়গায় কলেরার আক্রমণ শুরু হলে তা দ্রুত পানির মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে
  • সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার অভাব
  • ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা তথা একসাথে অধিক লোকের বসবাস
  • বাইরের অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার গ্রহণের প্রবণতা ইত্যাদি

৪। কলেরা কিভাবে শনাক্ত করা যায়? 

কলেরা রোগ শনাক্ত করার জন্য প্রথমে কলেরা আক্রান্ত রোগীর পায়খানা (মল) সংগ্রহ করতে হবে। তারপর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণু ও রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

✓ কালচার পদ্ধতি (culture method)- কলেরা নির্ণয় করার জন্য কালচার হচ্ছে আদর্শ একটি পদ্ধতি।

✓ Rapid Immunochromatographic Dipstick Test- যখন কোনো এলাকায় কলেরা মহামারী আকার ধারন করে তখন কলেরা রোগ দ্রুত নির্ণয় করার জন্য এই পরীক্ষাটি করা হয়।

৫। কলেরার কি কোন প্রতিষেধক/ ভ্যাক্সিন আছে?

বর্তমানে কলেরা প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা অনুমোদন প্রাপ্ত‌ তিনটি ওরাল ভ্যাক্সিন (Oral vaccine) আছে যা মুখে সেবন করতে হয়।

  • Dukoral
  • Shanchol
  • Euvichol-Plus

 

 

 

References

Davis, C. P. (2022, 1 21). Cholera. Retrieved from MedicineNet: https://www.medicinenet.com/cholera/article.htm

World Health Organization. (2022, 3 30). Cholera. Retrieved from WHO: https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/cholera

 

Last Updated on April 13, 2023