চুলের যত্নে শ্যাম্পু ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। মাথার ত্বক ও চুলের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য নারী পুরুষ সবাই শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকে। শ্যাম্পুর একটি কমন উপাদান হলো সালফেটের যৌগ যা ফেনা তৈরি করে এবং পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। 

সালফেটের যৌগ চুলের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাহলে কি সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়? বাজারে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু কিনতে পাওয়া যায়। কাদের জন্য সেগুলো (সালফেট-ফ্রি) ব্যবহার করা উচিত? ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

সালফেট কি?   

সালফেট বলতে এই অনুচ্ছেদে সালফেটের যৌগ বোঝানো হয়েছে যা শ্যাম্পু, সাবান, টুথপেস্ট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। মূলত সালফেটের তিনটি যৌগ এইসব পণ্য সামগ্রীতে পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

  • সোডিয়াম লরেথ সালফেট (Sodium laureth sulfate)
  • সোডিয়াম লরাইল সালফেট (Sodium lauryl sulfate)
  • অ্যামোনিয়াম লরাইল সালফেট (Ammonium laureth sulfate) 

১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম শ্যাম্পুতে পরিষ্কারক হিসেবে সালফেটের যৌগ ব্যবহার করা হয়। সালফেট সমৃদ্ধ যৌগ খুব ভালো পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে এবং সেই সাথে এটি বেশ সহজলভ্য রাসায়নিক উপাদান। তাই ১৯৩০ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত শ্যাম্পু তৈরিতে পরিষ্কারক হিসেবে সালফেটের যৌগ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। (McVean, 2017) 

শ্যাম্পুতে সালফেট এর কাজ কি?  

শ্যাম্পু অনেকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি যার মধ্যকার অন্যতম একটি হলো সালফেটের যৌগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্যাম্পুতে সালফেটের যৌগ হিসেবে সোডিয়াম লরেথ সালফেট ব্যবহার করা হয়।    

শ্যাম্পুতে সালফেটের যৌগের প্রধান কাজ হলো ফেনা তৈরি করা এবং মাথার ত্বক ও চুল পরিষ্কার করা।

সালফেট কি বিপজ্জনক?

Is Sulfate Harmful?

হেয়ার ফলিকলের (চুলের গোড়া) পাশে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে যা থেকে সেবাম (Sebum) নিঃসরণ হয়। 

সেবাম প্রাকৃতিক তেল হিসেবে কাজ করে যা মাথার ত্বক ও চুলের রুক্ষতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে ময়লার পাশাপাশি সেবাম দূর হয়ে যায়। যার ফলে মাথার ত্বক ও চুল রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে যেতে পারে। তবে যেহেতু প্রতিনিয়তই সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে সেবাম নিঃসৃত হয়, তাই অতিরিক্ত মাত্রায় (খুব ঘন ঘন) শ্যাম্পু ব্যবহার করা না হলে সাধারণত রুক্ষতার সৃষ্টি হয় না।  

এছাড়াও শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় চোখের ভেতর ফেনা প্রবেশ করলে চোখে‌ জ্বালাপোড়া হতে পারে। এর বাইরে সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পুর তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে। 

১৯৯৮ সালে একটি মিথ (Myth) প্রচলিত হয়েছিল যে, সালফেটের যৌগ সমৃদ্ধ শ্যাম্পু বা টুথপেস্ট ব্যবহার করার ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সালফেটের যৌগ সমৃদ্ধ পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের সাথে ক্যান্সার হওয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। (Johnson, 2019) 

কাদের জন্য সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু এড়িয়ে চলা উচিত? 

প্রায় সব মানুষের জন্যই সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা নিরাপদ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। তাই সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং বাজারে কিনতে পাওয়া বেশিরভাগ শ্যাম্পুই সালফেট সমৃদ্ধ দেখা যায়। 

কতিপয় ক্ষেত্রে সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু এড়িয়ে যাওয়া উচিত যা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। 

রুক্ষ ত্বক ও চুল 

যাদের মাথার ত্বক ও চুল রুক্ষ প্রকৃতির অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে সেবাম নিঃসরণ হয় না এমন ব্যক্তিদের জন্য সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বক ও চুল আরো রুক্ষ হয়ে যাবে। এছাড়াও যাদের মাথার চুল কোঁকড়ানো তাদের জন্য সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই উত্তম। 

একজিমা বা সোরিয়াসিস 

মাথার ত্বকে কোনো চর্মরোগ হলে (একজিমা বা সোরিয়াসিস) সেক্ষেত্রে সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে চর্মরোগের লক্ষণ বেড়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী শ্যাম্পু (মেডিকেটেড শ্যাম্পু বা সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু) ব্যবহার করতে হবে।  

এলার্জিক রিয়াকশান 

যাদের ত্বক সালফেটের যৌগের প্রতি অতিসংবেদনশীল অর্থাৎ সালফেট সমৃদ্ধ পণ্যসামগ্রী ব্যবহার করার ফলে এলার্জিক রিয়াকশান দেখা দেয় তাদের জন্য সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এলার্জিক রিয়াকশানের লক্ষণ হলো শ্যাম্পু ব্যবহারের পর মাথার ত্বক ও মুখে র‌্যাশ হওয়া, চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকে ফোলাভাব দেখা যায় ইত্যাদি। (Cherney, 2019) 

সালফেটের প্রতি এলার্জিক রিয়াকশান হওয়া বিরল ঘটনা অর্থাৎ সচরাচর এমনটি ঘটতে দেখা যায় না।

চুলের বিভিন্ন স্টাইল 

Hair Style

রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে চুল কালার করা, তাপ দিয়ে চুল কার্ল করা (কোঁকড়ানো বানানো) বা কোঁকড়ানো চুল সোজা করা সহ চুলের বিভিন্ন স্টাইল করার ক্ষেত্রে সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে চুল বা স্টাইলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এইসব ক্ষেত্রে বিউটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।  

সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু 

সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পুতে পরিষ্কারক হিসেবে এমন মৃদু প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করা হয় যা ত্বক ও চুলের জন্য কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ সেবাম দূর করে না এবং ত্বক ও চুল রুক্ষ হয়ে যায় না। 

বাজারে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। তবে দাম তুলনামূলক একটু বেশি হয়ে থাকে। 

সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পুর ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। তবে অতিরিক্ত রুক্ষ প্রকৃতির চুলের জন্য অথবা চর্মরোগ ও চুলের বিভিন্ন স্টাইলের ক্ষেত্রে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। 

সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পুর অসুবিধা হলো ফেনা তৈরি হয় না বা খুব কম ফেনা তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত ময়লা দূর করতে পারে না। 

শেষ কথা

পরিষ্কারক হিসেবে সালফেটের যৌগ সবচেয়ে ভালো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সালফেট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উত্তম। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।   

কোনো সমস্যা থাকলে তাদের জন্য সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও চুলের যত্নে সবার জন্যই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো উচিত। কারণ হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়।  

Bibliography

Cherney, K. (2019, July 03). Should You Avoid Shampoos with Sulfates? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/sulfate-in-shampoo

Johnson, J. (2019, November 15). Are sulfates in shampoo dangerous? Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/327013

McVean, A. (2017, June 27). Sulfates in Shampoo. Retrieved from McGill University: https://www.mcgill.ca/oss/article/did-you-know-general-science/sulfates-shampoo

Last Updated on November 4, 2023