আমাদের দেশে প্রচলিত একটি রোগ হচ্ছে খিচুনি (Seizure) বা মৃগী (Epilepsy) যা একধরনের স্নায়ুবিক রোগ। জেনেটিক সমস্যার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। বাচ্চা বা বয়স্ক যেকোনো বয়সে এই রোগ হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে এই রোগের জন্য অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। অনেক ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম একটি হল গ্যাবাপেনটিন (Gabapentin) যা নিয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
গাবাপেনটিন কি?
গ্যাবাপেনটি একটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ যা মস্তিষ্কের নিউরন কোষের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সাধারণত খিচুনি (seizure) বা মৃগী (epilepsy) রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
গ্যাবাপেনটিন হচ্ছে জেনেরিক (Generic) বা সাধারণ নাম যা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নির্বাচিত বানিজ্যিক নামে (Trade name) বাজারজাতকরণ করে থাকেন। যেমনঃ
- Gaba®
- Gabahil®
- Gabamax®
- Gabantin®
- Gabon®
- Gpentin®
- GBR®
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিসের জন্য অনুমোদিত?
- খিচুনি ও মৃগী রোগ
- শিংগলস (Shingles)
- স্নায়ুবিক ব্যথা (Neuropathic pain)
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) ডোজ বা মাত্রার নিদের্শনাবলী?
গ্যাবাপেনটিন ওষুধটি ট্যাবলেট (Tablets), ক্যাপসুল (Capsule) ও ওরাল সলিউশন (Oral solution) হিসেবে পাওয়া যায়।
রোগের প্রকৃতি ও তীব্রতা এবং রোগীর বয়স অনুযায়ী গ্যাবাপেনটিন সেবনের নির্দেশনা ভিন্নতর হয়ে থাকে। যেমনঃ
মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে:
- ১২ বছর বা তার বেশি বয়স্কদের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ৩০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দৈনিক ৩ বার এবং ধীরে ধীরে ডোজ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- ৩ থেকে ১২বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি ১ কেজি ওজনের অনুপাতে ১০-১৫ মিলিগ্রাম দৈনিক (৩ বার) এবং পরবর্তীতে ডোজ বাড়ানো লাগবে।
স্নায়ুবিক ব্যথা:
- প্রথম দিন ৩০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ১ বার
- দ্বিতীয় দিন ৩০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ২ বার (সকাল ও রাত)
- তৃতীয় দিন ৩০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ৩ বার (সকাল, দুপুর ও রাত)
- প্রয়োজনে দিনে সর্বমোট ১৮০০ মিলিগ্রাম সেবন করা যেতে পারে।
গ্যাবাপেনটিন ওষুধটি ওটিসি (OTC- over the counter) ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কী কী ডোজ ফর্মে পাওয়া যায়?
সাধারণত গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) বাজারের ট্যাবলেট (Tablets), ক্যাপসুল (Capsule) ওরাল সলিউশন (Oral solution) হিসেবে পাওয়া যায়।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিভাবে গ্রহণ করা উচিত?
গ্যাবাপেনটিন ওষুধটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ আর তাই এটি চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক সেবন করতে হবে। সাধারণত খাবার গ্রহণের পরে পানি সহকারে ওষুধ গিলে খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ওষুধ চিবিয়ে বা চুষে খাওয়া যাবে না। আর তরল ওষুধের ক্ষেত্রে প্যাকেটের ভেতরে থাকা পাত্রের সাহায্যে মেপে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কখনো ওষুধ খেতে ভুলে গেলে পরবর্তী ওষুধ খাওয়ার সময়ে একসাথে দুইবেলার ওষুধ সেবন করা যাবে না। এতে করে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) এর সাথে যেসব ওষুধ একত্রে নেওয়া ঠিক নয়
গ্যাবাপেনটিনের সাথে কিছু কিছু ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কারণ এতে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়া সহ শরীরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ (cleveland clinic, 2021)
- তীব্র প্রকৃতির ব্যথা নাশক ওষুধ
- অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট ওষুধ
- এন্টি-এংজাইটি (Anti-anxiety medicines)
- এলার্জির ওষুধ (অ্যান্টিহিস্টামিন)
- অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড
- ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি
৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এবং যাদের ফুসফুসের জটিল রোগ (COPD– chronic obstructive pulmonary disease) রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গ্যাবাপেনটিন সেবনের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি?
অন্য সব ওষুধের মতো গ্যাবাপেনটিন সেবনের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সবচেয়ে কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হলোঃ
- জ্বর (Fever)
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
- মাথা ঘুরানো (Dizziness)
- মাথাব্যথা (Headache)
- বমি বমি ভাব (Nausea)
- বমি হওয়া (Vomiting)
- ইনফেকশনের প্রবণতা সৃষ্টি
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
- শরীরের ভারসাম্যহীনতা
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ইত্যাদি
গ্যাবাপেনটিন এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি?
গ্যাবাপেনটিন সেবন করার ফলে কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত নিচে উল্লেখিত জটিল সমস্যা গুলোর কোনোটি দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমনঃ
- ওষুধ সেবনের পরে ত্বকে র্যাশ (Rash) ও চুলকানি, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে তাকে এলার্জিক রিয়াকশন বলা হয়।
- মানসিক ও আচরণ জনিত সমস্যা। যেমনঃ অস্বাভাবিক রাগ হওয়া, দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা, খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা এবং আত্মহত্যা করার প্রবণতা।
- লিভারের সমস্যা যার লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া সহ প্রস্রাব ও পায়খানার বর্ণ পরিবর্তন, বমি হওয়া ইত্যাদি।
- কিডনির সমস্যা যার লক্ষণ হলো প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া, পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
- এছাড়াও ঠোঁট ও নখের নিচের অংশ নীল বর্ণের হয়ে যাওয়া এবং পেশিতে ব্যথা অনুভব হলে ওষুধ সেবন বন্ধ রেখে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) কিডনি রোগীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ?
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কিডনি রোগীদের গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন মায়োটক্সিসিটি (Myotoxicity), রেবডোমায়োলাইসিস (Rabdomyolisis), রেনাল ফেইলর (renal failure), ইত্যাদি।
এমনকি অপ্রয়োজনে/ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতীত গাবাপেনটিন সেবনে যাদের আগে কিডনি ভালো ছিল তাদেরও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) ব্যবহারে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) নিয়ম করে খেতে হবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খেতে হবে। হঠাৎ করে এ ওষুধ ছেড়ে দেওয়া যাবে ন। এটি বন্ধ করতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমিয়ে এনে বন্ধ করতে হবে।
গর্ভবতী মা, স্তন্যদানকালে এবং কিডনি রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। (Rocha, S.)
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের ক্ষেত্রে গ্যাবাপেনটিন নেওয়া যাবে কি?
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গ্যাবাপেনটিন ওষুধ সেবন করা নিরাপদ হবে কিনা এই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। আর তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হলে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কম মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে এবং ডাক্তারের সান্নিধ্যে থাকতে হবে যেন কোনো সমস্যা হলে শুরুতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক অথবা গর্ভবতী নারীদের মধ্যে যাদের গ্যাবাপেনটিন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে তাদের জন্য এই ওষুধটির পাশাপাশি ভিটামিন বি৯ (ফলিক এসিড) গ্রহণ করতে হবে। এতে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে গ্যাবাপেনটিন ওষুধের সামান্য প্রভাব শিশুর উপর পড়তে পারে। তবে এতে শিশুদের কোনো সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
গ্যাবাপেনটিন ওষুধটি নারী ও পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতার (Fertility) উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। (National Health Service, 2022)
গাবাপেনটিন (GABAPENTIN) শুরুর আগে ডাক্তারকে কি কি বিষয় অবহিত করতে হবে?
আগে থেকেই কোনো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা অথবা দীর্ঘমেয়াদী কোনো ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে তা চিকিৎসককে জানাতে হবে। যেমনঃ
- ফুসফুসের রোগ বা শ্বাসকষ্ট
- ডায়াবেটিস
- কিডনির সমস্যা
- ডায়ালাইসিস করতে হয়
- মানসিক রোগ (বিষণ্নতা)
- গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মা অথবা গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক নারী
Reference
cleveland clinic. (2021, January 7). Gabapentin. Retrieved from Cleveland clinic: https://my.clevelandclinic.org/health/drugs/21561-gabapentin
National Health Service. (2022, January 18). Pregnancy, breastfeeding and fertility while taking gabapentin. Retrieved from NHS: https://www.nhs.uk/medicines/gabapentin/pregnancy-breastfeeding-and-fertility-while-taking-gabapentin/
Last Updated on May 15, 2023
I am really impressed with your writing skills and also with the layout on your blog.
Is this a paid theme or did you modify it yourself?
Either way keep up the nice quality writing, it is rare to see a nice blog like this one
nowadays.
For newest news you have to go to see web and on web I found this
website as a finest site for most up-to-date updates.
This web site definitely has all of the information I needed concerning
this subject and didn’t know who to ask.