যারা কফি খেতে ভালোবাসেন তারা সম্ভবত কফির উপকারিতা ও ক্ষতিকর প্রভাব চিন্তা না করেই দিন শুরু করেন কফি দিয়ে। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে ১৯৯১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কফিতে কার্সিনোজেন থাকতে (যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে) পারে বলে চিহ্নিত করেন। তবে পরবর্তীকালে ২০১৬ সালে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, কফি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় না বরং পরিমিত মাত্রায় কফিকে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (Harvard T.H. Chan School of Public Health, n.d.) এই অনুচ্ছেদে কফির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

কফি খাওয়ার উপকারিতা

কফির মূল উপাদান হলো ক্যাফেইন।‌ এছাড়াও কফি থেকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং সামান্য পরিমাণে ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) ও ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। কফি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের যেসব উপকার হতে পারে তা হলোঃ

১। কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা জোগানোর মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরে এনার্জি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যারা মানসিক পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা বাড়াতে কফি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। নিয়মিত কফি খেলে তাদের ক্ষেত্রে পারকিনসনস ও আলজেইমার্স নামক স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

৩। যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের ক্ষেত্রে হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করে।

৪। কফির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে চিনি মেশানো কফি খাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

৫। যারা কফি পান করেন তাদের লিভারে এনজাইমের মাত্রা ভালো থাকে এবং সেই সাথে লিভারের বিভিন্ন রোগ যেমনঃ লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদির ঝুঁকি কমে যায়।

৬। কফি পিত্তথলি থেকে পিত্তরস নিষ্কাশনে সহায়তা করার মাধ্যমে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।

৭। পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম ভালো রাখে এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৮। কফি কোষের ডিএনএ শক্তিশালী করার মাধ্যমে শরীরে টিউমার সৃষ্টি ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

৯। কফি শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

১০। কফিতে রয়েছে পলিফেনল যা উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতা কমায়। এছাড়াও মন ভালো করতে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে।

কফি খাওয়ার অপকারিতা

পরিমিত মাত্রায় কফি খাওয়ার ফলে শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকার হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করলে তা শরীরের জন্য নানাবিধ অপকারিতা বয়ে আনে। যেমনঃ (Nordqvist, 2021)

  • উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে কফি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়
  • কিছু কিছু ঔষধের কার্যকারীতা কমিয়ে দিতে পারে। যেমনঃ এন্টি বায়োটিক, থাইরয়েডের ঔষধ ও মানসিক সমস্যায় ব্যবহৃত ঔষধ
  • দৈনিক ৬ কাপের বেশি কফি পান করলে বিষন্নতা ও অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • এসিডিটি, বুকজ্বালা ও হজমের সমস্যা হতে পারে
  • অনিদ্রা রোগ সৃষ্টি হয়
  • আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়
  • ব্যায়ামের সময় কফি খেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়
  • মানসিক রোগীদের সমস্যাগুলো বেড়ে যায়

কফি খাওয়ার সঠিক সময়

কফির‌ উপকারিতা পাওয়ার জন্য কখন ও কতটুকু পরিমাণে খেতে হবে সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরী। সকালে একদম খালিপেটে কফি খাওয়া উচিত নয়। কারণ,‌‌ তাতে এসিডিটি ও বুকজ্বালা হতে পারে এবং ক্ষুধা কমে যায়। আবার খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই কফি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। খাবার খাওয়ার নূন্যতম ৩০ মিনিট অথবা একঘন্টা পর কফি খেতে হবে।‌ এছাড়াও দিনের বেলায় কাজের ফাঁকে কফি খাওয়া যেতে পারে। তবে সন্ধ্যার পর কফি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে করে রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কাপ পর্যন্ত কফি খাওয়া যেতে পারে। এর চেয়ে বেশি মাত্রায় কফি খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। কফিতে চিনির পরিমাণ খুব কম হওয়া উচিত।‌ এছাড়াও,‌ কারো অনিদ্রা রোগ থাকলে বা অন্য কোনো সমস্যা হলে তাদের জন্য আরো কম পরিমাণে কফি খেতে হবে। অথবা কফির পরিবর্তে চা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কফি খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় কফি খাওয়া যাবে তবে দৈনিক ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ কাপ‌ পর্যন্ত। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে কফি গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সেই সাথে কম ওজন নিয়ে বাচ্চার জন্ম হতে পারে। যারা শিশুকে বুকের দুধ পান করান তাদের জন্যও পরিমিত পরিমাণে কফি‌ পান করতে হবে। অন্যথায়, বুকের দুধের মাধ্যমে কফির প্রভাব শিশুর মেজাজ খিটখিটে ও ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও শিশু ও কিশোরদের কফি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

কফি খুব অভিজাত এবং শরীরের জন্য উপকারী একটি পানীয়।‌ ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরকে চাঙ্গা করতে এনার্জি ড্রিংকস এর তুলনায় কফি হাজার গুণে ভালো। তবে কফি পান করতে হবে পরিমিত পরিমাণে যেন তা শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে এবং কফির প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি না হয়।

References

Harvard T.H. Chan School of Public Health. (n.d.). coffee. Retrieved from Harvard T.H. Chan School of Public Health: https://www.hsph.harvard.edu/nutritionsource/food-features/coffee/
Nordqvist, J. (2021, December 08). Is coffee good for you? Health benefits, disadvantages, and more. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/270202

Last Updated on April 12, 2023