কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর সমস্যা। এ সমস্যায় সব বয়সের মানুষই কম-বেশি ভোগেন। তবে একটু সচেতন থাকলেই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এই অনুচ্ছেদে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ কিভাবে কাজ করে?

বিভিন্ন ধরণের কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ আছে। সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে। কিছু কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ অন্ত্রে পানি ধরে রাখে, ফলে পায়খানা নরম হয়। আবার কিছু কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ এক ধরণের পেরিস্টালটিক মুভমেন্টের (Peristaltic movement) মাধ্যমে অন্ত্রের বস্তুকে নরম রাখে। আবার কিছু ওষুধ যেমন গ্লিসারিন বা ক্যাস্টর অয়েল লুবরিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে। 

পাইলস সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। 

কোষ্ঠকাঠিন্য ঔষধ এর নাম

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধকে মোটামুটিভাবে ৫ ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ

১। Bulk-forming Laxative 

বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভ (Bulk-forming Laxative) কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইসবগুলের ভুসি (ispaghula husk) এক প্রকার বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভ। অর্থাৎ এটি খাওয়ার পরে পানি শোষণ করে ফুলে যায়, এবং জেলের মতো বস্তু তৈরি করে মলকে নরম করে। 

ইসবগুলের ভুসি অনেক সময় বাজারে খোলা পাওয়া যায়। সাধারণত রমজান মাসে রোজাদাররা ইসবগুলের ভুসির শরবত পান করেন। তবে ইসবগুলের ভুসির ফার্মাসিউটিক্যাল প্রিপারেশনও পাওয়া যায়। 

ইসবগুলের ভুসির ফার্মাসিউটিক্যাল প্রিপারেশন দুই ধরণেরঃ 

  • Ispaghula Husk Powder: Fibogel® Powder, Ispergul® Powder 
  • Ispaghula Husk Non-powder: Fiberlax® Granules, Ispergul® Granules 

২। Stimulants Laxatives

স্টিমুলেন্ট ল্যাক্সেটিভগুলো (Stimulants Laxatives) আমাদের অন্ত্রের পেরিস্টালটিক মুভমেন্ট (Peristaltic movement) বাড়িয়ে দেয়। পেরিস্টালটিক মুভমেন্ট এর ফলে খাদ্যবস্তু অন্ত্রে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ফলে অন্ত্রে উপস্থিত পানি রক্তে শোষণের আগেই দেহ থেকে মল ত্যাগের সময় বেড়িয়ে যায়। নিচে কিছু স্টিমুলেন্ট ল্যাক্সেটিভ এর উধাহরণ দেওয়া হলোঃ 

  • Bisacodyl (Brand names: Duralax ®) – ওষুধটি ৫ মিগ্রা ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। 
  • Ispaghula Husk + Sonapata (Brand names: Isabgul Plus®) – হারবাল ওষুধটি পাউডার হিসেবে প্যাকেট এবং প্লাস্টিক কনটেইনারে পাওয়া যায়।  
  • Ispaghula Husk + Senna extract (Brand names: Fecilax®, Ispahusk®) – ওষুধটি পাউডার হিসেবে প্লাস্টিক কনটেইনারে পাওয়া যায়।
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ ব্যবহার করলে ইলেক্ট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স হতে পারে, মারাত্বক পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত নয়। 

৩। Fecal Softener 

সাবান অথবা ডিটারজেন্ট যেমন ময়লা বস্তুকে পানির সাথে মিশিয়ে ইমালশন তৈরি করে তেমনি Fecal Softener সাবান বা ডিটারজেন্টের মতো কাজ করে মলকে নরম রাখে। এ ধরণের একটি ওষুধের নাম হলো Docusate Sodium। 

তবে এই ওষুধটি একিউট ট্রিটমেন্টে ব্যবহার না করে বরং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। 

Docusate Sodium বাজারে Docuset® (ট্যাবলেট ১২০ মিগ্রা) ও Soflax® (ক্যাপসুল ১০০ মিগ্রা) নামে পাওয়া যায়। 

Docusate Sodium ওষুধটি কখনোই Liquid Paraffin এর সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ দুটি ওষুধ একসাথে ব্যবহার করলে Liquid Paraffin দেহে শোষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

৪। Lubricant Laxative 

লিকুইড প্যারাফিন (Liquid paraffin) এবং গ্লিসারিন (Glycerin) সাপোজিটরি এই দুটো ওষুধকে লুব্রিকেন্ট ল্যাক্সেটিভ বলা হয়। 

প্রথম ওষুধটি Liquid paraffin + Magnesium Hydroxide এর কম্বিনেশন হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। 

  • Liquid paraffin + Magnesium Hydroxide (Brand names: Milk of Magnesia Plus®, Frelax®) – ওষুধটি লিকুইড ইমালশন হিসেবে পাওয়া যায়। 
  • Glycerin (Brand names: Glysup®, Sapotor®) – ওষুধটি ১.১৫ গ্রাম এবং ২.৩ গ্রাম সাপোজিটরি হিসেবে পাওয়া যায়। 

৫। Osmotic Laxative 

Osmotic Laxative যেমন Magnesium Hydroxide, Polyethylene Glycol (PEG) এবং Lactulose অন্ত্র থেকে শোষিত হয় না এবং অন্ত্রে পানি ধরে রাখে। অতিরিক্ত পানি মলকে নরম রাখতে সাহায্য করে। নিচে কিছু Osmotic Laxative এর উদাহরণ দেওয়া হলো। 

  • Magnesium Hydroxide (Brand names: Milk of Magnesia®, Magnamilk®) – ওষুধটি লিকুইড সাসপেনশন (৪০০ মিগ্রা/৫ মিলি) হিসেবে পাওয়া যায়। 
  • Polyethylene Glycol (Brand names: Aqualax®) – ওষুধটি ৮৫ গ্রাম পাউডার হিসেবে বোতলে পাওয়া যায় যা পানিতে মিশিয়ে খেতে হয়। 
  • Lactulose (Brand names: Dlac ®, Inolac®) – ওষুধটি ১০০ মিলি বোতলে লিকুইড সলিউশন (৩.৩৫ গ্রাম/৫ মিলি) হিসেবে পাওয়া যায়। (Dietrich, Carris, & Panavelil, 2015)

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলোঃ 

  • আঁশযুক্ত খাবার খানঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করলে মল পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে না। ফলে মল শক্ত হয়ে যায়। তাই খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। 
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে মল শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই আপনার দেহের ওজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। 
  • পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুনঃ যারা হাঁটা চলা কম করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা চলা করুন। 
  • ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ওষুধ এড়িয়ে চলুনঃ কিছু ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন Opioid ব্যথানাশক, আয়রন সাপ্লিমেন্ট, এন্টিডিপ্রেসেন্ট Sertraline, এবং পারকিনসন্স ডিজিজের কিছু ওষুধ, যেসব অ্যান্টাসিডে ক্যালসিয়াম ও এলুমিনাম থাকে ইত্যাদি। তাই আপনি এসব ওষুধ গ্রহণ করলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। 
  • নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসাঃ কিছু রোগ যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS), হাইপোথাইরয়েডিজম এবং ডায়াবেটিস কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। তাই এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা করুন। 
  • মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা করা যাবে নাঃ মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা করলে মল শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই মলত্যাগের তাগিদ উপেক্ষা করা যাবে না। 
  • মানসিক চাপ পরিহার করুনঃ  মানসিক চাপ হজমকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে অবদান রাখতে পারে। তাই মানসিক চাপ পরিহার করুন। 
  • গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন হজমকে ধীর করে দিতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করুন। 
  • স্নায়বিক ব্যাধি যখন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ পারকিনসন ডিজিজ এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো রোগের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা করুন। 
  • কোলন বা অন্ত্রের সমস্যা যখন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ কোলন বা মলদ্বারের সংকীর্ণতা এবং অন্ত্রে বাধা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। তাই আপনার মলদ্বার বা কোলনে সমস্যা থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।  
  • খাওয়ার অসুখ যখন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা (Anorexia Nervosa) বা বুলিমিয়া (Bulimia Nervosa) হলো সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করার রোগ। এসব রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই আপনার কোন একটি রোগ থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।  
  • দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলুনঃ ভ্রমণ বা দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন নিয়মিত মলত্যাগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তনে সতর্ক থাকুন। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ ব্যাবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কি কি?

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ ব্যবহারে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমনঃ 

  • ডায়রিয়া 
  • ডিহাইড্রেশন বা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা
  • মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা
  • রেকটাল (rectal) অস্বস্তি
  • পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

কিছু ওষুধ যেমন Stimulants laxatives অতিরিক্ত বা দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে আরও গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমনঃ 

  • ওষুধের প্রতি নির্ভরতা 
  • পুষ্টি বা ভিটামিনের অভাব
  • রেকটাল রক্তপাত বা ফিসার
  • ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা, যা হার্টের সমস্যা, পেশী দুর্বলতা বা খিঁচুনি তৈরি করতে পারে
  • গুরুতর ডিহাইড্রেশন, ইত্যাদি। 

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ গ্রহণ করা যাবে কি?  

গর্ভাবস্থায় প্রায় সকলেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার সতর্কতার সাথে কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় হার্বাল এবং Stimulants জাতীয় কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ পরিহার করা ভালো। (Amos, A., 2022)

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ কোন সময় ব্যবহার করা উত্তম? 

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ গ্রহণের সর্বোত্তম সময় রাতে। তবে ওষুধের ধরণের উপর নির্ভর করে ডাক্তার দিনেও ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন। 

  Reference

Dietrich, E., Carris, N., & Panavelil, T. A. (2015). Anti-inflammatory, Antipyretic, and Analgesic Agents. In K. Whalen (Ed.), Lippincott Illustrated Reviews: Pharmacology, Sixth Edition (pp. 410-411). Wolters Kluwer.

Amos, A., & Aungst, C. (2022, March 23). Constipation Relief During Pregnancy. Retrieved from GoodRx: https://www.goodrx.com/health-topic/parenthood-pregnancy/constipation-relief-pregnancy

Last Updated on December 18, 2023