প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। কারণ প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে‌। শরীরের প্রতি ১ কেজি ওজনের জন্য দৈনিক সর্বনিম্ন ০.৮ গ্রাম এবং সর্বোচ্চ ২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

প্রোটিন জাতীয় খাবার কম চর্বিযুক্ত হতে হবে। কারণ চর্বিযুক্ত খাবার প্রচুর ক্যালরি সরবরাহ করে এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমনঃ হার্টের রোগ, লিভার ডিজিজ, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি। 

১‌। ডিমের সাদা অংশ

১টি মাঝারি সাইজের (৫৬ গ্রাম ওজন) ডিম থেকে ৭ গ্রাম (ডিমের সাদা অংশে ৪ গ্রাম এবং কুসুমে ৩ গ্রাম) প্রোটিন পাওয়া যায়। 

ডিমের সাদা অংশের বেশিরভাগই হলো পানি, ১০.৮২ শতাংশ প্রোটিন এবং মাত্র ০.১৯ শতাংশ হলো চর্বি। আর কুসুমের ৫৫ শতাংশ পানি, ২৬.৭১ শতাংশ ফ্যাট এবং ১৫.৫ শতাংশ প্রোটিন সহ বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। (Réhault-Godbert, 2019)

চর্বি ছাড়া শুধুমাত্র প্রোটিন পেতে চাইলে সিদ্ধ ডিমের শুধুমাত্র সাদা অংশ খেতে হবে। আর চর্বি সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়ার জন্য কুসুম সহ ডিম খেতে হবে।

তেল দিয়ে ডিম ভাজা হলে (তেলের চর্বি যোগ হয়) চর্বির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।

২। মুরগির মাংস

প্রোটিনের দারুন একটি উৎস হলো মুরগির মাংস। ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস থেকে প্রায় ৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা একজন মানুষের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদার অর্ধেকের বেশি পূরণ করে। (DiGiacinto, 2023)

মুরগির চামড়া থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে চামড়ায় প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে। তাই চর্বিহীন প্রোটিন পাওয়ার জন্য মুরগির চামড়া বাদ দিতে হবে।

৩। মাছ ও শুঁটকি 

fish and dried fish

মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম প্রোটিন এবং কিছু পরিমাণে চর্বি রয়েছে। তবে মাছের চর্বি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।  

চর্বিহীন প্রোটিন পাওয়ার জন্য তৈলাক্ত মাছ (পাঙ্গাস, বোয়াল, চিতল, ভেটকি ও ইলিশ) কম খেতে হবে। বিশেষ করে মাছের পেটের অংশ ও কলিজায় বেশি মাত্রায় চর্বি থাকে।

৪। চিংড়ি

চিংড়ি মূলত আর্থ্রোপোডা পর্বের একটি প্রাণী। তবে মাছ (মাছ হলো কর্ডাটা পর্বের অন্তর্ভুক্ত) হিসেবে খাওয়া হয়। ১০০ গ্রাম চিংড়ি থেকে ২০ গ্রাম প্রোটিন এবং সামান্য পরিমাণ চর্বি পাওয়া যায়।

গর্ভবতী নারী সহ সব বয়সের মানুষের জন্য খাদ্যতালিকায় চিংড়ি রাখা যেতে পারে অর্থাৎ নিরাপদ খাবার। তবে যাদের ক্ষেত্রে চিংড়ি খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা যায় তাদের জন্য চিংড়ি বর্জন করতে হবে।

৫। ফ্যাট-ফ্রি দুধ

খাদ্যতালিকার খুব কমন খাবার হলো দুধ (গরুর দুধ) যা সহজলভ্য ও পুষ্টিকর।‌ তবে দুধ পানের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

প্রতি ১০০ মিলি দুধ থেকে ৩.২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও দুধে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে। 

চর্বিহীন প্রোটিন ও দুধের অন্যান্য পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে ফ্যাট-ফ্রি দুধ (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়) খেতে হবে। এছাড়াও যাদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয় (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) তাদের জন্য ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ খেতে হবে।

৬। টক দই

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১ বাটি টক দই বা ইয়োগার্ট রাখা উচিত। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও প্রোবায়োটিকস রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।

টক দই এর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ফলমূল যোগ করা যেতে পারে। তবে মিষ্টি দই খাওয়া যাবে না। ইয়োগার্টের ক্ষেত্রে চিনির পরিমাণ খুব কম রয়েছে এমনটা দেখে কিনতে হবে।

৭। মটরশুটি ও ডাল 

উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারের মধ্যে মটরশুটি, মসুর ডাল ও ছোলা থেকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মটরশুটিতে ৫.৪ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। আর ১০০ গ্রাম মসুর ডাল ও ছোলাতে যথাক্রমে ৯.২ গ্রাম ও ৮.৮৬ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। 

ডাল জাতীয় খাবার বেশ সহজলভ্য যা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু পরিমাণে রাখা উচিত। প্রোটিন ছাড়াও ডাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায়।

৮। চর্বিহীন গরুর মাংস 

গরুর মাংসের প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে ২৬ গ্রাম প্রোটিন ও ১৫ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খাওয়ার অভ্যাস রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাই গরুর মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে খেতে হবে। বিশেষ করে হার্টের রোগের ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস খেতে হবে।

৯। টফু (Tofu)

tofu

টফু (সয়া নাগেট নামেও পরিচিত) হলো উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত একটি খাবার (সয়াবিন থেকে তৈরি) যা প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ। ৮৫ গ্রাম টফু থেকে ৯ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩.৫ গ্রাম ফ্যাট বা চর্বি পাওয়া যায়।

কম চর্বিযুক্ত প্রোটিনের উৎস হিসেবে টফু খাওয়া উপকারী হবে। বিশেষ করে যারা নিরামিষ আহার করেন (প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার গ্রহণ করেন না) তাদের জন্য টফু একটি দারুন খাবার হতে পারে।

সুপার শপ ও অনলাইন শপে টফু বা সয়া নাগেট কিনতে পাওয়া যায়।

১০। বাদাম

বাদামের ওজনের প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এছাড়াও বাদামে ফ্যাট রয়েছে। তবে বাদামে থাকা ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে একমুঠো বাদাম রাখা উচিত। যেকোনো একধরনের বাদাম (সহজলভ্য হলো চীনাবাদাম) বা সবপ্রকরণের বাদামের মিশ্রণ (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়) খেতে পারেন। 

১১। কুমড়োর বিচি

কুমড়োর বিচি খুব সহজলভ্য একটি খাবার তবে পুষ্টিগুণে ভরপুর। ৩০ গ্রাম কুমড়োর বিচি থেকে প্রায় ৫.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বাদামের মতোই কুমড়োর বিচি খাওয়া যেতে পারে। 

কুমড়োর বিচির ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।   

শেষ কথা 

শরীরের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। 

Reference

DiGiacinto, J. (2023, February 22). Top 13 Lean Protein Foods. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/lean-protein-foods

Réhault-Godbert, S. (2019, March 22). The Golden Egg: Nutritional Value, Bioactivities, and Emerging Benefits for Human Health. Retrieved from PubMed Central: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6470839/

Last Updated on January 3, 2024