আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাবার প্রয়োজন এবং আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তা অবশ্যই হতে হবে সুষম খাদ্য। তবে অতিরিক্ত খাদ্য যেমন দেহের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমনি দেহের প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্যও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিটি মানুষের আদর্শ ওজন থাকা জরুরী। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী সকলকে পরিমিত আহার করতে হবে। কোন ব্যক্তির ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে ১৫ থেকে ২০% কম হলে তাকে কম ওজনের অধিকারী বলে। 

মানুষের ওজন অতিরিক্ত হলে তা কমানোর জন্য ডায়েট, ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করে। তেমনি ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম হলেও থাকে দুশ্চিন্তা। কিছু খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

হাতের নাগালে থাকা কিছু খাবার খেয়েই আপনি কম ওজনের দুশ্চিন্তা কমাতে পারেন। সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্যকর এই খাবারগুলো সম্পর্কে জানতে অণুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। 

স্বাস্থ্যকর খাবার যা খেলে দ্রুত ওজন বাড়ে

১. ঘরে তৈরি প্রোটিন স্মুদি

প্রোটিন স্মুদি পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটন, যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ফল, বাদাম, দুধ, চকলেটের মিশ্রণে স্মুদি তৈরি হয়। যেমন 

  • চকলেট, কলা, বাদামের মিশ্রণের স্মুদি-১টা কলা, ১৫ আউন্স চকলেট, ১চা চামচ বাদাম
  • আপেল, টক দই, চিনি মিশ্রণের স্মুদি -১টা আপেল, ১কাপ দই, ১চা চামচ চিনি বা মধু
  • চকলেট, দুধ, অ্যাভোকাডো মিশ্রনের স্মুদি- ১৫আউন্স চকলেট, ১কাপ দুধ, ১টা অ্যাভোকাডো
  • আঙ্গুর, টক দই, দুধ, চিনি মিশ্রণের স্মুদি-১কাপ আঙ্গুর, ১কাপ টকদই, ১কাপ দুধ এবং ১চা চামচ চিনি বা মধু।

২. ভাত ও রুটি:

বাদামি চাল: 

এ চালে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি ও স্বাস্থ্যকর ফাইবার।

ভাত:

কার্বোহাইড্রেট এর প্রধান উৎস ভাত। দিনে অন্তত দুইবার প্রধান খাদ্য তালিকায় ভাত রাখুন।

পাউরুটি: 

প্রতিদিন নাস্তায় পাউরুটি রাখতে পারেন। কারণ এতে অধিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট এবং প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি বিদ্যমান। পাউরুটি তৈরীর প্রধান উপাদান ময়দার সাথে ডিম, চিনি ও লবণ যোগ করা হয় যা ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। 

৩. আলু ও স্টার্চ: 

আলু:

বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য হচ্ছে আলু। সাধারণত প্রতিদিন আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ ও শর্করা। যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তরকারিতে বা ভর্তা হিসেবে প্রতিদিন আলু খেলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। 

আলুর অসাধারণ ২৫টি উপকারিতা জানতে পড়ুন

স্টার্চ:

স্টার্চের অন্যতম উৎস হচ্ছে ওটস, ভুট্টা, মূলা, গাজর, মটরশুঁটি। এগুলো প্রতিদিন খাদ্যের তালিকায় রাখা উচিত। 

৪. ফল:

ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর উপায় হচ্ছে ফল ও ফলের রস।

ফলের রস: 

ফলের রসে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালরি যা দ্রুত ওজন বাড়ায়। 

কিসমিস ও খেজুর:

কিসমিস ও খেজুর যাতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি এবং ক্যালরি। 

কলা:

কলাতে রয়েছে ক্যালরি, আঁশ অধিক পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন, ও প্রাকৃতিক চিনি। 

একটি কলায় ১০০ ক্যালরির মতো থাকে।

৫. দুধ:

দুধ পেশি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ও মিনারেল।  

এক কাপ দুধে ১৫৯ ক্যালরি থাকে।

৬. পনির:

ওজন বাড়ানোর জন্য পনির বেশ কার্যকর। দুধের তৈরি পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল ও চর্বি। 

৭. ডিম:

প্রতিদিন অত্যন্ত একটি করে ডিম খেতে হবে। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। তাছাড়াও ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, ভিটামিন এ, ডি ও ই। যা শরীরে ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজন।

৮. দই: 

দুধের তৈরি, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই রাখা উচিত যা দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করবে। 

৯. বাদাম ও বাদামের মাখন 

বাদাম:

বাদামে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি। এছাড়াও থাকে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার প্রোটিন এবং ভিটামিন ই। ক্ষুধা পেলে মুঠো ভরে বাদাম খেয়ে নিন যা ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। 

কাঠবাদামের অসাধারণ ৩৫ টি উপকারিতা জানতে পড়ুন

পিনাট বাটার:

দোকানে বাদামের মাখন কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে চিনা বাদাম পিষে পেস্ট বানানো যায়। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় এ খাবার রাখলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। 

১০. লাল মাংস 

মাঝারি আকারের এক টুকরো মুরগির মাংসে ১০০ ক্যালরি থাকে। বেশি ক্যালরির জন্য মুরগির বুকের মাংস খাওয়া উচিত।

১১. স্যামন ও তৈলাক্ত মাছ

তৈলাক্ত মাছ:

চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও চর্বি থাকে। খাবার হিসেবে তৈলাক্ত মাছ স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসম্পন্ন খাবার। ওজন বাড়াতে তৈলাক্ত মাছ সাহায্য করে।

স্যামন মাছ:

১৭০ গ্রাম স্যামনে ২৫০ ক্যালরি, ১২গ্রাম চর্বি ও ৩৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। 

১২. অ্যাভোকেডো

একটি বড় অ্যাভোকেডোতে রয়েছে ৩২২ ক্যালোরি, ২৯ গ্রাম ফ্যাট, ১৪গ্রাম ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

১৩. কালো চকলেট

৭০% কোকো থাকে। যা হরমোন ও ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ৬০থেকে ৭৫%কোকো, ৬০০ ক্যালরি, ম্যাগনেসিয়াম ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। 

১৪. হোলগ্রেইন ব্রেড 

প্রতিদিন সকালের নাস্তায় এটি রাখা উচিত। এটি কার্বোহাইড্রেট এর অন্যতম উৎস এবং প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি বিদ্যমান। ১০০ গ্রাম রুটিতে ১৭০ ক্যালরি, ১.৫৫ গ্রাম ফ্যাট, ৩২.৫গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৫.৮৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যা ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। 

১৫. স্বাস্থ্যকর সিরিয়াল 

ওটস, ওটমিল, সয়া, ভুট্টা এগুলো দুধ এবং বিভিন্ন ফলের সাথে খাওয়া হয় যা দেহের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকাল বা বিকালের নাস্তায় এটি রাখা যেতে পারে। 

১৬. প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট 

বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন যেমন সয়া, দুধ, দই, মাছ, মাংস, প্রোটিন হেলথ ড্রিংকস ইত্যাদি যা পেশি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

১৭. স্বাস্থ্যকর চর্বি ও তেল

নারিকেল তেল, অ্যাভোকাডো তেল, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চর্বি। প্রতিদিন খাবারে এ তেল ব্যবহার করলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে।

ওজন বাড়াতে খাবারের পাশাপাশি কিছু কৌশল 

স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি কিছু কৌশল অবলম্বন করা উচিত যা ওজন বাড়াতে বেশ সহায়ক। কৌশল গুলো হলো:

১. অতিরিক্ত ক্যালরির খাবার গ্রহণ  

প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে বেশ পরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় পূরণ করা আবশ্যক। দৈনিক যে পরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় হয় তার চেয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ ক্যালরি বেশি খেতে হবে। ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ফলমূল, শাকসবজি, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে। 

২. দিনে ৫-৬ বার খাবার গ্রহণ 

যাদের ওজন কম তাদের লম্বা সময় খালি পেটে থাকা উচিত নয়। ৩-৪ ঘন্টা পর পর উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। 

৩. আঁশযুক্ত ফল ও শাক সবজি গ্রহণ  

খাদ্য তালিকায় আঁশ বা ফাইবার শাকসবজি ও ফল অবশ্যই থাকতে হবে যা শরীরে ক্যালরি বৃদ্ধির জন্য আর্দশ উপায়।

৪. আমিষ যুক্ত খাবার গ্রহণ

প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.০ থেকে ১.৬ গ্রাম আমিষ নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। (Gunnars 2022)

 ৫. ব্যায়াম 

উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এতে ক্ষুধা পাবে এবং হজমের সাহায্য করে। কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো হলো –

  • পুশ আপ
  • পুল আপ
  • বেঞ্চ প্রেস
  • বেঞ্চ ডিপস
  • স্কুয়াট
  • ওভার হেড প্রেস
  • ডেড লিফট 
  • ক্রান্চ
  • বারপিস

৬. জীবনযাপন 

ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ও নিয়ম মাফিক জীবনযাপন করতে হবে। বেশি রাত জেগে থাকা যাবে না। দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।

কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ:

  • প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে খাওয়ার আগে পানি পান করা যাবে না। 
  • প্রোটিন যুক্ত খাবার আগে এবং শাকসবজি শেষে গ্রহণ করতে হবে। 
  • বড় থালায় খাবার খেতে হবে। 
  • প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটি স্বাস্থ্যকর উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত স্নাক্সস খাওয়া যেতে পারে
  • অস্বাস্থ্যকর অতিরিক্ত ফাস্টফুড বর্জন করতে হবে 
  • ধুমপান বর্জন করতে হবে।
References

Gunnars K. (2022,7 June) How to Gain Weight Fast: Tips to Be Safe and Healthy. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/how-to-gain-weight

Last Updated on March 27, 2023

Was this article helpful?
YesNo