পিরিয়ড (Menstruation) বা মাসিক হওয়া একজন নারীর গর্ভধারণের সক্ষমতা বোঝার প্রথম মানদণ্ড। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের প্রতিমাসে শরীরের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পিরিয়ড হয়ে থাকে। যদি কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ড না হয় তবে সেটিকে মেডিকেলের ভাষায় অ্যামেনোরিয়া (Amenorrhea) বলা হয়। এই অনুচ্ছেদে নিয়মিত পিরিয়ড না হওয়ার কারণ, পিরিয়ড না হলে করণীয় কি, কখন গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পিরিয়ড না হওয়ার কারণ

সাধারণত ১৩ বছর বয়সে (সর্বনিম্ন ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর) একজন নারীর জীবনে পিরিয়ডের সূচনা হয়ে থাকে যাকে মেনার্কি (Menarche) বলা‌ হয়। আবার ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের দিকে মেনোপজ (Menopause) হয় বা পিরিয়ডের সমাপ্তি ঘটে। মেনার্কির‌ আগে ও মেনোপজের পরে পিরিয়ড না হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে ও বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর দিনগুলোতে পিরিয়ড বন্ধ থাকা স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হবে। এর বাইরে অন্য সময়ে নিয়মিতভাবে পিরিয়ড না হলে সেক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কোনো কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। যেমনঃ (Mayo Clinic, 2021)

গঠনগত সমস্যা

মেয়েদের জননেন্দ্রিয়ের গঠনগত কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে সেক্ষেত্রে মেনার্কির বয়স পার হলেও পিরিয়ড দেখা যায় না। এজাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন‌ যেটা ঘটে থাকে তা হলো একদম নিশ্ছিদ্র হাইমেন (Imperforate hymen) যার ফলে পিরিয়ড হয় ঠিকই কিন্তু বাহ্যিকভাবে রক্তক্ষরণ দেখা যায় না। মাসিকের রক্ত জরায়ুর ভেতরে আটকে থাকে এবং লক্ষণ হিসেবে তলপেটে ব্যথা, ইনফেকশন, জ্বর, প্রস্রাব নিঃসরণে সমস্যা ইত্যাদি হয়ে থাকে।

হরমোন জনিত সমস্যা

অবিবাহিত মেয়েদের পিরিয়ড না হওয়ার কারণ হিসেবে সবচেয়ে কমন হলো হরমোন জনিত সমস্যা। নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সাথে অনেক গুলো হরমোনের যোগসূত্র রয়েছে যাদের কোনো একটির সমস্যা হলে পিরিয়ড মিস হতে পারে। যেমনঃ হাইপো বা হাইপার থাইরয়েডিজম, পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার, ওভারিতে সিস্ট (PCOS- Polycystic ovary syndrome) ইত্যাদি।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, ইনজেকশন, কপার টি ইত্যাদির প্রভাবে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কতিপয় ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা যায়। যেমনঃ বিষন্নতা ও মানসিক রোগের ঔষধ, প্রেশারের ঔষধ, কেমোথেরাপি‌ ইত্যাদি।

জীবনযাত্রার প্রভাব

যাদের দেহের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় খুব কম, মহিলা অ্যাথলেট (যারা খুব ভারী ব্যায়াম ও খেলাধুলা করেন) এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে অ্যামেনোরিয়া হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?

১৫ বছর বয়স পার হয়ে গেছে অথচ এখনো পিরিয়ড দেখা যায় নি এমন মেয়েদের জন্য গাইনী ‌ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আবার যাদের ইতিপূর্বে পিরিয়ড হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। আর বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে (যারা কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না) পিরিয়ড না হলে ধারণা করা যেতে পারে যে বাচ্চা কনসিভ করেছে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে গর্ভধারণ হয়েছে তবে অ্যামেনোরিয়ার জন্য নয়, বরং গর্ভকালীন দিকনির্দেশনার জন্য গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

পিরিয়ড না হলে করনীয়

পিরিয়ড না হওয়ার কারণের উপর ভিত্তি করে অ্যামেনোরিয়ার চিকিৎসা করা হয়। সঠিক কারণ জানতে কতিপয় পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। যেমনঃ ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন, রক্ত পরীক্ষা, হরমোনের টেস্ট, তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি। কারণ নির্ণয় হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলো নিম্নরূপ হয়ে থাকে। যেমনঃ

পরীক্ষায় যদি হরমোনের সমস্যা নির্ণয় হয় তবে সেক্ষেত্রে হরমোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়
নিশ্ছিদ্র হাইমেন অথবা গঠনগত অন্য কোনো জটিলতা থাকলে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে
অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ অথবা ওজন কম থাকলে জীবন যাত্রা পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমনঃ যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ও ঘোরাফেরা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

একজন প্রজননক্ষম নারীর জন্য নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা আর‌ তাই এর ব্যত্যয় হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। অন্যথায় নানাবিধ জটিলতা যেমনঃ তলপেটে‌‌ তীব্র ব্যথা, ইনফার্টিলিটি, হাড় ক্ষয়, হৃদরোগ, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

References

Mayo Clinic. (2021, February 18). Amenorrhea. Retrieved from Mayo Clinic: https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/amenorrhea/symptoms-causes/syc-20369299

 

Last Updated on April 15, 2023