গ্লুকোমা রোগে চোখের অপটিক নার্ভ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা আর ফেরানো যায় না। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে অবশিষ্ট ভালো অংশ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায়। যত দ্রুত একজন গ্লুকোমার রোগী চিকিৎসা শুরু করবেন তার দৃষ্টি শক্তি ততটাই ভালো রাখা সম্ভব হবে। এই অনুচ্ছেদে গ্লুকোমার চিকিৎসা পদ্ধতি, চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘরোয়া উপায় এবং গ্লুকোমা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়াবলী সমূহ তুলে ধরা হয়েছে।
Table of Contents
গ্লুকোমা নির্ণয়
সাধারণত চোখের প্রেশার বেড়ে যাওয়ার ফলে গ্লুকোমা রোগ হয়। আর তাই গ্লুকোমা চিকিৎসার মুল লক্ষ্য থাকে চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা। চোখের প্রেশার ১২ থেকে ২১ মিলিমিটার মার্কারি পর্যন্ত স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। মানুষের শরীরে রক্তচাপ মাপার মতো চোখের প্রেশার মাপার জন্য বিশেষ ধরনের যন্ত্র রয়েছে যার সাহায্যে একজন চিকিৎসক চোখের প্রেশার মাপতে পারেন। গ্লুকোমা নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করার জন্য প্রেশার ছাড়াও চোখের আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। যেমনঃ (Mayoclinic, 2022)
- অপটিক নার্ভ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা
- দৃষ্টি শক্তির পরিধি দেখা বা visual field test
- কর্ণিয়ার পুরুত্ব জানার জন্য Pachymetry টেস্ট
- Gonioscopy বা একুয়াস হিউমার নিষ্কাশনের নালী পর্যবেক্ষণ করা
এছাড়াও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে জেনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, চোখের প্রেশার বেড়ে যাওয়ার সাথে এই দুটি রোগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
গ্লুকোমার চিকিৎসা
গ্লুকোমার চিকিৎসায় চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
- চোখে ড্রপ ব্যবহার করা
- মুখে ঔষধ সেবন করা
- লেজার থেরাপি
- সার্জারি
আই ড্রপ (Eye drops)
সাধারণত গ্লুকোমা চিকিৎসা শুরু হয় চোখে ড্রপ ব্যবহারের মাধ্যমে। চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই সমস্ত ড্রপ দুই ভাবে কাজ করে থাকে। যথাঃ চোখের ভেতরের একুয়াস হিউমার নামক তরল পদার্থের উৎপাদন কমিয়ে অথবা নিষ্কাশন বাড়িয়ে দিয়ে। আপনার জন্য কোন ধরনের ড্রপ ব্যবহারের প্রয়োজন হবে তা চোখের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে একজন চিকিৎসক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অবস্থা অনুযায়ী নিচে উল্লেখিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির যেকোনো এক অথবা একাধিক ধরনের ড্রপ ব্যবহার করা লাগতে পারে। যেমনঃ
- Prostaglandins
- Beta blockers
- Alpha-adrenergic agonists
- Carbonic anhydrase inhibitors
- Rho kinase inhibitor
- Miotic or cholinergic agents
একাধিক ড্রপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা ড্রপ চোখে দেওয়ার পর কমপক্ষে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে পরবর্তী ড্রপ দিতে হবে।
মুখে ঔষধ সেবন
শুধু ড্রপ ব্যবহারের মাধ্যমে চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে না হলে সেক্ষেত্রে ড্রপের পাশাপাশি মুখে ঔষধ সেবন করার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এক্ষেত্রে সাধারণত Carbonic anhydrase inhibitor ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয় যা চোখের ভেতরে একুয়াস হিউমার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
লেজার থেরাপি
ড্রপ ও ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফলাফল পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে লেজার থেরাপি খুব চমৎকার একটি সমাধান হতে পারে। এছাড়াও যারা ড্রপ ব্যবহারের ঝামেলা এড়াতে চান তাদের ক্ষেত্রে শুরুতেই লেজার থেরাপিতে যাওয়া যেতে পারে।
সার্জারি
সাধারণত জটিলতর সমস্যা সমাধানের জন্য সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। সার্জারির মাধ্যমে একুয়াস হিউমার নিষ্কাশনের জন্য নালী তৈরি করা হয় যা চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সার্জারির কতগুলো ধরন রয়েছে যার মধ্যে MIGS (Minimally invasive glaucoma surgery) হলো সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির অপারেশন খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায়
কতিপয় ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- জিংক, কপার, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন এ, ই, সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমনঃ শাকসবজি
- চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক মৃদু প্রকৃতির ব্যায়াম করতে হবে
- কফি পানের পরিমাণ কমাতে হবে
- একবারে বেশি করে পানি খাওয়া যাবে না। বরং অল্প পরিমাণ পানি বার বার খেতে হবে
- নিয়মিত মেডিটেশন করা।
গ্লুকোমা প্রতিরোধের উপায়
চোখের প্রেশার মেপে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত ঔষধ সেবন, ড্রপ ব্যবহার করা, লেজার থেরাপি অথবা সার্জারি করার মাধ্যমে গ্লুকোমা জনিত চোখের ক্ষতি ঠেকানো যায়। তবে গ্লুকোমা যেন না হয় অর্থাৎ গ্লুকোমা প্রতিরোধ করার তেমন কোনো কার্যকরী পদ্ধতি নেই বললেই চলে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নিচে উল্লেখিত বিষয় গুলো মেনে চলা চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ এবং গ্লুকোমা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যথাঃ (Owaifeer, 2018)
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- অতিরিক্ত কফি পান করা যাবে না
- দৈনিক নূন্যতম এক কাপ চা খাওয়া উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে
- প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে
- জাফরান (Saffron) ও কালো চকলেট (Dark chocolate) খাওয়া যেতে পারে।
জাফরানের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল পড়ুন।
বাংলাদেশে গ্লুকোমা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য সব ধরনের ড্রপ, ঔষধ, লেজার থেরাপি সহ আধুনিক সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য রয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর তাই চোখের দৃষ্টি শক্তি বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
References
Mayoclinic. (2022, 30 September). Glaucoma. Retrieved from Mayoclinic: https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/glaucoma/diagnosis-treatment/drc-20372846
Owaifeer, A. M. (2018, February). The Role of Diet in Glaucoma: A Review of the Current Evidence. Retrieved from Pubmed Central: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5997592/#__ffn_sectitle
Last Updated on October 31, 2023
Leave A Comment