আপনার কি মনে হয় যে আপনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় কম পরিমাণে বীর্য (Semen) বের হচ্ছে? অথবা যৌবনের শুরুতে যতটা শক্তি দিয়ে (Forcefully) বা যে গতিতে বীর্যপাত হতো এখন তেমন হচ্ছে না? নাকি বিপরীতমুখী বীর্যপাত বা Retrograde ejaculation হচ্ছে যেখানে বীর্য শরীরের বাইরে বের না হয়ে বরং মূত্রথলিতে প্রবেশ করে এমন বিরল প্রকৃতির সমস্যায় ভুগছেন? এই অনুচ্ছেদে আমরা কথা বলবো বীর্যপাত সম্পর্কিত এমনি সব অস্বাভাবিকতা তথা দুর্বল বীর্যপাত (Weak ejaculation) নিয়ে।

অনুচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে দুর্বল বীর্যপাত কেন হয়, কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং দুর্বল বীর্যপাতের সমাধানের জন্য কি ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও হস্তমৈথুনের (Masterbation) ফলে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায় কিনা এবং কি কি পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বীর্যে শুক্রাণুর (Sperms) পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় তা জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

দুর্বল বীর্যপাত বলতে কি বুঝায়?

দুর্বল বীর্যপাত বা Weak ejaculation বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝার সুবিধার্থে কিভাবে বীর্যপাত হয়ে থাকে সেই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা জরুরি।

পুরুষের শরীরের অন্ডকোষে (Testicles) শুক্রাণু উৎপাদন হয় এবং অন্ডকোষের উপরের দিকের একটি অংশে তা জমা থাকে যাকে Epididymis বলে। যৌন মিলনের শেষের দিকে যখন চরম উত্তেজনা বা অর্গাজম হয় তখন শুক্রাণুগুলো Vas deferens নামক নালীর মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থিতে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে বীর্যের সাথে শুক্রাণু মিলিত হয়ে মূত্রনালীর মাধ্যমে তা শরীরের বাইরে নির্গত হয় যাকে বীর্যপাত (Ejaculation) বলে। বীর্যপাতের এই প্রক্রিয়াটি দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথাঃ

  • প্রথম ধাপে বীর্য লিঙ্গের গোড়ার দিকের অংশের মূত্রনালীতে এসে জমা হয় যাকে emission বলা হয়
  • দ্বিতীয় ধাপে মূত্রনালীর সাথে সম্পর্কিত পেশিগুলোর সংকোচনের মাধ্যমে বীর্য লিঙ্গ দিয়ে বাইরে বের হয় যা expulsion নামে পরিচিত

কোনো কারণবশত বীর্যপাতের এই ধাপগুলোতে সমস্যার সৃষ্টি হলে তখন দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। যেমনঃ

  • প্রথম ধাপে (Emission) সমস্যা হলে ফলাফল হিসেবে বীর্যের পরিমাণ কমে যায়
  • দ্বিতীয় ধাপের (Expulsion) সমস্যার ফলে বীর্য শক্তি দিয়ে (Forcefully) বের হয় না

উল্লেখ্য সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্য শক্তি দিয়ে নির্গত হয় এবং নারীর যৌনাঙ্গের বাইরে বীর্যপাত হলে সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে বীর্য লিঙ্গ থেকে বের হয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়ে।

বীর্যের পরিমাণ কতটুকু হলে তা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হবে?

এই ব্যাপারে International Society for Sexual Medicine এর তথ্য মতে প্রতিবার বীর্যপাতের সময় ১.৫ থেকে ৫ মিলিলিটার (1.5 to 5 ml) বীর্য নির্গত হলে তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে যারা প্রতিদিন বীর্যপাত করেন তাদের তুলনায় কয়েকদিন পর পর বীর্যপাত করেন এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বীর্যের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও তা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হবে যদি তাতে শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক থাকে।  (Nall, 2019) শুক্রাণুর পরিমাণ সম্পর্কে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন এই পর্যায়ে দুর্বল বীর্যপাতের কারণ গুলো সম্পর্কে জানা যাক।

দুর্বল বীর্যপাত কেন হয়?

শারীরিক অথবা মানসিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে দুর্বল বীর্যপাত হতে পারে। আবার বিরল প্রকৃতির একটি রোগের কারণেও এমনটি হতে পারে যাকে মেডিকেলের ভাষায় বিপরীতমুখী বীর্যপাত বা Retrograde ejaculation বলা হয়। এই শব্দটি অনেকের কাছেই বেশ অপরিচিত মনে হতে পারে। তাহলে চলুন বিপরীতমুখী বীর্যপাত কাদের ক্ষেত্রে হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই রোগ নির্ণয়ের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক।

বিপরীতমুখী বীর্যপাত

পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্য ও প্রস্রাব একই নালী দিয়ে বের হয় যাকে মূত্রনালী বা Urethra বলা হয়। অর্থাৎ মুত্রথলি থেকে প্রস্রাব বের হওয়ার জন্য যে মূত্রনালী রয়েছে তার সাথে বীর্যের নালী এসে মিলিত হয়েছে। তবে বীর্য বের হওয়ার সময় মূত্রথলির মুখে থাকা মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বীর্য মূত্রথলিতে প্রবেশের সুযোগ পায় না।

বরং মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত হয়। একজন সুস্থ পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এমনটি ঘটে থাকে কিন্তু বিপত্তি হয় বিপরীতমুখী বীর্যপাতের ক্ষেত্রে যেখানে মূত্রথলির মাংসপেশী কোনো কারণ বশত সংকোচিত হতে পারে না। ফলে বীর্য বাইরে বের না হয়ে মূত্রথলির দিকে যায়। এক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় কম পরিমাণে দুর্বল বীর্যপাত বা বীর্য একদম নির্গত না হওয়া যাকে মেডিকেলের ভাষায় Dry orgasm বলা হয়।

Dry orgasm এর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌন মিলনে তৃপ্তির কোনো ঘাটতি হয় না। তবে বীর্যপাত না হলে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হয়ে থাকে তা হলো পুরুষের ইনফারটিলিটি (Male infertility) যার ফলে সন্তান জন্ম দিতে পারে না। বিপরীতমুখী বীর্যপাতের কারণ বা রিস্ক ফ্যাক্টর (Risk factors) গুলো হলোঃ

মূত্রথলি বা প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারি হয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও বিষন্নতা প্রতিকারে ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিপরীতমুখী বীর্যপাত বা Retrograde ejaculation হতে পারে। এই সমস্যা নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine R/E) করানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেহেতু বীর্য মূত্রথলির দিকে যায় তাই বীর্যপাতের পরবর্তী প্রস্রাবের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে শুক্রাণুর উপস্থিতি দেখে এই সমস্যা নিরুপণ করা হয়।

জৈবিক কারণ সমূহ

কতিপয় জৈবিক বা শারীরিক কারণে দুর্বল বীর্যপাত (Weak ejaculation) হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-

  • পেলভিক পেশীর দুর্বলতা
  • হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ
  • সার্জারি অথবা স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত
  • শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি

চলুন এই পর্যায়ে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে উল্লেখিত বিষয়গুলো কিভাবে দুর্বল বীর্যপাত সৃষ্টি করে এবং সেই সমস্যা গুলো সমাধানে‌র কার্যকরী উপায় জেনে নেই।

১. পেলভিক পেশী দুর্বল

পেলভিক পেশী বলতে তলপেটের দিকে কতিপয় মাংসপেশীকে বোঝানো হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো levator ani, bulbospongiosus, ischiocavernosus, urethralis ইত্যাদি। এই সমস্ত পেশী গুলো স্বাভাবিক ভাবে প্রস্রাব, পায়খানা করা এবং বীর্যপাত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণবশত পেলভিক পেশী দুর্বল হয়ে পড়লে তখন অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব, পায়খানা এবং দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে।

তবে একই সাথে তিনটি সমস্যা হবে এমন নয় বরং পেলভিক পেশীর দুর্বলতার দরুন প্রস্রাব পায়খানার সমস্যা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র দুর্বল বীর্যপাত হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ঠিক এর উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। যা হোক, পেলভিক পেশীর দুর্বলতা দূর করার কয়েকটি সহজ ও কার্যকরী উপায় রয়েছে। যেমনঃ

  • দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের (Constipation) ফলে পেলভিক পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই কোষ্টকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার ও পানি পান করতে হবে
  • অতিরিক্ত ওজনের সাথে পেলভিক পেশী দুর্বল হয়ে পড়ার যোগসূত্র রয়েছে। আর তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি

এছাড়াও পেলভিক পেশী শক্তিশালী করতে বিশেষ ধরনের ব্যায়ামের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে যা পেলভিক এক্সারসাইজ (Pelvic exercises) নামে পরিচিত। এই ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও জনপ্রিয় হলো কেগেল এক্সারসাইজ (Kegel exercise) ।

২. হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা

হরমোন (Hormone) হলো একপ্রকার জৈব-রাসায়নিক তরল যা শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পুরুষের যৌন সক্ষমতা, বীর্য উৎপাদন এবং স্বাভাবিক বীর্যপাতের ক্ষেত্রে যে সমস্ত হরমোনের ভূমিকা রয়েছে তা androgens নামে পরিচিত।

সবচেয়ে কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ androgens এর নাম হলো টেস্টোস্টেরন (Testosterone) যাকে সেক্স হরমোন ও বলা হয়। এই হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা তথা স্বাভাবিক নিঃসরণ কমে যাওয়ার সাথে দুর্বল বীর্যপাতের যোগসূত্র রয়েছে। আর টেস্টস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম হওয়ার কারণ গুলো হলোঃ

  • বয়স বেড়ে যাওয়া
  • উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
  • ডায়াবেটিস (Diabetes)
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • অতিরিক্ত ওজন (Obesity)
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
  • কতিপয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির কুফল
  • অন্ডকোষে আঘাত লাগা ইত্যাদি

আপনার ক্ষেত্রে দুর্বল বীর্যপাত টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম এর দরুন হচ্ছে কিনা তা বুঝতে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো সহায়তা করবে। যেমনঃ

  • লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা
  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
  • অন্ডকোষ ছোট হতে থাকে
  • হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়
  • মাংসপেশীর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
  • বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা
  • চুল পড়া ইত্যাদি

এছাড়াও Testosterone Test নামক একটি রক্ত পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম কিনা তা নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা যায়। রক্তে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা অস্বাভাবিক কম থাকলে সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে হরমোন থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও কতিপয় খাবার গ্রহণ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়ানো যায়।

 

পুরুষের প্রজনন হরমোন বাড়াতে সহায়তা করে এমন ১৩ টি খাবার এবং প্রাকৃতিক উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।‌

 

৩. থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন হরমোন জনিত সমস্যা দেখা যায় যার মধ্যে সবচেয়ে কমন হলো থাইরয়েডের সমস্যা। আর থাইরয়েডের সমস্যা বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়াকে বোঝানো হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় Hypothyroidism বা হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।

থাইরয়েড গ্রন্থি‌ থেকে নিঃসৃত হরমোন টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। আর তাই হাইপোথাইরয়েডিজমের সাথে টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়া তথা দুর্বল বীর্যপাতের যোগসূত্র রয়েছে।

হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া লক্ষণ দুটি দেখা যায়। এছাড়াও আরো যে সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত তা হলোঃ

  • খুব সহজেই ঠান্ডা লাগার প্রবণতা
  • ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে যাওয়া
  • শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি
  • কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা বোধ
  • চুল পড়া (Hair falling)
  • ঘুমের সমস্যা (Insomnia)
  • স্মৃতি শক্তি কমে যায়
  • বিষন্নতা (Depression) ইত্যাদি

উল্লেখ্য TSH এবং T4 নামক দুইটি রক্ত পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে থাইরয়েড সমস্যা নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে রক্তে T4 এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম এবং সেই সাথে TSH এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হলে তখন হাইপোথাইরয়েডিজম হয়েছে বলে ধরা হয়। এই সমস্যা প্রতিকারে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত থাইরয়েডের ওষুধ সেবন করতে হবে।

৪. প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ এবং সংক্রমণ

প্রোস্টেট (Prostate) পুরুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা বীর্য উৎপাদন করে থাকে। প্রোস্টেট গ্রন্থিতে জীবাণুর সংক্রমণ হলে প্রদাহের সৃষ্টি হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় Prostatitis বলা হয়।‌ এই সমস্যার ফলে বীর্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে যা দুর্বল বীর্যপাতের একটি অন্যতম কারণ।

এছাড়াও প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া (BPH- Benign Prostatic Hyperplasia) বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি কমন সমস্যা যার চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সার্জারির ফলে দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে। আর তাই প্রোস্টেট গ্রন্থি ভালো রাখতে নিচের নির্দেশনা সমূহ মেনে চলুন। যেমনঃ

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন
  • ধুমপান বর্জন করা উচিত
  • লাল মাংস কম খেতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাক-সবজি খেতে হবে
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা উচিত

আপনার প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ইতিমধ্যেই জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কিনা বা প্রোস্টেট বেড়ে যাচ্ছে কিনা তা নিম্নলিখিত লক্ষণাগুলো দেখে বুঝতে পারবেন। যেমনঃ

  • তলপেটে ব্যথা
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া
  • লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা
  • বীর্যপাতের সময় ব্যথা বোধ
  • বীর্যের সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি

লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে DRE (Digital rectal examination), PSE (prostate specific antigen), আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোস্টেটের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা যায়। প্রোস্টেটে জীবাণুর সংক্রমণ হলে বা প্রোস্টেট গ্রন্থি বেড়ে গেলে (BPH) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫. মূত্রনালির সংক্রমন ও প্রদাহ

মূত্রনালির সংক্রমণ ও প্রদাহকে মেডিকেলের ভাষায় UTIs (urinary tract infection) বলা হয় যা ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ। মূত্রনালী থেকে ব্যাকটেরিয়া প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে যা দুর্বল বীর্যপাত সৃষ্টি করে। আবার দীর্ঘদিন যাবত মূত্রনালীতে প্রদাহের ফলে মূত্রনালী সরু হয়ে যায় যা প্রস্রাব ও বীর্য নির্গত হওয়ার পথে বাঁধার সৃষ্টি করে থাকে। মূত্রনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার কারণ গুলো হলোঃ

  • কম পানি পান করা
  • প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখা
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা
  • পায়ুপথে যৌন মিলন (Anal sex)
  • সুন্নাতে খৎনা না করা ইত্যাদি

আপনার ক্ষেত্রে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে কিনা তা নিচের লক্ষণগুলো দেখে বুঝতে পারবেন। যেমনঃ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
  • প্রস্রাব করার সময় মূত্রনালীতে ব্যথা বোধ
  • প্রস্রাবে দুর্গন্ধ
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • তলপেটে ব্যথা বোধ
  • কোমড় ব্যথা যা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি
  • জ্বর ইত্যাদি

 

লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine R/E) করানোর প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবে ইনফেকশন ধরা পড়লে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় এন্টি বায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ সমূহ এড়িয়ে চলার মাধ্যমে এই সমস্যা (UTIs) প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৬. সার্জারি বা আঘাত জনিত কারণে স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে

সার্জারি অথবা আঘাত জনিত কারণে স্পাইনাল কর্ড (spinal cord), মূত্রথলি ও এর আশেপাশের অংশের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার প্রভাবে দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে। কারণ শরীরের সমস্ত পেশীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। মূত্রথলি অথবা প্রস্টেট গ্রন্থিতে সার্জারি করানোর ফলে বিশেষত বিপরীতমুখী বীর্যপাতের সমস্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। সার্জারি ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে।

যা হোক, সার্জারি জনিত আঘাত প্রতিরোধের মোটামুটি দুইটি উপায় রয়েছে। প্রথমত সার্জারি যেন না করাতে হয় সেই ব্যবস্থা করা অর্থাৎ আগে থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে মূত্রথলি ও প্রস্টেট গ্রন্থির রোগ প্রতিরোধ করা। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ইউরিন ইনফেকশন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সমূহ মেনে চলা জরুরি। দ্বিতীয়ত সার্জারি করানো যেখানে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন দক্ষ সার্জনের দ্বারা সার্জারি সম্পন্ন করাতে হবে। আর ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্তে সুগারের মাত্রা তথা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

 

প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সমূহ জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

 

৭. শারীরিক দূর্বলতা

একজন পুরুষ শারীরিক ভাবে দুর্বল থাকলে সেক্ষেত্রে শরীরের সকল মাংসপেশীর কার্যক্রম শিথিল হয়ে পড়ে যার মধ্যে পেলভিক পেশীগুলো অন্তর্ভুক্ত। আর পেলভিক পেশীর দুর্বলতার ফলে দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভাবে বীর্য উৎপাদন প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে যার ফলে বীর্যের পরিমাণ কমে যায়।

এই সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নিজেকে একজন শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন। খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন এবং প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন।

মানসিক ও অন্যান্য কারণ

দুর্বল বীর্যপাত তথা কম গতিতে বীর্য বের হওয়া বা বীর্যের পরিমাণ কমে যাওয়ার মূখ্য কারণ গুলো মূলত শারীরিক। অর্থাৎ অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই দুর্বল বীর্যপাত উপরে উল্লেখিত শারীরিক সমস্যা গুলোর দরুন হয়ে থাকে। তবে কদাচিৎ ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার দরুন দুর্বল বীর্যপাত হয়ে থাকে। এই ব্যাপারে ২০১৭ সালে সংঘটিত একটি গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে যে মানসিক সমস্যার প্রভাবে দুর্বল বীর্যপাত সহ একজন পুরুষের স্বাভাবিক যৌন জীবন ব্যাহত হতে পারে। (Hagerty, 2019)

১. মানসিক চাপ/ডিপ্রেশন

অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যায় যা দুর্বল বীর্যপাত সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সেই সাথে মানসিক চাপের ফলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় যার দরুন প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। আর প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সার্জারি মানেই স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত তথা দুর্বল বীর্যপাত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া।

এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপের ফলে অথবা মানসিক আঘাতের ইতিহাস থাকলে বিষন্নতার (Depression) সৃষ্টি হয়। আর বিষন্নতার প্রভাবে যেমন যৌন সঙ্গিনীর প্রতি অনীহা দেখা দেয় তেমনি ভাবে তা বীর্যপাতের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। (Nall, 2019)

 

ছেলেদের মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা এড়ানোর উপায় সমূহ জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

 

২. মাদকাসক্ত /নেশাগ্রস্ত

মদ্যপান সহ সবধরনের মাদক বা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষত মদ্যপানের ফলে লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং প্রায় সবধরনের মাদক দ্রব্য স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে দুর্বল বীর্যপাত, যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া সহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

আর তাই মাদক সেবন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যারা ইতিমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সেলিং করাতে হবে অথবা প্রয়োজন সাপেক্ষে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।

৩. কম বয়সে সহবাস

কম বয়সে সহবাস করার সাথে দুর্বল বীর্যপাতের কোনো যোগসূত্র নেই। বরং অধিক বয়সে সহবাসের ক্ষেত্রে যৌন অক্ষমতা এবং দুর্বল বীর্যপাত দেখা যায়। কারণ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে একজন পুরুষের যৌন হরমোন (Testosterone) উৎপাদন কমতে থাকে এবং শরীরের মাংসপেশীর কার্যক্ষমতা কমে যায়।

তবে কম বয়সে সহবাসের ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ফলে যৌন বাহিত রোগ (STDs- sexually transmitted diseases) হতে পারে যা পরবর্তীতে যৌন অক্ষমতা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে অবশ্যই নিজেকে বিরত রাখা উচিত।

৪. সঠিক যৌন শিক্ষার অভাব

আমাদের দেশে যৌনতা বিষয়ক কথাবার্তা, আলোচনা, পরামর্শ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো পর্যন্ত লজ্জাজনক মনে করা হয়ে থাকে। যার ফলে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সেক্স সম্পর্কে ভুল ধারনা রয়েছে। তবে মজার বিষয় হলো দুর্বল বীর্যপাতের বিষয়টি অনেকটাই শারীরিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত এবং কদাচিৎ ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু সেক্স সম্পর্কিত ভুল ধারণার সাথে দুর্বল বীর্যপাতের কোনো যোগসূত্র নেই বললেই চলে।

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?

আপনি হঠাৎ লক্ষ্য করে দেখলেন যে আপনার বীর্য ধীরগতিতে বের হচ্ছে অথবা বীর্যের পরিমাণ খুবই কম। তাহলে কি আপনাকে খুব দ্রুত একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?

না, দুর্বল বীর্যপাতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ কদাচিৎ এই সমস্যার জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। এবং সেই সাথে এটি কোনো মেডিকেল ইমার্জেন্সি নয়। তবে একটানা ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলে তখন একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

তেমনি ভাবে বিপরীতমুখী বীর্যপাত অতি বিরল প্রকৃতির একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও যৌন তৃপ্তির ঘাটতি না হলে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন নেই যদি না সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকে। তবে সন্তান জন্ম দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

যদি আপনার মনে প্রশ্ন থাকে যে যৌন সমস্যার ক্ষেত্রে ঠিক কি কি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে তবে এই অংশটিতে উল্লেখিত লক্ষণাগুলো আপনার জন্য সহায়তাকারী হবে। যেমনঃ

  • লিঙ্গ উত্থান হচ্ছে না
  • বীর্য ধীরগতিতে বের হয়
  • বীর্যের পরিমাণ খুবই কম
  • যৌন মিলনের সময় অথবা পরে অস্বাভাবিক ব্যথা বোধ
  • যৌন মিলনের পর ঘোলাটে প্রস্রাব
  • বীর্যের মধ্যে রক্তের উপস্থিতি

দুর্বল বীর্যপাতের চিকিৎসা কি?

দুর্বল বীর্যপাতের চিকিৎসা নির্ভর করে এর জন্য দায়ী কারণ সমূহের উপর। যেমনঃ হরমোনের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন থেরাপি নেওয়া অথবা মূত্রনালীতে সংক্রমণের ক্ষেত্রে এন্টি বায়োটিক ওষুধ সেবন করা এবং মানসিক সমস্যার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

দুর্বল বীর্যপাতের সমস্যা সমাধানে সাধারণ ভাবে কতিপয় ওষুধ নির্দেশিত হয়ে থাকে যা নিচে উল্লেখ করা হলো। তবে সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

  • Amantadine
  • Brompheniramine
  • Chlorpheniramine
  • Ephedrine
  • Imipramine (Tofranil)
  • Midodrine
  • Phenylephrine
  • Yohimbine etc.

দুর্বল বীর্যপাতের সমাধানের জন্য ওষুধ ছাড়াও বাজারে অনেক সাপ্লিমেন্ট (Supplimenta) রয়েছে। তবে এগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয় নি বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়। আর তাই শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে এই সমস্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে আপনার চিকিৎসক যদি কোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা নিরাপদ ও উপকারী বলে মনে করেন সেক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে। (Watson, 2018)

হস্তমৈথুন (Masturbation) এর কারণে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায় কি?

হস্তমৈথুন (Masturbation) বিষয়টি নিয়ে অনেকের মাঝেই নানাবিধ ভুল ধারণা রয়েছে যে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এটিকে ততটা ক্ষতিকর হিসেবে দেখা হয় না। যা হোক, আজকের বিষয়টি হলো হস্তমৈথুন করার সাথে বীর্যে‌ শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যাওয়ার যোগসূত্র রয়েছে কিনা তা জানা। তবে তার আগে জেনে নেওয়া জরুরি যে স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বীর্যে কি পরিমাণ শুক্রাণু থাকে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য কতগুলো শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়।

সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর ফেলোপিয়ান টিউবে থাকা ডিম্বাণুর সাথে মাত্র একটি শুক্রাণুর মিলন হওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু বীর্যপাত হওয়া থেকে শুরু করে যোনী ও জরায়ু পথ পার হয়ে ফেলোপিয়ান টিউবে পৌঁছাতে তথা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অসংখ্য শুক্রাণু মারা যায়।

আর তাই প্রতি মিলিলিটার (ml- milliliter) বীর্যের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন পর্যন্ত শুক্রাণু থাকলে তবেই তা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মিলিলিটার হিসাব বাদে প্রতিবারে নির্গত হওয়া বীর্যের মধ্যে ৩৯ মিলিয়ন শুক্রাণুর কম থাকলে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে Low Sperm count বা বীর্যে শুক্রাণুর ঘাটতি রয়েছে বলে বিবেচিত হবে। (Watson, 2018)

এবারে হস্তমৈথুনের বিষয়ে ফিরে আসা যাক। গবেষণা বলছে যে যারা প্রতিদিন ১ বারের বেশি সময় হস্তমৈথুন করেন তাদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও পুরুষের অন্ডকোষে প্রতিনিয়ত শুক্রাণু উৎপাদন হয়ে চলেছে। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া আর এই প্রক্রিয়ায় একটি শুক্রাণু উৎপাদন হতে প্রায় ৩ মাস সময় লেগে যায়। হস্তমৈথুনের মতো যৌন মিলনের ক্ষেত্রেও প্রতিদিন ১ বারের বেশি বীর্যপাত করা হলে তা শুক্রাণু কমে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। (Grünebaum, 2021)

বীর্যপাতের সময় বেশি শুক্রাণু কিভাবে উৎপাদন করা যায়?

আপনার বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কত তা জানার জন্য একটি সহজ পরীক্ষা করানো লাগবে যা Semen analysis নামে পরিচিত। যদি শুক্রাণুর পরিমাণ স্বাভাবিক এর চেয়ে কম থাকে তবে তাকে মেডিকেলের ভাষায় Oligospermia বলা হয়। আবার একদম ই শুক্রাণু না থাকলে তা Azoospermia হিসেবে বিবেচিত হবে। যা হোক, বেশি পরিমাণে শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য কতিপয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমনঃ (Watson, 2018)

  • গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা দেরিতে ঘুমাতে যায় বা খুব কম বা খুব বেশি ঘুমায় তাদের ক্ষেত্রে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ ও গুণগত মান কমে যায়। আর তাই প্রতিদিন রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে
  • অতিরিক্ত ওজন শুক্রাণুর পরিমাণ ও গুণগত মান কমিয়ে দেয়। আর তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তবে খুব জোড়ালো প্রকৃতির ব্যায়াম করা যাবে না
  • ধুমপান যেমন হার্টের রোগ এবং ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তেমনি ভাবে তা শুক্রাণুর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আর তাই ধুমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি
  • প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। কারণ শাকসবজি ও ফলমূল থেকে এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন (বিশেষত ভিটামিন সি, ই), খনিজ পদার্থ (জিংক, সেলেনিয়াম), লাইকোপেন ইত্যাদি পাওয়া যায় যা শুক্রাণুর উৎপাদন বৃদ্ধি করে
  • ট্র্যান্স ফ্যাট (Trans fats) শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আর তাই ট্র্যান্স ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার বর্জন করা উচিত

কোন কোন খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট রয়েছে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।‌

উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ অনেকের ক্ষেত্রেই নানাবিধ জটিল রোগের ফলে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায়। আর এই সব ক্ষেত্রে যথাযথ ভাবে রোগ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

 

References

Grünebaum, A. (2021, May 4). Male Fertility: Can Masturbation Cause Low Sperm Count? From Babymed: https://www.babymed.com/getting-pregnant/male-masturbation-fertility-sperm-count

Hagerty, K. (2019, September 9). Weak Ejaculation: Causes & Treatment Options. From hims: https://www.forhims.com/blog/weak-ejaculation-causes

Nall, R. (2019, September 16). Weak ejaculation: What does it mean? From Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/326355

Watson, S. (2018, May 1). What Causes Weak Ejaculation and How Is It Treated? From Healthline: https://www.healthline.com/health/mens-health/weak-ejaculation

 

Last Updated on April 27, 2023