ভিটামিন ই (Vitamin E) ত্বকের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। ত্বক সুরক্ষার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীতে ভিটামিন ই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সানস্ক্রিন থেকে শুরু করে ময়শ্চারাইজার, অ্যান্টি-এজিং ক্রিম, মেকআপ সহ সবকিছুতেই ভিটামিন ই এর আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য আছে বলে দাবি করা হয়।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল হিসেবে ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায় যা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করার মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। আবার ত্বকের যত্নে বাহ্যিকভাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অনুচ্ছেদে রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের কার্যকরী ৭ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
ভিটামিন ই এর উপকারিতা
- ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোষের ক্ষতিগ্রস্ততা ঠেকায়। (Jomol, 2021)
- ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলো মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ব্রণের দাগ ও ডার্ক স্পট দূর করে।
- ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক রাখে এবং ত্বককে করে কোমল ও মসৃণ।
- কোলাজেনের (একধরনের প্রোটিন যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে) উৎপাদন বাড়ায়।
- বলিরেখা কমায় তথা বয়সের ছাপ দূর করে ত্বকে আনে তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বলতা।
রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের উপায়
রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল পদার্থ বের করে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার পাওয়া যায় যার মধ্যকার কয়েকটি বিষয় নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ
১. স্কিন সেরাম (Skin Serum)
ত্বকের যত্নে বাজারে পাওয়া স্কিন সেরামের পরিবর্তে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন। এটি একইসাথে সাশ্রয়ী এবং ত্বকের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনতে পারে কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী ত্বক ভালো রাখতে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ব্যবহারের নিয়মঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে ভেতরে থাকা তরল হাতের তালুতে নিন। এবার চোখের নিচে, কপালে, গালে, গলায় ও ঘাড়ে আলতো ভাবে ঘষুন। এটি খুবই ঘন ও আঠালো। তাই প্রয়োজনে এর সাথে সামান্য পরিমাণে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।
২. স্কিন ক্রিম (Skin Cream)
ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ স্কিন ক্রিম ও বডি লোশন ব্যবহার করা উত্তম। তবে আপনি চাইলে আপনার সাধারণ স্কিন ক্রিম ও বডি লোশন ভিটামিন ই সমৃদ্ধ করতে পারেন।
ব্যবহারের নিয়মঃ একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে ভেতরে থাকা তরল পদার্থ ক্রিমের সাথে মিশিয়ে নিন। একই পদ্ধতিতে বডি লোশনের সাথে ভিটামিন ই মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ত্বকের যত্নে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৩. হাঁটু ও কনুইয়ের কালো দাগ দূর করা
হাঁটু ও কনুই বার বার ভাঁজ হওয়ার ফলে এই স্থানের ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে মেলানিন নিঃসরণ হয় এবং ত্বক কালো হয়ে যায়। ত্বকের এই কালো দাগ দূর করার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারের নিয়মঃ প্রথমে হাঁটু ও কনুইয়ের কালো অংশ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। অতঃপর শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। এবার ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে ভেতরে থাকা তরল বের করে কালো অংশে ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত কয়েকদিন এভাবে ব্যবহার করলে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। সেই সাথে ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়ে ত্বক হবে মসৃণ ও কোমল।
৪. ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে
ব্রণ হওয়া একটি কমন সমস্যা যার ফলে ত্বকে দাগ পড়ে যেতে পারে। আর ব্রণের দাগ সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তাই ব্রণ নিয়ে সৌন্দর্য সচেতন মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী ব্রণের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সহ ত্বকে ব্রণের দাগ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে থাকে।
ব্যবহারের নিয়মঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল বের করে নিয়মিত ব্রণে লাগানো হলে খুব দ্রুত ব্রণ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সেই সাথে ব্রণের দাগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
৫. ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করে
দীর্ঘ সময় ধরে রোদে থাকার ফলে ত্বকে পোড়া দাগ দেখা যায় এবং ত্বকে প্রদাহ হতে পারে। এই সমস্যা দূর করার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের করা যেতে পারে।
ব্যবহারের নিয়মঃ ২ থেকে ৩ টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে ভেতরে থাকা তরল বের করে একটি ছোট পাত্রে রাখুন। অতঃপর সামান্য পরিমাণ দই এবং লেবুর রস ভিটামিন ই তরলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার রোদে পোড়া ত্বককে আরাম দেবে।
রোদ থেকে ত্বকের সুরক্ষার জন্য রোদে যাওয়ার পূর্বে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আপনি চাইলে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন যা ত্বকের সুরক্ষার জন্য অনেক বেশি কার্যকরী।
৬. ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা ফেস মাস্ক
ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকা তরলের সাথে অ্যালোভেরা জেল যোগ করতে পারেন। যার ফলে ভিটামিন ই সহ অ্যালোভেরার গুণাগুণ পাওয়া যাবে। অ্যালোভেরা ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক রাখা সহ ত্বকের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে।
ব্যবহারের নিয়মঃ সরাসরি অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৭. ভিটামিন ই সমৃদ্ধ পেঁপের ফেস মাস্ক
পেঁপেতে Papain নামক এনজাইম রয়েছে যা ত্বকে নতুন কোষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এর সাথে ভিটামিন ই যোগ করার ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। (K, 2022)
ব্যবহারের নিয়মঃ সামান্য পরিমাণ পাকা পেঁপে পেস্টের মতো বানিয়ে নিতে হবে। ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে তরল বের করে পেস্টের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ভিটামিন ই ত্বকে ব্যবহারের পূর্বে ক্লিনজার অথবা ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিস্কার করে নিতে হবে। আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে ত্বকে ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকা তরল ব্যবহার করুন যেন তা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য প্রায় প্রতিদিন আর অন্যান্যদের জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করাই যথেষ্ট হবে।
ত্বক ও চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে সেবনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
References
Jomol. (2021, December 01). 7 Ways To Apply Vitamin E Capsules For Glowing Skin. Retrieved from makeup and beauty: https://makeupandbeauty.com/ways-to-apply-vitamin-e-capsules-for-glowing-skin/
K, L. (2022, May 26). HOW TO USE VITAMIN E CAPSULES FOR FACE HEALTH. Retrieved from Be Beautiful: https://www.bebeautiful.in/beautypedia/how-use-vitamin-e-capsules-face-health
Last Updated on June 6, 2023
Leave A Comment