ডাবের পানি খেতে খুব মজাদার এবং শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে। যেমনঃ শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ, ইলেকট্রোলাইট (Electrolytes) এর ভারসাম্য রক্ষা, ক্লান্তি দূর করা, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ, শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি রেডিক্যালের সংখ্যা কমানোর মাধ্যমে কোষের অকাল মৃত্যু রোধ করা ইত্যাদি।‌

তবে এই অনুচ্ছেদে ডাবের পানি পান করা এবং ব্যবহারের মাধ্যমে শুধুমাত্র ত্বকের জন্য কি কি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে ত্বকের যত্নে ডাবের পানি বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।‌  

ডাবের পানির উপকারিতা 

ডাবের পানিতে ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন সি, বিভিন্ন খনিজ উপাদান, এন্টি অক্সিডেন্ট, এনজাইম ইত্যাদি রয়েছে।ডাবের পানি পান করার ফলে ত্বকের জন্য যেসব উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা হলোঃ (Quinn, 2021) 

  • ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখে এবং ইলাস্টিসিটি (Elasticity) বা ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। 
  • ডাবের পানি পান করার ফলে শরীরে কোলাজেন (Collagen) উৎপাদন বেড়ে যায় যা ত্বকের ক্ষত সারাতে এবং বলিরেখা বা বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে। 
  • ডাবের পানিতে কাইনেটিন (Kinetin) নামক ফাইটো-হরমোন রয়েছে যার এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি-এজিং (anti-aging) গুণাবলী ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • ডাবের পানির এন্টি অক্সিডেন্ট গুণাবলী ত্বকের প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।‌ 

 

কিডনি বিকল রোগী ব্যতীত যেকোনো বয়সের নারী পুরুষ সকলের জন্য ডাবের পানি পান করা নিরাপদ হবে।

 

রূপচর্চায় ডাবের পানি ব্যবহারের উপায় 

ডাবের পানি শুষ্ক ত্বকের জন্য বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়।‌ এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের বিখ্যাত ডার্মাটোলজিস্ট Dr. Marie Hayag বলেন, ডাবের পানি বাহ্যিকভাবে ত্বকে ব্যবহার করা হলে ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখতে এবং পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও ডাবের পানি ক্লিনজার, স্ক্রাব, টোনার, মাস্ক ও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের যত্নে ডাবের পানি ব্যবহারের ১০ টি পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলোঃ (SUVARNA, 2022) 

১। ক্লিনজার হিসেবে ডাবের পানি 

ডাবের পানি ধুলাবালি, ময়লা, মেকআপ ইত্যাদি দূর করার জন্য প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ডাবের পানির ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংস করার সক্ষমতা রয়েছে।‌ যার ফলে ত্বকের উপরিভাগে ক্ষতিকর অণুজীব দূর করতে ডাবের পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।‌ 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

পরিষ্কার হাতে ডাবের পানি নিয়ে আলতোভাবে মুখে ঘসে ময়লা দূর করার‌ চেষ্টা করুন।‌ মেকআপ তোলার জন্য একটি কটন বল ডাবের পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে।‌ 

২। স্ক্রাব হিসেবে ডাবের পানি 

ত্বকের গভীরে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ দূর করার জন্য প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে ডাবের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাবের পানির সাথে লেবুর রস ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে দারুন স্ক্রাব তৈরি করা যায়। 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

পরিমাণমতো চালের গুঁড়া, ডাবের পানি ও‌ মধু মিশিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে ফেলুন। পুরো মুখে সেই পেস্ট মেখে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে থাকুন। অতঃপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

৩। টোনার হিসেবে ডাবের পানি 

ডাবের পানি হলো প্রাকৃতিক টোনার যা ত্বকের পিএইচ (pH) এর ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ত্বকের মসৃণতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্য পিএইচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।‌ কারণ পিএইচ মানের ভারসাম্যহীনতার ফলে ত্বকের মসৃণতা কমে যায়, ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং নানাবিধ চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক টোনার ব্যবহার করা উত্তম।‌ 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

কটনের সাহায্যে অথবা পরিষ্কার হাতে ডাবের পানি নিয়ে পুরো মুখে ভিজিয়ে নিন।‌ টোনার ত্বকে শোষণ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। 

৪। মাস্ক হিসেবে ডাবের পানি 

মাস্ক এর জন্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ডাবের পানি ব্যবহার করা‌ যেতে পারে। এর সাথে সহজলভ্য উপকরণ হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।‌ 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

একটি ছোট বাটিতে পরিমাণমতো হলুদের গুঁড়া ও ডাবের পানি মিক্সড করে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। পুরো মুখে এই ফেস মাস্ক লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। 

৫। ময়েসচারাইজার হিসেবে ডাবের পানি 

প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ডাবের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তাদের জন্য ডাবের পানি ব্যবহার করা খুব উপকারী হবে। ডাবের পানির ঘনত্ব খুব কম বলে সহজেই ত্বক শোষণ করতে পারে।

ব্যবহারের নিয়মঃ 

পরিষ্কার হাতে ডাবের পানি নিয়ে মুখে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজ করার পর মুখ না‌ শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।  

৬। অ্যান্টি-এইজিং উপাদান হিসেবে ডাবের পানি 

মুখে বয়সের ছাপ পড়তে না‌ দেওয়ার প্রচেষ্টায় কৃত্রিম প্রসাধনী সামগ্রী বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ এইসব ক্রিম ব্যবহার না করে বরং প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন। এতে রয়েছে সাইটোকাইন (Cytokines) নামক প্রোটিন যা ত্বকে‌ নতুন কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ত্বকে‌ তারুণ্য ধরে রাখে। 

ব্যবহারের নিয়ম: 

প্রথমে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।‌ অতঃপর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন।‌ এবার দুই হাতের তালুতে ডাবের পানি নিয়ে পুরো মুখে আলতোভাবে ঘসতে থাকুন। প্রতিদিন একবার করে এই পদ্ধতিতে ডাবের পানি মুখে মাখতে পারেন। 

৭। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ডাবের পানি 

রোদের তাপে ত্বকে প্রদাহ হয় এবং পোড়া দাগ পড়ে যেতে পারে। তাই রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ও সানগ্লাস ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যা হোক, রোদে পোড়া দাগ এবং প্রদাহ দূর করার জন্য ডাবের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

পরিষ্কার হাতের তালুতে ডাবের পানি নিয়ে প্রদাহ ও পোড়া দাগের স্থানে সার্কুলার মোশনে হালকাভাবে ঘসতে থাকুন।‌ ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই পদ্ধতিতে দিনে‌ দুইবার ডাবের পানি ব্যবহার করতে হবে।‌  

৮। ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে ডাবের পানি

ডাবের পানির সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা হলে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

পরিমাণমতো হলুদের গুঁড়া ও ডাবের পানি মিক্সড করে পেস্ট বানিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। 

৯। ত্বকের ইনফেকশনের সমস্যা সমাধানে 

ডাবের পানিতে লরিক এসিড (Lauric acid) রয়েছে যা ত্বকের উপরিভাগে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ত্বকের ইনফেকশনের সমস্যা সমাধানে ডাবের পানির সাথে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, মধুতে রোগজীবাণু প্রতিহত করার ক্ষমতা রয়েছে। 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

একটি ছোট‌ বাটিতে পরিমাণমতো ডাবের পানি ও মধু মিশিয়ে পুরো মুখে সেই মিশ্রণ লাগাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

১০। ব্রনের সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি 

ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য ডাবের পানি পান করা এবং বাহ্যিকভাবে মুখে ব্যবহার করে উপকারিতা পাওয়া যায়। রোগ জীবাণু দূর করা, পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ডাবের পানি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। 

ব্যবহারের নিয়মঃ 

কটনের সাহায্যে ব্রণের স্থানে ডাবের পানি লাগাতে হবে। আর ব্রণ হওয়া প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পুরো মুখে ডাবের পানি ব্যবহার করতে হবে। 

 

ডাবের পানি ত্বকের যত্নে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা নিরাপদ এবং এতে ত্বকে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কারো ত্বকে এলার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে তাদের ক্ষেত্রে ডাবের পানি ব্যবহার করার জন্য একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করা‌ উচিত। 

 

ডার্ক সার্কেল, পিগমেন্টেশন,‌ ব্ল্যাকহেডস (Blackheads) এবং চর্মরোগ দূর করার ব্যাপারে বাহ্যিকভাবে ডাবের পানি‌ ব্যবহার করে কোনো ফলাফল দেখা যায়নি। আর তাই এই সব ব্যাপারে ডাবের পানি ব্যবহার করে ফলাফল প্রাপ্তির প্রত্যাশা না‌ থাকাই ভালো। 

 

References

Quinn, D. (2021, February 19). Benefits of Coconut Water for Skin: How to Get That Dewy Glow. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/benefits-of-coconut-water-for-skin

SUVARNA. (2022, November 14). 10 Fabulous Benefits of Coconut Water for Your Skin! Retrieved from Styles At Life: https://stylesatlife.com/articles/coconut-water-benefits-for-skin/

 

Last Updated on April 9, 2023