সকল মানুষের কাছেই মাথার চুল খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে হয় কারণ চুল সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। চুল ভালো রাখতে মানুষের প্রচেষ্টার শেষ নেই। বিশেষত সৌন্দর্য পিপাসু মানুষজন চুলের যত্নে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়া প্রতিরোধ ও চুলের সঠিক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভিটামিন বা পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন হয়।
চুলের যত্নে ফলিক অ্যাসিডের (ভিটামিন বি৯ বা ফলেট) ভূমিকা বা উপকারিতা সহ ফলিক অ্যাসিড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আজকের অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
চুলের বৃদ্ধির জন্য ফলিক অ্যাসিডের উপকারিতা
সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে চুলের কোষ বিভাজনের গতি একইরকম থাকে না। বরং বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোষ বিভাজন তথা চুল গজানোর হার কমে যায়। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত চুল পড়ে যায় এবং সেই অনুপাতে চুল না গজালে মাথায় চুলের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়।
ফলিক অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে যার মধ্যে একটি হলো কোষ বিভাজন। শরীরের অন্য সব কোষের মতো মাথার ত্বকের কোষ বিভাজনে ফলিক অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মাধ্যমে চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা চুলের জন্য আরো যে সমস্ত উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা হলোঃ (Rubell, 2022)
১। শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতির ফলে চুল পাতলা (Thinning hair) হয়ে যায়। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা হলে তা চুলের পুরুত্ব ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
২। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুল পেকে যাওয়া স্বাভাবিক।
তবে বয়স বৃদ্ধি ছাড়াও রক্তে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকার সাথে চুল পেকে যাওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। আর তাই চুল পাকা প্রতিরোধে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকতে হবে।
৩। শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোষের তুলনায় চুলের কোষে (চুলের কোষ কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে সম্পর্কিত) পুষ্টি সরবরাহ কমে যায়। যার ফলে অতিরিক্ত হারে চুল পড়তে থাকে।
৪। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকলে চুল মজবুত হয় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।
৫। লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিডের ভূমিকা রয়েছে। আর লোহিত রক্ত কণিকা শরীরের সব কোষে (চুলের কোষ সহ) পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে যা চুল ভালো রাখার জন্য জরুরী।
কাদের জন্য চুলের যত্নে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে হবে?
নানাবিধ কারণে চুলের সমস্যা হতে পারে যার মধ্যে একটি হলো ফলিক অ্যাসিডের অভাব। যেখানে শুধুমাত্র ফলিক অ্যাসিডের অভাবজনিত কারণে চুল পড়া, চুল পাকা, চুলের পুরুত্ব কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।
সাধারণত যেসব মানুষের ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি জনিত চুল পড়া সমস্যা বেশি দেখা যায় তা হলোঃ
- বয়স্ক ব্যক্তি
- গর্ভবতী নারী
- স্তন্যদানকারী মা
- মদ্যপায়ী ব্যক্তি
- সিলিয়াক ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তি
গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিডের অভাব হওয়ার কারণ হলো এই সময়ে চাহিদা বেড়ে যায়। আর বাকি ক্ষেত্র গুলোতে শরীরে ফলিক অ্যাসিড শোষণ যথাযথভাবে হয় না।
আয়রনের অভাব, থাইরয়েডের সমস্যা, মাথার তালুতে দাদ, সোরিয়াসিস, মানসিক চাপ কিংবা বংশগত কারণে চুল চুলের সমস্যা হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে ফলিক অ্যাসিড কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চুলের সমস্যার কারণ ফলিক অ্যাসিডের অভাবজনিত কিনা তা বোঝার উপায় কি?
ফলিক অ্যাসিডের অভাবজনিত ক্ষেত্রে চুলের সমস্যায় লক্ষণের কোনো বিশেষত্ব থাকে না। তবে শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি রয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। যেমনঃ (Cherney, 2019)
- দুর্বলতা
- ক্লান্তি বোধ
- ত্বক ফ্যাকাশে বর্ণের হয়ে যাওয়া
- মুখের ভেতর ও জিহ্বায় ঘা হওয়া
- ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাওয়া
- খিটখিটে মেজাজ
- ডায়রিয়া
এছাড়াও Folic Acid Test নামক একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়। এই পরীক্ষা করার জন্য স্যাম্পল হিসেবে শিরা থেকে রক্ত (Blood) সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। রক্তে ফলিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো প্রতি মিলিলিটারে ২.৭ থেকে ১৭ ন্যানোগ্রাম।
চুলের বৃদ্ধির জন্য ফলিক অ্যাসিড কীভাবে ব্যবহার করবেন?
চুলের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ই এর মতো ফলিক অ্যাসিড বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায় না। অর্থাৎ ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট শুধুমাত্র ট্যাবলেট হিসেবে মুখে সেবন করা যায় বা ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় বিবেচনায় ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে।
চুলের যত্নে আপনার জন্য ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে কিনা এবং কতটুকু পরিমাণে সেবন করতে হবে সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পেতে একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চুলের জন্য ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার পক্ষে খুব শক্তিশালী কোনো যুক্তি বা গবেষণার ফলাফল নেই। তাছাড়া ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমনঃ
- বমি বমি ভাব
- মুখের স্বাদ কমে যায়
- ক্ষুধার অনুভূতি কমে যায়
- খিটখিটে মেজাজ
- ঘুমের সমস্যা
সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ঝামেলা এড়িয়ে সহজ সমাধান পাওয়ার জন্য ফলেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। শিম, মটরশুটি, লেটুসপাতা, লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, বাদাম, বাঁধাকপি, পালংশাক, ডিম, কলিজা, মাছ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও সামুদ্রিক খাবার থেকে প্রচুর পরিমাণে ফলেট পাওয়া যায়।
চুল ভালো রাখা সহ শরীরের সুস্থতার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। খাবার থেকে ভিটামিন সংগ্রহ করা হলো সবচেয়ে উত্তম উপায়। শাকসবজি যতটা সম্ভব কম তাপে রান্না করতে হবে। কারণ তাপে ফলিক অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
Bibliography
Cherney, K. (2019, 11 27). Does Folic Acid Help with Hair Growth? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/folic-acid-for-hair
Rubell, A. (2022, 02 28). Folic Acid For Hair: Benefits and How to Use It. Retrieved from BYRDIE: https://www.byrdie.com/folic-acid-for-hair-growth-5083159
Last Updated on October 31, 2023
Leave A Comment