ভিটামিন ই হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরে সংরক্ষিত থাকে। এই ভিটামিনের কাজ হলো শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তথা প্রদাহ নিরাময় করা। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানো, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিকভাবেই কিছু খাবার ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হয়ে থাকে যা খেলে শরীরের চাহিদা পূরণ হয়। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ২০টি খাবার এবং সেগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
ভিটামিন ই এর দৈনিক চাহিদা
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ছোটদের জন্য কিছুটা কম মাত্রায় (৯ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের জন্য দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম, ৪ থেকে ৮ বছর ৭ মিলিগ্রাম, ১ থেকে ৩ বছর- ৬ মিলিগ্রাম, ৭ থেকে ১২ মাস- ৫ মিলিগ্রাম এবং জন্ম থেকে ৬ মাস বয়সীদের জন্য ৪ মিলিগ্রাম) প্রয়োজন হয়। (National Institutes of Health, 2021)
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য দৈনিক ১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই গ্রহণ করতে হবে।
সকল বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই এর চাহিদা পূরণের জন্য শুধুমাত্র খাবার গ্রহণ করাই যথেষ্ট হবে।
তবে বিশেষ কোনো রোগে (ক্রন’স ডিজিজ) আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে খাবারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না বরং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না।
১। কাঠবাদাম (Almonds)
ভিটামিন ই এর সবচেয়ে ভালো উৎস হলো বাদাম। কারণ ভিটামিন ই চর্বিতে দ্রবণীয় যা শোষণের জন্য চর্বি প্রয়োজন হয়। আর বাদাম হলো স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার।
বাদামের অনেকগুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যে কাঠবাদাম থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ই পাওয়া যায়। ৩০ গ্রাম পরিমাণ কাঠবাদাম থেকে ৭.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায় যা দৈনিক চাহিদার প্রায় অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম।
২। পেস্তা বাদাম (Pistachios)
অন্যান্য সবধরনের বাদামের তুলনায় পেস্তা বাদাম সবচেয়ে কম ফ্যাট ও ক্যালরি সমৃদ্ধ যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য খাওয়া বেশ উপকারী হবে।
৩০ গ্রাম পরিমাণ পেস্তা বাদাম থেকে ১.৩৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এছাড়াও ৩০৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। আখরোট (Walnuts)
৩০ গ্রাম আখরোট থেকে ১.১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি দৈনিক চাহিদার ৫০ শতাংশ কপার ও ৪৫ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ সরবরাহ করে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান।
৪। চিনা বাদাম
চিনা বাদাম খুব সহজলভ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ যার প্রতি ৩০ গ্রাম থেকে ২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
প্রতিদিন একমুঠো চিনা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌন সক্ষমতা বাড়ানো সহ ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।
৫। সুর্যমূখী বীজ
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে যার প্রতি ১ আউন্স (২৮ গ্রাম) থেকে দৈনিক চাহিদার ৬৬ শতাংশ (১০ মিলিগ্রাম) ভিটামিন ই পাওয়া যায়। (Arnarson, 2023)
৬। মিষ্টি কুমড়ার বিচি
সূর্যমুখী বীজের মতোই স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হলো মিষ্টি কুমড়ার বিচি যা থেকে সামান্য পরিমাণে (১ আউন্স থেকে ০.৬ মিলিগ্রাম) ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
৭। অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো বিদেশী ফল হলেও বহুগুণের অধিকারী হিসেবে বর্তমানে আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। ১০০ গ্রাম পরিমাণ অ্যাভোকাডো থেকে ২.১ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ১৪ শতাংশ) ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
এছাড়াও অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেলস, এন্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট সমৃদ্ধ বলেই অ্যাভোকাডো এতো জনপ্রিয়।
৮। পাকা আম
আম খুব সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল যার প্রতি ১০০ গ্রাম থেকে প্রায় ০.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়। মাঝারি সাইজের একটি আম খেলে ভিটামিন ই এর দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ হবে।
৯। মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু খুব পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। ১টি মিষ্টি আলু (১০০ গ্রাম ওজনের) থেকে প্রায় ১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
এছাড়াও মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
১০। সূর্যমুখী তেল
স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে রান্নায় সূর্যমুখী তেল ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। ১ টেবিল চামচ পরিমাণ সূর্যমুখী তেল থেকে ৫.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক চাহিদার এক তৃতীয়াংশের বেশি পূরণ করতে পারে মাত্র এক টেবিল চামচ পরিমাণ সূর্যমুখী তেল।
১১। অলিভ অয়েল
সালাদের সাথে অথবা রান্নার কাজে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা উত্তম। এক টেবিল চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল থেকে দৈনিক চাহিদার ৭ শতাংশ ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
১২। সয়াবিন তেল
তুলনামূলক সহজলভ্য হলো সয়াবিন তেল যা আমাদের দেশে রান্নার কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক টেবিল চামচ পরিমাণ সয়াবিন তেলে ১.২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই রয়েছে।
১৩। রাইস ব্র্যান অয়েল
রাইস ব্র্যান খুব সহজলভ্য নয়, তবে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ভিটামিন ই এর উৎস বিবেচনায় প্রতি ১ টেবিল চামচ থেকে ৪.৪ মিলিগ্রাম অথবা দৈনিক চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম।
১৪। ব্রকলি
অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ব্রকলি থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম পরিমাণ ব্রকলিতে ১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই রয়েছে।
১৫। বাঁধাকপি
সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর একটি সবজি হলো বাঁধাকপি। একটি ছোট সাইজের বাঁধাকপি থেকে ১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
১৬। কিউই ফল (Kiwi Fruit)
বিদেশি ফল এবং দাম একটু বেশি। তবে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম পরিমাণ কিউই ফলে ১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই রয়েছে। খাবারের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য মাঝেমধ্যে কিউই ফল খাওয়া যেতে পারে।
১৭। মাছ
প্রায় সবধরনের মাছে ভিটামিন ই রয়েছে। তবে সামুদ্রিক মাছে তুলনামূলক বেশি ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
সামুদ্রিক মাছের প্রকরণভেদে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছ ভিটামিন ই এর দৈনিক চাহিদার ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম।
১৮। সামুদ্রিক খাবার
মাছ ছাড়াও সামুদ্রিক অন্যান্য খাবারে (চিংড়ি, শামুক, অক্টোপাস ইত্যাদি) ভিটামিন ই রয়েছে।
যেমনঃ ১০০ গ্রাম শামুক থেকে ৫ মিলিগ্রাম, চিংড়ি থেকে ১ মিলিগ্রাম ও অক্টোপাস থেকে ১.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
১৯। মুরগির মাংস
মুরগির মাংস থেকে খুব সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ই পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস ভিটামিন ই এর দৈনিক চাহিদার মাত্র ৩ শতাংশ করতে পূরণ পারে।
২০। ডিম
ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন ব্যতীত কোনো পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় না। তবে কুসুম থেকে ফ্যাট সহ ভিটামিন ই পাওয়া যায়। কুসুম সহ একটি ডিম খেলে ভিটামিন ই এর দৈনিক চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হয়।
শেষ কথা
খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে বিশেষ করে বাদাম।
খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া হলেও শরীরে ভিটামিন ই এর মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ মাত্রা অনুসরণ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।
References
Arnarson, A. (2023, February 02). 20 Foods That Are High in Vitamin E. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/foods-high-in-vitamin-e
National Institutes of Health. (2021, March 22). Vitamin E. Retrieved from National Institutes of Health: https://ods.od.nih.gov/factsheets/VitaminE-Consumer/
Last Updated on January 3, 2024
Leave A Comment