কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nigella sativa যা আমাদের দেশে খুব সহজলভ্য। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন পদ্ধতির (ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক) চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়।
কালোজিরায় প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং সামান্য পরিমাণ মিনারেলস ও ভিটামিন রয়েছে। এক চা চামচ পরিমাণ কালোজিরা তেল থেকে ৫ গ্রাম চর্বি এবং ৪৫ ক্যালরি পাওয়া যায়। (Juber, 2022)
কালোজিরা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনতে পারে যা এই অনুচ্ছেদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এছাড়াও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন।
Table of Contents
কালোজিরা তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কালোজিরা তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে
দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের ফলে কোষের অকাল মৃত্যু হয় এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কালোজিরার এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে এবং কোষের অকাল মৃত্যু ঠেকানো সহ প্রদাহ জনিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষত প্রদাহ জনিত ফুসফুসের রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানির লক্ষণ নিরাময় এবং বয়সজনিত মস্তিষ্কের রোগ আলজেইমার্স প্রতিরোধে কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে। (McGrane, 2023)
লিভার ভালো রাখে
লিভার মানুষের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কালোজিরা লিভার থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করা এবং লিভারের কোষের প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে লিভার ভালো রাখে।
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়
রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
কালোজিরা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
হার্টের রোগ প্রতিরোধের জন্য কালোজিরা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। বরং এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
শরীরের অতিরিক্ত ওজনের সাথে বিভিন্ন জটিল রোগের যোগসূত্র রয়েছে। যেমনঃ হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি।
কালোজিরার এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার ব্যাপারে কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে।
যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস পুরুষের যৌন হরমোন (টেস্টোস্টেরন) নিঃসরণ বৃদ্ধি এবং বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে। তবে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ বা ইনসুলিনের পরিবর্তে কালোজিরা খাওয়া যাবে না।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হয়।
কালোজিরা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ইসলাম ধর্মেও হাদিস মোতাবেক কালোজিরা খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে।
কালোজিরা তেল কীভাবে ব্যবহার করা হয়?
বেশিরভাগ গবেষণার ক্ষেত্রেই কালোজিরা তেল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে যেহেতু কালোজিরা বীজ থেকেই তেল উৎপন্ন হয় আর তাই কালোজিরা তেলের উপকারিতা বীজের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
আমাদের দেশে কালোজিরা তেলের চেয়ে কালোজিরা বীজ সহজলভ্য। এছাড়াও কালোজিরা তেল কেনার সময় বিশুদ্ধ বা খাঁটি কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। পক্ষান্তরে কালোজিরা বীজের ক্ষেত্রে ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই কালোজিরা তেলের তুলনায় বীজ খাওয়া উত্তম।
তবে কেউ একান্তই পছন্দ করলে সুপার শপ বা অনলাইন শপ থেকে কালোজিরা তেল কিনতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ও রাতে এক চা চামচের অর্ধেক পরিমাণ (২.৫ মিলিলিটার) কালোজিরা তেল খেতে হবে।
সাধারণত রান্নার কাজে কালোজিরা তেল ব্যবহার করা হয় না। এছাড়াও বাহ্যিকভাবে কালোজিরা তেল ব্যবহারের প্রচলন নেই।
কালোজিরা বীজ খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত রান্নার কাজে কালোজিরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা খাবারের ফ্লেভার ও স্বাদ বৃদ্ধি করে। রান্নায় ব্যবহার করা ছাড়াও এমনিতেই কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া যায় যার ফলে পুষ্টিগুণ তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। কারণ আগুনের তাপে পুষ্টিগুণ (এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী) কমে যায়।
প্রতিদিন সকালে ও রাতে এক চা চামচ বা এক চামচের অর্ধেক পরিমাণ কালোজিরা এমনিতেই চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য সামান্য মধু সহ খেতে পারেন।
কালোজিরা তেল সাপ্লিমেন্ট
আমাদের দেশে কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কালোজিরা তেলের সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল ফর্মে বাজারজাত করে থাকেন যা নিম্নলিখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়।
- Aliksir®
- D-Sefa®
- HollySeed®
- Nigel-N®
- Nilagel®
প্রতি পিস ক্যাপসুলের দাম কোম্পানি ভেদে ৭ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ২ টি ক্যাপসুল আর শিশুদের জন্য দৈনিক ১ টি ক্যাপসুল খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য কালোজিরা ক্যাপসুল প্রযোজ্য নয় বা বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কালোজিরা বীজ, তেল বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ফলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
দীর্ঘদিন ধরে কালোজিরা সাপ্লিমেন্ট (তেল, ক্যাপসুল বা রান্নার কাজে ব্যবহার ব্যতীত কালোজিরা বীজ খাওয়া) গ্রহণ করা কতটা নিরাপদ হবে সেই বিষয়ে গবেষণার ঘাটতি রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কালোজিরা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ব্যাপারে একজন চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা নিয়মিত কোনো ওষুধ সেবন করতে হয় এমন ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কালোজিরা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না।
Bibliography
Juber, M. (2022, November 29). Black Seed: Are There Health Benefits? Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/diet/black-seed-health-benefits
McGrane, K. (2023, February 04). What Is Black Seed Oil? All You Need to Know. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/black-seed-oil
Last Updated on January 3, 2024
Leave A Comment