নাকের পলিপ (Nasal polyps) খুব কমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা নাকের পলিপাস নামেও পরিচিত। আমাদের দেশে এই রোগটির অনেক অপচিকিৎসা হয়ে থাকে। এই অনুচ্ছেদে নাকের পলিপাসের কারণ, লক্ষণ, নাকের পলিপাস হলে করনীয় কি এবং নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
নাকের পলিপাস কেন হয়?
শরীরের স্বাভাবিক গঠন অনুযায়ী নাকের ভেতরে মিউকাস মেমব্রেন থাকে যা শ্বাসগ্রহণের সময় বাইরে থেকে প্রবেশ করা বায়ু পরিশোধনে সাহায্য করে। এলার্জি অথবা ইনফেকশনের প্রভাবে মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ হলে তা ফুলে উঠে যাকে পলিপ বলা হয়।
নাকের পলিপাস নারী পুরুষ সহ যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে তবে মধ্যবয়স্কদের ক্ষেত্রে অধিক প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়াও যাদের এজমা, এলার্জিক রাইনাইটিস, সাইনাস ইনফেকশন অথবা পরিবারে পলিপাস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ঝুঁকি অনেক বেশি।
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়?
নাকের যেকোনো এক পার্শ্বে অথবা উভয় পার্শ্বে পলিপাস হতে পারে এবং পলিপাসের আকারের উপর নির্ভর করে লক্ষণের কম বেশি হয়ে থাকে। নাকের পলিপাস এর লক্ষণ গুলো হলোঃ
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা
- ঘন ঘন হাঁচি হওয়া
- সারাক্ষণ ঠান্ডা লেগে থাকা
- নাক থেকে তরল সর্দি নির্গমন
- নাকের গোড়ায় চাপ বোধ
- কপালে ও মাথায় ব্যথা হয়
- ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট
- নাকডাকা (Snoring)
- ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি
নাকের পলিপাস এর চিকিৎসা
লক্ষণ দেখা দিলে নাকের ভেতরে টর্চের আলো দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে নাকের ভেতর অস্বাভাবিক ফোলাভাব যার দরুন নাক বন্ধ হয়ে আছে। পলিপের জন্য নাকের ছিদ্র কতটুকু বন্ধ হয়েছে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভর করবে কেমন প্রকৃতির চিকিৎসা নিতে হবে। যদি সমস্যা খুব জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী না হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে শুরুতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্য অথবা হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দ্বিত্ব দৃষ্টি (সবকিছু দুইটা করে দেখা) ইত্যাদি সমস্যা হলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ (ইএনটি) ডাক্তার দেখাতে হবে।
নাকের পলিপাস দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঋতুর পরিবর্তন, ঠান্ডা আবহাওয়া অথবা বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে নাকের পলিপাস (একিউট বা স্বল্পমেয়াদী সমস্যা) হলে সাধারণত ঔষধ খাওয়া বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে তা হলোঃ
- কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নাকের ভেতর পরিষ্কার করা
- গরম পানির ভাপ নেওয়া
- আদা ও লেবু দিয়ে রং চা খাওয়া
- কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন সালাদ হিসেবে অথবা কোনো রেসিপির সাথে যোগ করে খাওয়া
- আনারস খেলে উপকার পাওয়া যাবে, কারণ আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেইন যা মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ ও ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে
- পানিতে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খাওয়া
- এলার্জিক খাবার বর্জন করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যেন শরীরের আদ্রতা ঠিক থাকে
- শ্বাসের ব্যায়াম করা ইত্যাদি
নাকের পলিপাস এর ড্রপ
নাক বন্ধ হয়ে থাকা সহ অন্যান্য উপসর্গ নিরাময়ের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নাকের পলিপাসের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক নিম্নলিখিত স্টেরোয়েড জাতীয় ড্রপ গুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ
- Fluticasone
- Budesonide
- Mometasone
নাকের পলিপাস এর ওষুধ
নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে শুধুমাত্র এন্টি-হিস্টামিন গোত্রের ঔষধ সমূহ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যায়। বাকি অন্যান্য ঔষুধ বিশেষ করে স্টেরোয়েড জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত অযাচিত ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এন্টি-হিস্টামিন গোত্রের সবচেয়ে ভালো কার্যকরী ঔষধটি হলো ফেক্সোফেনাডিন যা ১২০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ১টি করে ঔষধ সেবন করতে হবে।
বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা
বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চিকিৎসায় চটকদার বিজ্ঞাপন দেখানো হয় যে, বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত একধরনের এসিড ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয় যার ফলে নাকের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখবেন, ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার ও ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে পলিপাস ভালো না হলে অথবা পলিপাস খুব বড় আকারের হলে সেক্ষেত্রে সার্জারি হলো একমাত্র ব্যবস্থা। পলিপাসের সার্জারি খুব জটিল ও ব্যয়বহুল নয়, আর তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
Last Updated on December 21, 2023
Leave A Comment