যুক্তরাষ্ট্রের Urology Care Foundation এর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকাতে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখের অধিক পুরুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে ভ্যাসেকটমি (Vasectomy) করিয়ে থাকেন। (Urology Care Foundation, 2020) ইতিমধ্যেই আমাদের দেশেও এই পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনি যদি ভ্যাসেকটমি করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে থাকেন তবে ভ্যাসেকটমি করানোর পর কি কি জটিলতা হতে পারে সেই বিষয়ে আগে থেকেই নিশ্চিত ভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।

এই অনুচ্ছেদে ভ্যাসেকটমি পরবর্তী জটিলতা বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আপনার যদি ভ্যাসেকটমি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা না থাকে তবে অনুচ্ছেদের শুরুতেই এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ভ্যাসেকটমি করলে পুরুষের যৌন সক্ষমতা কমে যায় কিনা অথবা ভ্যাসেকটমির পর পুনরায় আবার বাচ্চা নেওয়া যায় কিনা এমন ৭ টি কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

ভ্যাসেকটমি কিভাবে করে?

ভ্যাসেকটমি (Vasectomy) মেডিকেল টার্মটি vas deferens এবং ectomy শব্দ দুটির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। Vas deferens হলো পুরুষের শুক্রাণু বহনকারী নালী আর Ectomy দ্বারা সার্জারির মাধ্যমে শরীরের কোনো অংশ কেটে দেওয়া বাদ দেওয়া বোঝানো হয়। অর্থাৎ ভ্যাসেকটমির মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু বহনকারী নালীর একটি অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয় যেন যৌন মিলনের পর বীর্যের সাথে শুক্রাণু বের হতে না পারে।

উল্লেখ্য একজন পুরুষের শরীরের অন্ডকোষে শুক্রাণু উৎপাদন হয় এবং তা বহন করে vas deferens নামক নালী। জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে ভ্যাসেকটমি করানো হলে অন্ডকোষে শুক্রাণু উৎপাদন হয় ঠিকই কিন্তু তা বীর্যপাতের সময় বের হওয়ার সুযোগ পায় না।

ভ্যাসেকটমি খুব ছোট্ট একটি সার্জারি যার জন্য ১ দিনের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এর ফলে কিছু জটিলতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যা সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয়ে থাকে তবে কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। তো চলুন এই পর্যায়ে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ভ্যাসেকটমি পরবর্তী জটিলতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ভ্যাসেকটমি কিভাবে করে

সম্ভাব্য স্বল্পমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভ্যাসেকটমি একটি নিরাপদ প্রকৃতির সার্জারি যার ফলে খুব বেশি জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তবে যেহেতু এটি একটি সার্জারি আর তাই সামান্য কিছু সমস্যা হতেই পারে তবে তা খুব বেশি দীর্ঘমেয়াদী হয় না। এই জাতীয় কতিপয় সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • ব্যথা ও অস্বস্তি বোধ
  • অন্ডকোষের বিবর্ণতা
  • রক্তপাত বা হেমাটোমা (Hematoma)
  • অস্ত্রোপচারের অংশে সংক্রমণ (Infection) ইত্যাদি

১. ব্যথা এবং অস্বস্তি

ভ্যাসেকটমি সার্জারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় লেগে যায়। সার্জারি করার সময় স্থানিক অবশকারী ওষুধ (Local anesthesia) ব্যবহার করা হয় যার ফলে তখন কোনো ব্যথা টের পাওয়া যায় না। তবে সার্জারির কিছুক্ষণ পর থেকে সামান্য ব্যথা ও অস্বস্তি বোধ হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বরং অন্ডকোষের সাপোর্ট হিসেবে টাইট আন্ডারওয়্যার পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে এবং ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ব্যথা যেন না হয় বা কম হয় এই ভাবনা থেকে সার্জারির আগেই ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। কারণ ব্যথা নাশক ওষুধ (NSAIDs- non steroidal Anti-inflammatory drugs) গুলো খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় যা সার্জারির‌ সময় অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। আর তাই সার্জারির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে NSAIDs গ্রুপের ওষুধ সহ রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এমন ওষুধ বিশেষত এসপিরিন (Aspirin) গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। (Mayo Clinic, 2021)

 

২. অণ্ডকোষের বিবর্ণতা

ভ্যাসেকটমি সার্জারির ক্ষেত্রে অন্ডকোষের উপরের চামড়া (Scrotum) সামান্য পরিমাণে কেটে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। অতঃপর অন্ডকোষের মধ্যে থাকা Vas deferens নামক শুক্রাণু বহনকারী নালীর একটি অংশ কেটে বাদ দিয়ে পুনরায় উপরের চামড়া সেলাই করে দেওয়া হয়।

এই প্রক্রিয়ায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের ক্ষেত্রেই অন্ডকোষ ফুলে যায় বা চামড়ায় বিবর্ণতা দেখা যায়। তবে এর জন্য বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই কারণ এই সমস্যা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য অনেক সময় চিকিৎসকেরা সার্জারির পর কয়েক টুকরো বরফ একটি কাপড়ের মধ্যে পেঁচিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর অন্ডকোষে কিছুক্ষণ সময় ধরে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। (Nall, 2018)

 

৩. রক্তপাত বা হেমাটোমা

ভ্যাসেকটমির ক্ষেত্রে সাধারণত তেমন রক্তক্ষরণ হয় না। তবে ৪ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে হেমাটোমা (Hematoma) বা রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে থাকে। হেমাটোমা একটি মেডিকেল টার্ম যা দ্বারা বোঝানো হয় রক্তক্ষরণের পর তা ত্বকের নিচে জমে গিয়ে ফোলাভাব তৈরি করে।

ভ্যাসেকটমি পরবর্তী হেমাটোমা তেমন কোনো জটিলতার সৃষ্টি করে না বরং কয়েকদিনের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়। তবে রক্তপাত বেশি হলে বা হেমাটোমার ফলে অতিরিক্ত প্রদাহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

 

৪. অস্ত্রোপচারের অংশে সংক্রমণ

সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের অংশে খুব সহজেই জীবাণুর সংক্রমণ (Infection) হতে পারে। বিশেষত যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও সার্জারির সরঞ্জামাদি এবং চিকিৎসকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ভরশীল।

আর তাই ভালো মানের ক্লিনিক বা হসপিটালে সার্জারি করাতে হবে। সেই সাথে সার্জারি পরবর্তীতে ইনফেকশন যেন না হয় সেই জন্য নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

তবে আপনার ক্ষেত্রে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকলে বা ইনফেকশন হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় এন্টি বায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই সার্জারি পরবর্তীতে ভিটামিন সি রয়েছে এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার কোন গুলো তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

ভ্যাসেকটমি পরবর্তী স্বল্পমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কি?

ভ্যাসেকটমি পরবর্তী উপরে উল্লেখিত স্বল্পমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো এড়াতে কতিপয় নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। যেমনঃ (Mayo Clinic, 2021)

  • সার্জারির পর অবশ্যই গোসল করতে হবে
  • কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা বিশ্রামে থাকতে হবে এবং সার্জারি পরবর্তী ২ থেকে ৩ দিন কঠোর পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না
  • ১ সপ্তাহ পর্যন্ত যৌন মিলন (Sexual intercourse) করা থেকে বিরত থাকতে হবে ইত্যাদি

স্বল্পমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যথাঃ

  • ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর
  • ব্যথা নাশক ওষুধ সেবনের পর ব্যথা না কমলে
  • অন্ডকোষ ফুলে তীব্র ব্যথা হলে
  • এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যথা
  • পুঁজ নির্গত হলে অথবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে ইত্যাদি

 

স্থায়ীভাবে যে সমস্যাগুলো হতে পারে

একজন দক্ষ সার্জনের দ্বারা ভ্যাসেকটমি সম্পন্ন করার পর স্থায়ীভাবে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কদাচিৎ ক্ষেত্রে কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ

  • ব্যাথা এবং অস্বস্তিবোধ হওয়া
  • বিলম্বিত অস্ত্রোপচার ব্যর্থতা
  • Epididymitis
  • Venovenous Fistula
  • Sperm Granuloma

১. ব্যাথা এবং অস্বস্তিবোধ হওয়া

আমেরিকান ইউরোলজি এসোসিয়েশন এর তথ্য অনুযায়ী ভ্যাসেকটমি করিয়েছেন এমন পুরুষদের মধ্যে মাত্র ১ থাকে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা ও অস্বস্তি বোধ হয়ে থাকে। এই ব্যথা হতে পারে সার্জারির সময় অন্ডকোষের মধ্যকার রক্তনালী বা স্নায়ুতে (Nerves) আঘাত লাগার কারণে। যা হোক, এর জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ব্যথা নাশক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া যায়। তবে কখনো কখনো তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে পুনরায় সার্জারি করানোর প্রয়োজন পড়ে।

 

২. বিলম্বিত অস্ত্রোপচার ব্যর্থতা

ভ্যাসেকটমির মাধ্যমে Vas deferens নামক শুক্রাণু বহনকারী নালীর একটি অংশে কেটে দুই প্রান্ত আলাদাভাবে বন্ধ করে রাখা হয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে সার্জারির অনেক সময় পরে Vas deferens এর দুই প্রান্ত আবার জোড়া লেগে যায় যার ফলে পুনরায় বীর্যে শুক্রাণুর উপস্থিতি দেখা যায়। তবে গবেষণা বলছে যে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রায় ১ শতাংশের কম। আর তাই এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছুই নেই। তবে ভ্যাসেকটমি সার্জারি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের (Urologist) শরণাপন্ন হয়ে সম্পন্ন করতে হবে।

 

৩. Epididymitis

অন্ডকোষের মধ্যে শুক্রাণু উৎপাদন হওয়ার পর তা অন্ডকোষের উপরের দিকের একটি অংশে জমা থাকে যাকে Epididymis বলা হয়।‌ ভ্যাসেকটমি করিয়েছেন এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে Epididymis থেকে শুক্রাণু বেরিয়ে vas deferens এর মাধ্যমে বাইরে বের হতে পারে না বরং পুনরায় Epididymis এর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

অতঃপর শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুক্রাণু আপনাআপনি ধ্বংস হয়ে যায় তবে কখনো কখনো এটি প্রদাহের সৃষ্টি করে থাকে‌ যাকে মেডিকেলের ভাষায় Epididymitis বলে। এক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় ব্যথা, অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। ভ্যাসেকটমির পর প্রায় ১ থেকে ৩ শতাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে Epididymitis হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

৪. Vasovenous Fistula

ভ্যাসেকটমি করানোর সময় অন্ডকোষের মধ্যে থাকা রক্তনালী আঘাত প্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে vasovenous fistula সৃষ্টি হতে পারে। তবে এটি সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না বরং খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে প্রস্রাব অথবা বীর্যের সাথে রক্তের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য প্রস্টেট গ্রন্থির (Prostate gland) সমস্যার ক্ষেত্রেও প্রস্রাব অথবা বীর্যের সাথে রক্ত দেখতে পাওয়া যায়। আর তাই ভ্যাসেকটমি করিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উল্লেখিত লক্ষণটি দেখা দিলে তা সার্জারি জনিত কিনা তা নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অতঃপর কারণ ও অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যার লক্ষণ অথবা প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়া এবং প্রস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

৫. Sperm Granuloma

অন্ডকোষে শুক্রাণু উৎপাদন হওয়ার পর তা vas deferens এর মাধ্যমে বাইরে নির্গত হতে না পারলে সেক্ষেত্রে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু গুলো ধ্বংস হয়ে যায়। কোনো কারণবশত এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটলে বা শুক্রাণু জমে গিয়ে অন্ডকোষের মধ্যে সিস্ট (cysts) তৈরি করলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় Sperm granuloma বলা হয়। এক্ষেত্রে অন্ডকোষের মধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি গোটার মতো মনে হতে পারে এবং সেই সাথে ব্যথা থাকতে পারে। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ছোট্ট একটি সার্জারির মাধ্যমে এই Granuloma গুলো অপসারণ করতে হবে।

 

ভ্যাসেকটমি সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন

ভ্যাসেকটমি সম্পর্কিত অনেকের মনেই নানাবিধ কৌতুহলী প্রশ্ন রয়েছে যার মধ্যকার কয়েকটি বিষয় এই পর্যায়ে তুলে ধরা হলো। যেমনঃ

১। ভ্যাসেকটমির সাথে যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়ার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি?

ভ্যাসেকটমি করানোর ফলে বীর্যে শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না কিন্তু এর সাথে যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যদিও অন্ডকোষের মধ্যে যৌন হরমোন (Testosterone) উৎপাদন হয়ে থাকে বলে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে vas deferens নামক নালী কেটে ফেলার দরুন হয়তো হরমোন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত যে হরমোন এমন একধরনের উপাদান যা চলাচলের জন্য কোনো নালীর প্রয়োজন হয় না।

এছাড়াও সার্জারির দরুন যৌনাঙ্গে আঘাত হেতু যৌন অক্ষমতা সৃষ্টি হতে পারে কিনা সেই সংশয় দূর করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বিগত ১০০ বছর যাবত করা কোনো গবেষণায় দেখা যায় নি যে ভ্যাসেকটমির ফলে যৌন সক্ষমতা কমে যায়। তবে অন্যান্য সার্জারি বিশেষত প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারির ফলে লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা (ED- erectile dysfunction) হতে পারে বলে মনে করা হয়। (Nall, 2017)

ED এর অন্যান্য আরো সব কারণ এবং সমাধান জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

২। ভ্যাসেকটমির ফলে বীর্যের (Semen) পরিমাণ কমে যায় কিনা?

ভ্যাসেকটমি করানোর পরেও একজনের পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন মিলনের পর স্বাভাবিক বীর্যপাত হবে। কারণ সার্জারির ফলে শুক্রাণু নির্গত হতে পারে না ঠিকই কিন্তু বীর্য বের হয়। আর বীর্যের পরিমাণ প্রায় একই রকম থাকে কারণ বীর্যের মধ্যে খুব সামান্য একটি অংশ জুড়ে থাকে শুক্রাণু। সুতরাং ভ্যাসেকটমি বীর্যপাত এবং যৌন তৃপ্তির ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

প্রতিবার বীর্যপাতের সময় কতটুকু পরিমাণে বীর্য বের হওয়া স্বাভাবিক তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

৩। ভ্যাসেকটমি করানোর কত সময় পরে সহবাস করা নিরাপদ?

জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে ভ্যাসেকটমি করানোর ১ সপ্তাহ পর পর্যন্ত আঘাত থেকে বাঁচতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অতঃপর স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে কিন্তু জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই কথা শোনার পর নিশ্চয় অবাক লাগছে যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পর আবার কিসের অস্থায়ী ব্যবস্থা?

মূলত অন্ডকোষে শুক্রাণু উৎপাদন হওয়ার পর Epididymis এবং vas deferens নামক নালীর বিভিন্ন অংশে তা অবস্থান করে। ভ্যাসেকটমি করানো হলে vas deferens এর অন্ডকোষের সাথে লেগে থাকা অংশের শুক্রাণু বীর্যের সাথে মিলিত হতে পারে না। কিন্তু অপর অংশে কিছু সংখ্যক শুক্রাণু থেকে যায় যা সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

আর তাই ১৫ থেকে ২০ বার বীর্যপাতের পর অথবা তিনমাস পর থেকে ভ্যাসেকটমি কার্যকর হয়ে থাকে। তবে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভ্যাসেকটমির ৮ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে ২ বার Semen analysis টেস্ট করতে হবে। টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী নিশ্চিত হতে হবে যে বীর্যে কোনো শুক্রাণু নেই এবং তারপর থেকে আজীবন ভ্যাসেকটমি জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। (Nordqvist, 2018)

 

৪। জন্ম নিয়ন্ত্রণে ভ্যাসেকটমি কতটা কার্যকর?

জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে ভ্যাসেকটমি প্রায় শতভাগ কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত। তবে শুধুমাত্র ১ শতাংশের কম ক্ষেত্রে এটি ফেইলিউর হতে পারে যা খুবই বিরল ঘটনা। (Nordqvist, 2018)

 

৫। ভ্যাসেকটমি কি যৌন বাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে?

ভ্যাসেকটমি জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারলেও যৌন বাহিত রোগ (STDs- sexually transmitted diseases) প্রতিরোধে এর কোনো ভূমিকা নেই। কারণ যৌন বাহিত রোগ শুক্রাণুর মাধ্যমে নয় বরং অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। শুধুমাত্র কনডম (Condom) ব্যবহারের মাধ্যমে একই সাথে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন বাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

 

৬। ভ্যাসেকটমির পর পুনরায় আবার বাচ্চা নেওয়া সম্ভব কি?

সাধারণত ভ্যাসেকটমি সেই সমস্ত পুরুষদের করানোর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যাদের আর বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবুও অনেক সময় বিশেষ প্রয়োজনে বাচ্চা নিতে চাইলে আরেকটি সার্জারির মাধ্যমে পুনরায় vas deferens জোড়া লাগাতে হবে যাকে মেডিকেলের ভাষায় vasectomy reversal বলা হয়।

তবে ভ্যাসেকটমির চেয়ে এই সার্জারি তুলনামূলক জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। সেই সাথে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ ফিরে পাবে তা বলা যায় না। বরং গবেষণা বলছে যে এক্ষেত্রে ভ্যাসেকটমি করানোর পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে vasectomy reversal করানো হলে বাচ্চা জন্ম দিতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। তবে পরবর্তী ৩ বছরের বেশি বা ৮ বছরের মধ্যে হলে এই সম্ভাবনা কমে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে এবং ৯ থেকে ১৯ বছরের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। (Nordqvist, 2018)

 

৭। ভ্যাসেকটমি কি অন্ডকোষ বা প্রস্টেট ক্যান্সার সৃষ্টি করে?

ভ্যাসেকটমি করানোর ফলে অন্ডকোষ অথবা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে এমন কথা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। এই ব্যাপারে গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে Urology Care Foundation বলছে যে ভ্যাসেকটমি করানোর সাথে অন্ডকোষ বা প্রস্টেট ক্যান্সার সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে কোনো জটিল রোগ হওয়ার যোগসূত্র নেই। সুতরাং এই বিষয়ে অহেতুক ভয় ও সংশয় পুষে রাখা অনর্থক। (Urology Care Foundation, 2020)

 

ভ্যাসেকটমি করানো উচিত কিনা?

আপনার জন্য ভ্যাসেকটমি করানো কতটা যৌক্তিক তা নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে ভেবে দেখুন।

  • আপনার পরিবার গঠন সম্পন্ন হয়েছে অর্থাৎ আর কোনো সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা নেই
  • একবার ভ্যাসেকটমি করানো হলে সারাজীবনের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ঝামেলা পোহাতে হবে না
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি তুলনামূলক সহজ ও সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি

জটিলতা এবং সুবিধা দুইটি বিষয় সমান‌ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে ভ্যাসেকটমি করানোর কথা চিন্তা করতে হবে। সেই সাথে আপনার সঙ্গিনী বিষয়টি ভালো ভাবে দেখছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো যদিও ভ্যাসেকটমির পর পুনরায় vasectomy reversal করানোর মাধ্যমে বাচ্চা নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তবে তা জটিল, ব্যয়বহুল ও কম সম্ভাবনা সম্পন্ন। আর তাই যাদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা একদম নেই শুধুমাত্র তাদের জন্যই ভ্যাসেকটমি করানো উচিত।

 

 

References

Mayo Clinic. (2021, 08 21). Vasectomy. From Mayoclinic: https://www.urologyhealth.org/urology-a-z/v/vasectomy

Nall, R. (2017, september 14). Can Impotence Occur After a Vasectomy? From Healthline: https://www.healthline.com/health/erectile-dysfunction/impotence-after-vasectomy

Nall, R. (2018, 07 26). Possible Complications After a Vasectomy. From Healthline: https://www.healthline.com/health/mens-health/vasectomy-side-effects

Nordqvist, J. (2018, 01 22). Everything you need to know about vasectomy. From Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/265127

Urology Care Foundation. (2020, 12). VAsectomy. From Urology Care Foundation;: https://www.urologyhealth.org/urology-a-z/v/vasectomy

 

Last Updated on April 27, 2023