দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। কোনো মেডিসিন ছাড়া সুস্থ জীবন যাপনের জন্য আমাদের জানা উচিত কোন খাবারে কি ধরনের গুণাগুণ রয়েছে এবং কোন কোন ধরনের খাবার আমাদের প্রতিনিয়ত গ্রহণ করা উচিত।

দৈনন্দিন জীবনের সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং কতিপয় নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সুন্দর ও দীর্ঘ জীবনের পরিকল্পনা করতে পারি আমরা। চলুন দেখে নেয়া যাক কি কি খাবার দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ এবং কেন?

দৈনিক আদর্শ খাদ্য তালিকা

১.আপেল

আপেল

একটি কথা প্রচলিত আছে যে, দৈনিক ১টি করে আপেল খাওয়া আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া থেকে দূরে রাখবে। প্রকৃতপক্ষেই আপেল ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর যা আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। যেমনঃ (Link, 2020)

  • ১টি আপেলের প্রায় ৮৬% হলো পানি এবং রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে
  • হার্ট ভালো রাখে এবং প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়ামের উপস্থিতি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ‌
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা স্তন, কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে
  • Quercetin নামক একটি উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখে
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা (Carbohydrates) রয়েছে তবুও এটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিরাপদ। কারণ আপেল Low glycemic index সমৃদ্ধ খাবার যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না। তবে এটি আইবিএস (IBS- irritable bowel syndrome) এর রোগীদের জন্য পেটে ব্যথা, গ্যাস এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

২.কলা

আপেলের মতোই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার হলো কলা যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। প্রতিদিন একটি আপেল খেতে না পারলে এর পরিবর্তে এক থেকে দুটি কলা খাওয়া যেতে পারে।

৩. ৫ টি বাদামঃ 

দৈনিক ৫টি বাদাম আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাবে এবং মরণব্যাধি রোগ ক্যান্সারের আশঙ্কা কমাবে। বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিংক, ভিটামিন ই, রিবোফ্লাভিন, ফলেট ইত্যাদি রয়েছে।

বাদামের অনেক গুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য হলো চিনা বাদাম। আবার পুষ্টিগুণ বিবেচনায় কাঠবাদাম (Almonds) খাওয়া বেশি উপকারী হবে। যা হোক, আপনার পছন্দমতো যে কোনো একধরনের বাদাম কয়েকটি করে নিয়মিত প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কাঠবাদামের ৩৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

৪. ১টি লেবুঃ 

পাতিলেবু

শরীরের বাড়তি চর্বি হলো গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ গুলোর ক্ষতির মুল কারণ। যেমনঃ হার্ট এবং লিভারের সমস্যা। দৈনিক ১টি লেবু খাওয়া আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়তা করবে। (Coleman, n.d.) সেই সাথে লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। যেমনঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • দ্রুত ক্ষত শুকাতে সহায়তা করে
  • আয়রন শোষণে সহায়তা করে যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে
  • হার্ট ভালো রাখে ইত্যাদি

ভিটামিন সি এর একমাত্র উৎস লেবু নয়, বরং কমল, মাল্টা, আঙ্গুর, পেঁপে, স্ট্রবেরি, টমেটো, আনারস, লিচু ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

৫. ১ গ্লাস দুধঃ

মজবুত হাড় গঠনের জন্য দুধ অপরিহার্য। কারণ, দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস ও ম্যাগ্নেসিয়াম। এছাড়াও আপনার দৈনিক খাদ্য তালিকায় ১ গ্লাস দুধ যোগান দিতে পারে প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালরি, ভিটামিন বি১২ এবং জিঙ্ক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্য উপাদান গুলোর।

তবে অনেকের ক্ষেত্রেই দুধ খেলে পেটে সমস্যা দেখা দেয় বিশেষত যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (Lactose Intolerance) এর সমস্যা রয়েছে। তবে বাজারে ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে হাড়ের যত্নে ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে দুধ ছাড়াও খেতে পারেন কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, কমলা, মিষ্টি আলু, মটরশুটি, ব্রকলি, শালগম ইত্যাদি।

ক্যালসিয়ামে ভরপুর খাবার এবং বিশেষ একটি রেসিপি সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

৬. ৪টি খেজুরঃ

খাবের দৈনিক খাদ্য তালিকা

খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ রয়েছে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে আপনি নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন।‌ যেমনঃ

  • শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ দূর করে
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • হজমে সহায়তা করে থাকে
  • হাড়ের গঠন মজবুত করে
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডেলিভারি প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। (Shubrook, 2021)

৭. ১২ গ্লাস পানিঃ

দৈনিক ১২ গ্লাস তথা ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করলে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থগুলো সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বিশেষ করে কিডনি ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, পানি যেনো অবশ্যই নিরাপদ (Safe) হয়। কারণ দূষিত পানি পান করা নানাবিধ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৮. ব্যায়ামঃ 

সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়াম করা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কারণ ব্যায়াম করার মাধ্যমে ক্যালরি ব্যয় হয় এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সাথে হার্টের রোগ প্রতিরোধ সহ শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়তা করে ব্যায়াম। এছাড়াও দৈনিক সকালের সুন্দর পরিবেশে হাটাহাটি, নিয়ম করে ব্যায়াম অথবা কায়িক পরিশ্রম আপনাকে সকল প্রকার টেনশন এবং উত্তেজনা থেকে দূরে রাখবে।

 

৯. নিয়মিত ঘুমঃ 

নিয়মিত ঘুম

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এতে করে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে নিশ্চিত হবে সতেজতা এবং সুখময় জীবন। উল্লেখ্য ঘুমাতে হবে রাতের বেলায় কারণ রাতে না ঘুমিয়ে দিনের বেলায় ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ,‌‌ নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভ্যাস আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। তবে এর বাইরেও নানাবিধ কারণে অনেক সময় অসুস্থতা ধরে ফেলতে পারে আপনাকে। এমতাবস্থায় রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

References

Coleman, E. (n.d.). high dose vitamin c & weight loss. Retrieved from live strong: https://www.livestrong.com/article/534707-high-dose-vitamin-c-weight-loss/

Link, R. (2020, 7 6). An Apple a Day Keeps the Doctor Away — Fact or Fiction? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/an-apple-a-day-keeps-the-doctor-away

Shubrook, N. (2021, october 6). The health benefits of dates. Retrieved from bbc good food: https://www.bbcgoodfood.com/howto/guide/health-benefits-dates

 

Last Updated on April 16, 2023