বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে লেখাপড়া, ক্যারিয়ার গঠন এবং উন্নত জীবন যাত্রার লক্ষ্যে অনেকেই দেরিতে বিয়ে করেন অথবা বিয়ে করার অনেক সময় পরে বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একজন নারীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যেমন প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে তেমনি সুস্থ-স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মদানের এবং মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।

এই অনুচ্ছেদে আমরা আলোচনা করবো কোন বয়সে গর্ভধারণ করা সবচেয়ে উত্তম এবং সেই সাথে বেশি বয়সে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কি কি জটিলতা হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে বেশি বয়সে গর্ভধারণের জন্য চিকিৎসকের সাথে আপনাকে কি কি বিষয় নিয়ে পরামর্শ করতে হবে সেই বিষয়ক বিশেষ নির্দেশনা এবং গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি মূলক গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস।

Table of Contents

বিভিন্ন বয়সে গর্ভধারণের সফলতার হার

একটি মেয়ে তার জন্মের সময় প্রায় ২ মিলিয়ন অপরিপক্ক ডিম্বকোষ (Oocytes) নিয়ে পৃথিবীতে আসে যা তার সারা জীবনের জন্য নির্দিষ্ট। বিষয়টি অনেকের কাছেই রীতিমতো বিস্ময়কর মনে হলেও এটাই সত্যি যে একজন মেয়ের জন্মের পরে শরীরে নতুন করে কোনো ডিম্বকোষ তৈরি হয় না বরং অপরিপক্ক ডিম্বকোষ গুলো পরিপক্ক হয় মাত্র। গর্ভধারণ বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝতে ডিম্বাণুর জীবনচক্র সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

জন্মের পর থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত এসে মাত্র ৩ থেকে ৪ লাখ ডিম্বকোষ ওভারিতে (Ovary) নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। বাকি সব ডিম্বকোষ শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মারা যায়। বয়ঃসন্ধিকালে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে FSH (Follicle stimulating hormone) নামক হরমোন নিঃসরণ হয় যা ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বাণুকে পরিপক্ক হতে সহায়তা করে। প্রতি মাসে মাত্র একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ওভারি থেকে বের হয় তবে এই‌ সময়ে আরো প্রায় ১ হাজার ডিম্বকোষের মৃত্যু ঘটে। একজন নারীর জীবদ্দশায় সব মিলিয়ে ওভারি থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টির মতো পরিপক্ক ডিম্বাণু বের হয়।

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ওভারিতে ডিম্বকোষের সংখ্যা যেমন হ্রাস পেতে থাকে তেমনি ভাবে পরিপক্ক ডিম্বাণুর গুণগত মান কমে যায় যার ফলে গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা কমতে থাকে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও সফল ভাবে গর্ভধারণ করতে দেখা যায়। কারণ শরীরের সুস্থতা, প্রজনন ক্ষমতা, হরমোনের প্রভাব ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষে গর্ভধারণ করার সক্ষমতা ভিন্নতর হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে কোন বয়সে গর্ভধারণ করতে পারার কতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে তা নির্ণয় করেছেন যা নিচে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:  (Marcin, 2020)

 

বয়সসম্ভাবনা
৩০ বছরের নিচে৮৫ শতাংশ
৩০ বছর৭৫ শতাংশ
৩৫ বছর৬৬ শতাংশ
৪০ বছর৪৪ শতাংশ

 

উল্লেখ্য ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে করা সত্ত্বেও অনেকের ক্ষেত্রেই বিয়ের পরবর্তী ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে বাচ্চা নাও হতে পারে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে বিয়ের সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কোনো প্রকার জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিয়মিত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ফলেও গর্ভধারণ করতে সক্ষম না হলে সেক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (Gynecologist) চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভবতী হওয়ার সঠিক সময় কোনটি?

গর্ভবতী হওয়ার সঠিক সময় কোনটি

আমাদের দেশে সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ ওভারিতে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় এবং তা শুক্রাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ওভারি থেকে বেরিয়ে জরায়ুর দিকে আসতে থাকে। এই সময়ে ভ্রূণ ধারণ করার জন্য জরায়ুর প্রাচীর (Endometrium) পুরু হতে থাকে। তবে যৌন সঙ্গম না করা তথা শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলিত হতে না পারার ফলে পরিপক্ক হওয়া ডিম্বাণুটি মারা যায়। এবং সেই সাথে জরায়ুর প্রাচীর ভেঙে পড়তে থাকে যাকে মাসিক (Menstruation) বলা হয়।

১০ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যেই একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়া তথা পরিপক্ক ডিম্বাণু এবং জরায়ু প্রাচীর তৈরি হতে থাকলেও গর্ভধারণ করার জন্য শরীর উপযুক্ত ভাবে তৈরি হয় না। গর্ভে বাচ্চা ধারণ করে তার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান মায়ের শরীর থেকে সরবরাহ করা এবং প্রসবের পর যথাযথ ভাবে বাচ্চা লালন পালন করতে পারার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বিবেচনা করে ২০ বছর বয়সের পর গর্ভধারণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। আবার ৩০ বছরের পর থেকে একজন নারীর গর্ভধারণের সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর তাই গর্ভধারণের জন্য ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যকার সময়কে  সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিবাহের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিয়মটি মেনে চলার মাধ্যমে যেমন দেশের আইনের প্রতি আনুগত্যতা প্রকাশ পায় তেমনি ভাবে তা সঠিক সময়ে গর্ভধারণের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একজন নারীর ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হলে বিয়ের পরবর্তী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করলে তাতে করে নারীর জন্য গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত বয়স হবে।

নির্দিষ্ট বয়সে গর্ভবতী হওয়ার সুবিধা কী?

সঠিক বয়সে গর্ভধারণ করার অনেক গুলো সুবিধা রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো গর্ভধারণ সক্ষমতা। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে একটি প্রধান সমস্যা হলো গর্ভধারণ অক্ষমতা বা ইনফারটিলিটি (Infertility) যার ফলে অনেক দম্পতি বাচ্চা নিতে পারছেন না।‌ এমনকি নানাবিধ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেও অনেকে বাচ্চা নিতে পারেন না কারণ সব ক্ষেত্রে চিকিৎসা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে গর্ভধারণ সক্ষমতা সবচেয়ে ভালো থাকে। খুব সহজেই এই বয়সে স্বাভাবিক যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে গর্ভবতী (Conceive) হওয়া যায়। কোনো প্রকার চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না।

সঠিক বয়সে গর্ভধারণ করার আরেকটি বিশেষ উপকারিতা হলো এই সময়ে নরমাল ডেলিভারি (Vaginal delivery) হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সেই সাথে গর্ভকালীন সময়ে এবং প্রসব পরবর্তীতে নানাবিধ জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। যেমন:

  • গর্ভপাত (Miscarriage)
  • Ectopic pregnancy
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)
  • Placenta previa
  • এক্লাম্পশিয়া (Eclampsia)
  • ৩৭ সপ্তাহের আগেই বাচ্চা প্রসব করা
  • কম ওজন নিয়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করা ইত্যাদি

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি (Risk of geriatric pregnancy)

৩৫ বছরের পর গর্ভধারণে কি কি ঝুঁকি থাকতে পারে?

জেরিয়াট্রিক (Geriatric) শব্দটি একটি মেডিকেল টার্ম যা দ্বারা বয়স্কদের বোঝানো হয়ে থাকে। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারী গর্ভধারণ করলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থা (Geriatric pregnancy) বলা হয়। সাধারণত জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সঠিক বয়সে গর্ভধারণের নানাবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বেশি বয়সে গর্ভধারণ করা একটি কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশে। তবে এক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। আপনার বয়স যদি ৩৫ বছরের বেশি হয়ে থাকে আর এমন সময়ে আপনি গর্ভধারণ করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তবে জেনে রাখা দরকার যে আপনি নিম্নলিখিত সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন:

১. ইনফারটিলিটি

ইনফারটিলিটি (Infertility) হচ্ছে একটি মেডিকেল টার্ম যা দ্বারা বোঝানো হয় বিয়ের ১ বছর পর পর্যন্ত কোনো প্রকার জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহার ব্যতীত যৌন সঙ্গম করার মাধ্যমে গর্ভধারণ করতে সক্ষম না হওয়া। সাধারণত বেশি বয়সে বিয়ে বা বাচ্চা নিতে চেষ্টা করেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ইনফারটিলিটি বেশি হয়ে থাকে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩৫ বছরের পর একজন মহিলার ওভারিতে ডিম্বকোষের সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি। যদিও গর্ভধারণের জন্য মাত্র একটি পরিপক্ক ডিম্বাণুই যথেষ্ট কিন্তু ডিম্বকোষের সংখ্যা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ডিম্বাণুর গুণগত মানও কমে যায় যা শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করে।

সাধারণত প্রাইমারি ইনফারটিলিটির ১ বছর পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয় তবে ৩৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে অপেক্ষা না করে বরং আগে থেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। উল্লেখ্য বয়স ছাড়াও ইনফারটিলি হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:

২. গর্ভপাত (Miscarriage)

গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়াকে গর্ভপাত (Miscarriage) বলা হয়।‌ অনেক সময় গর্ভপাত ইচ্ছাকৃতভাবে করানো হয়ে থাকে তবে অধিক বয়সে যারা গর্ভধারণ করেন তাদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

৩৫ বছরের পর গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে অন্যতম হলো ডিম্বাণুর গুণগত মান কমে যাওয়া। এছাড়াও এই বয়সের অনেকের ক্ষেত্রেই নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড রোগ ইত্যাদি যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত বা অন্য কোনো স্রাব (Discharge) এবং তলপেটে ব্যথা হলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অতঃপর চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গর্ভপাত হয়েছে কিনা।

৩. মৃতপ্রসব (Stillbirth) 

গর্ভপাতের মতোই আরেকটি বিষয় হলো মৃতপ্রসব (Stillbirth) যার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো অধিক বয়সে গর্ভধারণ করা। গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পর থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর মৃত্যু হলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় মৃতপ্রসব বলা হয়। সাধারণত গর্ভধারণের ১৬-২৪ সপ্তাহ থেকে গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া যায়। মৃত প্রসবের ক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়ার অনুপস্থিতি, পেটে ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে।‌ তবে এমতাবস্থায় আতংকিত না হয়ে প্রথমত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্টেথস্কোপ এর সাহায্যে অথবা প্রয়োজনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে গর্ভের শিশুটি মারা গেছে কিনা। যদি মারা যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহায়তায় তা ডেলিভারি করাতে হবে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে আপনাআপনি ডেলিভারি হতে পারে। গর্ভকালীন কত সপ্তাহে শিশুর মৃত্যু হলো তার উপর ভিত্তি করে মৃতপ্রসবের তিনটি শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। যেমন:

  • Early stillbirth:  ২০ থেকে ২৭ সপ্তাহ
  • Late stillbirth:  ২৮ থেকে ৩৬ সপ্তাহ
  • Term stillbirth:  ৩৭ সপ্তাহের পর

৪. ক্রোমোজম ঘটিত ঝুঁকি (Down Syndrome Baby)

Down syndrome হলো একধরনের ক্রোমোজম ঘটিত রোগ যেখানে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্ত হয়। এই রোগ নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করলে তার কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা করা যায় না। অর্থাৎ এই রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভাবে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দুরারোগ্য এই রোগটি প্রতি ১৮৪০ টি গর্ভধারণের মধ্যে মাত্র ১ টিতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যদি গর্ভবতী মায়ের বয়স ২০ হয়। তবে ৩৫ বছরের বেশি বা ৪০ বছরের মায়েদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ৮৫ জনে ১ জন। অর্থাৎ অধিক বয়সে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এই রোগ নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৫. ঝুঁকিপূর্ণ জমজ বাচ্চা

একই সাথে দুটি বাচ্চা গর্ভধারণ এবং প্রসব করা হলে তাদেরকে জমজ বাচ্চা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের Office on Women’s Health এর তথ্য অনুযায়ী ৩০ বা তার অধিক বয়সে যারা গর্ভধারণ করেন তাদের ক্ষেত্রে জমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। (Sissons, 2019) এমনিতেই অধিক বয়সে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তার উপরে যদি সেটা হয় জমজ বাচ্চা সেক্ষেত্রে আরো কিছু জটিলতর সমস্যা হতে পারে। যেমন:

  • ৪০ সপ্তাহের আগেই প্রসব হতে পারে
  • বাচ্চা কম ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে
  • বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে
  • গর্ভবতী মায়ের এক্লাম্পশিয়া (Eclampsia) বা প্রিএক্লাম্পশিয়া (Preeclampsia) হতে পারে
  • গর্ভবতীর শরীরে রক্তস্বল্পতা (Anemia) ইত্যাদি

৬. গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি (Risk of gestational diabetes)

পূর্বে থেকে ডায়াবেটিস নেই এমন নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) বলা হয়।‌ যারা ৩৫ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ করেন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। আর গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ফলে গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension), প্রিএক্লাম্পশিয়া ইত্যাদি হতে পারে। এবং সেই সাথে বাচ্চার আকার বড় হয় বলে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও জন্ম গ্রহণ করা বাচ্চার ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যা হতে পারে তা হলো:

  • শ্বাসকষ্ট (Breathing difficulties)
  • অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করা
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ইত্যাদি

গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ, চোখে ঝাঁপসা দৃষ্টি, ছত্রাকের সংক্রমণ, ঘন ঘন তৃষ্ণা ও প্রস্রাবের বেগ হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে রক্তে ব্লাড সুগারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখবেন যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রসবের পর ঠিক হয়ে যায় তবে পরবর্তীতে আবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. উচ্চ রক্তচাপ

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তৈরি হয়।‌ গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে মারাত্মক যে সমস্যাটি হয় তা হলো  প্রিএক্লাম্পশিয়া (Preeclampsia) যার লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় হাত ও পা ফুলে যাওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। প্রিএক্লাম্পশিয়ার জটিলতা হিসেবে মায়ের ক্ষেত্রে খিঁচুনি, কিডনির সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি হতে পারে। পক্ষান্তরে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটে থাকে। যার ফলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ঠিকমতো ওজন বাড়ে না এবং গর্ভকালীন সময় শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চা প্রসব হতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের আরেকটি প্রধান সমস্যা হলো এই সময়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সব ধরনের ওষুধ খাওয়া নিরাপদ নয়।‌ কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে যা গর্ভস্থ শিশুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে যেমন:

  • ACE inhibitors
  • Renin inhibitors
  • Angiotensin receptor blockers

তবে কিছু কিছু ওষুধ (Methyldopa, labetalol) আবার নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আপনার বেলায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কোন ওষুধটি সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরী হবে তা জানতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ওষুধ ছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

৮. অন্যান্য ঝুঁকি

উপরে উল্লেখিত সমস্যা গুলো ছাড়াও ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে আরো যে সমস্ত সমস্যা হতে পারে তা হলো-

  • কম ওজন নিয়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করা যা উপরে উল্লেখিত সমস্যা গুলোর ফলে যেমন হতে পারে আবার উল্লেখিত সমস্যা ছাড়াও হতে পারে
  • Placenta previa নামক একটি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে যার ফলে প্রসবের সময় নানাবিধ জটিলতা এবং সেই সাথে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে
  • বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে। যেখানে ২০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় মাত্র ২৬ শতাংশ সেখানে ৩৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশ এবং ৪০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে তা ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার সুবিধা

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার সুবিধা

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার সুবিধা

সাধারণত জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে যা উপরের আলোচনায় তুলে ধরা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন: (Brusie, 2016)

  • সাধারণত যারা উন্নত জীবন যাত্রার লক্ষ্যে দেরিতে বাচ্চা নেন তাদের ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকার ফলে বাচ্চার যত্ন এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেন
  • বেশি বয়সের সাথে সাথে শিক্ষা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি হতে থাকে যা ভালো ভাবে সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে

উল্লেখ্য মহিলাদের মতো পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে। যদিও মহিলাদের মতো পুরুষদের দেহে শুক্রাণুর সংখ্যা জন্মের পর থেকে সুনির্দিষ্ট নয়।‌ বরং ক্রমাগত অন্ডকোষের (Testicles) মধ্যে শুক্রাণু উৎপাদন হতে থাকে। তবে সাধারণত ৪০ বছরের পর পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদন এবং সেই সাথে শুক্রাণুর গুণাগুণ মান কমে যায়।

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি এড়াতে করণীয় বিষয়াবলী

জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে কিন্তু যারা আগে থেকে বাচ্চা নেয়নি তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি উপেক্ষা করে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হয়। আর তাই এই পর্যায়ে জেরিয়াট্রিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে এমন কিছু দিক নির্দেশনা হলো- (Watson, 2018)

  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা জরুরী
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ইত্যাদি

বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে গেলে ডাক্তারের সাথে কি কি বিষয়ে পরামর্শ করা জরুরী?

যে কোনো বয়সেই বাচ্চা নেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর মাধ্যমে নিরাপদ গর্ভধারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তবে আমাদের দেশে সাধারণত মানুষ বাচ্চা নেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু যারা বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে চিকিৎসক গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক নারীর বংশগত ইতিহাস জানা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে শরীরের অবস্থা বুঝে সেই মোতাবেক দিক নির্দেশনা দেন যা মেনে চলার মাধ্যমে গর্ভধারণ নিরাপদ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পর নিজে থেকে চিকিৎসকের কাছে কি বলতে হবে সেই বিষয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান।‌ আর তাই এই পর্যায়ে আপনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কি ধরনের পরামর্শ চাইতে পারেন সেই বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হলো।

  • কিভাবে প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানো যায়?
  • জীবন যাপন পদ্ধতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে?
  • কখন সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে?
  • কি ধরণের ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত?
  • গর্ভকালীন সময়ে সহবাসের জন্য নির্দেশনা কেমন?
  • কি কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো লাগবে?
  • যদি কখনো কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে করণীয় কি?

বেশি বয়সে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়গুলো ভাবা উচিত?

বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে নজর রাখতে হয় যেহেতু এই সময়ে নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেক্ষেত্রে একমাত্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই সেই ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হয়। তাই এই সময়ে আরো যে সমস্ত বিষয় গুলো নিয়ে ভাবা উচিত তা হলো-

  • যদি আগে থেকেই থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকে তবে তা বিবেচনায় এনে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে পরে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে হবে
  • থাইরয়েডের সমস্যার মতো যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে সেক্ষেত্রেও আগে থেকেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
  • রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে হবে এবং জরুরি প্রয়োজনে যেনো রক্ত দেওয়ার মতো লোক পাওয়া যায় সেই জন্য আগে থেকেই ব্লাড ডোনার ঠিক করে রাখতে হবে

গর্ভধারণের জন্য টিপস (Tips for conception)

গর্ভধারণের জন্য টিপস

৩৫ বছরের পর গর্ভধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে কিন্তু আপনি যদি আগে থেকে বাচ্চা নিয়ে না থাকেন তবে কিভাবে এই বয়সে আপনার গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন সেই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস-

  • ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে থাকুন। প্রয়োজনে ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন
  • চা ও কফি পানের অভ্যাস কমাতে হবে। কারণ চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন গর্ভধারণ সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে
  • সহবাসের সময় কৃত্রিম লুব্রিকেন্ট (sex lubricants) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ তা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে
  • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।‌ সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন

অনেকেই মনে করেন গর্ভধারণ করার জন্য সহবাসের পর নারী সঙ্গীর জন্য বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে এই ধরনের মতবাদের কোনো ভিত্তি নেই। তবে গর্ভধারণের জন্য আপনি কোন সময়ে (Timing) সহবাস করছেন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়ে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

মাসিকের কতদিন পরে সহবাস করলে সন্তান হয়? (মেয়েদের ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়)

এখন প্রশ্ন হলো আপনি কিভাবে বুঝবেন যে কখন ডিম্বাণু নিঃসরণ হবে?

সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে গণনা শুরু করে ১৪তম দিনের বেলায় ওভারি থেকে পরিপক্ক ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় যা শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণ উৎপাদন করতে পারে। আর‌ তাই এই ১৪তম দিনে সহবাস করলে গর্ভধারণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে ডিম্বাণু নিঃসরণ হওয়ার পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। অপরদিকে শুক্রাণু সর্বোচ্চ ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।‌ আর তাই ১৪ তম দিনের পূর্ববর্তী ৫ দিন এবং ১৫তম দিনে সহবাস করার ক্ষেত্রেও গর্ভধারণের সম্ভাবনা রয়েছে।

কোন সময়টা গর্ভধারণের শেষ বয়স?

গর্ভধারণের শেষ বয়স বলতে মহিলাদের মেনোপজকে (Menopause) বোঝানো হয়ে থাকে। মূলত মহিলাদের ওভারি থেকে যখন কোনো ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না তখন সেই সাথে জরায়ুর প্রাচীর আর পুরু হয় না। তাই জরায়ুর প্রাচীর ভেঙে মাসিক হওয়ার বিষয়টি আর থাকে না। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে একজন মহিলার মেনোপজ হয় তথা গর্ভধারণ করার সক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে আরো দেরিতে মেনোপজ হতে পারে। আবার কারো ক্ষেত্রে মেনোপজের লক্ষণ অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হওয়ার কিছুদিন পরে আবারো মাসিক হতে দেখা যায়। এটি স্বাভাবিক কারণ মেনোপজের আগে আগে এমন অনিয়মিত ভাবে মাসিক হতে পারে যা দেখে অনেকেই মনে করেন যে তার মেনোপজ হয়েছে।

নিজে গর্ভধারণ করতে না পারলে, আর কি কি উপায় আছে পরিবার বাড়ানোর?

অধিক বয়সে গর্ভধারণ করার সক্ষমতা কম থাকে আবার গর্ভধারণ করলেও নানাবিধ জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অনেকেই হয়তোবা মেনোপজে পৌঁছে গেছেন অর্থাৎ গর্ভধারণ করার সক্ষমতা আর নেই। এমতাবস্থায় গর্ভধারণ ব্যতীত পরিবার বাড়ানোর বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে করণীয় বিষয়াবলী হলো:

সন্তান দত্তক নেওয়া

বিষয়টি আমাদের সমাজে অহরহ হয়ে থাকে। আপনার যদি বাচ্চা না হয় কিন্তু সন্তান পালনের প্রচন্ড ইচ্ছা থাকে তবে নিকটাত্মীয় বা অন্য কোনো দম্পতির কাছ থেকে ছোট অবস্থাতেই সন্তান দত্তক নিতে পারেন। আমাদের দেশে দরিদ্র অনেক পরিবার রয়েছে যারা সন্তান দত্তক দিতে আগ্রহী হয়ে থাকে।

Surrogacy এবং IVF

এছাড়াও বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে গর্ভ ভাড়া (Surrogacy) সহ আরো কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা বাংলাদেশে তেমন প্রচলিত না। তবে আপনি নিজে যদি গর্ভধারণ করতে সক্ষম হন কিন্তু আপনার পুরুষ সঙ্গীর শুক্রাণুর সমস্যার দরুন গর্ভধারণ করতে পারছেন‌ না এমন সমস্যা সমাধানে রয়েছে IVF (In vitro fertilization) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আপনার ডিম্বাণু এবং অন্য কোনো ডোনারের শুক্রাণু মানব দেহের বাইরে নিষিক্ত করে পরবর্তীতে আপনার জরায়ুতে স্থাপন করা হবে যেখানে শিশুটি বেড়ে উঠবে এবং পরবর্তীতে প্রসবের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করবে। এটি একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি এবং বেশ ব্যয়বহুল।

আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে অধিক বয়সে গর্ভধারণ করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করলে তা সবচেয়ে নিরাপদ হবে। তবে আপনার বয়স যদি ৩৫ বছরের বেশি হয় আর এমতাবস্থায় আপনি বাচ্চা নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

 

 

References

Brusie, C. (2016, November 23). The Risks of Geriatric Pregnancy: After Age 35. Retrieved from Healthline: www.healthline.com/health/pregnancy/geriatric-pregnancy

Marcin, A. (2020, July 31). Am I Too Old to Have Kids? What to Know About Fertility and Aging. Retrieved from Healthline: www.healthline.com/health/pregnancy/how-old-is-too-old-to-have-a-baby#success-by-age

Sissons, C. (2019, February 14). What increases the odds of having twins? Retrieved from Medical News Today: www.medicalnewstoday.com/articles

Watson, S. (2018, June 6). When Can You Get Pregnant and What’s the Best Age to Have a Baby? Retrieved from Healthline: www.healthline.com/health/womens-health/childbearing-age

Last Updated on April 15, 2023