খাবারের ৭টি উপাদানের মধ্যকার একটি হলো প্রোটিন যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। প্রোটিনের গাঠনিক উপাদান হলো অ্যামিনো অ্যাসিড যা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

  • এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড (Essential amino acids) যার সংখ্যা হলো ৯টি। 
  • নন-এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড (Nonessential amino acids) যার সংখ্যা হলো ১১টি। 

সবগুলো এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে এমন প্রোটিনকে কমপ্লিট প্রোটিন বলা হয়। কমপ্লিট প্রোটিন অনেকের কাছেই নতুন শব্দ মনে হতে পারে। এই অনুচ্ছেদে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড এবং কমপ্লিট প্রোটিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড কি?

শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন হয় যার মধ্যকার ৯টি হলো এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড। 

এসেনশিয়াল (Essential) শব্দের অর্থ হলো অপরিহার্য‌ বা আবশ্যকীয়। এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে উৎপন্ন হতে পারে না। শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। 

পক্ষান্তরে নন-এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড খাবার থেকে গ্রহণ করা আবশ্যক নয়। কারণ তা শরীরে উৎপন্ন হতে পারে।

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের তালিকা

সুস্থ শরীরের ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের সংখ্যা হলো ৯টি যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ  

১। ফিনাইল অ্যালানিন (Phenylalanine)

২। ভ্যালিন (Valine)

৩। থ্রিওনাইন (Threonine) 

৪। ট্রিপ্টোফ্যান (Tryptophan) 

৫। মেথিওনিন (Methionine)  

৬। লিউসিন (Leucine)

৭। আইসোলিউসিন (Isoleucine) 

৮। লাইসিন (Lysine) 

৯। হিস্টিডিন (Histidine)  

নন-এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড হলো অ্যালানিন (Alanine), আরজিনিন (Arginine), অ্যাসপারাজিন (Asparagine), অ্যাসপারটিক অ্যাসিড (Aspartic acid), সিস্টিন (Cysteine), গ্লুটামিক অ্যাসিড (Glutamic acid), গ্লুটামিন (Glutamine), গ্লাইসিন (Glycine), প্রোলিন (Proline), সেরিন (Serine), টাইরোসিন (Tyrosine) ইত্যাদি।

কতিপয় নন-এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডকে কন্ডিশনাল এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড বলা হয়। অর্থাৎ এগুলো বিশেষ পরিস্থিতিতে (অসুস্থতা ও গর্ভকালীন অবস্থা) এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো আচরণ করে। যেমনঃ আরজিনিন ও গ্লাইসিন। (Kubala, 2023)

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে তথা নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা বয়ে আনে যা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Cleveland Clinic, 2021)

হিস্টিডিন

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম, পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম বা খাবার হজম প্রক্রিয়া, ঘুম ও যৌন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হিস্টিডিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নার্ভ সেল বা স্নায়ুকোষের গঠন ঠিক রাখার ক্ষেত্রে হিস্টিডিনের অবদান রয়েছে।

আইসোলিউসিন 

পেশীর গঠন ঠিক রাখা এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

লিউসিন 

শরীরে প্রোটিন গঠন এবং গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও মাংসপেশীর গঠন ও ক্ষয়পূরণ সহ ক্ষতস্থান শুকানো এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

লাইসিন 

শরীরে প্রোটিন গঠন সহ বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইম উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।‌ এছাড়াও শরীরে শক্তি উৎপাদন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্যালসিয়াম শোষণ এবং ত্বক, নখ ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার সাথে সম্পর্কিত।  

মেথিওনিন 

মেটাবলিসম বা বিপাক প্রক্রিয়া এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও টিস্যুর গঠন এবং শরীরে মিনারেলস (জিংক ও সেলেনিয়াম) শোষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ফিনাইল অ্যালানিন 

নিউরোট্রান্সমিটার (ডোপামিন, এপিনেফ্রিন ও নরএপিনেফ্রিন) উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।‌ এছাড়াও নন-এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড ও এনজাইম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

থ্রিওনাইন 

ত্বক, নখ‌ ও চুল ভালো রাখা সহ ফ্যাট জাতীয় খাবার মেটাবলিসম এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কেটে যাওয়া স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। 

ট্রিপ্টোফ্যান 

শরীরে নাইট্রোজেনের মাত্রা বা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ঘুম, ক্ষুধা ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ভ্যালিন

শরীরের মাংসপেশীর গঠন, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত। 

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা 

শরীরের প্রতি কেজি ওজনের অনুপাতে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের দৈনিক চাহিদা (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত) হলোঃ (Kubala, 2023)

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের নামদৈনিক চাহিদার পরিমাণ
ফিনাইল অ্যালানিন২৫ মিলিগ্রাম
ভ্যালিন২৬ মিলিগ্রাম
থ্রিওনাইন১৫ মিলিগ্রাম
ট্রিপ্টোফ্যান৪ মিলিগ্রাম
মেথিওনিন১০.৪ মিলিগ্রাম
লিউসিন৩৯ মিলিগ্রাম
আইসোলিউসিন২০ মিলিগ্রাম
লাইসিন৩০ মিলিগ্রাম
হিস্টিডিন১০ মিলিগ্রাম 

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতা দূর করা, ব্যায়ামের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি এবং সার্জারি পরবর্তীতে ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। (Kubala, 2023) 

তবে সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শরীরে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা মেটানোর জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না।‌ শুধুমাত্র জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড এর খাদ্য উৎস 

sourch of amino acids

প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের উৎস। যেসব খাবার ৯টি এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেগুলোকে কমপ্লিট প্রোটিন বলা হয়। যেমনঃ

  • ডিম
  • মাছ 
  • মুরগির মাংস
  • গরুর মাংস 
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার 
  • সামুদ্রিক খাবার 
  • টফু (Tofu)

কোনো খাবারে ৯টি এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের কোনো একটির ঘাটতি থাকলেও তাকে কমপ্লিট প্রোটিন বলা যায় না। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারগুলো হলো ইনকমপ্লিট প্রোটিন। যেমনঃ 

  • ডাল
  • বাদাম 
  • মটরশুটি
  • শিমের বিচি 
  • শাকসবজি 

নিরামিষাশী (যারা প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার বর্জন করেন) তাদের ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হবে। কারণ একেকটি খাবারে একেক ধরনের এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি রয়েছে। তবে সবগুলো খাবার একইধরনের এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি সম্পন্ন তা নয়।‌

নিরামিষাশীদের জন্য একটি কমপ্লিট প্রোটিন হতে পারে টফু যা উদ্ভিজ্জ উৎস (সয়াবিন) থেকে প্রাপ্ত।

শেষ কথা

এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। যেমনঃ মাংসপেশীর গঠন ঠিক রাখা এবং শক্তি উৎপাদন, হজম ও বিপাক প্রক্রিয়া, টিস্যুর গঠন, হরমোন ও এনজাইম তৈরি, নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ঘুম ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ, যৌন ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা, ত্বক ও চুল ভালো রাখা ইত্যাদি। 

শরীরের এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা মেটানোর জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তবে খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমনঃ ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক খাবার, ডাল, বাদাম, মটরশুটি, শিমের বিচি, টফু ইত্যাদি।   

সহজলভ্য চীনাবাদামের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।  

Bibliography

Cleveland Clinic. (2021, 12 22). Amino Acids. Retrieved from Cleveland Clinic: https://my.clevelandclinic.org/health/articles/22243-amino-acids

Kubala, J. (2023, August 07). Essential Amino Acids: Definition, Benefits, and Food Sources. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/essential-amino-acids

Last Updated on January 2, 2024