বাদাম (Nuts) খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার যা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। বাদামকে সুপার ফুড বলা হয় কারণ এটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার এবং স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে। বাদামের অনেকগুলো ধরন রয়েছে এবং ধরনভেদে স্বাদ, ফ্লেভার ও পুষ্টিগুণের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। প্রায় সবধরনের বাদাম আমাদের দেশে কিনতে পাওয়া যায়।
এই অনুচ্ছেদে বাদামের ৬টি ধরন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাদামের পুষ্টিগুণ, ক্যালরির পরিমাণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
১. আলমন্ড
৩০ গ্রাম আলমন্ড (Almond) বা কাঠবাদাম থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা হলোঃ (Torrens, 2023)
- ১৮৪ ক্যালরি
- ৬.৩ গ্রাম প্রোটিন
- ১৬.৭ গ্রাম ফ্যাট
- ২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ২.২ গ্রাম ফাইবার
- ৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- ৮১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
- ৭.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই
- ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট
এছাড়াও কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা সমূহ-
- অন্য সবধরনের বাদামের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে।
- বাদামে থাকা ফ্যাট উপকারী ধরনের (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে পেটের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
- ভিটামিন ই ও এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ফলেট গর্ভবতী নারীদের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান যা গর্ভস্থ সন্তানের স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২. পেস্তা বাদাম
পেস্তা বাদাম (Pistachios) সবচেয়ে কম ফ্যাট ও ক্যালরি সমৃদ্ধ (অন্যান্য সবধরনের বাদামের তুলনায়) যার ৩০ গ্রামে উল্লেখিত পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
- ১৬৯ ক্যালরি
- ৬.১ গ্রাম প্রোটিন
- ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট
- ৫.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ৩.১ গ্রাম ফাইবার
- ৩০৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ১.১৮ মিলিগ্রাম আয়রন
- ১.৩৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই
- দৈনিক চাহিদার ৩০ শতাংশ ভিটামিন বি৬
অন্য সবধরনের বাদামের তুলনায় পেস্তা বাদামে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পেস্তা বাদামে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায় এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পেস্তা বাদামে ভিটামিন বি৬ রয়েছে যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম ভালো রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে পেস্তা বাদাম খুব উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. আখরোট
৩০ গ্রাম আখরোটের (Walnuts) পুষ্টিগুণ-
- ২০৬ ক্যালরি
- ৪.৪ গ্রাম প্রোটিন
- ২০.৬ গ্রাম ফ্যাট
- ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১.৪ গ্রাম ফাইবার
- ১৩৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ১.১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই
- ২০ মাইক্রোগ্রাম ফলেট
এছাড়াও দৈনিক চাহিদার ৫০ শতাংশ কপার ও ৪৫ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। আখরোট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা-
- প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আখরোট নিরামিষাশী ব্যক্তিদের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো উৎস হতে পারে।
- আখরোটে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ফলেট সমৃদ্ধ যা গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- আখরোট থেকে দৈনিক চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কপার পাওয়া যায় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিনারেল। কপার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্তনালী সুস্থ রাখা ও এনজাইম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১ থেকে ২ আউন্স (২৮ থেকে ৫৭ গ্রাম) আখরোট খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে এবং হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়ার প্রবণতা) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হয়। (Robertson, 2023)
৪. কাজু বাদাম
স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হলো কাজু বাদাম (Cashews) যা ভিটামিন কে ও মিনারেল সমৃদ্ধ। প্রতি ৩০ গ্রাম কাজু বাদাম থেকে উল্লেখিত পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়।
- ১৭২ ক্যালরি
- ৫.৩ গ্রাম প্রোটিন
- ১৪.৫ গ্রাম ফ্যাট
- ৫.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১.৩ গ্রাম ফাইবার
- ৮১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
- ১.৮৬ মিলিগ্রাম আয়রন
- ১.৭৭ মিলিগ্রাম জিংক
- দৈনিক চাহিদার ৯% ভিটামিন কে
কাজু বাদামের উপকারিতা সমূহ-
- নিরামিষাশী ব্যক্তিদের জন্য জিংক ও আয়রনের একটি ভালো উৎস হতে পারে।
- ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- কাজু বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
- ভিটামিন কে রয়েছে যা শরীরের কেটে যাওয়া স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
- ব্লাড প্রেসার ও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. পেকান
পেকান (Pecans) বাদামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে একটি হলো যৌন হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা।
প্রতি ৩০ গ্রাম পেকান থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা হলোঃ
- ২০৭ ক্যালরি
- ২.৮ গ্রাম প্রোটিন
- ২১ গ্রাম ফ্যাট
- ১.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১.৯ গ্রাম ফাইবার
- ১.৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ১.৫৯ মিলিগ্রাম জিংক
- দৈনিক চাহিদার ৫০% ম্যাঙ্গানিজ
পেকান খাওয়ার উপকারিতা সমূহ-
- হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়
- ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে
- শরীরের রোগ ক্ষমতা বাড়ায়
- বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে
- ডিএনএ তৈরিতে অংশগ্রহণ করে
৬. চীনা বাদাম
বাদামের সবচেয়ে সহজলভ্য ধরনটি হলো চীনাবাদাম (Peanut) যা আমাদের দেশের সর্বোত্র কিনতে পাওয়া যায়। চীনা বাদামের (৩০ গ্রাম) পুষ্টিগুণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- ১৭১ ক্যালরি
- ১৪ গ্রাম ফ্যাট
- ৭ গ্রাম প্রোটিন
- ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ২.৫ গ্রাম ফাইবার
- দৈনিক চাহিদার ২৪% নিয়াসিন
- দৈনিক চাহিদার ১৮% ফলেট
- দৈনিক চাহিদার ১২.৭ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম
এছাড়াও খুব সামান্য পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। নিয়মিত চীনা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস যেসব উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা হলোঃ
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
- যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
বাদাম খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খাওয়া হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য খাবারের (সালাদ বা মিষ্টান্ন) সাথে যোগ করেও খাওয়া যেতে পারে।
ভাজা বা কাঁচা যেকোনো অবস্থায় বাদাম খেতে পারেন। তবে কাঁচা খাওয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে। কারণ আগুনের তাপে কিছু পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
রাতে পানিতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া যেতে পারে। ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে কিছুটা বেশি উপকারিতা আশা করা যায়।
প্রতিদিন একমুঠো যেকোনো একধরনের বাদাম অথবা সবধরনের বাদামের মিশ্রণ খেতে হবে। তবে দিনে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রামের বেশি বাদাম খাওয়া উচিত হবে না।
বাদাম খাওয়ার ফলে কারো ক্ষেত্রে এলার্জি দেখা দিলে তাদের জন্য বাদাম এড়িয়ে চলতে হবে। এলার্জির লক্ষণ হলো ত্বকে র্যাশ হওয়া, চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
শেষ কথা
বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার এবং নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখতে হবে তবে অবশ্যই তা যেন অতিরিক্ত মাত্রায় না হয়।
বাদামের বিভিন্ন ধরন রয়েছে তবে আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো একধরনের বা সবধরনের বাদাম একসাথে (বাজারে সবধরনের বাদাম একসাথে মিশ্রণ হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়) খেতে পারেন।
References
Robertson, R. (2023, February 23). The Top 9 Nuts to Eat for Better Health. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/9-healthy-nuts
Torrens, K. (2023, March 30). Top 10 healthiest nuts. Retrieved from BBC good food: https://www.bbcgoodfood.com/howto/guide/top-10-healthiest-nuts
Last Updated on January 2, 2024
Leave A Comment