চুলের যত্নে রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের তুলনায় প্রাকৃতিক গুণাবলী সম্পন্ন উপাদান ব্যবহার করা উত্তম। কারণ প্রাকৃতিক উপাদান বেশ সহজলভ্য হয়ে থাকে এবং ব্যবহারের ফলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আমলকী (আমলা নামেও পরিচিত) একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনতে পারে।
এই অনুচ্ছেদে চুলের যত্নে আমলকীর উপকারিতা সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ তথ্য, চুলে আমলকী ব্যবহারের নিয়ম এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
আমলা বা আমলকী কি?
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica যা ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি ফল। ইংরেজিতে Amla বা Indian gooseberry নামে পরিচিত এই ফলটি আমাদের দেশেই জন্মে থাকে।
আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুত করতে কাঁচামাল হিসেবে আমলকী ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কাঁচা আমলকী চিবিয়ে খাওয়া যায় যা শরীরের জন্য খুব উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
যেমনঃ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অরুচি ও পেটের সমস্যা দূর করে, বমি বমি ভাব কমায় এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আমলকি কিভাবে চুলের উপকার করতে পারে?
আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অভ্যাস চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বাহ্যিকভাবে চুলে আমলকী ব্যবহারের মাধ্যমে যেসব উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। (Vij, 2018)
- খুশকি (Dandruff) খুব কমন একটি সমস্যা যা অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাথার ত্বকে আমলকী ব্যবহার করা হলে তা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের সঠিক বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- অকালে চুল পেকে যাওয়া সৌন্দর্য হানিকর একটি বিষয়। চুলের অকাল-পক্কতা প্রতিরোধের জন্য আমলকী খাওয়া এবং বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- নিয়মিত আমলকী ব্যবহার করার ফলে চুলের পুরুত্ব বেড়ে যায় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। যার ফলে সহজেই চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
- আমলকী ব্যবহার চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে উজ্জ্বল ও ঝলমলে করে তোলে।
- বাহ্যিকভাবে মাথায় আমলকী ব্যবহার উকুন দূর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
গবেষণা কি বলে?
চুলে বাহ্যিকভাবে আমলকী ব্যবহারের কার্যকারিতা নিয়ে খুব বেশি সংখ্যক গবেষণা হয়নি। তবে যতগুলো গবেষণা হয়েছে তাতে কিছু উপকারিতা লক্ষ্য করা গেছে। যেমনঃ
- আমলকী ব্যবহার চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
- যাদের অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
- খুশকি দূর করে, মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার উকুন দূর করার ক্ষেত্রে আমলকী বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। (Watson, 2019)
আমলকী একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা নিরাপদ এবং বেশ সহজলভ্য। আমাদের দেশেই আমলকী গাছ জন্মে এবং খুব সহজেই বাজারে আমলকী কিনতে পাওয়া যায়। কাঁচা আমলকীর দামও বেশ সস্তা।
বাজারে পাওয়া বিভিন্ন তেল বা চুলের প্রসাধনী সামগ্রী আমলকীর গুণাবলী সম্পন্ন হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আমলকী যে চুলের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
এছাড়াও চুলের যত্নে আমরা সবাই বাহ্যিকভাবে প্রায়ই বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে থাকি। তাহলে এতো উপকারী আর সহজলভ্য একটি প্রাকৃতিক উপাদান (আমলকী) বাদ যাবে কেন?
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকি
আমলকী খুব নিরাপদ প্রকৃতির একটি ফল যা খাওয়ার তেমন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে একবারে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। কারণ কোনো খাবার বা ফল অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ভালো নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ৭৫ থেকে ৯০ গ্রামের বেশি আমলকী খাওয়া উচিত হবে না।
ছোট বাচ্চা, গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য আমলকী খাওয়া নিরাপদ। তবে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও আমলকী খেতে পারেন।
মাথার ত্বক ও চুলে বাহ্যিকভাবে আমলকী ব্যবহারের ফলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
মাথায় আমলকী হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করার ফলে এলার্জির লক্ষণ (চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, র্যাশ হওয়া ইত্যাদি) দেখা দিলে সাথে সাথে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে এবং পরবর্তীতে আমলকী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে আমলকী ব্যবহারের ফলে এলার্জি হওয়া একটি বিরল ঘটনা।
গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য মাথায় আমলকী ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে গাইনী ডাক্তার বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম হবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।
কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন?
বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাথায় আমলকী ব্যবহার করা যায়। কাঁচা আমলকী সংগ্রহ করে সেগুলো পিষে পেস্ট বানিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমলকী পেস্টের সাথে লেবুর রস যোগ করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বাজারে আমলকীর শুকনো গুঁড়া (পাউডার) কিনতে পাওয়া যায় যা নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মেহেদী পাতা বেঁটে পেস্ট বানিয়ে অথবা ডিমের সাদা অংশের সাথে আমলকী গুঁড়া (গুঁড়ার পরিবর্তে কাঁচা আমলকী পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে) ব্যবহার করলে মাথার ত্বক ও চুলের জন্য উপকার পাওয়া যাবে।
হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের ৩০ মিনিট পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন দিন আমলকী দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। এর বেশি ব্যবহার করা উচিত হবে না।
বাজারে আমলকীর গুণাবলী সম্পন্ন তেল কিনতে পাওয়া যায় যা নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের জন্য উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
Bibliography
Vij, A. (2018, July 13). 12 Benefits Of Amla (Indian Gooseberry) For The Hair. Retrieved from NDTV: https://food.ndtv.com/food-drinks/12-benefits-of-amla-indian-gooseberry-for-the-hair-1738132
Watson, K. (2019, March 08). Can You Use Amla Powder for Hair Health? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/amla-powder-for-hair
Last Updated on December 20, 2023
Leave A Comment