পুরুষের ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই অনুচ্ছেদে এমনি ৫ টি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তো চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই অনুচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে আপনি কি কি শিখতে পারবেন?

  • প্রস্টেট গ্রন্থির (Prostate gland) সমস্যা প্রতিরোধে আপনাকে কি কি করতে হবে?
  • যৌন হরমোন বা টেস্টোস্টেরন (Testosterone) এর উৎপাদন বৃদ্ধি করার কার্যকরী উপায় সমূহ
  • আরথ্রাইটিস (Arthritis) বা জয়েন্টের সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধ
  • রক্তে কোলেস্টেরল (Cholesterol) এর পরিমাণ স্বাভাবিক কিনা তা টেস্টের রিপোর্ট দেখে বোঝা
  • বয়সের সাথে স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার যোগসূত্র এবং এই সমস্যা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়াবলী

পুরুষের ৫টি স্বাস্থ্য সমস্যা

পুরুষের প্রস্টেট সমস্যা

পুরুষের প্রস্টেট সমস্যা

প্রস্টেট গ্রন্থি (Prostate gland) শুধুমাত্র পুরুষের শরীরে থাকে যার মূল কাজ হলো বীর্য (Semen) উৎপাদন করা। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রস্টেট গ্রন্থিতে দুইটি জটিল সমস্যা বা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে যার মধ্যকার একটি হলো প্রস্টেট গ্রন্থি অস্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে যাওয়া যাকে মেডিকেলের ভাষায় BPH (Benign prostatic hyperplasia বলা হয়।

আর অন্যটি হলো প্রস্টেট ক্যান্সার (Prostate cancer) যা একসময়ে রক্ত ও লসিকা তন্ত্রের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর প্রতি ৯ জন পুরুষের মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। (Brick, 2019)

আশার কথা হলো এই যে BPH এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে অনেকটাই সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হয়। তবে এর জন্য প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। প্রস্টেট গ্রন্থির অবস্থান তলপেটে মূত্রথলির ঠিক নিচে যা মূত্রনালীকে ঘিরে থাকে। আর তাই BPH ও প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অনেকটাই প্রস্রাব নিঃসরণের সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়
  • প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বোধ
  • প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হওয়া
  • প্রস্রাব শেষ করার‌ পরেও ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব নির্গত হওয়া
  • লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা বা ED (erectile dysfunction)
  • বীর্যপাতের সময় ব্যথা হয়
  • বীর্যের সাথে রক্ত যাওয়া
  • বসে থাকার সময় তলপেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে ইত্যাদি

BPH এবং প্রস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কিত একটি দুঃখজনক সত্য হলো রোগের শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। আর তাই একজন সচেতন পুরুষ হিসেবে ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর অন্তত একবার করে প্রস্টেট গ্রন্থির অবস্থা জানতে কতিপয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে যার মধ্যে অন্যতম হলো PSA (prostate-specific antigen) টেস্ট।

এই পরীক্ষাটি করার জন্য নমুনা হিসেবে রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং PSA এর মান দেখে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। সেই সাথে DRE (digital rectal examination) এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর মাধ্যমে প্রস্টেট বড় হয়ে গেছে কিনা তা জানা যায়। এছাড়াও প্রস্টেট গ্রন্থি ভালো রাখতে নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক উপায় সমূহ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমনঃ

  • ধুমপান প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর তাই ধুমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে
  • কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবার গুলো কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। যেমন: লাল মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি
  • আবার কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যেমন: মাছ, টমেটো ও সবুজ শাকসবজি বেশি বেশি পরিমাণে খেতে হবে
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সাথে প্রস্টেটের সমস্যা হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। আর তাই নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

পুরুষের যৌন সমস্যা

সুস্থ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ‌ হলো যৌনতা আর একজন পুরুষের যৌন সক্ষমতার মূল চালিকাশক্তি হলো টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ৩০ বছরের পর থেকে একজন পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমতে শুরু করে। (BAILEY, 2021) এই পর্যায়ে লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়-

  • লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা (ED- erectile dysfunction)
  • দুর্বল বীর্যপাত (Weak ejaculation)
  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
  • অন্ডকোষ ছোট হতে থাকে
  • হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়
  • মাংসপেশীর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
  • বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা
  • চুল পড়া ইত্যাদি

তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই কারণ বয়স বৃদ্ধি জনিত টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়া তথা যৌন সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য নানাবিধ কার্যকরী উপায় রয়েছে। আপনি যদি মনে করেন যে ইতিমধ্যেই উপরে উল্লেখিত লক্ষণাগুলো আপনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাহলে একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কতিপয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রস্তুতি নিন। এক্ষেত্রে সাধারণত যে সমস্ত পরীক্ষা গুলো করানোর প্রয়োজন পড়ে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • TSH (Thyroid stimulating hormone)
  • T4 (thyroxine)
  • Testosterone টেস্ট ইত্যাদি

পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিক কম দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন থেরাপি (Hormone therapy) নেওয়া যেতে পারে। তবে হরমোন থেরাপির ক্ষেত্রে নানাবিধ ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আর তাই প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে।

  • প্রতিদিন রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি
  • মানসিক চাপ (Stress) যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে
  • জিংক ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত

উপরের টিপস গুলো যাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা কমে গেছে এমনকি হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন তাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আবার যাদের শরীরে এখনো হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই টিপস গুলো অনুসরণের মাধ্যমে পরবর্তীতে যৌন সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারবেন।

টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে কি কি খাবার খাবেন আর কোন গুলো বর্জন করতে হবে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন। 

আরথ্রাইটিস এবং জয়েন্টের সমস্যা

আরথ্রাইটিস (Arthritis) একটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি যা বয়স্কদের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই রোগের ফলে মূলত শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়-

  • জয়েন্ট ফুলে যাওয়া
  • লাল হয় ও ব্যথা বোধ
  • নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়
  • দুর্বলতা, ক্লান্তি, জ্বর ইত্যাদি

আরথ্রাইটিস বা জয়েন্টের সমস্যা প্রতিকারে একজন বাতব্যাধি বিশেষজ্ঞ (Rheumatologist) চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে আরথ্রাইটিসের সমস্যা একবার শুরু হলে সারাজীবন ব্যাপী তা ভোগায়। আর তাই এই রোগ যেন না হয় সেই ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত। যদিও এটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে কতিপয় বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ নির্দেশনা রয়েছে যা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। যেমনঃ (Watson, 2021)

✓ গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আরথ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের সেরা উৎস হলো মাছ যা অন্তত পক্ষে সপ্তাহে ২ দিন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। তবে যারা নিরামিষাশী অর্থাৎ প্রাণিজ আমিষ (মাছ, মাংস) বর্জন করে চলেন তাদের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস হিসেবে বাদাম, অ্যাভোকাডো, তিসি, চিয়া বীজ, সাজনা পাতা ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। (সাজনা পাতার উপকারিতা শুধুমাত্র এতেই শেষ হয় না, এটি আরও অনেক উপকারে আসে)

✓ শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সাথে জয়েন্টের সমস্যা হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। আর তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

✓ আঘাতের ফলে জয়েন্টের সমস্যা একটি কমন ঘটনা। আর তাই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ (Safety equipments) ব্যবহার করতে হবে।

✓ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস তথা রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সুগারের উপস্থিতির ফলে জয়েন্টে Cytokines নামক একধরনের উপাদান জমা হয় যা জয়েন্টে প্রদাহ ও ব্যাথার সৃষ্টি করে থাকে।

✓ ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ধুমপানের ফলে আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর তাই ধুমপান পরিত্যাগ করতে হবে। (Watson, 2021)

✓ যে কোনো ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় তা পরবর্তীতে জয়েন্টের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

✓ বসে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেরুদন্ড সোজা রেখে বসতে হবে এবং কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে উঠে একটু হাঁটাচলা করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা

“রক্তে কোলেস্টেরল (Cholesterol) বেড়ে গেছে” এই কথাটি বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের মুখে শোনা যায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension), হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো মরণঘাতী সমস্যা হতে পারে। তবে কোলেস্টেরলের অনেক গুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যে কোনটি আবার ভালো প্রকৃতির যা কমে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তো চলুন কোলেস্টেরলের ধরন ও পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক।

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন এর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ বছর বয়সের পর থেকে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। (Hoffman, 2021) কারণ অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই বয়স থেকেই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে কিন্তু শুরুতে কোনো লক্ষণ টের পাওয়া যায় না। আপনার বয়স যদি ২০ বা তার বেশি হয়ে থাকে এবং কখনো কোলেস্টেরল টেস্ট না করিয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য এই পর্যায়ে থাকছে কোলেস্টেরল টেস্ট সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সকল তথ্য।

কোলেস্টেরল টেস্টকে মেডিকেলের ভাষায় Lipid profile বলে যার জন্য নমুনা হিসেবে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।‌ পরীক্ষাটি করার জন্য ১২ ঘন্টা আগে থেকে না খেয়ে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন টেস্টের ফলাফল সঠিক পাওয়া যায়। টেস্টের রিপোর্টে সাধারণত চারটি বিষয় উল্লেখ করা থাকে যাদের মান দেখে শরীরের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমনঃ

Cholesterol problems

  1. Total cholesterol: এর মান ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা 200 mg/dL (milligrams per deciliter) থাকলে তা স্বাভাবিক তবে সর্বোচ্চ ২৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত থাকলে তাতে খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু ২৪০ এর বেশি হয়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
  2. HDL (high density lipoprotein): এটিকে উপকারী কোলেস্টেরল বলা হয় যা বেশি থাকা ভালো। HDL এর মান ৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থাকলে তা হার্টের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত স্বাভাবিক কিন্তু ৪০ এর নিচে হলে তা হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. LDL (low density lipoprotein): এটিকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয় যা বেশি থাকা ভালো নয়। LDL এর আদর্শ মান হলো ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার কম। এই মান ১০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৬০ পর্যন্ত হলে তা শরীরের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় ভালো বা কিছুটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে ১৬০ এর বেশি হলে তা নিশ্চিত ভাবে হার্টের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হবে।
  4. TG (Triglycerides): LDL এর মতো TG যত কম থাকে ততই ভালো এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। এই মান ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত হলে তা হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে নির্দেশ করে। আর ২০০ এর বেশি হলে তা বিপদজনক হিসেবে ধরা হয়।

কোলেস্টেরলের সবগুলো বিষয় মান সহ ভালো মন্দের নির্দেশনা ছক আকারে তুলে ধরা হলো যা খুব সহজে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

ComponentsNormal/StandardBorderlineHealth Risk
Total Cholesterol<200 mg/dL201 to 240>240
HDL>60 mg/dL40 to 59<40
LDL<100 mg/dL100 to 160>160
TG<150 mg/dL151 to 200>200

রক্তে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল গুলো নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত নির্দেশনা সমূহ মেনে চলার চেষ্টা করুন।

  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবে
  • ট্র্যান্স ফ্যাট (Trans fat) একদম বর্জন করা উচিত
  • প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে
  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে
  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস বর্জন করা জরুরি

তবে যাদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেছে তাদের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স রয়েছে এমন খাবার কোনগুলো তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন। 

বয়সের সাথে সাথে বুদ্ধি, সৃতিশক্তি এবং জ্ঞান লোপ পাওয়া

বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সাধারণত যে সমস্ত পরিবর্তন গুলো দেখা যায় তা হলোঃ

  • কোনো কিছু শিখতে দেরি হয়
  • স্মৃতি শক্তি কমে যায় অর্থাৎ কোনো কিছু সহজেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়
  • কাজের ব্যাপারে চিন্তা করার সক্ষমতা কমে যায় ইত্যাদি

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এযাবত গবেষণার মাধ্যমে যা কিছু জানতে পেরেছেন সেই তথ্য অনুযায়ী ৬০ বছরের পর থেকে মস্তিষ্কের সামনের অংশ, hippocampus, White matter, Cortical density ইত্যাদি ক্ষয় হতে শুরু করে। যার ফলে বুদ্ধি, স্মৃতি শক্তি এবং জ্ঞান লোপ পেতে থাকে। (Nichols, 2020) আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আরো অনেক কম বয়স থেকেই এই সমস্ত সমস্যা গুলো হতে পারে। যা হোক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। যেমনঃ

  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এর কুফলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর‌ তাই শরীরের ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হতে হবে
  • একদম কর্মহীন জীবন যাপন করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। আর তাই নানাবিধ পারিবারিক ও সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
  • স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
  • মানসিক চাপ যতটা সম্ভব কমাতে হবে
  • ভালো ঘুম আবশ্যক ইত্যাদি।

কিভাবে মানসিক চাপ কমানো যায় তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন। 

পুরুষরা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হতে পারে। এটি হল প্রচণ্ড উদ্বেগ ও আতঙ্কের একটি তীব্র আক্রমণ। এটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া কিছুটা কঠিন, তবে প্যানিক অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব

অনেক মানুষ আছেন যারা মনে করে যে সুস্থ অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অথবা পরীক্ষা করে রোগ খুঁজে বের করার দরকার নেই বরং এমনিতেই যতদিন সুস্থ থাকা যায় সেটাই ভালো। এমন গোঁড়ামির ফলে শরীরের মধ্যে আপনার অজ্ঞাতসারে জটিল রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। আর তাই সচেতন পুরুষ হিসেবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শরীরের অবস্থা জানুন এবং সেই মোতাবেক জীবন যাপন করুন।

References

BAILEY, R. (2021, April 20). 12 of the Best Testosterone-Boosting Foods. From Men’s Health: https://www.menshealth.com/uk/nutrition/a747704/eat-up-to-man-up/

Brick, J. (2019, September 20). The 5 Health Problems Men Worry About — and How to Prevent Them. From Healthline: https://www.healthline.com/health/mens-health-concerns

Hoffman, M. (2021, May 18). Cholesterol Testing and the Lipid Panel. From WebMD: https://www.webmd.com/cholesterol-management/guide/tests-for-high-cholesterol-lipid-panel

Nichols, H. (2020, September 9). What happens to the brain as we age? From Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/319185

Watson, S. (2021, November 29). Arthritis Prevention: What Can You Do? From Healthline: https://www.healthline.com/health/arthritis-prevention

Last Updated on November 1, 2023