যক্ষা হলে রক্ষা নাই এই কথার ভিত্তি নাই” এই স্লোগানটির সাথে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি পরিচিত। একমাত্র সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই পারে এই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে। এটি টিবি রোগ নামেও বহুল পরিচিত। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বেই একসময় টিবি রোগকে মহামারী রোগ হিসেবে দেখা হত। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির কারণে এখন আর একে মহামারী রোগ বলা যায় না ।
তবে তার মানে এই না যে পৃথিবীতে এখন যক্ষা বলতে কোন রোগ নেই! উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ১ কোটি মানুষ এবং মারা যায় ১৫ লক্ষ । তাই যক্ষাকে হালকা করে নেওয়ার কোন উপায় নেই। টিবি রোগ কি, টিবির লক্ষণ ধরা পরলে কি করা উচিত, ইত্যাদি আরো বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান পাবেন আমাদের আজকের অনুচ্ছেদে।
Table of Contents
টিবি রোগ কি?
এটি একধরনের মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। বাংলায় যক্ষা/যক্ষ্মা, ইংরেজিতে টিউবারকিউলোসিস (Tuberculosis) যাকে সংক্ষেপে টিবি বলেও ডাকা হয়, কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycrobacterium Tuberculosis) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু বাতাসে মিশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়।
শরীরের যেকোন অর্গানেই যক্ষা হতে পারে। তবে ফুসফুস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়াও লসিকা গ্রন্থি (Lymph node), হাড়, দুই হাড়ের সংযোগস্থল ইত্যাদি স্থানেও হতে পারে। কিন্তু হৃদপিণ্ড, অগ্ন্যাশয় ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে এ রোগের সংক্রমণ হয় না।
টিবি রোগ কয় ধরনের হয়?
টিবি সাধারণত ফুসফুসকে সংক্রমিত করলেও, শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও এটি হতে পারে। সংক্রমিত হওয়ার স্থান অনুযায়ী টিবি ২ ধরণের-
১. পালমোনারি টিবি (Pulmonary TB) বা শ্বাসতন্ত্রীয়/ফুসফুসের যক্ষা। শুধুমাত্র ফুসফুসে হলে তাকে পালমোনারি টিবি বলে।
২. এক্সট্রাপালমোনারি টিবি (Extrapulmonary TB) বা অ-শ্বাসতন্ত্রীয়/ফুসফুসের বাইরের যক্ষা। এটি যখন ফুসফুসে না হয়ে শরীরের অন্য জায়গায় হয় তখন তাকে এক্সট্রাপালমোনারি টিবি বলে।
এছাড়া আরো দুইভাবে একে ভাগ করা যায়।
১. সক্রিয় যক্ষা (Active TB)
২. সুপ্ত যক্ষা (Latent TB)
রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সেটাকে সক্রিয় এবং লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাকে সুপ্ত যক্ষা বলে।
টিবি রোগ কি কারণে হয়?
মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycrobacterium Tuberculosis) জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে এ রোগ হয়। এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ রোগের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়ার অনেকগুলো ভেরিয়েন্ট বা জাত আছে। এদের মধ্যে কিছু কিছু ভেরিয়েন্ট আছে যেগুলো দ্বারা সংক্রমিত হলে যক্ষ্মা নিরাময়যোগ্য নয়।
সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল, WHO (World Health Organization) এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মানুষই যক্ষায় আক্রান্ত। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা এ রোগের লক্ষণ অনুভব করতে পারে না। এই অবস্থাকে সুপ্ত যক্ষা (Latent TB) বলে।
সুপ্ত যক্ষা সংক্রামক নয় অর্থাৎ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি ছড়ায় না। এবং আক্রান্ত ব্যাক্তি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে সুপ্ত থেকে এটি পরবর্তীতে সক্রিয় টিবিতেও রূপান্তরিত হতে পারে।
টিবি রোগের লক্ষণ কি কি?
এ রোগের লক্ষণ, আক্রান্ত ব্যক্তি এবং আক্রান্তের স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়। তবে বেশিরভাগ যক্ষা রোগীর ক্ষেত্রেই কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল –
পালমোনারি টিবি (Pulmonary TB)
এ রোগের কথা শুনলেই আমাদের মাথায় যে নামটি সবার আগে আসে তা হল পালমোনারি টিবি। এ ধরণের টিবি ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। বেশিরভাগ যক্ষা রোগীই পালমোনারি টিবিতে আক্রান্ত হয়। লক্ষণ –
- টানা ৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাশি
- কাশির সাথে রক্ত এবং কফ বের হওয়া
- বুকে ব্যাথা হওয়া
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- ক্লান্তি
- জ্বর
- রাতে শরীর ঘামা
- খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া
- শরীরের ওজন কমা
এক্সট্রাপালমোনারি টিবি (Extrapulmonary TB)
ফুসফুস ব্যতীত শরীরের অন্য কোথাও যক্ষা হলে তাকে এক্সট্রাপালমোনারি টিবি বলে। যেমন: হাড়, লিভার, লসিকাগ্রন্থি ইত্যাদি অর্গানে। ফুসফুস ছাড়াও মানুষের দেহে আরও ১০ ধরনের টিবি হতে পারে।
১. লসিকাগ্রন্থির যক্ষা (TB Lymphadenitis)
অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষাগুলোর মধ্যে লসিকাগ্রন্থির আক্রান্তের হার অন্যান্য যক্ষার চেয়ে বেশি। এটি আমাদের ঘাড়ে থাকা লসিকাগ্রন্থিকে আক্রমন করে। ঘাড়ের লসিকাগ্রন্থি কে বলা হয় Cervical Lymph nodes। এছাড়াও শরীরের যেকোন লসিকাগ্রন্থিতেই এটি হতে পারে।
লক্ষণ-
- আক্রান্ত লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায়
- জ্বর
- দুর্বলতা
- ওজন কমে যায়
- রাতে শরীর ঘামা
২. হাড় ও হাড়ের জয়েন্টের যক্ষা (Skeletal TB)
এই ধরণের যক্ষা খুবই বিরল প্রকৃতির। শরীরের যেকোন হাড়েই এটি হতে পারে। মূলত পালমোনারি এবং লসিকাগ্রন্থের টিবি থেকে এটি বিস্তার লাভ করে হাড়কে সংক্রমিত করে।
প্রথম দিকে কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে নিম্নরূপ লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় –
- মেরুদন্ডে ব্যাথা হয়
- আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়
- ফোড়া (Abscess) হয়
- হাড়ের বিকৃতি ঘটে
৩. মিলিয়ারি টিবি (Miliary TB)
মিলিয়ারি টিবি এক বা একাধিক অঙ্গকে প্রভাবিত করে। এই ধরনের টিবি প্রায়ই ফুসফুস, অস্থি মজ্জা এবং লিভারকে সংক্রমিত করে। তবে এটি মেরুদণ্ড, মস্তিষ্ক এবং হার্ট সহ শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।যখন আক্রান্ত স্থান থেকে কোন না কোন ভাবে এই জীবাণু রক্তের সাথে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তখন শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট টিউবারক্যালসের সৃষ্টি হয়। এভাবে সারা শরীর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হয়।
মিলিয়ারি টিবি রোগের লক্ষণ অন্যান্য টিবির মতই। টিবি যদি রক্তে মিশে যায় তাহলে লোহিত রক্ত কণিকার (Red blood cell) সংখ্যা কমে যায় এবং শরীরে ফুসকুড়ি উঠে।
৪. প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা (Genitourinary TB)
অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষাগুলোর মধ্যে আক্রান্তের হারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হল প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা। এটি যৌনাঙ্গ বা মূত্রনালীর যে কোনো অংশকে সংক্রমিত করতে পারে। এটি সাধারণত ফুসফুস থেকে রক্ত
এই ধরণের রোগীদের যৌনাঙ্গে এবং যৌন পথে টিউবারকুলার আলসার (Tubercular ulcer) হয়। এছাড়া অন্যান্য যে লক্ষণগুলো দেখা যায় –
- অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা
- প্রস্রাবের প্রবাহ কমে যাওয়া বা ব্যাহত হওয়া
- তলপেটে ব্যাথা
- পিঠে ব্যাথা
- বীর্যের পরিমাণ কমে যাওয়া
৫. লিভার টিবি (Liver TB)
এই রোগকে হেপাটিক টিবিও (Hepatic TB) বলা হয়। লিভার টিবি ফুসফুস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ (GIT), লিম্ফ নোড বা পোর্টাল শিরা (Portal vein) থেকে লিভারে ছড়ায়। লিভারে যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা ১% থেকেও কম।
লিভার টিবি রোগের লক্ষণ –
- জ্বর
- পেটের উপরের অংশে ব্যথা
- লিভার বড় হয়ে যাওয়া
- জন্ডিস
৬. পরিপাক তন্ত্রের টিবি (Gastrointestinal TB)
পরিপাক তন্ত্র টিবি রোগের লক্ষণ –
- পেটে ব্যথা
- খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- বমি বমি ভাব
৭. মেনিনজাইটিস টিবি (Meningitis TB)
এটি মেনিনজিয়াল টিউবারকুলোসিস (Meningeal tuberculosis) নামেও পরিচিত। মেনেনজিস (Meninges) হল মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের চারপাশে ঘিরে থাকা আবরণ।
টিবি ফুসফুস থেকে বা রক্ত
মেনিনজাইটিস টিবির লক্ষণ সমূহ
- ব্যথা
- ক্লান্তি
- ক্ষুধামন্দা
- মাথাব্যথা
- সল্প মাত্রার জ্বর
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
- ঘাড় নাড়াতে সমস্যা হয়
৮. টিবি পেরিটোনাইটিস (TB Peritonitis)
আমরা সহজ বাংলায় যেটাকে পেট বলি, মেডিকেলের ভাষায় এই পেট এবং পেটের ভিতর যেসব অঙ্গ থাকে সেই অঞ্চলকে Abdomen বলা হয়। Abdomen কে ঘিরে থাকা আবরণকে পেরিটোনিয়াম (Peritonium) বলে এবং পেরিটোনিয়ামের প্রদাহকে (Inflammation) পেরিটোনাইটিস বলে। যখন টিবির কারণে পেরিটোনাইটিস (Peritonitis) হয় তখন তাকে টিবি পেরিটোনাইটিস বলে।
লক্ষণ –
- পেটে পানি আসা
- জ্বর
- বমি বমি ভাব
- খাওর রুচি কমে যাওয়া
৯. টিবি পেরিকার্ডাইটিস (TB pericarditis)
হার্টকে সুরক্ষা দিতে হার্টের চারপাশে যে আবরণ থাকে তার নাম হল পেরিকার্ডিয়াম (Pericardium)। টিবি পেরিকার্ডিয়ামে ছড়িয়ে পরলে তাকে টিবি পেরিকার্ডাইটিস বলে।
লক্ষনগুলো-
- বুক ব্যাথা
- জ্বর
- বুক ধড়ফড় করা
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- কাশি
১০. ত্বকের টিবি (Cutaneous TB)
এ ধরনের টিবি রোগ শরীরের স্কিনে প্রভাব ফেলে। ত্বক থেকে এটি বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। Cutaneous TB অত্যন্ত বিরল এমনকি যেসব দেশে যক্ষার প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি সেসব দেশেও এই রোগ খুব একটা দেখা যায় না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এটি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হাত, কনুই, হাঁটুর পিছনে, পশ্চাৎ দেশে এবং পায়ে।
লক্ষণ-
- ব্যথাহীন ক্ষত
- বেগুনি বা বাদামী রঙের ক্ষত
- আলসার
- ফোড়া
যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি?
যাদের টিবি আছে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া যারা রোগীদের সেবা করে, যেসব হসপিটালে যক্ষা রোগের চিকিৎসা দেয় এবং যারা সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করে তারা এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন।
এছাড়াও যারা ঝুঁকিতে আছেন –
- বয়ষ্ক মানুষ
- যারা ধূমপান করেন
- ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা
- যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেয়
- এইডস আক্রান্ত রোগী
- কেমোথেরাপী নেন যারা
কিভাবে যক্ষা রোগ/টিবি পরীক্ষা করা হয়?
টিবি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা -নিরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিকভাবে লসিকাগ্রন্থি ও স্টেথোস্কোপ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু ল্যাবরেটরি টেস্ট করা হয়।
ম্যানটক্স টিউবারকুলিন স্কিন টেস্ট (টিএসটি)/Mantoux tuberculin skin test (TST)
হাতের সবচেয়ে উপরের অংশের ত্বকে অল্প পরিমাণে টিউবারকুলিন (Tuberculin), ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। ইনজেকশন দেয়ার ৪৮-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত রোগীকে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে স্কিনে কিছু পরিবর্তন ঘটে (যেমন ইনজেকশন যেখানে দেয়া হয় তার আশেপাশে ছোট ছোট ফ্যাকাশে রঙের ফুসকুড়ি উঠে, ইনজেকশানের জায়গাটুকু ৫মিলিমিটার এর বেশি ফুলে উঠলে) যা দেখে ডাক্তার নিশ্চিত হন রোগীর শরীরে টিবির জীবাণুর উপস্থিতি আছে।
রক্ত পরীক্ষা (Blood test)
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দেহে সুপ্ত এবং সক্রিয় যক্ষার অবস্থান নির্ণয় করা যায়, এছাড়াও এ রোগের প্রতি দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (Immune system) কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা যায়।
রোগ নির্ণয়ের জন্য ২ টি রক্ত পরীক্ষা করা হয় –
১. টি-স্পট টিবি পরীক্ষা (টি-স্পট)/T-SPOT TB test (T-Spot)
২. কোয়ান্টিফেরন-টিবি গোল্ড ইন-টিউব পরীক্ষা (কিউএফটি-জিআইটি)/QuantiFERON-TB Gold In-Tube test (QFT-GIT)
রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে টিবিকে পজিটিভ, নেগেটিভ ও ইনডিটারমাইন এই ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। ব্লাড টেস্ট পজিটিভ মানে শরীরে টিবির জীবাণু রয়েছে, নেগেটিভ বলতে জীবাণু নেই এবং ইনডিটারমাইন বলতে জীবাণু আছে তবে সুপ্ত অবস্থায়।
এক্স-রে
স্কিন ও রক্ত পরীক্ষা পজিটিভ আসলে বুকের একটি এক্স-রে করতে হয়। বুকের এক্স-রের মাধ্যমে দেখা হয় ফুসফুসে ছোট ছোট কোন দাগ আছে কিনা যা শরীরে টিবির উপস্থিতি নির্দেশ করে।
বুকের এক্স-রে যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে বুঝতে হবে টিবি সুপ্ত অবস্থায় আছে অথবা স্কিন বা রক্ত পরিক্ষায় কোন ভুল রিপোর্ট এসেছিল। এর জন্য প্রয়োজনে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো কিছু বাড়তি টেস্ট করা লাগতে পারে।
কফ পরীক্ষা
কফ হল শ্লেষ্মা যা কাশির সময় উঠে আসে। কফ পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় সময়ই স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে এসে কফ সংগ্রহ করে নিয়ে যায় পরীক্ষা করার জন্য।
এছাড়াও রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান (CT scan), ব্রঙ্কোসকপি (Bronchoscopy), ফুসফুসের বায়োপসি (Lung biopsy) করা হয়।
টিবি রোগের চিকিৎসা
উপসর্গ না থাকলেও সুপ্ত টিবির চিকিৎসা করা জরুরি। কারণ ভবিষ্যতে রোগ বিকাশ পেতে পারে। সুপ্ত টিবির ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ওষুধের প্রয়োজন হয়। তবে সক্রিয় টিবির ক্ষেত্রে বেশ কিছু ওষূধ খেতে হয়।
টিবির ওষূধগুলো কমপক্ষে ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে সেবন করতে হয়।
টিবি রোগের ঔষধ কি?
এ রোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বব্যাপী নিমোক্ত ওষূধগুলো ব্যবহার করা হয়-
- আইসোনায়াজিড (Isoniazid)
- রিফামপিসিন (Rifampicin)
- ইথামবিউটল (Ethumbutol)
- পাইরাজিনামাইড (Pyrazinamide)
যক্ষার ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় Directly observe therapy (DOT) । মানে ওষুধগুলো একজন স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে খেতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই ওষুধ সেবন করতে হয় বলে অনেক সময় ডোজ মিস হয়ে যেতে পারে বা অনেকে একটু উপকার পেয়েই মনে করতে পারেন যে তার রোগ ভাল হয়ে গেছে। তাই সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বনে ওষুধ একজন স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে সেবন করতে হয়।
তবে আপনি যদি কোন স্বাস্থ্য কর্মীর তত্ত্বাবধানে না থাকেন তাহলে অবশ্যই ওষুধ সেবনের একটি রুটিন তৈরি করে সেটা মেনে চলুন। কারন ডোজ মিস হয়ে গেলে যক্ষা তো ভাল হবেই না, উল্টো ওষুধ তার কার্যকরিতা হারাবে।
সঠিক সময়ে ওষুধ সেবন করার জন্য কিছু কার্যকরী টিপস-
- প্রতিদিন একই সময়ে ওষুধ সেবন করুন/ মোবাইলে এলার্ম সেট করে রাখুন
- ক্যালেন্ডারে ওষুধ খাওয়ার দিন গুলো দাগ কেটে রাখুন এবং নিয়মিত ফলো করুন
- কাউকে মনে করিয়ে দিতে বলুন প্রতিদিন
- ওষুধগুলো এমন স্থানে রাখুন যাতে উঠতে-বসতে চোখে পরে
যক্ষা রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির আশেপাশে থাকলে এ রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন। যেসব অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই যক্ষার টিকা নিয়ে থাকে। টিবি ভ্যাক্সিনের নাম হল ভিসিজি (Bacillus Calmette-Guerin; BCG) টিকা। যদিও এটি পুরোপুরিভাবে যক্ষা প্রতিরোধ করতে পারে না।
টিবি হতে রক্ষার কিছু কৌশল –
- আক্রান্ত ব্যাক্তি হতে দূরে থাকা
- মাস্ক পরিধান করা
- থাকার রুমে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকা
- গণসচেতনা সৃষ্টি করা
বাংলাদেশে যক্ষ্মার চিকিৎসা
আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ৯৭৮ জন লোক যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ১২৯ জন। এদের মধ্য গড়ে ১৬ জনের শরীরে যক্ষার ওষুধ রেসিসটেন্ট হয়ে গেছে, মানে তাদের শরীরে যক্ষার ওষুধ কোন কাজ করছে না (BBC, 2020)
দেশের সকল সরকারি জেলা হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালে যক্ষার চিকিৎসা বিনামূল্য দেয়া হয়। যদিও বলা হয়ে থাকে যক্ষার চিকিৎসা সম্পূর্ন ফ্রি। তবে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। ফ্রি বলতে এখানে শুধু ওষুধ ও কাশি পরীক্ষা করা কে বলা হয়েছে। অন্যান্য ব্যয়বহুল পরীক্ষা যেমন সিটি স্ক্যান, এক্সরে, বায়োপসি ইত্যাদি পরীক্ষা বিনামূল্যে দেয়া হয় না।
বাংলাদেশের যক্ষা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হল –
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান
মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্গান হল ফুসফুস, যা আমাদের শ্বাসকার্য পরিচালনা করে। এছড়া কার্বনডাইঅক্সাইড যুক্ত রক্তকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তে রূপান্তর করে। যক্ষার ফলে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও, বায়ু দূষণ, ধূমপান ইত্যাদি কারণে আমাদের নানা রকম ফুসফুসের রোগ হয়ে থাকে। ফুসফুসের যেসব রোগগুলো আমাদের বেশি হয়ে থাকে তা হল –
- হাঁপানি রোগ (Asthma)
- নিউমোনিয়া (Pneumonia)
- সিওপিডি (COPD), এটি একধরনের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ। সাধারণত যারা অনেকদিন ধরে (১০-১৫ বছর) ধূমপান করে তাদের এই রোগ বেশি হয়।
- ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung cancer)
- পালমোনারি হাইপারটেনশন (Pulmonary hypertension)
- সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic fibrosis) । এই রোগে ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ইনফেকশন হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
ফুসফুসের রোগের লক্ষণ
ফুসফুসের সমস্যা বোঝার উপায় হল, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে ব্যাথা হওয়া। এই দুটি লক্ষণ যেকোন ফুসফুসের সমস্যা হলেই সচরাচর দেখা যায়। তবে রোগের পার্থক্য অনুযায়ী লক্ষণও ভিন্ন হতে পারে। ফুসফুসের সমস্যা হলে কি হয় সে সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
হাঁপানি রোগ (Asthma)
হাঁপানি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগগুলোর মধ্যে একটি। এ রোগে ফুসফুস ফুলে যায় এবং সরু হয়ে যায়, তাই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- শ্বাসকষ্ট
- বুক চেপে ধরেছে কেউ এমন অনুভুতি হওয়া
- কাশি
শ্বাসকষ্ট ও কাশি উভয়ই যক্ষা ও হাঁপানি রোগের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে পরে। কিন্তু হাঁপানির কাশি টিবির কাশির মত এতো দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাঁপানি বাচ্চাদের হয়, তবে বড়দেরও হতে পারে। শীতকালে হাঁপানির প্রকটতা বাড়ে। ওষুধের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
যাদের এলার্জির সমস্যা আছে, ধূমপান করে, অতিরিক ওজন তাদের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
সিওপিডি (COPD)
ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) একটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ। সিওপিডি তে ফুসফুসের প্রদাহ (Inflammation) হয়ে বেশি বেশি মিউকাস (Mucous) উৎপাদন করে এবং ফুসফুসের আবরণকে মোটা করে দেয় যার ফলে শ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে যায়।
এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস থেকে সিওপিডি হয়। সিওপিডি রোগীদের হিস্ট্রি নিলে দেখা যায় প্রত্যেকরই এমফাইসিমা বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ছিল।
এমফাইসিমা (Emphysema): এমফাইসিমা ফুসফুসে থাকা বায়ু থলির ক্ষতি করে। সুস্থ মানুষের বায়ু থলি শক্তিশালী এবং নমনীয় হয়। এমফাইসিমা তাদের দুর্বল করে দেয়।
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস (Chronic bronchitis): ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলির (একধরনের টিউব আকৃতির প্যাসেজ যা ফুসফুসে বাতাস ঢুকতে সাহায্য করে) প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি শ্লেষ্মা (Mucous) উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
লক্ষণ-
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- শ্বাসকষ্ট
- ঘন ঘন কাশি
- কফ সহ কাশি
- বুক ব্যাথা
সিওপিডি হওয়ার প্রধান কারণ হল ধূমপান। এমন কি যারা ধূমপান করে না কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ধূমপায়ীদের সাথে রয়েছে তাদেরও সিওপিডি হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তবে অনেকেই মনে করে থাকেন যে, যক্ষা রোগের সাথেও ধূমপান জড়িত। যদিও এটি একটি ভূল ধারণা, কারণ টিবি রোগ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, সিগারেটের ধোঁয়াতে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় নি, বরং এতে নিকোটিন নামক একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে।
পালমোনারি হাইপারটেনশন (Pulmonary hypertension)
পালমোনারি হাইপারটেনশন ফুসফুসে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে। সাধারণ উচ্চ রক্তচাপ শরীরে থাকা সব রক্তনালীকে প্রভাবিত করে কিন্তু পালমোনারি হাইপারটেনশনে শুধুমাত্র ফুসফুসে থাকা রক্তনালী প্রভাবিত হয়।
লক্ষণ-
- বুক ব্যাথা
- মাথা ঘোরা
- ক্লান্তি
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- পায়ের গোড়ালিতে ফুলে যাওয়া
এই রোগ নিরাময় করা যায় না, তবে ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। বেশিরভাগ যক্ষা রোগীদেরই পালমোনারি হাইপারটেনশন রয়েছে।
পালমোনারি হাইপারটেনশনের ঝুঁকিতে আছে যারা –
- মাত্রাতিরিক্ত ওজন
- পরিবারের কারো আগে পালমোনারি হাইপারটেনশন থাকলে
- অন্য কোন ফুসফুসের রোগ থাকলে
- ক্ষুধা-দমনকারী ওষুধ গ্রহণ করা
- ড্রাগস নিলে
সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic fibrosis)
এটি ফুসফুসে থাকা মিউকাসের (Mucous) পরিবর্তন ঘটায়। মিউকাস সাধারণত পিচ্ছিল ও পাতলা থাকে, ফাইব্রোসিস হলে মিউকাস পরিবর্তন হয়ে আঠালো ও মোটা হয়ে যায়। এর ফলে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস এর লক্ষণ –
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি
- শ্বাসকষ্ট
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- শ্লেষ্মা কাশি
- সর্দি
- অতিরিক্ত লবণাক্ত ঘাম
- ঘন ঘন সাইনাস এর সংক্রমণ
এ রোগে সময় মত চিকিৎসা না নিলে লিভার, কিডনী, অগ্ন্যাশয় এবং সেক্স অর্গানের সমস্যা হতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সম্পূর্ন বিশ্রাম এবং সেই সাথে ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যায়।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক কম থাকে। কারণ এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জীনে টিবি প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে (Mackenzie, 2006)।
নিউমোনিয়া (Pneumonia)
নিউমোনিয়া হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের দ্বারা সংক্রমিত রোগ। স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া (Streptococcus pneumonia) ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে প্রবেশ করে সেখানে বংশ বিস্তার করে। এরা ফুসফুসের বায়ু থলিকে স্ফীত করে দেয় এবং তরল পদার্থ জমা করে, ফলে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। সাধারণত কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসার ফলেই নিউমোনিয়া ভাল হয়ে যায়। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ-
- কফ সহ কাশি
- জ্বর
- ঘেমে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- বুকে ব্যথা, শ্বাস নেয়া বা কাশির সময় ব্যাথা আরো বাড়ে
- ক্লান্ত হয়ে পরা
- ক্ষুধামন্দা
- বমি বমি ভাব বা বমি
- মাথাব্যথা
নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে আছেন যারা
- ২ বছর বা তার কম বয়সী শিশু
- ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ
- স্টেরয়েড বা নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ওষুধ নেন যারা
- যাদের দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ডায়াবেটিস আছে
- যারা সম্প্রতি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যেমন সর্দি বা ফ্লু
- যারা সম্প্রতি বা বর্তমানে এমন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যেখানে নিউমোনিয়া রোগী আছে
- যাদের স্ট্রোক হয়েছে
- যারা ধূমপান করে অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করে
ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung cancer)
ফুসফুসের ক্যান্সার এমন একটি রোগ যেখানে আপনার ফুসফুসের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে টিউমার তৈরি করে। টিউমারগুলো বড় হলে ফুসফুস কাজ করতে বাধা প্রাপ্ত হয় এবং একসময় এই টিউমারগুলো শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পরে। মাঝে মাঝে কোন লক্ষণ ছাড়াই এটি বড় হতে থাকে।
লক্ষণ সমূহ-
- শ্বাসকষ্ট
- দুর্বলতা
- ওজন হ্রাস
- রক্ত কাশি
ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন যারা
- ফুসফুসের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে
- অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার আছে
- ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকা
কিভাবে ফুসফুসকে সুস্থ রাখা যায়?
- ধূমপান করবেন না এবং ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকবেন না
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ব্যায়াম আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ায়
- পুষ্টিকর খাবার খান
- নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করুন
- সবসময় হাত পরিষ্কার রাখুন, ময়লা হাতে মুখ স্পর্শ করা থেকে এড়িয়ে চলুন এবং ফুসফুসের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত এমন অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
- বাহিরে গেলে মাস্ক পড়ুন। মাস্ক আপনাকে যক্ষা, করোনা সহ আরো নানা রোগ থেকে মুক্ত রাখবে।
ফুসফুসের ইনফেকশন হলে করণীয়
চিকিৎসকের দেওয়া পরীক্ষা থেকে যদি ফুসফুসের ইনফেকশন ধরা পড়ে তাহলে তার ধরন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কিন্তু ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। আর ছত্রাকের কারণে যদি ফুসফুসের ইনফেকশন হয় তাহলে ছত্রাক প্রতিরোধী হিসেবে কিটোকোনাজল (Ketoconazole) অথবা ভোরিকোনাজল (Voriconazole) গ্রহণ করতে হয় এবং যক্ষা ধরা পড়লে নিয়মিত টিবির ওষুধ খেতে হয়। সেই সাথে পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলুন। যেমন –
- জ্বর কমাতে নির্দেশ অনুযায়ী এসিটামিনোফেন (Acetaminophen) বা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) সেবন করা
- অনেক পানি পান করা
- মধু বা আদা দিয়ে গরম চা পান করা
- লবণ – পানি দিয়ে কুলকুচি করা
- যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়া
- ভাল হওয়ার আগ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যাওয়া (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
ফুসফুসের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার
নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহন ও পানীয় পান করা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন আপনার ফুসফুসকে ভাল রাখতে এবং ফুসফুসের ক্ষতি এবং রোগের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কাঁচা মরিচ
মরিচ ভিটামিন সি এর ভাল উৎস। ভিটামিন সি তে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) । বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন, ভিটামিন সি তাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি থাকায় কাঁচা মরিচ যক্ষা রোগীদের জন্যও একটি ভাল খাবার।
আপেল
সপ্তাহে ৫-৬ টি আপেল খেলে সিওপিডি তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
মিষ্টি কুমড়া
মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড (Carotenoid) থাকে। ক্যারোটিনয়েড একধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (Anti-inflammatory) । রক্তে পর্যপ্ত পরিমাণ ক্যারোটিনয়েড থাকা ফুসফুসের জন্য ভাল। ধূমপায়ীদের রক্তে ক্যারোটিনয়েডের মাত্রা অধূমপায়ীদের তুলনার ২৫% কম থাকে, তাই তাদের ফুসফুসের রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
হলুদ
হলুদে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (Anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্য। হলুদের প্রধান উপাদান হল কারকিউমিন (Curcumin), যা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
টমেটো
টমেটোতে লাইকোপিন (Lycopene) নামে একধরনের পুষ্টি উপদান থাকে যা হাঁপানি ও সিওপিডি রোগীদের জন্য উপকারী।
গ্রিন টি
গ্রিন টি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (Anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্য টিস্যু ফাইব্রোসিস (Fibrosis) হতে দেয় না, মানে টিস্যু যাতে ইনফেকশনের মাধ্যেমে চুপসে যেতে না পারে। তাই পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া আরও যেসব খাবার সুস্থ্য ফুসফুসের জন্য উপকারি –
- বাঁধাকপি
- অলিভ ওয়েল
- টক দই
- লেবু
- বাদাম
- কফি
- নারিকেল
ফুসফুস সুস্থ রাখতে যে খাবারগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তা যেকোন ফুসফুসের রোগের জন্য একই। হোক সেটা ফুসফুসের যক্ষা কিংবা ইনফেকশন। এ খাবারগুলো খেলে ফুসফুস সুস্থ থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
যক্ষা বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। সময়মত এর চিকিৎসা না নেওয়া মানে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। আজকের লেখার মাধ্যমে, টিবি রোগ কি, কেন হয়? টিবি বা যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে কি করবেন? এছাড়াও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ এবং এই গুরুত্বপূর্ণ অর্গানকে সুস্থ রাখার উপায় সম্পর্কে আপনাদের পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে। যাতে করে এই রোগগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন হতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেন।
যদি কেউ যক্ষায় আক্রান্ত হন, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে সুচিকিৎসা নিন, চিকিৎসায় যক্ষা ভাল হয়।
Last Updated on April 2, 2022
Thank you so much