এন্টাসিড নামের ঔষধটিকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা সবাই কখনো না কখনো এন্টাসিড খেয়েছি। অথবা পরিবারের কাউকে খেতে দেখেছি। বুক জ্বালাপোড়া করলে একটা এন্টাসিড খেয়ে নিলে একটু স্বস্থি পাওয়া যায়। অথবা কেউ কেউ পেটে গ্যাস হলে কিংবা এসিডিটি হলে এন্টাসিড খান। আজ আমরা এন্টাসিডের ব্যবহার ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একটু বিশদভাবে জানার চেষ্টা করবো।
Table of Contents
এন্টাসিড কি এবং এন্টাসিড কিভাবে কাজ করে?
এন্টাসিড (Antacid) শব্দটি ভাঙলে আমরা পাই Anti + Acid যার অর্থ হলো এসিড বিরুধী। তবে এন্টাসিড বলতে আমরা বুঝি এমন কোন ঔষধ যা আমাদের পাকস্থলীর এসিডকে নিউট্রালাইজ করে। খাবার হজম করার জন্য আমাদের পাকস্থলী থেকে প্রতিনিয়তই হাইড্রোক্লোরিক এসিড নির্গত হয়। এসিডের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে পেট ব্যাথা, বুক জ্বলা সহ নানাবিধ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এন্টাসিডের কাজ হলো পাকস্থলীর এসিডকে নিউট্রালাইজ করে এসিডের পরিমাণকে কমানো।
সাধারণত Aluminium Hydroxide এবং Magnesium Hydroxide এর কম্বিনেশনে এন্টাসিড তৈরি হয়। Aluminium Hydroxide এবং Magnesium Hydroxide দুটোই পাকস্থলীর এসিডকে নিউট্রালাইজ করতে পারে। তবে দুটো উপাদান ব্যবহার করার কারণ হলো শুধু Aluminium Hydroxide কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে আবার শুধু Magnesium Hydroxide ডায়রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই দুটি উপাদান ব্যবহার করলে এই সাইড ইফেক্টগুলো কম হয়।
Magnesium Hydroxide এর প্রভাবে এন্টাসিড থেকে নরম পায়খানা হতে পারে।
কোন কোন উপসর্গ উপশমের জন্য এন্টাসিড কার্যকরি
পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত হাইড্রোক্লোরিক এসিড পাকস্থলীর কোন জায়গায় আলসার বা ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে তার উপর নির্ভর করে কিছু উপসর্গ তৈরি হয়। এন্টাসিড এই উপসর্গগুলোকে কমাতে সাহায্য করে, যেমনঃ
১। বুক জ্বালা-পোড়া বা গলায় জ্বলুনি
বুক জ্বালা-পোড়া বা গলায় জ্বলুনিতে এন্টাসিড ব্যবহার করা হয়। Lower Esophagus বা খাদ্যনালীর গোড়ায় রাবারের ন্যায় একটি স্ফিংটার (sphincter) বা একমুখী দরজা থাকে। এটি খাবারকে পাকস্থলীতে ঢুকতে সাহায্য করে। কোন কারণে এই একমুখী দরজাটি সঠিক ভাবে বন্ধ না হলে এসিড পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালীতে চলে আসে। ফলে বুক জ্বালা-পোড়া বা গলায় জ্বলুনি হয়। একে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা জিইআরডি বলা হয়। এন্টাসিড এই এসিডকে নিউট্রালাইজ করে বুক জ্বালা-পোড়া উপশম করে।
চিত্রঃ পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ
২। পেট ব্যাথা – পেপটিক আলসার
পেপটিক আলসারে এন্টাসিড সাময়িক উপশম দিতে পারে। পাকস্থলী নিঃসৃত এসিড পাকস্থলীতে আলসার বা ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কিছু খেলেই পেটে ব্যাথা হতে পারে। কিংবা খাবার ছাড়াও পেটে অসস্থি বা ব্যাথা হতে পারে। এন্টাসিড এই এসিডকে নিউট্রালাইজ করে পেট ব্যাথা উপশম করে।
৩। পেট ব্যাথা – ডিওডেনাল আলসার
ডিওডেনাল আলসারেও এন্টাসিড ব্যবহার দেখা যায়। পাকস্থলীর পর ক্ষুদ্রান্ত শুরু হয়। পাকস্থলীর এসিড যখন ক্ষুদ্রান্তে চলে আসে তখন ডিওডেনাল আলসার তৈরি হয়। ডিওডেনাল আলসার বুঝার উপায় হলো কিছু খেলে ব্যাথা কমে যায়। এন্টাসিড এই ব্যাথাকে কিছু উপশম করতে পারে।
৪। ডিসপেপসিয়া
ডিসপেপসিয়া হলে নাভির চারপাশে এক ধরনের ব্যথা বা অস্বস্তি হয়। সাথে পেট ফাঁপা ভাব থাকে। পেটের এসিডের কারণে ডিসপেপসিয়া হলে এন্টাসিড পেট ফাঁপা ভাব বা পেটের ব্যাথায় উপশম দেয়।
বাংলাদেশের এন্টাসিডের কিছু ব্র্যান্ডের নাম
এন্টাসিড চুষে খাবার ট্যাবলেট এবং সিরাপ (সাসপেনশন) আকারে পাওয়া যায়।
চুষে খাবার এন্টাসিড ট্যাবলেট
- Antacid®
- Antanil®
- G-Antacid®
- Lactameal®
সিরাপ বা সাসপেনশন এন্টাসিড
- Entacyd®
- G-Antacid®
- Antanil®
- Lactameal®
সিমেথিকন এন্টাসিড
পেটের গ্যাস কমানোর জন্য সিমেথিকন (Simethicone) নামক একটি ঔষধ আছে। এন্টাসিডের সাথে সিমেথিকন যোগ করে সিমেথিকন এন্টাসিড তৈরি করা হয় যেনো পেট ফাঁপা ভাব বা পেটে গ্যাস কমানো যায়।
সিমেথিকন এন্টাসিড ট্যাবলেট/সাসপেনশন
- Entacyd Plus®
- Antacid Max®
- Antanil Plus®
- Avlocid Plus®
উল্লেখ্য, এই ঔষধগুলো ট্যাবলেট ও সাসপেনশন (সিরাপ) উভয় ফরমেই পাওয়া যায়।
এন্টাসিড গ্রহণের ফলে কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। যেমনঃ fluoroquinolone and tetracycline; iron, itraconazole, and prednisone.
কিভাবে এন্টাসিড গ্রহণ করলে কার্যকারিতা পাওয়া যাবে?
এন্টাসিড ট্যাবলেট ও সিরাপ দুটোই খাবার গ্রহণের ১-৩ ঘণ্টা পর খেলে ভালো কার্যকারিতা পাওয়া যায়। যাদের বিছানায় শোয়ার পর বুক জ্বলা পোড়া করে তারা শোয়ার বা ঘুমানোর আগে এন্টাসিড গ্রহণ করবেন।
ট্যাবলেট এর ক্ষেত্রে ২টি ট্যাবলেট, সাসপেনশনের ক্ষেত্রে ২ চামচ সাসপেনশন অথবা ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে। সাসপেনশন গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
এন্টাসিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি?
এন্টাসিডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেঃ
- পাতলা পায়খানা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম (low acid, delayed gastric emptying)
- কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স
- হাড়ের ক্ষয় (দীর্ঘদিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে)
- হাত-পা ব্যথা (low phosphate)
- আয়রন ঘাটতি বা রক্ত শূন্যতা
এন্টাসিডের অযাচিত ব্যবহার
এন্টাসিডকে সাধারণত OTC ড্রাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এসিডিটির সমস্যার জন্য এন্টাসিডকে সাময়িক ভাবে ব্যবহার করা যেতেই পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত দীর্ঘমেয়াদি এন্টাসিড ব্যবহার করা মোটেও উচিৎ নয়। কেননা পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা যেমন বেশি হলে অসুবিধা আছে তেমনি কম হলেও স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যেমনঃ
১। এসিড রিবাউন্ড (acid rebound) ঘটাতে পারে
২। আমিষ জাতীয় খাবারের হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে
৩। গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলস যেমন আয়রন, ভিটামিন B12, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, জিংক ইত্যাদির ঘাটতি তৈরি করতে পারে (Kresser, C. 2010, August 30).
কোন ওষুধগুলিকে সাধারণত অ্যান্টাসিড হিসাবে ভুল করা হয়?
এন্টাসিড ছাড়া আরও অনেক ওষুধ আছে যেগুলো গ্যাস্ট্রিক এসিড বা পেট ফাঁপা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলোকে অনেক সময় এন্টাসিড বলে ভুল করা হয়। যেমনঃ
- Simethicone – এটি প্যাটের গ্যাস কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ট্যাবলেট হিসেবেঃ Flacol® (৪০ মিগ্রা)
- বাচ্চাদের ড্রপ হিসেবেঃ Flacol®, Gasnil®, Semecon®, Pedicon®
- Ranitidine – এসিড নিঃসরণ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ট্যাবলেট হিসেবে (১৫০ ও ৩০০ মিগ্রা) – Biotid®, Neotack®, Neoceptin®, Ranitid®
- সিরাপ হিসেবেঃ Neotack®, Neoceptin R®, Ranitid®, Ranidin®
- Esomeprazole – এসিড নিঃসরণ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ট্যাবলেট হিসেবে (২০ ও ৪০ মিগ্রা) – Sergel®, Maxpro®, Maxpro MUPS® Esonix®, Esotid®, Opton®
- ক্যাপসুল হিসেবে (২০ ও ৪০ মিগ্রা) – Sergel®, Maxpro® Esonix®, Esotid®, Opton®
- Omeprazole – এসিড নিঃসরণ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ক্যাপসুল হিসেবে (২০ ও ৪০ মিগ্রা) – Seclo®, Losectil®, Xeldrin® Cosec®, Omep®, Opton®
- ইনজেকশন হিসেবে (৪০ মিগ্রা/ভায়াল) – Seclo®, Losectil®, Xeldrin®, Cosec®, Omep®
- পাউডার হিসেবে (২০ ও ৪০ মিগ্রা) – Losectil®, Omenix®, Opezen-S®
- Pantoprazole (Protonix ®): Treats stomach and esophagus problems and GERD.
References
Motycka, C. (2015). Gastrointestinal and Antiemetic Drugs. In K. Whalen (Ed.), Lippincott Illustrated Reviews: Pharmacology, Sixth Edition (pp. 405-406). Wolters Kluwer.
Kresser, C. (2010, August 30). How your antacid drug is making you sick (part A). Chris Kresser. https://chriskresser.com/how-your-antacid-drug-is-making-you-sick-part-a/
Last Updated on May 17, 2023
Leave A Comment