আমাদের খাদ্য তালিকায় অতি পরিচিত একটি উপাদানের নাম হলো আদা (Ginger) যা সাধারণত মশলা হিসেবে খাবারের মধ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতি সাধারণ এই উপাদানটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা করেছেন নানাবিধ গবেষণা এবং রয়েছে কিছু বিস্ময়কর ফলাফল।

এই অনুচ্ছেদে বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে আদা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গর্ভকালীন (Pregnancy) সময়ে আদা খাওয়া উপাকারী নাকি ক্ষতিকর সেই বিষয়ক বিশেষ নির্দেশনা।

Table of Contents

আদার উপকারিতা (Benefits Of Ginger )

এই পর্যায়ে আদার ১০ টি উপকারিতা নিয়ে আমরা কথা বলবো যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা সমর্থিত। (Leech, 2021)

আদা এন্টি-অক্সিডেন্ট (antioxidant) ও দাহ-নাশক (anti-inflammatory) গুণ সম্পন্ন

আদাতে রয়েছে Gingerol নামক বিশেষ একধরনের উপাদান যা এন্টি-অক্সিডেন্ট (antioxidant) ও দাহ-নাশক (anti-inflammatory) গুণ সম্পন্ন। এন্টি অক্সিডেন্ট কি এবং কেন শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে।

এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের মধ্যে ফ্রি রেডিক্যাল (Free radicals) এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। উল্লেখ্য আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল নামক এক ধরনের অণু রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সহায়তা করে থাকে। তবে বায়ু দূষণ, ধুমপান, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা জীবাণুর সংক্রমণের ফলে ফ্রি রেডিক্যাল এর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে তখন কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে তথা কোষের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে প্রদাহ বলতে বোঝায় আঘাত বা বিষক্রিয়ার প্রভাবে কোষে উদ্ভূত অতিরিক্ত তাপ, ব্যথা, লালভাব, ফুলে ওঠা ও কোষের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া। আর আদাতে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী প্রদাহ নাশ করতে সহায়তা করে।

আদা বমি বমি ভাব (Nausea) দূর করতে উপকারী

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (NIH of US) এর তথ্য অনুযায়ী বমি বমি ভাব (Nausea) দূর করতে আদা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত পিত্তথলির পাথরের সার্জারি পরবর্তীতে অথবা কেমোথেরাপি নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব ও বমি (Vomiting) দূর করতে আদা সহায়তা করে থাকে।

পিত্তথলিতে পাথর হলে করণীয় কি সেই বিষয়ে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ের প্রথম দিকে যখন মর্নিং সিকনেস হয় তখন আদা বমি বমি ভাব দূর করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। ১২৭৮ জন গর্ভবতী মহিলার উপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ১.১ থেকে ১.৫ গ্রাম পর্যন্ত আদা খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব কম হয়ে থাকে। তবে গর্ভকালীন সময়ে আদা খাওয়াতে কিছু ঝুঁকি রয়েছে যে বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 আদা বাতের ব্যথা (Osteoarthritis) কমাতে উপকারী

বাতের ব্যথা (Osteoarthritis) কমাতে আদা বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দৈনিক ১ গ্রাম পরিমাণ আদা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত খাওয়ার ফলে বাতের ব্যথা অনেকাংশেই কমে যায়। বিশেষত বাত জনিত হাঁটু ব্যথায় আদা সহ তিলের তেল বাহ্যিক ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

আদাতে রয়েছে gingerols, shogaols এবং paradols নামক বিশেষ কিছু রাসায়নিক উপাদান যা ব্যথা ও প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। আর তাই বাত জনিত ব্যথা ও প্রদাহের ক্ষেত্রে আদার ব্যবহার সুফল বয়ে আনতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে  আদার উপকারিতা

টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে রক্তে ব্লাড সুগার কমাতে সহায়তা করে আদা এবং সেই সাথে ডায়াবেটিস জনিত হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪১ জন ব্যক্তিকে প্রত্যেক দিন ২ গ্রাম করে আদা খেতে দেওয়া হয় এবং তাতে লক্ষ্য করা যায় যে ব্লাড সুগার লেভেল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে আদা ঠিক কিভাবে ব্লাড সুগার কমায় সেই বিষয়ে এখনো গবেষণা বিদ্যমান রয়েছে।

আদা হজমের সমস্যা দূর করে

আদা হজমের সমস্যা দূর করে

যাদের দীর্ঘদিন যাবত হজমের সমস্যার দরুন পেটে ব্যথা, টক ঢেঁকুর, অস্বস্তি বোধ ও এসিডিটি হতে দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে আদা উপকারী ভূমিকা রাখে। পাকস্থলী থেকে খাবার বের হয়ে অন্ত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লাগলে তা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। আর আদা পাকস্থলী থেকে দ্রুত খাবার বের হতে সহায়তা করে।

একদল সুস্থ মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে যারা খাওয়ার এক ঘন্টা পূর্বে সামান্য পরিমাণে আদা খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পাকস্থলী থেকে খাবার বেরিয়ে যেতে সময় লেগেছে মাত্র ১৩ মিনিট। অপরদিকে যারা আদা গ্রহণ করেন নাই তাদের ক্ষেত্রে প্রায় ২৭ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগেছে।

মাসিকের যন্ত্রণাদায়ক পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করতে আদার উপকারিতা

অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রেই মাসিকের শুরুতে যন্ত্রণাদায়ক পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি বোধ হয়ে থাকে যাকে মেডিকেলের ভাষায় Dysmenorrhea বলা হয়। আর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে আদা।

২০০৯ সালে ১৫০ জন মহিলার উপরে একটা গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মহিলাদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করে একদলকে দৈনিক ৪ বার ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় শুকনো আদার গুঁড়া সেবন করতে দেওয়া হয়। বাকি দুই দলের জন্য ব্যথা নাশক ওষুধ mefenamic acid (250 mg) এবং ibuprofen (400 mg) দৈনিক ৪ বার সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতঃপর দেখা যায় যে যারা ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন করেছেন তাদের মতোই আদা সেবনকারীদের ক্ষেত্রেও ব্যথা কমে গেছে। অর্থাৎ আদা ব্যথা নাশক ওষুধের মতো কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে আদা ঠিক কি প্রক্রিয়ায় মাসিকের ব্যথা কমাতে পারে সেই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

 হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে আদার উপকারিতা

রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় LDL (low density lipoprotein) বা খারাপ কোলেস্টেরলের উপস্থিতি হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর তাই যাদের রক্তে LDL এর মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের জন্য কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ (যেমন: atorvastatin) সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

২০১৮ সালের এক‌ গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ৫ গ্রাম পরিমাণে আদা ৩ মাস‌ পর্যন্ত খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ১৭.৪ শতাংশ পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমে গেছে। অর্থাৎ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধের মতো আদা কাজ করতে পারে। তবে সবার জন্য কোলেস্টেরল কমাতে এতো বেশি মাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে আদা খাওয়া নিরাপদ হবে কিনা সেই বিষয়ে সংশয় রয়েছে। আর তাই ওষুধের পরিবর্তে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আদা আপনার বেলায় উপযোগী হবে কিনা সেই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

 ক্যান্সার প্রতিরোধে আদার উপকারিতা

কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে আদায় বিদ্যমান gingerol নামক উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। বিশেষত আদা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং আদার রয়েছে প্রদাহ নাশক গুণাগুণ যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও স্তন ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সক্ষম বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তবে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই ব্যাপারে আরো অধিক গবেষণা এখনো বিদ্যমান রয়েছে।

কাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

আদা Alzheimer’s রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে

দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ (chronic inflammation) মানুষকে বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেয়। বার্ধক্য জনিত একটি বিশেষ রোগ হলো Alzheimer’s disease যেখানে স্মৃতি শক্তি কমে যায় এবং সহজেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

আদায় রয়েছে প্রদাহ নাশক গুণাগুণ যা বার্ধক্য জনিত Alzheimer’s disease প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। ২০১২ সালে মধ্যবয়সী একদল মহিলার উপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত আদা সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতি শক্তি ভালো রয়েছে।

আদা ইনফেকশন (infection) প্রতিরোধে সাহায্য করে

আদায় বিদ্যমান Gingerol উপাদানটি ইনফেকশন (infection) প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। মানুষের শরীরে জীবাণুর আক্রমণ হলে তা শরীরের মধ্যে বংশবিস্তার করে এবং ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। আদা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

২০০৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আদা মাড়ি ও দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিহত করে। এছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন প্রতিরোধেও আদা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই তো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ জনিত ঠান্ডা ও কাশি উপশমে আদা পানি বা আদা সহ চা বিশেষ উপকারী হিসেবে ব্যপকভাবে সমাদৃত।

 

কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

উপরে উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে আদার নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। তবে ঠিক কতটুকু পরিমাণে এবং কিভাবে আদা খাওয়ার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।

প্রথমত আদার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে রান্নার কাজে মশলা হিসেবে। বিভিন্ন ধরনের তরকারি যেমন মাছ, মাংস ইত্যাদি রান্না করার সময় আদা সুগন্ধ ও স্বাদ আনয়ন করে থাকে। তবে রান্নায় ব্যবহৃত হলে সেক্ষেত্রে আদার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান Gingerol এর উপকারিতা কিছুটা কমে যায়। আর তাই কাঁচা আদা খাওয়াতে বেশি উপকারিতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কাঁচা আদার সর্বোচ্চ গুণাগুণ পেতে ব্লেন্ডারে পিষে ‌রস‌‌ বানিয়ে খেতে হবে। তবে অনেকের কাছেই তা কটু স্বাদ বিশিষ্ট মনে হতে পারে।

আদা খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আদার পানি বা চায়ে আদা মেশানো। আদা পানি তৈরির নিয়ম হলো কাঁচা আদা ধুয়ে কুচি কুচি করে ১ থেকে ২ কাপ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ফুটাতে হবে। অতঃপর তা কুসুম গরম অবস্থায় অথবা ঠান্ডা করে খেতে হবে। এছাড়াও চা তৈরির সময় তাতে আদা মিশিয়ে খাওয়ার মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।

কাঁচা আদা খাওয়াতে কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। যেমন: কাঁচা আদাতে ভিটামিন সি পাওয়া যায় কিন্তু আগুনের তাপে আদায় বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও আদা থেকে আরো পাওয়া যায় পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজন হয়ে থাকে।

আদা খাওয়ার অপকারিতা

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম পর্যন্ত আদা খাওয়া উপকারি হতে পারে। এর বেশি পরিমাণে আদা খাওয়ার ফলে শরীরে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। (Norris, 2020)

নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে না। দৈনিক ৪ গ্রামের চেয়ে বেশি পরিমাণে আদা খাওয়ার ফলে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো:

  • এসিডিটি (Gas)
  • বুকজ্বালা (heartburn)
  • পেটে ব্যথা
  • গলায় জ্বালা পোড়া ইত্যাদি

এছাড়াও যাদের রক্তের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আদা খাওয়া উচিত নয়। এখানে রক্তের রোগ বলতে হিমোফিলিয়া (Haemophilia) কে বোঝানো হয়েছে যা একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। এই রোগের রোগীদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তাকারী উপাদানের ঘাটতি থাকে। যার দরুন শরীরের কোথাও সামান্য পরিমাণে কেটে গেলে সেখান থেকে অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। আর আদা হচ্ছে এমন একটি খাবার যা রক্ত জমাট বাঁধতে বিঘ্ন ঘটায় আর তাই হেমোফিলিয়া রোগীদের জন্য আদা মারাত্বক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

যারা নিয়মিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা অন্য কোনো রোগের ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে রান্নায় স্বাভাবিক পরিমাণে ব্যবহারের বাইরে অতিরিক্ত পরিমাণে আদা খাওয়া উচিত নয়। কারণ আদা ভেষজ গুণ সম্পন্ন খাবার যা ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে অথবা আদার সাথে ওষুধের মিথষ্ক্রিয়া (interaction) সংঘটিত হতে পারে।

ওজন কমাতে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা 

আদা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে আদা‌ পানি খেলে আদার যে সমস্ত উপকারিতা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তা পাওয়া যায়। তবে এর বাইরেও সবচেয়ে বেশি প্রচলন হলো সকালে খালি পেটে আদা পানি খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। চলুন প্রচলিত এই কথাটির সত্যতা যাচাই করা যাক।

সকালে খালি পেটে আদা পানি খেলে ক্ষুধা বোধ কিছুটা কমে যায় এবং পরবর্তীতে বিপাক প্রক্রিয়ায় (Metabolism) বিশেষ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এছাড়াও শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি রেডিক্যাল এবং প্রদাহের ফলে ওজন বেড়ে যায়। আর আদায় এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী রয়েছে যা ফ্রি রেডিক্যাল এবং প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। (Chilukoti, 2015)

তবে সকালে খালি পেটে আদা পানি খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে পাচক রস এবং পিত্তথলি থেকে পিত্তরস নিঃসরণ হয়ে থাকে যা পেটে কখনো কখনো অস্বস্তি বোধ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই কারো ক্ষেত্রে খালি পেটে আদা‌ পানি খাওয়ার ফলে সমস্যা দেখা গেলে তাদের জন্য এটি পরিহার করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় আদার পানি কি নিরাপদ?

গর্ভকালীন সময়ের প্রথম দিকে প্রায় ৮০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব তথা মর্নিং সিকনেস দেখা যায়। আদার পানি খাওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার উপশম হয়ে থাকে। কারণ আদায় বিদ্যমান gingerols এবং shogaols পাকস্থলী থেকে খাবার বের হয়ে অন্ত্রে প্রবেশে সহায়তা করে আর যার ফলে বমি বমি ভাব কমে যায়। কিন্তু এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া কতটা নিরাপদ সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ১ গ্রাম মাত্রায় আদা খাওয়া নিরাপদ। প্রচলিত আছে যে আদা পানি খাওয়ার ফলে মৃত বাচ্চা প্রসব করা বা কম ওজন নিয়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে। গবেষণায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। বরং আদা কে নিরাপদ হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। তবে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

 

সতর্কতা

গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে আদা পানি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কারণ এতে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা তথা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার যাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের (Miscarriage) প্রবণতা রয়েছে তাদের জন্যেও আদা খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। (Streit, 2020)

নির্ধারিত মাত্রায় আদা খেলে নানাবিধ উপকারিতা পাওয়া যায় আবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক নিয়মে আদা ব্যবহার করতে হবে বিশেষত গর্ভকালীন সময়ে আদার ব্যবহার প্রসঙ্গে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় সকল বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (Gynecologist) চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম।

 

References

Chilukoti, B. (2015, December 14). 11 reasons to replace your morning cuppa with ginger tea! Retrieved from The Health Site: https://www.thehealthsite.com/diseases-conditions/10-reasons-to-replace-your-morning-cuppa-with-ginger-tea-bj0215-269524/amp/

Leech, J. (2021, March 19). 11 Proven Health Benefits of Ginger. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-benefits-of-ginger

Norris, T. (2020, April 20). What Are the Benefits and Side Effects of Ginger Water? Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/ginger-water

Streit, L. (2020, February 24). Ginger Tea in Pregnancy: Benefits, Safety, and Directions. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/ginger-tea-pregnancy

 

 

Last Updated on November 1, 2023