রসুন (Garlic) মূলত রান্নার কাজে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Allium sativum যার অনেক ভেষজগুণ রয়েছে। অর্থাৎ রসুন রান্নার কাজে খাবারের ফ্লেভার ও স্বাদ বৃদ্ধি করা ছাড়াও স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনতে পারে।
এই অনুচ্ছেদে রসুনের ১০টি উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও কিভাবে রসুন খেলে সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে, কতটুকু পরিমাণে রসুন খাওয়া উচিত, অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রাচীনকালে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুন ব্যবহার করা হতো। রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন (Allicin) নামক সালফারের যৌগ ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন। অ্যালিসিন হলো রসুনের ফ্লেভার ও স্বাদের প্রধান কারণ।
এক কোয়া রসুন (৪ গ্রাম) ৪ ক্যালরি সরবরাহ করে। এছাড়াও এক কোয়া রসুনে ০.৩ গ্রাম প্রোটিন, ০.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.২ গ্রাম ফাইবার এবং খুবই সামান্য পরিমাণ (০.০২) ফ্যাট রয়েছে।
রসুন থেকে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও যেসব মিনারেল পাওয়া যায় তা হলো পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি।
১। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
হার্ট অ্যাটাক অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে রসুন উপকারী ভূমিকা পালন করে। রসুন প্রাকৃতিক এসপিরিন হিসেবে কাজ করে এবং রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন খুব কমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অলস জীবন যাপনের ফলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল) মাত্রা বেড়ে যায় এবং উপকারী কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা কমে যায়। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি এবং উপকারী কোলেস্টেরল কম থাকলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রসুন খাওয়ার অভ্যাস রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের পরিবর্তে রসুন খাওয়া যাবে না। যাদের কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের জন্য নিয়মিত রসুন খাওয়া হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৩। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ক্যান্সার একটি জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ। ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। তাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করার চেষ্টা করতে হবে।
রসুন হলো প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
৪। আলজেইমার্স রোগের ঝুঁকি কমায়
আলজেইমার্স (Alzheimer’s disease) হলো মস্তিষ্কের রোগ যা সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হতে দেখা যায়। আলজেইমার্স রোগে স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন আলজেইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও রসুন খাওয়ার অভ্যাস আলজেইমার্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। (Leech, 2023)
৫। হাড় ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
সাধারণত মহিলাদের (৪৫ বছরের পর) ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয় রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মেনোপজের পর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এমনটি হয়ে থাকে।
কতিপয় গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন খাওয়ার অভ্যাস হাড় ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এই ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (Leech, 2023)
৬। জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে
প্রাচীনকালে (এন্টি-বায়োটিক আবিষ্কারের আগে) জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে ভেষজগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হতো যার মধ্যে রসুন হলো অন্যতম।
রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক যৌগ রোগ জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। তবে এন্টি-বায়োটিক আবিষ্কারের ফলে ভেষজগুণ সম্পন্ন উপাদানের ব্যবহার কমে গেছে।
৭। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে।
৮। ব্যথা ও প্রদাহ নিরাময় করে
রসুনের প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে। অর্থাৎ রসুন ব্যথা ও প্রদাহ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস বা বাত জনিত ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে রসুন খাওয়া উপকারী হবে।
৯। লিভারের জন্য উপকারী
বিপাক প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবে শরীরে অনেক বর্জ্য পদার্থ (টক্সিক উপাদান) তৈরি হয়। রসুন শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ ডিটক্স হিসেবে কাজ করে।
শরীরে টক্সিক উপাদান বেড়ে গেলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রসুন শরীর থেকে টক্সিক উপাদান নিষ্কাশনের মাধ্যমে লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১০। যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুনের এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী নারী ও পুরুষের উভয়ের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (Ajmera, 2021)
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রান্নায় ব্যবহারের মাধ্যমে রসুন খাওয়া কমন বিষয়। তবে সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাওয়ার জন্য কাঁচা রসুন খেতে হবে।
কারণ রসুনের উপকারিতার প্রধান কারণ হলো অ্যালিসিনের উপস্থিতি যা আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। পক্ষান্তরে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া হলে সবচেয়ে ভালো অ্যালিসিন পাওয়া যায়।
প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও রসুন কুচি কুচি করে কেটে সালাদ বা ভর্তার সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
রসুনের ব্যবহার (ফাঙ্গাল ইনফেকশন)
রসুনের জীবাণু নাশক গুণাবলী রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
রসুন খাওয়া ছাড়াও বাহ্যিকভাবে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের স্থানে রসুন পিষে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পোকামাকড় কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে রসুন পিষে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করা হলে প্রদাহ নিরাময় হয়।
কাঁচা রসুন খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কাঁচা রসুন খাওয়ার তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। কারণ এতে গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে কোনো ওষুধ সেবন করতে হয় এমন ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
Bibliography
Ajmera, R. (2021, May 25). Can Garlic Improve Your Sex Life? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/does-garlic-help-sexually
Leech, J. (2023, June 27). 11 Proven Health Benefits of Garlic. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-health-benefits-of-garlic
Last Updated on January 7, 2024
Leave A Comment